Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

যারা নায়ক-নায়িকাদের ঘর-বাড়ি বানান, তারা কারা?

‘আম্মাজান’ ছবির সেটের কথা মনে পড়লে সিরাজুল এখনও আনন্দ অনুভব করেন। ছবির মাজারের সেটটি এতটাই বাস্তবধর্মী ছিল যে, নায়ক মান্না জুতা নিয়ে ঢুকতে ইতস্তত বোধ করেছিলেন। শেষতক জুতা খুলেই ঢুকেছিলেন।
যারা নায়ক-নায়িকাদের ঘর-বাড়ি বানান, তারা কারা?

ফিচার

সালেহ শফিক
13 January, 2025, 06:40 pm
Last modified: 31 January, 2025, 11:13 am

Related News

  • ঢাকাই ছবির অস্ত্রশস্ত্র: নূরুর কারিগরি, জসিমের স্টাইল এবং ছিটকিনি ও রুহ আফজা
  • কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই
  • সরকারি চাকরি ছেড়েছেন, ৩০০ ছবির গল্প লিখেছেন, ৭৯ বছর বয়সেও এফডিসির ‘সিনিয়র ইয়াংম্যান’
  • কেন নাচ-গান, মারপিট আর কাল নাগিনীর বিষে ভরপুর ছিল চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের ভাষা?
  • সিনেমা হল থেকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক: যেভাবে টিকে আছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি

যারা নায়ক-নায়িকাদের ঘর-বাড়ি বানান, তারা কারা?

‘আম্মাজান’ ছবির সেটের কথা মনে পড়লে সিরাজুল এখনও আনন্দ অনুভব করেন। ছবির মাজারের সেটটি এতটাই বাস্তবধর্মী ছিল যে, নায়ক মান্না জুতা নিয়ে ঢুকতে ইতস্তত বোধ করেছিলেন। শেষতক জুতা খুলেই ঢুকেছিলেন।
সালেহ শফিক
13 January, 2025, 06:40 pm
Last modified: 31 January, 2025, 11:13 am
চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত 'প্রহেলিকা' ছবির উত্তম গুহ নির্মিত সেট।

নিউমার্কেট থেকে এফডিসি কত দূর? বড়জোর দেড় ঘণ্টার হাঁটার পথ। কিন্তু সিরাজুলের লেগেছিল ৬-৭ বছর। তার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে, তবে বাড়িতে থাকার জায়গা ছিল না। এলাকার এক চাচা শাহনেওয়াজ হলের (ঢাকার নিউমার্কেটের পেছনে, চারুকলার ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ) দারোয়ান ছিলেন। ১২-১৩ বছর বয়সে সিরাজুল সেই চাচার কাছে এসে উঠলেন। সময়টা ১৯৬৮-৬৯ সাল। দেশ তখন উত্তাল।

চাচার আয়ে সংসার চলত না। সিরাজুল হলের এক ছাত্র অঞ্জন বণিকের কাছ থেকে কাজ শিখতে শুরু করলেন। অঞ্জন পোস্টার, ব্যানার লেখার কাজ করতেন। সিরাজুল তাকে রং গোলানোসহ ছোটখাটো কাজে সাহায্য করে কিছু টাকা পেতেন। তারপর দেশজুড়ে যুদ্ধ শুরু হলে একদিন অঞ্জনবাবু সবকিছু গুটিয়ে ওপারে চলে গেলেন। এরই মধ্যে সিরাজুল চাচাকেও হারিয়ে ফেলেন।

সিরাজুলের জীবনে তখন সহায় হয়ে আসেন মালেক ও খালেক নামক দুই ভাই। তারা বিটিভিতে সেট মিস্ত্রির কাজ করতেন। তাদের সঙ্গে সিরাজুল মালিবাগে থাকার সুযোগ পান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি শাহবাগে এসে চাচার খোঁজ করেন। চাচাকে পেয়ে জানলেন, তিনি চারুকলার মূল ভবনের পাহারাদারের কাজ করছেন, থাকেনও বাউন্ডারির ভেতরেই।

কলাকুশলীরা ফরিদ আহমেদের নির্মিত একটি সেটে।

'অঞ্জনবাবু বাঁইচা আছেন?'

চাচা সিরাজুলকে ভাস্কর আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। রাজ্জাক স্যার রায়ের বাজার কলোনীতে থাকতেন। পুতুল বানাতেন, চুলায় পোড়াতেন বা রোদে শুকাতেন। সিরাজুল তাকে সাহায্য করতে শুরু করেন। একদিন মুখভর্তি দাড়িওয়ালা এক লোকের সঙ্গে দেখা হয় সিরাজুলের। প্রথমে চিনতে না পারলেও তারপর অবাক হয়ে চেঁচিয়ে ওঠেন, 'অঞ্জনবাবু, আপনে বাঁইচা আছেন?'

পরে অঞ্জনবাবুই সিরাজুলকে এফডিসিতে নিয়ে যান। সেখান থেকেই শুরু হয় সিরাজুলের এফডিসির যাত্রা। সহকারী থেকে শিল্প নির্দেশক হতে তার সময় লেগেছিল অনেক। অঞ্জনবাবুর পরে তিনি শরফুদ্দিন ভুঁইয়ার সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। প্রথম স্বাধীনভাবে সেট করার সুযোগ পান মালেক আফসারির 'ক্ষতিপূরণ' ছবিতে।

'ক্ষতিপূরণ'-এর জন্য একটি পুরোনো, ভাঙা বাড়ির সেট তৈরি করেছিলেন তিনি। মালেক আফসারি সেট দেখে সন্তুষ্ট হন। এরপর 'ক্ষমা' ছবির সেট তৈরি করেন—সেটিও ছিল একটি পরিত্যক্ত বাড়ি, যেখানে সন্ত্রাসীরা শাবানাকে এনে লুকিয়ে রাখে। সেটটি এত সুন্দর হয়েছিল যে নায়ক আলমগীর দেখে খুশি হয়ে তার পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন।

ফরিদ আহমেদ নির্মিত একটি মেগা সেট।

মান্না জুতা খুলেছিলেন

'আম্মাজান' ছবির সেটের কথা মনে পড়লে সিরাজুল এখনও আনন্দ অনুভব করেন। ছবির মাজারের সেটটি এতটাই বাস্তবধর্মী ছিল যে, নায়ক মান্না জুতা নিয়ে ঢুকতে ইতস্তত বোধ করেছিলেন। শেষতক জুতা খুলেই ঢুকেছিলেন।

এছাড়াও সিরাজুল 'ঘৃণা, 'প্রেমের তাজমহল', এবং 'দুর্জয়' ছবির জন্য একাধিক সেট তৈরি করেছেন। 'এই ঘর এই সংসার' ছবির জন্য তিনি সালমান শাহের থাকার জন্য একটি চিলেকোঠা বানান। তবে সালমান শাহের মৃত্যুর কারণে তার সঙ্গে আর কাজের সুযোগ পাননি। মনতাজুর রহমান আকবরের 'চাকর' ছবির জন্য ঢেকিঘর ও গোলাঘরের মতো গ্রামীণ সেট বানিয়েছিলেন সিরাজুল।

সিরাজুলের শেষ কাজ ছিল 'অপারেশন জ্যাকপট' ছবিতে। এখন তার বয়স ৬৮। গ্রামের বাড়িতে অবসর জীবনযাপন করছেন এখন।

সোহরাব-রুস্তমের মরুভূমি

ফরিদ আহমেদ নির্মিত একটি দৃষ্টিনন্দন সেট।

ফরিদগঞ্জ থেকে এফডিসিতে আসতে ফরিদ আহমেদের বেশি সময় লাগেনি। যাতায়াতে যতটা সময় লাগে আর কী। সিরাজুল ইসলাম তার খালু। খালুর হাত ধরে ফরিদ এফডিসিতে আসেন। তখন খালু এফডিসিতে সম্মানের আসন পেয়েছেন। মালেক আফসারি ও মনতাজুর রহমান আকবর প্রমুখ পরিচালক সেট বানানোর আগে সিরাজুল ইসলামের কথা মনে করতেন।

প্রথমবার এফডিসিতে এসে ফরিদ দেখেন, 'সোহরাব-রুস্তম' ছবির জন্য মরুভূমির সেট তৈরি করা হয়েছে। কাঠ, চাটাই, বালি আর খেজুরগাছ দিয়ে সেটটি বানানো হয়েছিল।

সোহরাব আর রুস্তম তাতে লড়াইও করেন। দর্শকের বোঝার সাধ্যি ছিল না সব ঘটনা ঘটে চলেছে একটি বদ্ধ ঘরের ভেতরে, এফডিসির ২ নম্বর ফ্লোরে। মোমতাজ আলী পরিচালিত ছবিটির শিল্প-নির্দেশক ছিলেন আব্দুর রশিদ। ফরিদের শেখার আগ্রহ ছিল আর ছিল ধৈর্য।

উত্তম গুহ চান সেট যেন গল্পের দাবি পূরণ করে।

নব্বইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত সেট বেশি তৈরি হতো কাঠের ফ্রেমের ওপর চট বা ছালা টাঙিয়ে, তার ওপর মাটি ও রং লেপে দিয়ে। ফরিদের মনে আছে, একবার হোতাপাড়ায় 'লাল বাদশা' ছবির শুটিং হচ্ছিল। তারা একটি পোড়োবাড়ি তৈরি করেছিলেন। রাত তখন গভীর, শীতের দিন ছিল, আর বৃষ্টিও হচ্ছিল। বাড়িটায় একটি শিশুকে ছিনিয়ে এনে লুকিয়ে রেখেছে মাস্তানরা, আর তাকে মুক্ত করতে আসছেন মান্না। মাস্তানদের সঙ্গে তুমুল মারামারির পর মান্না সফল হন।

তবে ঝামেলা হচ্ছিল বৃষ্টির কারণে। ছালার ওপর থেকে বারবার মাটি গলে পড়ে যাচ্ছিল। ফরিদ ও তার সহকর্মীরা প্রস্তুত ছিলেন। মাটি গলে গেলে তারা আবার গিয়ে নতুন করে লাগিয়ে দিতেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে কাঠবোর্ড ব্যবহার শুরু হয়, যা দিয়ে সুবিধামতো বড় বড় সেট নির্মাণ অনেক সহজ হয়ে যায়।

গুহা তৈরি কঠিন কাজ

চটের সেট তৈরিতে সময় বেশি লাগলেও ফিনিশিং ভালো হতো, জয়েন্ট বোঝা যেত না। তবে কাঠবোর্ডের জয়েন্ট বোঝা যায়। ফরিদের কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল গুহা তৈরি করা। চাটাই ও কাগজের ওপর কাদা লেপে অমসৃণ গাত্র তৈরি করে তার মধ্যে একটি ফোকড় রাখা খুব কঠিন কাজ। আলো যখন গুহার ওপরে পড়ত, তখন এটাকে বাস্তব মনে করানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

বদরুল আনাম সৌদ পরিচালিত 'গহীন বালুচর' ছবির উত্তম গুহ নির্মিত সেট।

এফডিসির ভেতরে বস্তি বানানোর কাজও করেছেন ফরিদ। সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে 'ক্ষমা' ছবির জন্য একটি বস্তি তৈরি করেছিলেন। ওই বস্তিতেই থাকতেন মহানায়িকা শাবানা। বস্তি বানানো সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে সেখানে নায়িকাকে রাখতে হলে। বস্তি বাস্তবধর্মী হওয়া চাই, আবার নায়িকাকে যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হয়। 

ফরিদ যখন স্বাধীনভাবে কাজ করতে শুরু করেন, তখন ঢাকার চলচ্চিত্রে ডনদের যুগ শুরু হয়ে গেছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড, গ্যাংস্টার, মাফিয়া, ড্রাগলর্ডদের গল্প নিয়ে নির্মিত ছবি যেমন 'পিয়া আমার জান', 'চাচ্চু', 'রিকশাওয়ালার প্রেম' পাড়ি দিয়ে 'বাদশা দ্য ডন', 'কিল হিম', 'বোমা হামলা', 'মোস্ট ওয়েলকাম', 'গ্যাংস্টার'-এর মতো ছবির যুগে প্রবেশ করে।

শাকিব খান প্রযোজিত প্রথম ছবি 'হিরো: দ্য সুপারস্টার'-এর জন্য ফরিদ ও তার দল ১৪ দিন ধরে শুধু ডনের বাড়ির প্রবেশপথ বানিয়েছিলেন। এফডিসিতে ওই সেট বানাতে খরচ হয়েছিল ১৪ লাখ টাকা। ফরিদের মতে, সময় যত এগোচ্ছে, সেট নির্মাণের চ্যালেঞ্জ তত বাড়ছে।

যখন ফোক ও ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবি নির্মিত হতো, তখন দরবার, রাজপ্রাসাদ, গুহা, ফোয়ারা, নাচঘর ইত্যাদি ধরনের সেটের চাহিদা ছিল বেশি। এসব সেট ব্যবহার করা হতো 'হুর-এ-আরব', 'শিরী ফরহাদ', 'লাইলি মজনু', 'বেদের মেয়ে জোসনা', 'বানজারান', 'রসের বাইদানি'-এর মতো ছবিতে।

ফরিদ আহমেদ নির্মিত একটি সেট।

পরে ছবির কাহিনী খানদানি পরিবেশে প্রবেশ করে। যেমন 'মিয়া বাড়ির চাকর', 'গরীবের বন্ধু', 'সম্পর্ক', 'মায়ের কান্না'-এর মতো ছবির সেট তৈরি হতো চৌধুরী বা খান সাহেবদের প্রাসাদের আদলে।

এরপর চলচ্চিত্রে গল্পের নতুন মাত্রা আসে, আর সেটের ধরণেও বৈচিত্র্য দেখা দেয়। এখন প্রতিটি ছবিতে আলাদা সেট তৈরি করা হয়। সেই সেট যেন প্রাণবন্ত হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে সেটও যেন ছবির চরিত্র হয়ে ওঠে, তা নিশ্চিত করেন নির্মাতারা।

ফরিদ শিখেছেন, ভালো সেট শুধু ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড নয়, ছবির ভাষাও হতে পারে। এই শিক্ষা তিনি পেয়েছেন উত্তম গুহের কাছ থেকে।

ফরিদ এখন বিজ্ঞাপনচিত্র, ইভেন্ট, এবং মিউজিক ভিডিওর সেটও নির্মাণ করেন।

সেট নির্মাণে ব্যস্ত উত্তম গুহ।

মহিউদ্দিন ফারুকের ভক্ত

নবাব ফারুকীর স্টেট ম্যানেজার ছিলেন উত্তম গুহের দাদা সৌরীন্দ্রনাথ গুহ। তার মা ছিলেন আলপনা শিল্পী। সেঝদা অজিত গুহ ছিলেন থিয়েটার কর্মী। উত্তম গুহ চট্টগ্রাম আর্ট কলেজে পড়াশোনা করেছেন। পেইন্টিং তার প্রধান বিষয় হলেও ভাস্কর্যশিল্প রপ্ত করেছেন সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদের কাছ থেকে। তিনি নেপথ্য শিল্পী হতে চাইতেন।

চলচ্চিত্রের প্রতি তার দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল। তিনি অনেক ছবির টাইটেল কার্ডে শিল্প নির্দেশক হিসাবে মহিউদ্দিন ফারুকের নাম দেখতেন। স্বপ্ন ছিল একদিন তাকে দেখে চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ১৯৮৭ সালে ঢাকায় এসে থিয়েটারের (মমতাজউদ্দিন আহমেদের) সঙ্গে যুক্ত হন। মগবাজারে তাদের মহড়া কক্ষ ছিল। সেই থিয়েটারের সভাপতি ছিলেন মহিউদ্দিন ফারুক। একদিন তাকে দেখে উত্তম ব্যাকুল হলেও সংকোচের কারণে এগিয়ে যেতে পারেননি। পরে নরেশ ভূঁইয়ার মাধ্যমে পরিচয় হয়।

উত্তম তার চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানালে মহিউদ্দিন ফারুক তাকে বিটিভিতে দেখা করতে বলেন। ফারুক তখন বিটিভির স্টাফ এবং চলচ্চিত্রের ফ্রিল্যান্স শিল্প নির্দেশক ছিলেন। উত্তম প্রতিদিন সকালে বিটিভি গিয়ে তার কাছ থেকে চলচ্চিত্রের কাজ সম্পর্কে শিখতে থাকেন।

বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত 'রাজনীতি' ছবির সেটে উত্তম গুহ।

'প্রথম প্রেম' প্রথম ছবি

মহিউদ্দিন ফারুকের সহকারী হিসাবে উত্তমের প্রথম কাজ ছিল এজে মিন্টুর 'প্রথম প্রেম' ছবিতে। এটি ছিল মৌসুমীর দ্বিতীয় ও ওমর সানির প্রথম ছবি। ছবির সেটে ভিন্নতা আনতে উত্তম একটি ম্যুরাল তৈরির প্রস্তাব দেন। ফারুক সাহেব জানতে চান, কিসে এটি তৈরি হবে? উত্তম বলেন, থার্মোকল দিয়ে।

তখন ঢাকায় থার্মোকল সহজলভ্য ছিল না, কিন্তু চট্টগ্রামে তা পাওয়া যেত। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে আনা যন্ত্রপাতির জন্য ব্যবহৃত থার্মোকল দেড়-দুই টাকা কেজিতে আগ্রাবাদে বিক্রি হতো। উত্তম ও তার সতীর্থরা বিয়ে বাড়ি সাজানোর মতো অনুষ্ঠানে এগুলো ব্যবহার করেছেন। উত্তম আগ্রাবাদ থেকে থার্মাকোল এনে ১০ বাই ১৬ ফুট মাপের একটি ম্যুরাল তৈরি করেন। তাতে দেখা যায়, ওমর খৈয়ামকে ঘিরে তার সঙ্গীরা বসে আছেন এবং সামনে এক নর্তকী নাচছে। শেষে এর গায়ে রুপালি রং লেপে দেওয়া হয়। ফলে এটি যে থার্মোকলে তৈরি তা দর্শক বুঝতেই পারেনি।

এজে মিন্টু ম্যুরালটি দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন। এটি এফডিসির সেট ডিজাইনে নতুন যুগের সূচনা করে।

পরে জসীম অভিনীত 'ডন' ছবির জন্য উত্তম মাইকেলেঞ্জেলোর 'লেডা অ্যান্ড দ্য সোয়ান' চিত্রকর্মের অনুকরণে একজন নগ্নিকার ম্যুরাল তৈরি করেন। এটি দেখে জসীম সন্তুষ্ট হন। তখনকার এফডিসির অন্যান্য শিল্প নির্দেশক যেমন শরফুদ্দিন ভূঁইয়া এবং কলমতর প্রমুখ সেটি দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন।

উত্তম গুহ নির্মিত 'দেশা দ্য লিডার' ছবির সেট।

গরীবের ও বড়লোকের ঘরের ফারাক ছিল না

গোড়ার দিকের এফডিসির শিল্প নির্দেশকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সবুর খান, মহিউদ্দিন ফারুক এবং বিজয়েশ। তবে তাদের বেশিরভাগই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। কাজ হতো মূলত মুম্বাইয়ের অনুকরণে, যেখানে শিল্পের ছোঁয়া খুব একটা দেখা যেত না। সেট তৈরিতে বাজেটও ছিল অতি সীমিত। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো লাল গালিচার ব্যবহার। 

ড্রইংরুম, ডাইনিংরুম, বেডরুম, গরিবের ঘর কিংবা বড়লোকের ঘর—সবখানেই একই ধরনের লাল গালিচা বিছানো হতো। ঘরের মেঝে কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে কোনো স্টাডি ছিল না, পরিচালকদেরও কোনো বিশেষ চাহিদা ছিল না। এ পরিস্থিতি থেকে প্রথম বেরিয়ে আসেন মহিউদ্দিন ফারুক। তিনি ঘরের ব্যবহার অনুযায়ী সেট সাজানোর ধারণা নিয়ে আসেন।

১৯৯৫ সালে উত্তম গুহ এককভাবে শিল্প নির্দেশনার কাজ শুরু করেন শেখ নিয়ামত আলীর 'অন্য জীবন' ছবিতে। এ কাজের জন্যই তিনি প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। উত্তমের মতে, ক্যামেরা, সম্পাদনা, শব্দ গ্রহণ এবং আলোক প্রক্ষেপণসহ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিটি দপ্তর গুরুত্বপূর্ণ, তবে শিল্প নির্দেশকের কাজ সবচেয়ে কঠিন। কোনো কোনো সেটের জন্য শত শত শ্রমিকও কাজ করেন। 

চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত 'প্রহেলিকা' ছবির জন্য উত্তম গুহ নির্মিত সেট।

শিল্প নির্দেশনার অধীনে তিনটি উপশাখা রয়েছে: রূপসজ্জা বা মেকআপ, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র। তিনি বলেন, গরিব মেয়ের ক্ষেত্রে যেমন চড়া মেকআপ মানায় না, তেমনি বড়লোকের মেয়েকে ডুরে শাড়ি পরালে তা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। আসবাবপত্রের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। 'শিল্পপতির ড্রইংরুম এবং স্কুল মাস্টারের ড্রইংরুমে এক ধরনের আসবাবপত্র ব্যবহার করা যায় না। অথচ এফডিসির অনেক পরিচালকের কাছে সেট ডিজাইন তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।'

৪টি বিষয় জরুরি

তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না', তানভীর মোকাম্মেলের 'লালন' এবং 'লালসালু', বদরুল আনাম সৌদের 'গহীন বালুচর'সহ এফডিসির বাইরের অনেক ছবির সেট নির্মাণ করেছেন উত্তম গুহ। তিনি চিত্রনাট্যের দাবিতে বিশ্বাসী। বাণিজ্যিক এবং বিকল্প ধারার ছবির মধ্যে তিনি কোনো ফারাক করেন না, শুধু চান সেট যেন গল্পের প্রয়োজন মেটায়।

এফডিসির ভেতরে সুইজারল্যান্ডের সেট বানিয়ে 'দেশা দ্য লিডার' ছবির একটি গানের চিত্রায়ণ করেছিলেন তিনি। রুনা লায়লার 'শিল্পী' ছবির জন্য চার থেকে পাঁচটি দেশের আবহ তৈরি করেছিলেন। 'রাজা সূর্য খাঁ' ছবির জন্য রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। 

তানভীর মোকাম্মেলের 'রাবেয়া' ছবির জন্য একটি ইলেকট্রিক পোলকে রূপান্তরিত করেছিলেন নারকেল গাছে। জাজ মাল্টিমিডিয়ার 'অঙ্গার' ছবির জন্য আট ট্রাক লাল মাটি আনিয়ে এফডিসিতে পাহাড়ি এলাকার আবহ তৈরি করেছিলেন।

বদরুল আলম সৌদ পরিচালিত 'শ্যামাকাব্য' ছবির জন্য উত্তম গুহ নির্মিত সেট।

তিনি বলেন, 'বাস্তবের বাড়ি ও চলচ্চিত্রের বাড়ির মধ্যে একটি বড় পার্থক্য হলো উচ্চতা। যেহেতু সেটে ক্রেন, রেল ও ট্রলির প্রবেশ ঘটাতে হয়, তাই শুটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান ছাড়াও সেটের বাইরেও অনেকটা জায়গা রাখতে হয়। এসব বিষয় সেট ডিজাইনারের মাথায় রাখতে হয়।'

উত্তম গুহ সাতবার শিল্প নির্দেশক হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এছাড়াও চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, প্রযোজক সমিতি এবং জয়নুল আবেদীন পুরস্কারও পেয়েছেন।

উত্তম মনে করেন, শিল্প নির্দেশকের চারটি বিষয়ের কথা মাথায় রাখা জরুরি: স্থান, কাল, পাত্র এবং শ্রেণি। কোন স্থানে, কোন সময়ে, কারা কাজটি করছে এবং তারা কোন শ্রেণি-পেশার মানুষ—এ প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া গেলে শিল্প নির্দেশনার কাজ সহজ হয়ে আসে। 

শেষ সমস্যা থেকে যায় দৃষ্টিভঙ্গির। অনেক পরিচালক শিল্প নির্দেশনাকে খুব সস্তা ভাবেন এবং কম খরচে কাজটি সেরে নিতে চান। উত্তম বলেন, পরিচালকেরা নায়ক-নায়িকাদের পেছনে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করেন। 'তবে নায়ক-নায়িকারা যেখানে দাঁড়ান, বসেন বা হাঁটেন, সেই সেটটিও যে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, তা বোঝার সময় এসেছে। এখনো গুরুত্ব না দিলে যা বাকি আছে, তা-ও হারিয়ে যাবে।'


ছবি: সৌজন্যে

Related Topics

টপ নিউজ

সেট নির্মাণ / সিনেমার সেট / এফডিসি / ঢালিউড / বাংলা চলচ্চিত্র / ঢাকাই সিনেমা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ’: দ্য গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষৎকারে প্রধান উপদেষ্টা
  • ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলা, নিহত অন্তত ৩, আহত কয়েক ডজন; ইরানেও চলছে হামলা
  • বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প
  • ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, ৪ জনই বরগুনার
  • আলীকদমে পর্যটক মৃত্যুর ঘটনায় ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ অ্যাডমিন বর্ষা ইসলাম গ্রেপ্তার
  • ইরান হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলকে শতাধিক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র

Related News

  • ঢাকাই ছবির অস্ত্রশস্ত্র: নূরুর কারিগরি, জসিমের স্টাইল এবং ছিটকিনি ও রুহ আফজা
  • কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই
  • সরকারি চাকরি ছেড়েছেন, ৩০০ ছবির গল্প লিখেছেন, ৭৯ বছর বয়সেও এফডিসির ‘সিনিয়র ইয়াংম্যান’
  • কেন নাচ-গান, মারপিট আর কাল নাগিনীর বিষে ভরপুর ছিল চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের ভাষা?
  • সিনেমা হল থেকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক: যেভাবে টিকে আছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ’: দ্য গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে সাক্ষৎকারে প্রধান উপদেষ্টা

2
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলা, নিহত অন্তত ৩, আহত কয়েক ডজন; ইরানেও চলছে হামলা

3
আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ থেকে ঝুট কাপড় সরবরাহ বন্ধে বিপাকে ভারতের পানিপথের টেক্সটাইল রিসাইক্লিং শিল্প

4
বাংলাদেশ

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু, ৪ জনই বরগুনার

5
বাংলাদেশ

আলীকদমে পর্যটক মৃত্যুর ঘটনায় ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ অ্যাডমিন বর্ষা ইসলাম গ্রেপ্তার

6
আন্তর্জাতিক

ইরান হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলকে শতাধিক হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab