১০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ছিল হিমালয়ের তিনগুণ বড় পর্বতমালা!
বিলিয়ন বছর পুরোনো প্রায় ৪ হাজার ৫০০ মাইল জুড়ে প্রসারিত প্রাগৈতিহাসিক 'সুপারমাউন্টেন' অর্থাৎ মহাপর্বতমালার সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নুনা সুপারমাউন্টেন নামে একটি পর্বতমালার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১.৮ বিলিয়ন বছর আগে একটি বিশাল প্রাচীন মহাদেশে অবস্থিত ছিল এই সুবিশাল পর্বত।
নুনা সুপারমাউন্টেনের উচ্চতা বর্তমানের হিমালয় পর্বতমালা থেকে তুলনামূলক বেশি হলেও দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে হিমালয় থেকে নুনা অনেক এগিয়ে আছে। হিমালয় পর্বতমালার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৫০০ মাইল।
এই পর্বতমালা কলম্বিয়া বা নুনা নামের একটি পুরোনো মহাদেশে অবস্থিত ছিল। এই সুপারমহাদেশটি আধুনিক যুগের দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার স্থলভাগকে একত্রিত করেছিল। ২ থেকে ১.৮ বিলিয়ন বছর আগে বিদ্যমান ছিল এই মহাদেশ।

এটি ছাড়াও, ৬৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে বিদ্যমান ট্রান্সগন্ডোওয়ানান সুপারমাউন্টেন নামে আরেকটি পর্বতের কথাও উল্লেখ করেন তারা।
ট্রান্সগন্ডোয়ানান সুপারমাউন্টেনের সন্ধান পাওয়া গেছে গন্ডোওয়ানায়। অ্যান্টার্কটিকা, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের স্থলভভাগকে একত্রিত করা এই প্রাচীন মহাদেশ ৬০০ মিলিয়ন থেকে ১৮০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে ছিল বলে জানা গেছে।
এই মহাদেশটি ভেঙ্গেই পরবর্তীতে বর্তমান পৃথিবীর মহাদেশগুলো সৃষ্টি হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি প্রার্থী এবং স্টাডির লেখক জিয়ি ঝু নিউজউইককে বলেন, "নুনা সুপারমাউন্টেনের দৈর্ঘ্য হিমালয় পর্বতমালার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।"
গবেষকদের দাবি, পৃথিবীর গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই পর্বতমালা।

পৃথিবীর সৃষ্টির ইতিহাসে দুটি পর্বে এই পর্বতমালা গঠিত হয়েছিল বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। প্রথমবার গঠিত হয়েছিল ২০০ কোটি থেকে ১৮০ কোটি বছর আগে এবং দ্বিতীয়বার এর গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় ৬৫ থেকে ৫০ কোটি বছর আগে।
তবে গবেষকরা জানান, এই পর্বতমালার গঠনের সঙ্গে পৃথিবীর বির্বতনের ইতিহাসের যোগসূত্র রয়েছে। গবেষণা থেকে জানা গেছে, এই সুউচ্চ পর্বতমালার শিকড়ে বেশ কিছু বিরল খনিজ উপাদান ছিল যা সাধারণত তীব্র চাপের মধ্যে তৈরি হয়।
গবেষকদের মতে, জীবের বিবর্তনের ক্ষেত্রেও সুপারমাউন্টেনের ভূমিকা গুরত্বপূর্ণ।
পর্বত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকলে তারা সমুদ্রে ফসফরাস এবং লোহার মতো প্রয়োজনীয় পদার্থ সরবরাহ করে। এছাড়া, সুপারমাউন্টেনের অস্তিত্বের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। ফলে জীব ও উদ্ভিদ জগতের টিকে থাকা ও বিবর্তন সম্ভব হয়েছে।