Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
May 18, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, MAY 18, 2025
আটটি আন্ডা এবং ঢাকা ক্লাবের পূর্বসূরী আন্টাঘরের গল্প

ফিচার

সালেহ শফিক
25 December, 2023, 01:30 pm
Last modified: 25 December, 2023, 01:32 pm

Related News

  • সেকালের গঙ্গাজলি আজকের নূর মার্কেট: কেমন ছিল গঙ্গাজলি, কারা থাকত সেখানে
  • অতীতের রাজধানী: কেমন ছিল ঢাকার কার্জন হল, মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড, ভুলভুলাইয়া বা দিলখুশা…
  • আগ্রার মুবারক মঞ্জিল ধ্বংস করে ভারত নিজেদেরই ক্ষতি করেছে: ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ড্যালরিম্পল
  • হোটেল শাহবাগ: এক বাড়ির তিন কাল; নাচঘর, হোটেল, হাসপাতাল
  • যেভাবে ফিরিঙ্গিদের থেকে আজকের ফিরিঙ্গি বাজার

আটটি আন্ডা এবং ঢাকা ক্লাবের পূর্বসূরী আন্টাঘরের গল্প

প্রভূত বিত্তের অধিকারী হওয়ার কারণেই আর্মেনীয়দের নেতৃত্বে ঢাকায় প্রথম ইউরোপীয় স্টাইলের ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম আর্মেনীয় ক্লাব– লোকমুখে আন্টাঘর। নামকরণের হেতু অনেকেরই জানা-ঘরটি ছিল ওভাল শেপের, ঘরের মাঝখানে ছিল বিলিয়ার্ড বোর্ড। যে বল দিয়ে বিলিয়ার্ড খেলা হতো, সে আমলে সেগুলোও পুরো গোল হতো না। সাদা ও লাল বলগুলো তৈরি হতো চিনামাটি বা পাথর দিয়ে আর দেখতে ছিল আন্ডা বা ডিমের মতো।
সালেহ শফিক
25 December, 2023, 01:30 pm
Last modified: 25 December, 2023, 01:32 pm
১৯৭০ সালে বাহাদুর শাহ পার্ক বা আন্টাঘর ময়দান (ছবি: সংগৃহীত) ও ঢাকা কেন্দ্রে সংরক্ষিত আন্ডা বা বিলিয়ার্ড বল (ছবি: মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা)

সূফী ভাই (ইতিহাসবিদ হাশেম সূফী) যখন বললেন ১৮৩০ সালের দিকে আন্টাঘর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। জানতে চাইলাম, ওই সময়টার বিশেষ কী গুরুত্ব ছিল? সূফী ভাই ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সূত্র দিয়ে বিরতি নিলেন।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মোগল শাসক ও তাদের পদস্থ কর্মচারীদের যে বিপুলাকার সব জমিদারী ছিল– সেগুলো ভেঙে যেতে থাকে। ছোট ছোট বেশকিছু নতুন জমিদার তৈরি হয়। সেসঙ্গে লাখেরাজদার, ফৌজদার, তালুকদার, তহশিলদার, মুৎসুদ্দি, গোমস্তা, পাইকার, কয়াল পদবীধারীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। ফলাফলে কনজিউমার বা ভোক্তার সংখ্যা বেড়ে যায় আগের তুলনায় বেশি। সূফী ভাই একে মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সূচনাকাল ধরতে চান।

উটের পিঠে চেপে চালান আসত

ভোক্তা বেড়ে যাওয়ার ফলে বণিক গোষ্ঠীর বেশ সুবিধা হয়। বিশেষত, জাত ব্যবসায়ী আর্মেনীয়দের ঘরে মুনাফা উঠতে থাকে আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। ঢাকার  ডাচ, ফরাসী, পর্তুগীজ, ডেনিশ, ব্রিটিশ বা গ্রিক বণিকদের মতো তাদের সাগর ফুঁড়ে ভারতবর্ষে আসতে হয়নি। আর্মেনিয়া মধ্য এশিয়ার দেশ হওয়ায় সিল্ক রুট এবং গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রোড তাদের ভালো চেনা ছিল।  উট ও ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে তিন মাসে তারা অন্তত একটি চালান ঢাকায় নিয়ে আসতে পারত। সে চালানে সুগন্ধি, কসমেটিকস বা প্রসাধনী, শুকনো ফল, কাপড়-চোপড়, গহনা ইত্যাদি থাকত। মধ্য এশিয়ার ঘোড়ার সুখ্যাতি ছিল; তাই ঘোড়ার ব্যবসাও ছিল জমজমাট। 

ফিরতি চালানে মসলিন, মশলা, ধাতুর তৈরি দ্রব্য, কৃষিজাত পণ্য নিয়ে যেত তারা মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে। উনিশ শতকের শুরুতে, এমনকি মধ্যভাগেও আর্মেনীয়রা স্থলপথের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছিল। আর সদরঘাটে (ফারসী শব্দ সদর মানে সেন্টার বা কেন্দ্র) তাদের বাণিজ্য জাহাজও ভিড়ত যেগুলোয় পাট, লবণ, চামড়া আনা-নেওয়া করা হতো। স্থল ও নৌপথে ব্যবসা জারি রেখে তারা প্রভূত সম্পদ হাসিল করে। তাই উনিশ শতকের শুরুর ঢাকায় আর্মেনীয়রা ছিল প্রভাবশালী মূলত বিত্তের কারণেই।

ঢাকা কেন্দ্রে সংরক্ষিত আন্ডা বা বিলিয়ার্ড বল। ছবি: মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা

ঢাকায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জাঁকিয়ে ব্যবসা করতে পারেনি ঊনিশ শতকের প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত। পলাশীর যুদ্ধ জয় করার ১০ বছর পর ক্লাইভ লেফটেন্যান্ট আর্চিবল্ড সুইনটনকে পাঠান ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে। ততদিনে বুড়িগঙ্গার তীর ধরে টিকে থাকা শহর ঢাকায় ইউরোপের অন্যসব বণিকদল বেশ গুছিয়ে বসে বাণিজ্য করছে। মিটফোর্ড এলাকায় ছিল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব, আহসান মঞ্জিলে ছিল ফরাসী কুঠি ও কারখানা, পর্তুগীজদের দখলে ছিল বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে শুরু করে  লুঙ্গি পট্টি, ইস্ট বেঙ্গল স্কুল, সদরঘাট ব্যায়ামাগার ছাড়িয়ে আরও কিছু দূর। ইংরেজদের কুঠি ছিল বাহাদুর শাহ পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিমকোণে, এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা কার্যালয় যেখানে। আর্মেনীয়রা থাকত বাহাদুর শাহ পার্কের আশপাশে, পরে তারা আর্মানিটোলা মাঠ ঘিরে বসতি গড়ে তোলে।

আর্মেনীয় ক্লাবই আন্টাঘর

প্রভূত বিত্তের অধিকারী হওয়ার কারণেই আর্মেনীয়দের নেতৃত্বে ঢাকায় প্রথম ইউরোপীয় স্টাইলের ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম আর্মেনীয় ক্লাব– লোকমুখে আন্টাঘর। নামকরণের হেতু অনেকেরই জানা-ঘরটি ছিল ওভাল শেপের, ঘরের মাঝখানে ছিল বিলিয়ার্ড বোর্ড। যে বল দিয়ে বিলিয়ার্ড খেলা হতো, সে আমলে সেগুলোও পুরো গোল হতো না। সাদা ও লাল বলগুলো তৈরি হতো চিনামাটি বা পাথর দিয়ে আর দেখতে ছিল আন্ডা বা ডিমের মতো। আন্ডা খেলার ঘরকে ঢাকাইয়ারা বলত আন্টাঘর। যে ময়দানের (বাহাদুর শাহ পার্ক বা ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে চেনা) মাঝখানে ছিল ঘরটি তার নাম আন্টাঘর ময়দান। সূফী ভাই ধারণা করেন, ১৮৩০ সালের দিকে ঢাকায় ইউরোপীয় জনসংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। মাটি, নয়ইঞ্চি ইট, চুন আর সুড়কি দিয়ে ঘরটি তৈরি হয়ে থাকবে। সহজেই অনুমেয়, আন্টাঘরে তাস খেলারও জমজমাট আসর বসত। মদ্যপানের ব্যবস্থা থাকার কথা, বেয়ারা দিয়ে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থাও ছিল নিশ্চয়ই, কিচেনও থাকবে। দিনের শেষভাগে মানে বিকাল পাঁচটার দিকে এটি খোলা হতো আর রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকত।

জিজ্ঞেস করে বসলাম, আন্টাঘরে আলোর ব্যবস্থা কী ছিল? সূফী ভাই বললেন, বিলিয়ার্ড বোর্ডের ওপর হ্যাজাক বাতি ঝোলানো হতো। দেয়াল ও সদর দরজায় মশাল থাকার কথা।

ক্লাবের সদস্যরা যাতায়াত করতেন কীভাবে?

-ঘোড়ায় চড়ে আসতেন কেউ কেউ। এক ঘোড়ায় টানা টমটম গাড়িও ছিল। বেশিরভাগ ইউরোপীয় অবশ্য হাঁটা দূরত্বেই থাকতেন।

খাবার কী কী পরিবেশন করা হতো?

-আর্মেনীয়রা বেকারি আইটেমে পারদর্শী ছিল। চপ, কাটলেট, ফিশ ফ্রাই থাকলেও থাকতে পারে।

বাহাদুর শাহ পার্ক। সম্মুখে খাজা হাফিজুল্লাহর স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: সংগৃহীত

শুধু বিনোদন কেন্দ্র নয়

আন্টাঘর ছিল সম্মিলনকেন্দ্র। যেন হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম। দূর দেশে ইউরোপীয়দের নিজেদের মতো একটি জায়গা। বোর্ড ঘিরে কয়েকটি পকেট রুম থাকার কথা– যেখানে  ভাগ ভাগ হয়ে কোনো দল ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করত, কোনো দল গানের আসর জমাত, কেউবা ভগ্নহৃদয় নিয়ে ঝিম মেরে বসে থাকত। ছুটির দিন রোববারে এক থেকে দেড়শো সভ্যের উপস্থিত হওয়াটাও বিচিত্র নয়। তবে তখনো বাসার বাইরে বার্থডে পার্টি আয়োজনের চল চালু হয়নি; তাই আন্টাঘরে তেমন কোনো আয়োজন হতো না বলে মনে করেন সূফী ভাই। 

সেসঙ্গে এটাকে কেবল বিনোদনকেন্দ্র ভাবলে ভুল হবে, ব্যবসায়িক লেনদেন এবং সালিস মীমাংসা কেন্দ্রও ধরা যায়। আর নিশ্চিত করেই বলা যায়, কোনো নেটিভের এখানে প্রবেশাধিকার ছিল না। এটা আক্ষরিক অর্থেই ছিল ফরেনার্স  ক্লাব।  

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ একটা বড় পট পরিবর্তন ঘটায় পুরো ভারতজুড়েই। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। ঢাকার আন্টাঘর ময়দানে ১১ জন সিপাহীকে গাছের আগার ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়। এতে জায়গাটি নিয়ে জনমনে ভীতি তৈরি হয়। নানানরকম ভৌতিক গল্প-গাথাও ছড়িয়ে পড়ে। আন্টাঘর বন্ধ হয়ে যায়। আন্টাঘর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ আর্মেনীয়দের প্রভাব কমে যাওয়া। সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ রাজ শাসন ক্ষমতা নিজের হাতে নিলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যবসা-বাণিজ্যের সবটা নিজের দখলে নিতে উঠেপড়ে লাগে। এরই জের ধরে বলতে গেলে জোর করে আর্মেনীয়দের তারা কলকাতায় ঠেলে দিতে থাকে এবং এটা ঘটতে থাকে পরবর্তী কয়েক দশক ধরে। তবে কমিউনিটি ক্লাবের প্রয়োজনীয়তা যেহেতু ফুরোয়নি তাই কিছুকাল পরেই ইংরেজদের নেতৃত্বে আন্টাঘরের জায়গাতেই প্রতিষ্ঠিত হলো ইউরোপীয় ক্লাব।

১৮৯০ দশকের ঢাকা ক্লাব। আন্টাঘর ময়দানের দক্ষিণে। ছবি: ওয়াকার এ খানের ঢাকা ক্লাব ক্রনিকলস

চপ, কাটলেট বেশি বেশি

ইউরোপীয় ক্লাবেও কেবল ফরেনারদেরই প্রবেশাধিকার ছিল। প্রবেশদ্বারে বড় করে লেখা থাকার কথা, 'এশিয়ানস অ্যান্ড ডগস আর প্রহিবিটেড'। আন্টাঘরের মতো এখানেও বিলিয়ার্ড ও তাস খেলার সুযোগ ছিল। লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন যুক্ত হতে পারে। কিচেন আরও বড় হওয়া ছিল স্বাভাবিক। চপ, কাটলেট, মিটবল, ফিশ বা মিট ফ্রাই পাওয়া যাওয়ার কথা বেশি বেশি। কোম্পানির আগ্রাসী নীতির কারণে অন্য ইউরোপীয়দের ওপরও চাপ তৈরি হতে থাকল। ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া তাদের উপায় বেশি থাকল না। ফ্রেঞ্চরা কুঠি বিক্রি করে দিল খাজা আব্দুল গণির কাছে। নদীর পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা পর্তুগীজদের বাড়িগুলোতে বসল সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যালয়। ঢাকায় বাহন হিসাবে সাইকেলের আবির্ভাব ঘটল। পকেট ঘড়িও এলো কাছাকাছি সময়ে। ঠিকাগাড়ির প্রচলন ঘটল সিরকোর অ্যান্ড সন্স নামের এক আর্মেনীয় প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। শাখারীবাজারে সিরকোর দোকানে ইউরোপীয় সব পণ্য বিক্রি হতো। ঠিকাগাড়ি তথা হ্যাকনি স্টেজকোচ টানত দুটি ঘোড়া। এর জনপ্রিয়তা বছর বছর বাড়ছিল। ১৮৬৭ সালে ঢাকায় ঠিকাগাড়ির সংখ্যা ছিল ৬০টি, ১৮৮৯ সালে সংখ্যাটি গিয়ে দাঁড়ায় ছয়শোতে।

ড্রেস কোড প্রবর্তন

ক্লাবে প্রবেশাধিকার ছিল না বলে ঢাকার স্থানীয় অভিজাতরা ক্ষুব্ধ ছিল, প্রথমে তারা আপত্তি জানিয়ে নোটিশ পাঠায়। বিশেষ করে আহসান মঞ্জিলের নবাব পরিবারের সদস্যদের আপত্তি ছিল প্রবল। তারা রুপলাল দাসের মতো অভিজাত ব্যক্তিবর্গেরও সমর্থন পেয়ে থাকবে। নোটিশ পাঠিয়ে কোনো ফল না পাওয়ায় অভিজাতরা ক্লাবে হানা দেয়। প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয়রা বিধিনিষেধে কিঞ্চিৎপরিবর্তন ঘটায়, বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে স্থানীয় অভিজাতদের ক্লাবে প্রবেশাধিকার দেয়। তারমধ্যে একটি হলো ড্রেস কোড প্রবর্তন।

নওয়াব আহসানউল্লাহ'র ছেলে খাজা হাফিজুল্লাহর অকাল মৃত্যু ঘটে ১৮ বছর বয়সে, ১৮৮৪ সালে। তার স্মৃতি ধরে রাখতে আন্টাঘর ময়দানে ইংরেজরা একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করান। বৃহদাকার ওই স্মৃতিস্তম্ভ গ্রানাইট পাথরে তৈরি, যা কলকাতা থেকে জাহাজে করে আনা হয়। এর উদ্বোধনও করানো হয় ছোটলাটকে দিয়ে আড়ম্বরের সঙ্গে। এ প্রসঙ্গ সামনে এনে সূফী ভাই উল্লেখ করেন, "অন্য কোনো জায়গাতেও স্মৃতিসম্ভটি বসানোর সুযোগ নিতে পারত ইংরেজরা। কিন্তু আন্টাঘর ময়দানে হওয়ার কারণ এটাই হতে পারে যে, ইউরোপীয় ক্লাবে হাফিজুল্লাহ'র যাতায়াত ছিল এবং তিনি সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্ধু তৈরি করে থাকবেন।"     

১৯১৭ সালে তোলা ছবিতে রমনায় ঢাকা ক্লাব। ছবি: ওয়াকার এ খানের ঢাকা ক্লাব ক্রনিকলস

সূফী ভাই বলছিলেন, "সীমিত সংখ্যক ধনী নেটিভকে প্রবেশাধিকার দিতে তারা সম্মত হয়, কিন্তু নেটিভরা যেন ব্রিটিশ সেজেই ক্লাবে আসে তা নিশ্চিত করতে ছিল বদ্ধপরিকর। এ পরিপ্রেক্ষিতে তারা ড্রেসকোড চালু করে। স্যুট, প্যান্ট, শার্টের সঙ্গে জুতা আর মোজায়ও তারা নজর দিল। ব্রিটিশরা তখন তিন ধরনের জুতা বানাত– ক্যামব্রিজ, অক্সফোর্ড আর ডার্বি। কোনোটা ছিল একেবারে গোল, কোনোটা একটু চৌকোণা। এগুলো না পরে গেলে ক্লাবটায় ঢোকা যেত না। ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ক্লাব ছিল আন্টাঘর ময়দানে। তারপর ঢাকা ক্লাব নাম নিয়ে চলে যায় আরও দক্ষিণে অনেকটা জায়গা নিয়ে।"

এমন ধারার প্রাইভেট ক্লাবে ফরেনারদের মধ্যেরও সব শ্রেণি অভ্যর্থনা পায় না। উচ্চপদস্থ  সরকারী কর্মকর্তা যেমন– ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার, কালেক্টর, সাব-কালেক্টর, সেশন জাজ, বন কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, ব্যাংকারদের অগ্রাধিকার থাকে। ধনী ব্যবসায়ীদের প্রবেশাধিকারও অবারিত।  

আন্ডাগুলো ঢাকা কেন্দ্রে সংরক্ষিত

ফরাশগঞ্জে মওলা বখশ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ভবনে আছে ঢাকাকেন্দ্র। এ প্রতিষ্ঠান ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে চর্চা করে। ঢাকা কেন্দ্রের একটি জাদুঘরও আছে, যেখানে অতীতকালের ঢাকার বেশকিছু নিদর্শন সাজানো। ঘুরতে ঘুরতে একদিন একটি চিনামাটির পাত্রে কয়েকটি বল দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলাম। নিচে লেখা– 'চীনামাটির আন্টা'। আন্টাঘর সম্পর্কে টুকটাক জানা ছিল বলে বুঝতে পেরেছিলাম এগুলোই সেই বল, যা দিয়ে সাহেবরা বিলিয়ার্ড খেলতেন।

ঢাকা কেন্দ্রের সভাপতি আজিম বখশের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এগুলো কীভাবে সংগ্রহ করেছিলেন? আজিম ভাই বললেন, "আমাদের বাড়িতে সংরক্ষিত ছিল আন্ডাগুলো। বাবা বলতেন, এগুলো হলো সাহেবদের খেলার সামগ্রী। তবে নর্থব্রুক হলের (লালকুঠি নামে পরিচিত) যে ঘরটি লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল কিছুকাল আগ পর্যন্ত সেখানে বিলিয়ার্ড বোর্ড দেখেছি ছোটবেলায়। আদালত পাড়ার উকিলসহ আরও সব অভিজাত ব্যক্তিদের ধুতি পরে বিলিয়ার্ড খেলতেও দেখেছি। আমার মনে পড়ছে বোর্ডটি কষ্টি পাথরের মতো শক্ত কিছু দিয়ে তৈরি ছিল, ভেলভেট কাপড় বসানো ছিল তার ওপর। স্টিকটিও ছিল তুলনামূলক ভারী। মূল ভবনটিকে গণপূর্ত দপ্তর সংস্কার করতে গেলে লাইব্রেরিটি বিলিয়ার্ড ঘরে স্থানান্তরিত হয়, আর বোর্ডটি ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেওয়া হয়। ওই বোর্ডটিতেও এমন বলই ব্যবহার করা হতো।" 

ঢাকা কেন্দ্রে সংরক্ষিত আন্ডা বা বিলিয়ার্ড বল। ছবি: মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা

ঢাকা ক্লাব আন্টাঘরের উত্তরসূরী

১৯১০ সালে ঢাকা ক্লাব স্থানান্তরিত হয় শাহবাগ-রমনায়। নবাব এস্টেট থেকে ক্লাবের জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছিল। জায়গাটিতে তখন পূর্ববাংলা-আসাম সরকারের একটি বাংলো ছিল। তবে জায়গাটি বেশি জনপ্রিয় ছিল ঘোড়দৌড় বা রেসকোর্সের জন্য। উনিশ শতকের ষাটের দশকে ঘোড়দৌড় বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৮৬৪ সালের 'ঢাকা প্রকাশ' থেকে জানা যায়– সপ্তাহে তখন চারদিন ঘোড়দৌড়ের বাজি হতো। এ উপলক্ষে শনিবার অফিস আদালত পুরোই বন্ধ থাকত। মোগল আমলের রমনা ছিল আজিমপুর থেকে এখনকার সচিবালয় পর্যন্ত। দুটি চমৎকার আবাসিক এলাকাও গড়ে উঠেছিল রমনায়। একটির নাম ছিল মহল্লা চিশতিয়া, অন্যটির নাম মহল্লা সুজাতপুর। তবে ১৭১৭ সালে ঢাকা থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হওয়ার পরবর্তী ১০০ বছরে রমনা জঙ্গলাকীর্ণ হয়। শেষে ব্রিটিশ কালেক্টর ডয়েস ১৮২৫ সালে জঙ্গল পরিস্কার করে রমনাকে পরিচ্ছন্ন এলাকায় রূপ দেন।

ঢাকা ক্লাব প্রকাশিত ওয়াকার এ খানের লেখা ঢাকা ক্লাব ক্রনিকলস থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯১১ সালে ক্লাবটি ১৮৮২ সালের ভারত কোম্পানি আইনের অধীনে আইনি মর্যাদা লাভ করে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর থেকে ঢাকা তখন প্রাদেশিক রাজধানীরূপে সেজে উঠতে শুরু করে। নতুন প্রদেশে আগত ইংরেজরা কলকাতার বেঙ্গল ক্লাবের আদলে সাজিয়ে তুলছিলেন ঢাকা ক্লাব। পুরানো জিমখানা ক্লাবকে ঢাকা ক্লাবের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছিল শুরুতেই। ফলে ঘোড়দৌড় ব্যবস্থাপনা ও তা থেকে অর্জিত আয় ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সেজন্যই এটি বাংলার সবচেয়ে স্বচ্ছল ক্লাবে পরিণত হয়। যদিও চট্টগ্রাম ও জলপাইগুড়ি ক্লাবে টি-প্লান্টার এবং বড় বড় ব্যবসায়ীরা সভ্য ছিল তবু বাজির টাকায় ঢাকা ক্লাব সবাইকে ছাড়িয়ে যায়। সে এক বিস্তৃত ও বর্ণাঢ্য গল্প, আরেকদিন করা যাবে। আজ আন্টাঘরের দিন, যা এখন শুধুই স্মৃতি; তবে দুইশো বছরেও বিলীন হয়নি। অন্তত ঢাকা ক্লাব যতদিন থাকবেন, ততদিন আন্টাঘরের কথাও উঠবে।
 

Related Topics

টপ নিউজ

আন্টাঘর / ঢাকার ইতিহাস / প্রাচীন ঢাকা / মোগল আমল / পর্তুগিজ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বাংলাদেশকে এড়িয়ে মিয়ানমার হয়ে সমুদ্রপথে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত হবে উত্তর-পূর্ব ভারত: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
  • ঢাকায় এক কুয়া আছে, কুয়ায় পানিও আছে, সে পানি ওয়াসার চেয়ে ভালো!
  • ১২৫ বছরে কারও চোখে পড়েনি ভ্যান গখের চিত্রকর্মে লুকানো এই বৈজ্ঞানিক রহস্য
  • স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক-ফলসহ ৭ পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত
  • যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এফটিএ আলোচনা শুরু, পোশাক রপ্তানিতে খুলতে পারে বড় সম্ভাবনার দ্বার
  • স্টিভ লং: জার্মান ইউটিউবারের বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

Related News

  • সেকালের গঙ্গাজলি আজকের নূর মার্কেট: কেমন ছিল গঙ্গাজলি, কারা থাকত সেখানে
  • অতীতের রাজধানী: কেমন ছিল ঢাকার কার্জন হল, মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড, ভুলভুলাইয়া বা দিলখুশা…
  • আগ্রার মুবারক মঞ্জিল ধ্বংস করে ভারত নিজেদেরই ক্ষতি করেছে: ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ড্যালরিম্পল
  • হোটেল শাহবাগ: এক বাড়ির তিন কাল; নাচঘর, হোটেল, হাসপাতাল
  • যেভাবে ফিরিঙ্গিদের থেকে আজকের ফিরিঙ্গি বাজার

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশকে এড়িয়ে মিয়ানমার হয়ে সমুদ্রপথে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত হবে উত্তর-পূর্ব ভারত: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

2
ফিচার

ঢাকায় এক কুয়া আছে, কুয়ায় পানিও আছে, সে পানি ওয়াসার চেয়ে ভালো!

3
আন্তর্জাতিক

১২৫ বছরে কারও চোখে পড়েনি ভ্যান গখের চিত্রকর্মে লুকানো এই বৈজ্ঞানিক রহস্য

4
বাংলাদেশ

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক-ফলসহ ৭ পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল ভারত

5
অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এফটিএ আলোচনা শুরু, পোশাক রপ্তানিতে খুলতে পারে বড় সম্ভাবনার দ্বার

6
ফিচার

স্টিভ লং: জার্মান ইউটিউবারের বাংলাদেশে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net