Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ইতিবৃত্ত: কারিগরেরা কতটুকু জানেন

একনাগারে খটর খটর খটর শব্দ চলতেই থাকে। এভাবেই দেড়দিনে একেকটা সুতোর বুনন একটা পুরো তাঁতের শাড়িতে রূপ নেয়। টাঙ্গাইল জেলার পাথরাইলে বসাকদের তাঁতঘরে তাঁতশিল্পীদেরকে দেখলাম চিরচেনা রূপে। অবশ্য চিরচেনা বলাটা ভুল, এই দৃশ্য ইতোমধ্যেই বেশ অপরিচিত হতে শুরু করেছে পাওয়ারলুমের যুগে। 
টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ইতিবৃত্ত: কারিগরেরা কতটুকু জানেন

ফিচার

অনুস্কা ব্যানার্জী
02 May, 2024, 09:10 pm
Last modified: 04 May, 2024, 12:16 pm

Related News

  • প্রতিষ্ঠাতার পর উত্তরাধিকারীদের হাতে কেন টেকে না বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসা
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এসএএইচআর প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
  • টিকাদানের মাধ্যমে বছরে শিশু মৃত্যুর হার ৮১.৫ শতাংশ কমেছে
  • যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশ ইন করা হচ্ছে, দাবি বিএসএফ মহাপরিচালকের
  • এক বছর ধরে স্থবিরতার পর আনুষ্ঠানিক চাকরির বাজারে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ইতিবৃত্ত: কারিগরেরা কতটুকু জানেন

একনাগারে খটর খটর খটর শব্দ চলতেই থাকে। এভাবেই দেড়দিনে একেকটা সুতোর বুনন একটা পুরো তাঁতের শাড়িতে রূপ নেয়। টাঙ্গাইল জেলার পাথরাইলে বসাকদের তাঁতঘরে তাঁতশিল্পীদেরকে দেখলাম চিরচেনা রূপে। অবশ্য চিরচেনা বলাটা ভুল, এই দৃশ্য ইতোমধ্যেই বেশ অপরিচিত হতে শুরু করেছে পাওয়ারলুমের যুগে। 
অনুস্কা ব্যানার্জী
02 May, 2024, 09:10 pm
Last modified: 04 May, 2024, 12:16 pm

খটরখটর শব্দ। সারি সারি সেকেলে তাঁত যন্ত্র । কাঠ আর লোহার কলকব্জা। দড়ির সাহায্যে একেকজন তাঁতশিল্পী কাজ করে চলেছেন কলকব্জাগুলোকে নিয়ে। শুধু হাত নয়, সমানতালে চালাতে হচ্ছে পা। দড়ির প্রত্যেক টানে শাড়ির সুতো বুননের সূক্ষ্ম কাজ চলছে। হাতের দুপাশে নানা রঙের সুতোর গুটি। সুতোর রঙ বদলাচ্ছে শাড়ির চাহিদামাফিক। কয়েক ছাঁচের কাঠের নকশা ঝুলছে তাঁতযন্ত্রের উপরের দিকটাতে। পাড়ের নকশা বদলাতে ছাঁচ বদলে দিচ্ছেন শিল্পী। 

একনাগারে খটর খটর খটর শব্দ চলতেই থাকে। এভাবেই দেড়দিনে একেকটা সুতোর বুনন একটা পুরো তাঁতের শাড়িতে রূপ নেয়। টাঙ্গাইল জেলার পাথরাইলে বসাকদের তাঁতঘরে তাঁতশিল্পীদেরকে দেখলাম চিরচেনা রূপে। অবশ্য চিরচেনা বলাটা ভুল, এই দৃশ্য ইতোমধ্যেই বেশ অপরিচিত হতে শুরু করেছে পাওয়ারলুমের যুগে। 

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী/ টিবিএস

বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের খ্যাতি বেশ প্রাচীন ঘটনা তা জানা যায় বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার ভ্রমণবৃত্তান্তে বাংলার তাঁতবস্ত্র সম্পর্কে উল্লেখে। দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর গবেষণাধর্মী বই "বৃহৎবঙ্গ" তে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, 'বঙ্গদেশ বস্ত্র-বয়ন শিল্পের জন্মভূমি'। বসরার যেমন গোলাপ, হিমালয়ের যেমন দেবদারু, বস্ত্র-বয়ন শিল্প তেমনি বঙ্গের নিজস্ব। এক্ষেত্রে বাংলার বাঙালির প্রতিদ্বন্দ্বী নাই'। 

বস্ত্রশিল্পে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাঙালির শাড়ির রকমফের থাকবে, এ আর আশ্চর্য কী? তা এই শাড়ির রকমসকমের মধ্যে  ''টাঙ্গাইল'' ঘরানার বয়স কম করে হলেও একশো তিরিশ তো বটেই। তবু এ বয়েস  মসলিন, জামদানি, বালুচরি, শান্তিপুরির কাছে নস্যি। সুতোর সূক্ষ্ম কাজ, বৈচিত্র্যময় রঙ, মিহি কাপড় আর পাড়ের নকশা টাঙ্গাইল শাড়িকে করেছে অনন্য, রেখেছে আলাদা কাতারে।

ছবি: মেহেদি হাসান/ টিবিএস

কথিত আছে, বুননশিল্পীদের কোনো বাসস্থান সেভাবে ছিল না। তারা কাজের তাগিদে বদলাতেন বাসের জায়গা। আবার কেউ কেউ বলেন, এদের পূর্বপুরুষদের আবাস ছিল সিন্ধু নদের তীরে। রাজা লক্ষ্মণ সেনের আমলে বুননশিল্পীদের একটা অংশ ভাগ্যের সন্ধানে সিন্ধু অববাহিকা থেকে ধামরাই হয়ে টাঙ্গাইলে আসতে শুরু করে। তাদের কারো কারো বসতি গড়ে ওঠে টাঙ্গাইল ও এর আশেপাশের জায়গাতে, আর কেউ বা ধামরাইয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। 

ধামরাইয়ের বুননশিল্পীরা পেশা পরিবর্তন করলেও - টাঙ্গাইলে আসা শিল্পীরা তাদের জীবিকাকে ধরে রেখেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতা রয়েছে এখন পর্যন্ত। এদিকে ১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাক দিলেন। সেসময় থেকে বাংলার বস্ত্রশিল্পের এক নতুন সূচনা ঘটলো। পুরান ঢাকা, সোনারগাঁও, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁতশিল্প নতুন করে প্রাণ পেল।

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী/ টিবিএস

সত্তরের দশকের অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত মৌচাক সিনেমায় "এবার মলে সুতো হবো, তাঁতির ঘরে জন্ম লব" গানের দৃশ্যে সাবিত্রী দেবীকে খুঁজে পাবেন সোনালী সুতোর কাজ করা খয়েরি রঙের তাঁতের শাড়িতে। আবার পরিচালক শক্তি সামন্তের অমানুষ সিনেমায় "যদি হই চোরকাঁটা ওই শাড়ির ভাঁজে" গানে শর্মিলা ঠাকুরকে পরতে দেখবেন 'ডবি' নকশায় বোনা হলুদ রঙের তাঁতের শাড়ি। এই দুটি শাড়িই ছিল টাঙ্গাইলের তাঁতের। 

সত্তরের দশকে টাঙ্গাইলের তাঁতের প্রচলন এবং হাল-ফ্যাশনের সাথে সেটি ঠিক কেমনভাবে জড়িয়ে ছিল– তা বোঝা যায় সিনেমা দুখানার দুটি দৃশ্য থেকে। শুধু তাই নয়, বিট্রিশ-বিরোধী আন্দোলনের পর তাঁতবস্ত্রের প্রচলন যে হারিয়ে যায়নি, এতো তারও অকাট্য প্রমাণই বটে। 

টাঙ্গাইলের "বসাক" সম্প্রদায়ের মানুষ তিন থেকে চার পুরুষ ধরে জড়িয়ে রয়েছেন এই তাঁতশিল্পের সাথে। বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলার বাজিতপুর, সখীপুর, করটিয়া, সন্তোষ, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চণ্ডী, নলশোধা, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, কুকরাইল, বাসাইল উপজেলার বাথুলীসহ বিভিন্ন তাঁতপল্লীতে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করা হয়। শুধু পরিশ্রম নয়, তাঁতিদের নান্দনিক সত্তা, শিল্প নৈপুণ্য আর অভিজ্ঞতার কারণেই টাঙ্গাইল শাড়ি হয়ে উঠতে পেরেছে বিশ্বনন্দিত। হ্যাঁ, বিশ্বনন্দিত!

ছবি: মেহেদি হাসান/ টিবিএস

জিআই বৃত্তান্ত 

কোনো দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে এবং ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহ্যগতভাবে সেই পণ্যগুলোকে 'নিজস্ব' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে সেই পণ্যের উৎপত্তিস্থলের নামের উল্লেখ থাকে। সোজা কথায় বলতে গেলে, জিআই হচ্ছে একটি স্বীকৃতিপত্র যেখানে কোনো একটি পণ্যকে একটি বিশেষ জায়গার হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হয়। কেননা, সেই পণ্য সেই স্থানে, সেই পরিবেশে আদিকাল থেকে উৎপাদিত হচ্ছে। 

টাঙ্গাইল শাড়ি তুমি কার- এ প্রশ্ন নিতান্তই অবান্তর। কেননা, টাঙ্গাইল শাড়ির আদি উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশে – তা ছেলে-বুড়ো-শিশু সকলের জানা। এখনো পর্যন্ত টাঙ্গাইল তার তাঁতশিল্পের ঐতিহ্যকে বহাল তবিয়তে ধরে রেখেছে। কিন্তু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করে ভারত। আবেদনে টাঙ্গাইল শাড়িকে নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমানের পণ্য হিসেবে দাবি করা হয় । ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি জেনিভার ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (উইপো) সেই দাবিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি জানবার পর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ৬ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির আবেদন করে। পরে তা অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশ করে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর।

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী/ টিবিএস

কতটুকু জানেন শাড়ির খোদ কারিগরেরা? 

টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে এত হুলুস্থুল কাণ্ড! কিন্তু যে তাঁতিদের হাতে তৈরি হচ্ছে এই বিখ্যাত শাড়ি, তারা ঠিক কতটুকু জানেন? বাংলাদেশের এই শাড়ির মেধাস্বত্ব নিয়ে যাচ্ছে ভারত, কারিগররা কী ওয়াকিবহাল? প্রশ্ন নিয়ে হাজির হলাম টাঙ্গাইলের পাথরাইল তাঁতপল্লীতে। যেখানে তাঁতিরা স্বপ্ন বোনে শাড়ির সুতোয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উদয়অস্ত পরিশ্রমে বুনে তোলে টাঙ্গাইল তাঁত, বাহারি নকশা ফোটায় শাড়ির জমিনে।

বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে তাঁতযন্ত্রে শাড়ি বোনার কাজ করছিলেন কারিগর বুদ্ধেশ্বর মণ্ডল। সুতো বুননের কাজের ক্ষিপ্রতা বলে দিচ্ছিল এ তাঁতি পুরোনো, অভিজ্ঞ। কথা বলে জানা গেল, অনুমান একেবারে ভুল নয়। ৩০ বছর ধরে শাড়ি বোনার কাজ করেন বুদ্ধেশ্বর। তার বাপ-ঠাকুরদাও তাঁত বোনার কাজই করতেন। বাবার হাতে কাজের হাতেখড়ি। এরপর আর থেমে থাকেননি। বুনেছেন কত যে লাল, নীল, হলুদ তাঁতের শাড়ি। তার হিসেব রাখা হয়নি। বসাকদের এই তাঁতেও কাজ করছেন কম করে ১০ বছর। সপ্তাহে ৪টা শাড়ি বুনতে পারেন তিনি।

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী/ টিবিএস

দেশভাগের সময় টাঙ্গাইলের অনেক তাঁতি দেশ ছেড়ে চলে গেছে এ কথা তুললে বুদ্ধেশ্বর বলেন, তার কাকার পরিবার চলে গেছে বছর বিশেক আগে। দেশভাগের সময়টাতেই যে তাঁতিদের চলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়নি- এরপরও চলেছে নিরন্তর, তা বোঝা যাচ্ছিল বুদ্ধেশ্বরের কথায়। 

বুদ্ধেশ্বরের দেশের বাড়ি পাথরাইল থেকে মাইল দুই দক্ষিণে। একসময় তাদের নিজস্ব তাঁত ছিল। কাকাতো ভাইরা চলে যাওয়ার পর সেসব তাঁত সিকেয় উঠলো। জমিজিরেত, তাঁতযন্ত্র বিক্রি হয়ে গেল। পেটের তাগিদে তাদেরকে কাজ নিতে হলো বড় ব্যবসায়ীদের তাঁতে। বুদ্ধেশ্বর বললেন, "আমার কাকাতো ভাইয়েরা ওপারে টাঙ্গাইল শাড়ি বোনে বলেই শুনেছি। পূর্বপুরুষের পেশা। আর তো কোনো কাজ জানা নেই। এই কাজ না করলে খাবে কী?" তবে জিআই কী তা বোঝেন না তিনি। এমনকি ভারতের টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজস্ব দাবি করবার ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে কিছুই জানেন না। হয়তো জানেন তার মহাজন।

"এখন পাওয়ারলুমে শাড়ি তৈরি হয়। সেসব শাড়ি ৫০০/৬০০ টাকায় বিক্রি হয় বাজারে। আর আমাদের মজুরিই ৫০০। এত কম দামে হ্যান্ডলুমের শাড়ি দেয়া প্রায় অসম্ভব। তবু এরকমভাবে চলে যাচ্ছিল দিন। করোনার পর তাঁতের বাজার পড়ে গেল। এক ছেলে, এক মেয়ে, মা আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। এর আগে মজুরি যা ছিল তাতে বাজারসদাই করে চলে যেত। কিন্তু এখন খরচ বাড়লেও মজুরি বাড়েনি। বিগত ৪ বছর ধরে সংসার সেভাবে চলছে না। শুধু তাঁতের কাজই আমি শিখেছি, আর কিছু তো পারি না। তবে আমার সন্তানকে এই পেশায় আসতে দেব না। চাষবাস করে খাবে" – আক্ষেপের সুরে জানাচ্ছিলেন বুদ্ধেশ্বর।

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী/ টিবিএস

কাজীপুর গ্রামের কারিগর বাবলু। কথা বললাম বাবলুর সাথে। ৩৫ বছর ধরে তাঁতের কাজ করছেন বাবলু। মজুরি দেয়া হয় উৎপাদন হিসেবে, শাড়ি প্রতি ৫০০ টাকা। দিনে খুব চেষ্টা করলে একটা শাড়ি বোনা সম্ভব। তবে স্বাভাবিক গতিতে কাজ করলে একেকটা শাড়ি বুনতে লাগে দিন-দেড়েক। কখনো বা দুইদিন লেগে যায়। নকশার ওপর নির্ভর করে। তাঁতের কাজ করে ৫ জনের সংসার ঠিকমতন চলে না। তাই পাশাপাশি জায়গাজমি আবাদ করেন। সবমিলিয়ে খাওয়াপরাটা হয়ে যায়। জানাচ্ছিলেন বাবলু। 

টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারতের পণ্য দাবির ব্যাপারে বাবলু বলেন, এ সমস্ত ঘটনা কিছুই জানেন না তিনি। কিছুদিন যাবৎ কেউ কেউ এসে ছবি তুলে নিয়ে যায়, নাম জিজ্ঞেস করে এ পর্যন্তই। আর কিছু জানতে চায় না। তবে টাঙ্গাইলের শাড়ি ভারতের নয় বলেই মনে করেন তিনি। কারণ এ সমস্ত শাড়ি তার এবং তার ভাইদের নিজ হাতে বানানো। এর আগে বানিয়েছেন তার পূর্বপুরুষ। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন, টাঙ্গাইল শাড়ি কেমন করে ভারতের হয়? 

অপেক্ষাকৃত কম বয়সী কারিগর ইমরান। ইমরান ১৫ বছর ধরে তাঁতের কাজ করেন। রঘুনাথ বসাকের অধীনস্থ তাঁতে ঢুকেছেন সদ্য, বড়জোর ৫/৬ মাস। একসময় ওর বাড়িতে তাঁত ছিল, শাড়ি বানানো হতো। এখন আর হয় না – কেননা শাড়ির ব্যবসা নেই।

ইমরান জানালেন, তিনি জিআই এর ব্যাপারে শুনেছেন। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টি ধরতে পারেননি। টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে সেটা আন্দাজ করেছেন। "আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কথায় কী আসে যায়? আকাশে চাঁদ-সূর্য উঠলে সবাই দেখতে পায়। শাড়ি টাঙ্গাইলের তা কে না জানে?" বলছিলেন এই কারিগর।

ছবি: মেহেদি হাসান/ টিবিএস

পাথরাইলের তাঁতপল্লীর ভেতর ঢুকলে তাঁতিদের ঘরে এখনো দেখা যায় সুতা কাটবার চরকি। বিভিন্ন টিনশেড দেয়া ঘরে রাখা তাঁতযন্ত্রে কাজ করতে দেখা যাবে তাঁতশিল্পীদেরকে। কোনো বিরাম নেই কাজের, হাত-পা ছুটে চলেছে একটা নির্দিষ্ট তালে। শুধু শোনা যায় তাঁত যন্ত্রের শব্দ। 

কথা হলো টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এবং যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং এর স্বত্ত্বাধিকারী রঘুনাথ বসাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, "প্রায় ২৫০ বছরের কাছাকাছি সময়ের ধরে শাড়ির ব্যবসা তাদের। প্রধানমন্ত্রী তার তাঁতে বোনা শাড়ি পরেন। জিআই পণ্যটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। জিআই পণ্য নিয়ে বিভিন্ন খবর প্রচারের ফলে এই সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। আমরা টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি করি, বাজারজাত করি, টাঙ্গাইল শাড়ির গোড়াপত্তন হল টাঙ্গাইলে, এটা অন্য কেউ দাবি করে বসলো কেমন করে? টাঙ্গাইলের আবহাওয়া টাঙ্গাইল শাড়ির জন্য অনুকূল। ভারত কেন, বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলাতেও এই শাড়ি তৈরির উপযুক্ত জল-হাওয়া নেই। অন্য কেউ, অন্য কোথাও এই শাড়ি বানালে সেটি টাঙ্গাইল শাড়ি হবে না। তবে ভারত যখন ২০২০ সালে শাড়ির জিআই ট্যাগের ব্যাপারে আবেদন করেছিল, এটি নিয়ে আমাদের তখনই ভাবা উচিত ছিল। এই দেশ থেকে যে তাঁতিরা ভারতে চলে গিয়েছে, তাদের কাছেও আমি শুনেছি, তারাও চায় টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব বাংলাদেশ পাক। এর মধ্যেই শিল্পমন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিকভাবে জিআই ট্যাগ দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক রিট করবেন খুব শীঘ্রই।" 

ছবি: অনুস্কা ব্যানার্জী/ টিবিএস

টাঙ্গাইলের প্রখ্যাত শাড়ির দোকান যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং। যে কেউ এক নামে চেনে। শাড়ির মানও তেমনি। এই দোকানে শাড়ির দাম শুরু হয় ৫০০ টাকা থেকে। শাড়ি আছে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে আর বলছি কী! এই দোকানেই দেখা হলো এক ভারতীয় শাড়ি বিক্রেতার সাথে। নাম প্রকাশ না করবার শর্তে তিনি জানালেন, দশ বছর ধরে বাংলাদেশে টাঙ্গাইল শাড়ি কিনতে আসেন তিনি। কেননা, ভারতে 'খোদ' টাঙ্গাইল শাড়ির চাহিদা তুঙ্গে। ফুলিয়ার তাঁতিরা যে শাড়ি বানাচ্ছেন– তাও বিক্রি হয় অবশ্যই। তবে বাংলাদেশের আসল টাঙ্গাইল শাড়িকে টেক্কা দিতে পারে না। আর তার জন্যেই তিনি এখান থেকে শাড়ি কিনে নিয়ে যান। 

মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুব্রত ব্যানার্জি, মো. মনিরুজ্জামান মুজিব ও সুমনা শারমীনের 'স্ট্যাটাস অব হ্যান্ডলুম ওয়ার্কার্স অ্যান্ড কজেস অব দেয়ার মাইগ্রেশন: আ স্টাডি ইন হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রি অব টাঙ্গাইল ডিস্ট্রিক্ট, বাংলাদেশ' শীর্ষক একটি যৌথ গবেষণাপত্র রয়েছে। এখানে বসাক সম্প্রদায়ের তাঁতিদের ভারতে অভিবাসনের কারণ হিসেবে নিরাপত্তা শঙ্কা, সরকারি ঋণ সহায়তার অভাব এবং ভারতের উন্নততর সুবিধাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রেতা অজয় বসাকও বললেন সে কথা। ৪ পুরুষ ধরে শাড়ির ব্যবসা তার। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৫-৯০ সাল পর্যন্ত পাথরাইলের ৯০ ঘর তাঁতি ভারতে চলে গিয়েছেন বলে জানালেন তিনি। 

টাঙ্গাইলের পাথরাইল বাজারে নামলেই যেদিকে তাকানো যায় শুধু শাড়ি আর শাড়ির দোকান। শাড়ির দোকানগুলোর মাঝখানে একটা ছোটোখাটো অনাড়ম্বরহীন দোকানঘর দেখা গেল। তাঁতযন্ত্র মেরামতের দোকান এটি। দোকানটির মালিক গৌরাঙ্গ চন্দ্র বসাক বসে আছেন কিছু অকেজো তাঁতযন্ত্রের লোহালক্কর নিয়ে। দোকানটির আশেপাশে তেমন কোনো ভিড় নেই। গৌরাঙ্গ বসাক গল্প করতে শুরু করলেন। 

গৌরাঙ্গের বাবা কলকাতা থেকে কাজ শিখেছিলেন। বাবার আমল থেকে সার্ভিসিং এর কাজ করেন তিনি। তখন তাঁতযন্ত্রের ব্যবহার ছিল অনেক বেশি। সুতরাং একটা গরমিল দেখা দিলেই সার্ভিসিং এর দোকানে চলে আসতে হতো। তাই এই পেশাকেই বেছে নিয়েছিলেন বাপ-ছেলে। যুগের চাহিদায় পাওয়ারলুম এল। পাওয়ারলুমের জন্যে হ্যান্ডলুম মার খেয়ে গেল। তাঁতবস্ত্রের সাথে যাদের কোনো না কোনোভাবে– ভাত-ডাল জড়িত তারা পড়ে গেল মহামুশকিলে। এক নাগাড়ে বললেন গৌরাঙ্গ বসাক, যেন এই কথাগুলো বলবার জন্যেই কাউকে খুঁজছিলেন। 

দেশভাগের জেরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অধিকাংশই চলে যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বসবাস শুরু করেন নদিয়ার ফুলিয়ায়, পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রিগ্রাম, সমুদ্রগড়ে। এই জায়গাগুলি হয়ে ওঠে "তথাকথিত" টাঙ্গাইল শাড়ির কেন্দ্র। তাঁতের কাজকে কাজে লাগিয়েই ওপার বাংলায় রুটিরুজির যোগাড় করেছেন বাংলাদেশী অভিবাসী তাঁতিরা। আর ভারত সরকার তাদেরকে দিয়েছে উন্নত ব্যবস্থা, মানসম্মত সুতার যোগান, পর্যাপ্ত ঋণসুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু। যার কারণে ফুলিয়ার তাঁত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পেরেছে। 

কিন্তু বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাঁতি সম্প্রদায় যারা তাঁতশিল্পকে হাতে করে এখন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছে, তারা ঠিক কতটুকু প্রণোদনা পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখবার বিষয়। টাঙ্গাইল শাড়ির গৌরবময় অতীত ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সরকারি সহযোগিতা হতে হবে আন্তরিক। 

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগ বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকবার অবকাশ নেই। কিন্তু শুধু জিআই ট্যাগ পেয়ে শাড়ির অধিকার নিয়ে ক্ষ্যান্ত থাকলে চলবে না। টাঙ্গাইল শাড়িকে বাঁচাতে হলে– বাঁচাতে হবে তাঁতিদেরকে। প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা, পর্যাপ্ত ঋণ আর প্রচার-প্রচারণায় তাঁতশিল্পকে যত্নে বাঁচাতে হবে। নতুবা টাঙ্গাইল শাড়ি হয়ে যাবে কোনো গল্পকথা। তাঁতিদের পরের প্রজন্ম হয়তো না খেয়ে মরবার ভয়ে এই পেশায় আর থাকতে চাইবেন না। 

Related Topics

টপ নিউজ

টাঙ্গাইল শাড়ি / জিআই স্বীকৃতি / তাঁতশিল্প / তাঁতি / বাংলাদেশ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নিজস্ব সব শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিলেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান
  • মোটরসাইকেল কিনতে সুদমুক্ত ঋণ পাবেন এসআই ও এএসআইরা, থাকবে জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধাও
  • আজ থেকে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হবে স্বর্ণ
  • মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে নতুন শহরের জন্ম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • একীভূত হতে রাজি ইউনিয়ন, সময় চায় এক্সিম ব্যাংক
  • দেশের বাজারে বিশ্বমানের চায়ের ব্র্যান্ডিংয়ে নতুন সম্ভবনা তৈরি করল হালদা ভ্যালি

Related News

  • প্রতিষ্ঠাতার পর উত্তরাধিকারীদের হাতে কেন টেকে না বাংলাদেশের পারিবারিক ব্যবসা
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এসএএইচআর প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
  • টিকাদানের মাধ্যমে বছরে শিশু মৃত্যুর হার ৮১.৫ শতাংশ কমেছে
  • যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুশ ইন করা হচ্ছে, দাবি বিএসএফ মহাপরিচালকের
  • এক বছর ধরে স্থবিরতার পর আনুষ্ঠানিক চাকরির বাজারে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত

Most Read

1
অর্থনীতি

নিজস্ব সব শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিলেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

2
বাংলাদেশ

মোটরসাইকেল কিনতে সুদমুক্ত ঋণ পাবেন এসআই ও এএসআইরা, থাকবে জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধাও

3
বাংলাদেশ

আজ থেকে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হবে স্বর্ণ

4
বাংলাদেশ

মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে নতুন শহরের জন্ম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

5
অর্থনীতি

একীভূত হতে রাজি ইউনিয়ন, সময় চায় এক্সিম ব্যাংক

6
ফিচার

দেশের বাজারে বিশ্বমানের চায়ের ব্র্যান্ডিংয়ে নতুন সম্ভবনা তৈরি করল হালদা ভ্যালি

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab