Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

'প্রাচ্যের রানি' চট্টগ্রামের নামের খোঁজে, বদল হয়েছিল ৪৮ বার!

এ নামবদলের সংখ্যা কারও মতে বত্রিশ, কারও মতে ছত্রিশ, কারও মতে আটচল্লিশ। আর এসব নাম খুঁজে পাওয়া যায় এ অঞ্চলে দখল করতে আসা এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিব্রাজক, ভূগোলবিদ ও পণ্ডিতদের লিখিত বিবরণে, অঙ্কিত মানচিত্রে, শাসক সুলতান, রাজা-বাদশাদের মুদ্রায়।
'প্রাচ্যের রানি' চট্টগ্রামের নামের খোঁজে, বদল হয়েছিল ৪৮ বার!

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
14 October, 2024, 02:40 pm
Last modified: 14 October, 2024, 02:41 pm

Related News

  • ছবি | কর্ণফুলী রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে চট্টগ্রামে সাম্পান বাইচ
  • এলএনজি সংকটে চট্টগ্রামে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি, বিপর্যয়ে শিল্প খাত
  • বাঁশখালীতে আবারও বন্য হাতি হত্যার অভিযোগ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে পুঁতে রাখা হয়
  • চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭৩ শতাংশ রিসাইক্লিং হচ্ছে: কর্মশালায় বক্তারা 
  • আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ আদালতের

'প্রাচ্যের রানি' চট্টগ্রামের নামের খোঁজে, বদল হয়েছিল ৪৮ বার!

এ নামবদলের সংখ্যা কারও মতে বত্রিশ, কারও মতে ছত্রিশ, কারও মতে আটচল্লিশ। আর এসব নাম খুঁজে পাওয়া যায় এ অঞ্চলে দখল করতে আসা এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিব্রাজক, ভূগোলবিদ ও পণ্ডিতদের লিখিত বিবরণে, অঙ্কিত মানচিত্রে, শাসক সুলতান, রাজা-বাদশাদের মুদ্রায়।
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
14 October, 2024, 02:40 pm
Last modified: 14 October, 2024, 02:41 pm
১৮১৩ সালের চট্টগ্রাম, চিত্রশিল্পী জেমস জর্জ। ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে চট্টগ্রাম নগরীর সমতূল্য বোধহয় এ পূর্ববঙ্গে আর দ্বিতীয়টি নেই। পাহাড় ঘেরা, সমুদ্রঘেরা এ অঞ্চলটি সৌন্দর্যের দিক থেকে যেমন ঈর্ষণীয়, অর্থনৈতিকভাবেও তেমনই সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আবার নগরী হিসেবেও এর ইতিহাস, ঐতিহ্য হাজার বছরের প্রাচীন।

চট্টগ্রামকে বলা হয় 'প্রাচ্যের রানি'। আর রানির ওপর আক্রমণও এসেছে বারবার। যেহেতু অঞ্চলটি আলাদা করে কোনো রাজ্যের অধীনে ছিল না, ফলে বারবারই এর শরীরে আঁচড় লেগেছে বাইরের। তাছাড়া এ জনপদে আছে একটি প্রাচীন সমুদ্র বন্দর। পর্যটক স্ট্রাবোর বর্ণনানুযায়ী খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকেই চট্টগ্রাম বন্দরকে ধরা হতো আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে। সুতরাং একের পর এক বহিঃশক্তি এ অঞ্চলকে শাসন করবে সেটিই স্বাভাবিক।

যে কারণে এর নামও বদলেছে বারবার। যখন যে শক্তি শাসন করেছে, এ জনপদের নামকরণও তাদের ইচ্ছেমতই হয়েছে। ফলে নথিপত্র, ইতিহাস, স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে বৈচিত্র্যময় নানা নাম।

চট্টগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক প্রথম বই (এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে) 'চট্টগ্রামের ইতিহাস'-এ লেখক চৌধুরী শ্রীপূর্ণচন্দ্র দেববর্ম্মা তত্ত্বনিধি লিখেছেন, "প্রকৃতির লীলাভূমি 'শৈলকিরীটিনী' 'সাগরকুন্তলা' চট্টলভূমি ভারতের সুদূর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। ইহার নৈসর্গিক সৌন্দর্য এমন মনোহরী যে, বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ভ্রমণকারী ও ভাবগ্রাহীরা ইহাকে আপনাদের মনঃপুত কত কত বিভিন্ন নামে অভিহিত করিয়াছেন তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন।"

এ নামবদলের সংখ্যা কারও মতে বত্রিশ, কারও মতে ছত্রিশ, কারও মতে আটচল্লিশ। আর এসব নাম খুঁজে পাওয়া যায় এ অঞ্চলে দখল করতে আসা এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পরিব্রাজক, ভূগোলবিদ ও পণ্ডিতদের লিখিত বিবরণে, অঙ্কিত মানচিত্রে, শাসক সুলতান, রাজা-বাদশাদের মুদ্রায়।

বৌদ্ধ চৈত্যের অবস্থান ছিল বলে নাম চৈত্যগ্রাম

ধারাবাহিকভাবে এ অঞ্চলের শাসনকর্তা আর তাদের রেখে যাওয়া নামের বর্ণনা করলে প্রথমেই আসবে চট্টগ্রামের বৌদ্ধ রাজাদের কথা।

বর্মী ইতিহাস অনুসারে খ্রিষ্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে এ জনপদ ছিল বৌদ্ধ রাজাদের শাসনাধীনে। আর চট্টগ্রামের বাঙ্গালি বৌদ্ধরা মনে করেন, প্রাচীনকালে এখানে অসংখ্য বৌদ্ধ চৈত্যের অবস্থান ছিল বলে এই স্থানের নাম চৈত্যগ্রাম।

চৈত্য অর্থ মন্দির বা বিহার। কারও কারও ধারণা, বৌদ্ধদের স্বর্ণযুগে শহর ও আশপাশের এলাকাকে আরাকানিরা 'চিটাগুং' নামকরণ করেন।

গরম পানি বের হতো বলে

আরেকটি প্রাচীন নাম, 'জালন্ধর'। ধারণা করা হয়, জালন্ধরীপা নামে এক বৌদ্ধ সিদ্ধপুরুষ এই নাম দিয়েছেন বলে। সাংবাদিক ও গবেষক জামাল উদ্দীন তার 'চট্টগ্রামের ইতিহাস' বইয়ে লিখেছেন, জনপদটিতে না-কি গরম জল প্রবাহিত হতো। এ অঞ্চলের সীতাকুণ্ড, বারবকুণ্ড তার অন্যতম প্রমাণ।

তিব্বতি ঐতিহাসিক সুম্পা খান পো তার 'পাকসাম জোন-জান' গ্রন্থে লিখেছেন, সেকালে এ ভূখণ্ডের কোথাও কোথাও ভূগর্ভস্থ আগুনের তপ্ত জলধারা নিঃসৃত হতো বলেই নামকরণ এমন হয়েছিল। কালক্রমে এ নাম বিবর্তিত হয়ে 'জলন্দর' বা 'জালন্ধর' নামে খ্যাত হয়।

জলন্দর নামের আরবি রূপ আবার সামন্দর। আরব ভূগোলবিদদের কাছে 'জালন্ধর' পরিচিতি পায় 'সামন্দর' নামে। আরব্য ভৌগোলিক খুরদাদ বিহ তার 'কিতাবুল মসালিক আল সমালিক' বইয়ে এ অঞ্চলকে উল্লেখ করেছেন 'সামন্দর' নামে। এখানেও 'সাম' মানে আগুন আর 'আন্দোর' মানে ভেতর। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, বারবকুণ্ড এলাকার কোনো কোনো পাহাড় থেকে এখনও এ গরম জল প্রবাহিত হয়!

রাজা যুদ্ধ করবেন না, আর সেই থেকে নাম হয়ে গেল…

ইতিহাসগ্রন্থগুলোতে ঠিক এ সময়টিতেই আরও একটি নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় দশম শতকের মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ছিল প্রাচীন আরাকান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। তৎকালীন আরাকান রাজা এ অঞ্চলের বিদ্রোহী সুলতানকে দমন করতে এসে সীতাকুন্ডে একটি পাথরের বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করেন এবং তাতে বানীস্বরূপ 'চিৎ-তৌ-গৌং' লিখে যান। আরাকানি ভাষায় 'চিৎ-তৌ-গৌং' শব্দের অর্থ যুদ্ধ থামানো বা যুদ্ধ করা অনুচিত।

জামাল উদ্দীন তার 'চট্টগ্রামের ইতিহাস' গ্রন্থে এক রাখাইন গবেষকের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সেই ব্যাখ্যায় বলা হয়, যুদ্ধের ভয়াবহতা আরাকান রাজাকে গভীরভাবে অনুতপ্ত করে তোলে। চট্টগ্রাম পৌঁছে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে আর যুদ্ধ করবেন না। সেভাবেই 'চিৎ-তৌ-গৌং' কথাটি বিকৃত হয়ে বিজয় স্তম্ভের আশপাশের জনপদের নাম হয় 'চাটিগাঁ'।

গৌড়ের রাজা গনেশ বা দনুজ মর্দন এবং রাজা মহেন্দ্র দেবের সময়ে তৈরি মুদ্রার টাকশালে 'চাটিগ্রাম' নামটি পাওয়া যায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগে এ অঞ্চল 'চাটিগ্রাম' নামে পরিচিত ছিল।

উনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামে লেফটেন্যান্ট বুর্কের বাড়ির একটি চিত্র। ধারণা করা হয়, এটি বর্তমান আন্দারকিল্লা মোড়। ছবি: ফিলিপ থর্ন্টন/ফেইসবুক

পর্যটক আর স্থানীয়দের দেওয়া নামের মিল নেই

এ দশম শতকেই আরব্য বণিকেরা চট্টগ্রামে আসা শুরু করে। তারা এ জনপদকে 'শাৎগাঙ' বা 'শাৎগাঁও' নামে ডাকত। আরবি শব্দ 'শাৎ' মানে বদ্বীপ এবং 'গাঙ' অর্থ গঙ্গা নদী। গঙ্গার মুখস্থিত বদ্বীপ অঞ্চল হিসেবে চট্টগ্রামকে আরব্য বণিকরা 'শাৎগাঙ' নামে ডাকতেন, যা পরবর্তীতে বিকৃত হয়ে 'চাটগা' বা 'চাটিগাঁও' হয়।

তবে এগার শতকের আরব্য ভ্রমণকারী আল ইদ্রিসীর বইতে কর্ণফুলী নদীর নামানুসারে এ জনপদের নাম লেখা আছে 'কর্ণবুল'।

১২৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চট্টগ্রামে রাজত্ব করেন ত্রিপুরার মহারাজ দামোদর দেব। তার নামাঙ্কিত ১২৪৩ সালের তাম্রশাসন থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়। তার হাত থেকেই সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম দখল করেন। তার চট্টগ্রাম বিজয়ের আগে থেকেই চট্টগ্রাম 'চাটিগাঁও' নামে পরিচিত ছিল।

মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে আসাম ও বাংলা ভ্রমণ করেন। তার ভ্রমণ কাহিনিতে এ জনপদের নাম তিনি লিখেছেন 'সোদকাওয়ান' বা 'সতের কাউন'।

একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আল ইদ্রিসী ও ইবনে বতুতা কারও সঙ্গেই স্থানীয়দের দেওয়া নামের কোনো মিল পাওয়া যায়নি!

নামকরণের সঙ্গে জড়িত আধ্যাত্মিক কাহিনীও

চট্টগ্রামের নামকরণের সঙ্গে পীর হযরত বদর শাহ (র.)-এর আধ্যাত্মিক কাহিনিও জড়িয়ে আছে। এখানকার মুসলমানদের মুখে মুখে ভেসে বেড়ানো এই কাহিনিটি এখনও বেশ প্রচলিত।  

সেকালে চট্টগ্রাম ছিল 'জীন-পরী অধ্যুষিত' দেশ। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হযরত বদর শাহ (র.) চট্টগ্রামে এসে দৈত্য-দানবদের কাছ থেকে এক 'চাটি' পরিমাণ জায়গা এবাদতের জন্য চেয়ে নেন। 'চাটি' অর্থ মাটির প্রদীপ। শর্ত ছিল, প্রদীপের আলো যতখানি স্থান আলোকিত করবে, ততখানি জায়গা বদর শাহ পাবেন। তার চাটির আলো ও আজানের ধ্বনি শুনে এ এলাকায় থাকা জীন-পরীরা সব পালিয়ে যায়। এভাবেই 'চাটি' শব্দ থেকে 'চাটিগাঁও' নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

চৌদ্দশ ও পনেরোশ শতাব্দীতে গৌড়ের সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ (১৩৮৯–১৪০৯)ও জামাল উদ্দিন মোহাম্মদ শাহের (১৪১৮–১৪৩২) মুদ্রাতে অবশ্য 'চাটগাঁও' টাকশালের নামটি পাওয়া যায়।

চট্টভট্ট ব্রাহ্মণের নামানুসারে

চট্টগ্রামের হিন্দুদের মতে, এ জনপদে কুলীন ব্রাহ্মণদের বসবাস বেশি ছিল, যাদের পদবী ছিল চক্রবর্তী ও চট্টোপাধ্যায়। তাদের প্রভাবে এ অঞ্চলের নাম হয় 'চট্টল' বা 'চট্টলা'।

পুরাণ ও তান্ত্রিক গ্রন্থগুলোতেও চট্টলের উল্লেখ পাওয়া যায়। দেবী পুরাণ, চুরামণি তন্ত্র, বরাহী তন্ত্র, যোগিনী তন্ত্রে 'চট্টল' শব্দের ব্যবহার রয়েছে। পার্বত্য ত্রিপুরার রাজন্য কাহিনি 'রাজমাতা'র লেখকের মতে, প্রাচীনকালে এখানে 'চট্ট ভট্ট' নামক এক কুলীন ব্রাহ্মণ জাতির বসবাস ছিল, যা থেকে 'চট্টল' নামের উৎপত্তি হয়। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে চীনা পরিব্রাজক হিউয়াং-সাংও এ জনপদের নাম 'শ্রী চট্টল' বলে বর্ণনা করেছেন।

আরাকানবাসীদের দেওয়া নাম

চট্টগ্রামের আরেকটি প্রাচীন নাম 'রোসাঙ্গ'। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্ব তীর থেকে নাফ নদীর উত্তর তীর পর্যন্ত এলাকা 'রোসাঙ্গ' নামে পরিচিত ছিল। মধ্যযুগে চট্টগ্রাম ছিল আরাকানি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। আরাকানবাসীরা চট্টগ্রামকে 'আনক', 'আনফ' বা 'পশ্চিম দেশ' নামে ডাকত।

মধ্যযুগে আরাকানের রাজধানী ছিল 'ম্রোহাং'। এ জনপদের মানুষ ম্রোহাংকে বিকৃতভাবে উচ্চারণ করে বলত 'রোহাং। 'রোহাং-এর লেখ্যরূপ 'রোসাঙ্গ। চট্টগ্রামের সঙ্গে আরাকানের সম্পর্ক প্রাচীনকাল থেকে। খ্রিস্টিয় চার-পাঁচ শতক পর্যন্ত আরাকান এবং চট্টগ্রাম মিলে একটি অঞ্চল ছিল।

পদ্মাবতী নামেও ডাকা হতো

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভূখণ্ড হিসেবে চট্টগ্রাম সুনির্দিষ্টভাবে সর্বপ্রথম চিহ্নিত হয় 'আইন-ই আকবরী'তে। সেখানে এ অঞ্চলের নাম লেখা আছে, সরকার–এ–চাটগাঁও হিসেবে।

অনেকদিন মগ ও ত্রিপুরা রাজার শাসনাধীন থাকার কারণে একে 'পদ্মাবতী' নামেও ডাকা হতো চট্টগ্রামকে।

রঙ-তুলিতে ১৮২২ সালের চট্টগ্রাম। ছবি: ফিলিপ থর্ন্টন/ফেইসবুক

হোসেন শাহের ছেলে নুসরত শাহ ১৫১৩ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জয় করেন। তিনি এর নাম দেন 'ফদহ-ই-আবাদ'। যা 'ফতেয়াবাদ' নামে পরিচিতি পায় পরে। 'লায়লি-মজনু' কাব্যগ্রন্থেও এ একথার উল্লেখ পাওয়া যায়।

এরপর ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম অধিকার করলে তিনি আরঙ্গজেবের ইচ্ছেনুসারে এর নাম রাখেন 'ইসলামাবাদ'।

চট্টগ্রামের চাটির আলো দেখা যেত সমুদ্র থেকে

পর্তুগিজ বণিকদের কাছে চট্টগ্রাম 'পোর্টো গ্রান্ডে' নামে পরিচিত ছিল প্রথমদিকে। পরবর্তীকালে এ অঞ্চলে বাণিজ্যের অনুমোদন পেলে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী বর্তমান আনোয়ারা-কর্ণফুলীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত দেয়াং পাহাড়ে পর্তুগীজদের একটি প্রধান আড্ডা গড়ে ওঠে। 

বাণিজ্যের সুবিধার জন্য সমুদ্রের তীরবর্তী এ দেয়াং পাহাড়ে চাটিগুলো [মাটির প্রদীপ] সারিসারিভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হতো। ঐ আলো দেখা যেত গভীর সমুদ্র থেকে। সেই সারি সারি চাটি থেকে চাটিগ্রাম নামটি উৎপন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি নিয়ে আজও রয়েছে জটিলতা

লিখিত ইতিহাসে এ জনপদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় গ্রিক ভূগোলবিদ প্লিনির লিখিত 'পেরিপ্লাস' বইয়ে। সেখানে 'ক্রিস' নামে একটি স্থানের বর্ণনা আছে। 

ইতিহাসবিদ নলিনীকান্ত ভট্টশালীর মতে, সেটি বর্তমানের সন্দ্বীপ। ইতিহাসবিদ ল্যাসেনের ধারণা, সেখানে উল্লিখিত 'পেন্টা পোলিশ' আদতে চট্টগ্রামেরই আদিনাম।

তবে হারুনর রশীদের 'উপনিবেশ চট্টগ্রাম' বইয়ে তিনি জানান, "টলেমির মানচিত্রে 'কাতাবেদা' নামে কর্ণফুলী নদী বা 'পেন্টাপলিস' নামের বাণিজ্যকেন্দ্র আর 'পেরিপ্লাস' বইয়ে নাবিকের উল্লেখিত 'গাঙ্গে' শহর সব এক সূত্রে গাঁথা।' অর্থাৎ কাতাবেদা, পেন্টাপলিস আর গাঙ্গে এ সবই চট্টগ্রামের আরেক নাম।

তুর্কি সুলতান সোলায়মানের রেডফ্লিটের ক্যাপ্টেন সিদি আলী চেহেলভি ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে জাহাজে ভারত মহাসাগরের আশপাশের দেশগুলো ভ্রমণ করেন। সে সময় তিনি আরাকান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন। ভ্রমণ কাহিনিতে তিনি চট্টগ্রামের নাম 'শাতজাম' লিখেছিলেন।

অন্যদিকে ব্রিটিশ লেখক এবং পর্যটকদের লেখনীতেই এই অঞ্চলের নাম একেকবার একেক নাম এসেছে। যেমন ব্রিটিশ লেখক মি. ও'মলির মতে, সংস্কৃত 'চর্তুগ্রাম' বা 'চারিগ্রাম' থেকে 'চাটিগাঁও' নামের উৎপত্তি। অন্যদিকে ইংরেজ ভ্রমণকারী রালফ ফিচ এ জনপদের নাম 'রামেশ' লিখেছিলেন।

এর আগে পরিব্রাজক রালফ ফিচ ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পরিভ্রমণ করেন। তার লিখিত ভ্রমণ কাহিনিতে চট্টগ্রামের নাম 'চার্টিগান' লেখা আছে। ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্যান্ডেন ব্রুক অঙ্কিত মানচিত্রে চট্টগ্রামের নাম 'জেটিগা' রূপে লেখা আছে।

মীর কাশিম আলী খানের কাছ থেকে এ জেলাটি অধিগ্রহণের পর ব্রিটিশরা এর নামকরণ করে 'চিটাগাং'। ইতিহাসবিদ আবদুল করিম লিখেছেন, এ জনপদের নামকরণ 'চট্টগ্রাম' হয় উনিশ শতকে।

এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়াম জোনসের মতে, এ অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর ক্ষুদে পাখি 'চটগা' থেকে 'চট্টগ্রাম' নামের উৎপত্তি।

অর্থাৎ এক চট্টগ্রামের নামই আছে শুধু ত্রিশ–চল্লিশটি। বলা বাহুল্য, গবেষক ও ইতিহাসবিদগণ এসব নাম নিয়ে নানা মতভেদ রেখেছেন। ঠিক কোন নাম থেকে আজকের এ চট্টগ্রাম তা সত্যি বলা দায়। 

আর তা হবেই বা না কেন? প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে পরিচিত ঢাকা হলো পৃথিবীর অন্যতম এক প্রাচীন নগরী। যার বয়স চারশোর কিছু বেশি। অথচ, প্রাচ্যের রানী নামে খ্যাত চট্টগ্রাম নগরী তারও ছয়শো বছর আগের প্রাচীন নগরী। 

খ্রিষ্টীয় সপ্তম অষ্টম দশক থেকেই এ জনপদের ইতিহাস পাওয়া যায় পুরাণসহ বিভিন্ন পর্যটক, ব্যবসায়ী বণিক আর বিদেশি লেখকদের বিবরণীতে।

ফলে এর ইতিহাস জানতে গেলে যেমন যেতে হয় অনেক দূর, তেমনি তৈরি হয় নানা জটিলতাও।


তথ্যসূত্র:

১) চট্টগ্রামের অতীত ও ঐতিহ্য, তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী
২) চট্টগ্রামের ইতিহাস, জামাল উদ্দীন
৩) উপনিবেশ চট্টগ্রাম, হারুন রশীদ
৪) চট্টগ্রামের প্রাচীন ইতিহাস, সুনীতিকুমার কানুনগো

Related Topics

টপ নিউজ

চট্টগ্রাম / প্রাচ্যের রানি / নামকরণ / নামকরণের ইতিহাস

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদেরকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘভাতা দেওয়ার সম্ভাবনা
  • পরিত্যক্ত মার্কিন গবেষণায় ভর করে পারমাণবিক শক্তিতে বড় অগ্রগতি চীনা বিজ্ঞানীদের
  • ভারত-পাকিস্তান বড় বড় দাবি করলেও—স্যাটেলাইট চিত্র বলছে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত
  • আইএমএফ ঋণ পেতে বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর ঘোষণা গভর্নরের
  • ভাড়ার যুদ্ধে কারা জিতছে: অ্যাপ না-কি খ্যাপ?
  • সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরামর্শ

Related News

  • ছবি | কর্ণফুলী রক্ষায় সচেতনতা তৈরিতে চট্টগ্রামে সাম্পান বাইচ
  • এলএনজি সংকটে চট্টগ্রামে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ঘাটতি, বিপর্যয়ে শিল্প খাত
  • বাঁশখালীতে আবারও বন্য হাতি হত্যার অভিযোগ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে পুঁতে রাখা হয়
  • চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্যের ৭৩ শতাংশ রিসাইক্লিং হচ্ছে: কর্মশালায় বক্তারা 
  • আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ আদালতের

Most Read

1
অর্থনীতি

জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদেরকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘভাতা দেওয়ার সম্ভাবনা

2
আন্তর্জাতিক

পরিত্যক্ত মার্কিন গবেষণায় ভর করে পারমাণবিক শক্তিতে বড় অগ্রগতি চীনা বিজ্ঞানীদের

3
আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান বড় বড় দাবি করলেও—স্যাটেলাইট চিত্র বলছে ক্ষয়ক্ষতি সীমিত

4
অর্থনীতি

আইএমএফ ঋণ পেতে বাজারভিত্তিক ডলার রেট চালুর ঘোষণা গভর্নরের

5
ফিচার

ভাড়ার যুদ্ধে কারা জিতছে: অ্যাপ না-কি খ্যাপ?

6
বাংলাদেশ

সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য-শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরামর্শ

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab