Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
June 07, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, JUNE 07, 2025
২৫ টাকা ভাড়া ছিল হেলিকপ্টারে, এখন ঘণ্টায় লাখ টাকা

ফিচার

সালেহ শফিক & রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
02 June, 2023, 03:35 pm
Last modified: 21 February, 2024, 05:35 pm

Related News

  • সিট খালি থাকার কথা শুনে হেলিকপ্টারে মাগুরা গিয়েছি: সারজিস
  • হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দিয়েছে কে?
  • যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে, তারা সবাই অপরাধী: হাইকোর্ট
  • বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া পুলিশদের হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার
  • ভারতের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১ লাখ কর্মসূচি বাংলায়

২৫ টাকা ভাড়া ছিল হেলিকপ্টারে, এখন ঘণ্টায় লাখ টাকা

১৯৬৩ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) ঢাকা ও আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করে। ২৫ আসনের হেলিকপ্টারগুলো পিআইএ কিনেছিল আমেরিকা থেকে যা ছিল তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকৃতির যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার। প্রথম দুটি রুট ছিল ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-ফরিদপুর। তবে সার্ভিসটি মাত্রই তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল। দুর্ঘটনাই এর জন্য দায়ী। প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।
সালেহ শফিক & রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
02 June, 2023, 03:35 pm
Last modified: 21 February, 2024, 05:35 pm
ঢাকার এয়ারপোর্টে পিআইএ হেলিকপ্টার/ ছবি- সংগৃহীত

পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনটি সদ্য প্রস্তুত সিকোরস্কি এস সিক্সওয়ান হেলিকপ্টার কিনে আনে। এগুলো ২৫ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম ছিল। দুইজন পাইলটসহ ক্রু থাকতেন চারজন। ঢাকা থেকে পার্বতীপুর, দিনাজপুর, চাঁদপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুর, পাবনা, কুমিল্লা, যশোর বা ভোলায় চলাচল করতো এগুলো।  এই হেলিকপ্টার সার্ভিসে মোট ২০টি গন্তব্য সংযুক্ত হয়। গড়ে ভাড়া ছিল ২৫ টাকা।   

তখনকার এভিয়েশন বিষয়ক সাময়িকীগুলোর বিজ্ঞাপনে এটিকে বলা হতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সেবা। ১৮০০ পাউন্ড মালামালও বহন করা যেত একেকটি ফ্লাইটে।

নবী এন মাহমুদ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এই হেলিকপ্টারে চড়ার বর্ণনা দিচ্ছেন এভাবে- 'এই ভ্রমণ খুবই উপভোগ্য ছিল। হেলিকপ্টারগুলো খুব নিচ দিয়ে উড়ে যেত। জানালা দিয়ে নিচে গাছ-পালা, ঘর-বাড়ি এমনকি পশু-পাখি পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যেত। পথ-ঘাট-মাঠ-নদী সব দৃশ্য অতুলনীয় মনে হতো।'

উপমহাদেশের অন্য কোথাও এই সেবা চালু না থাকলেও আমাদের এখানে চালু হওয়ার কারণ জানাচ্ছেন জাকির হোসেন নামের একজন। তিনি বলছেন, 'স্বাধীনতার পূর্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের এলিট শ্রেণীর (বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা ও বড় ব্যবসায়ী, যাদের অধিকাংশই অবাঙালি) জন্য কিছু জেলা ও মহকুমা শহরে প্যাসেঞ্জার হেলিকপ্টার সার্ভিস ছিল।'

পাকিস্তান সরকার উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যক্তিদের বিশেষ নজর রাখতে গিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য সড়ক ও রেলপথ উন্নয়নের ধারে কাছেও যায়নি। জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ছিল এক লেনের, তার মধ্যে তিনটা ফেরি ছিল। সময় লাগতো ৯-১০ ঘণ্টা। তিনটি ট্রেন-উল্কা, গ্রিন অ্যারো আর চট্টগ্রাম মেইল চলাচল করত। ৩৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথের ২৫০ কিলোমিটারই ছিল সিঙ্গেল লাইন।

ছবি- সংগৃহীত

পূর্ব পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশনে হেলিকপ্টার ব্যবহার শুরু হয় অবশ্য পঞ্চাশের দশকেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ছিল এর উদ্দেশ্য। ১৯৬৩ সালের ২৫ নভেম্বর প্রথম দুটি রুটে (ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-ফরিদপুর) হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হয়। এতে মাত্র ৩৭ মিনিটে খুলনা পৌঁছানো যেত।

দুর্ঘটনায় একজনই কেবল বেঁচে গিয়েছিলেন

তবে সার্ভিসটি মাত্রই তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল। দুর্ঘটনাই এর জন্য দায়ী। প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা থেকে ফরিদপুর রওনা হয়েছিল হেলিকপ্টারটি। তাতে ছিল ২৪ জন আরোহী। বাহনটি তখন গন্তব্য থেকে মাত্রই ২ মিনিট দূরে ছিল, হেলিপোর্ট থেকে দূরত্ব ছিল ৩ মাইল মাত্র, এই সময়েই দুর্ঘটনাকবলিত হয়। ২৪ জন আরোহীর মধ্যে একজন মাত্র বেঁচে যান। তিনি বর্তমানে দেশের পরিকল্পনামন্ত্রী, জনাব এম এ মান্নান এমপি।

ছবি- সংগৃহীত

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ইত্তেফাকের নিজস্ব সংবাদদাতা পরদিনের (৩ ফেব্রুয়ারি) পত্রিকায় 'একমাত্র জীবিত ব্যক্তির সাক্ষ্য' শিরোনাম দিয়ে লিখেছিলেন, 'ভাঙ্গা ডান হাত ও ডান পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় হাসপাতালে শায়িত বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের একমাত্র জীবিত আরোহী জনাব এমএ মান্নান এখন বিদপমুক্ত। তাঁহার সহিত আলাপ করিয়া জানিতে পারিলাম, ফরিদপুর হেলিপোর্টে অবতরণের নির্ধারিত সময়ের (২টা ২২ মিনিট) মাত্র ২ মিনিট পূর্বে হঠাৎ একটি শব্দ ও পরক্ষণেই সম্মুখভাগে দপ করিয়া আগুন জ্বলিয়া উঠতে দেখিয়া হেলিকপ্টারটির সকল আরোহী অসম্ভব মাত্রায় ঘাবড়াইয়া যান।'

'ভাগ্যক্রমে উক্ত শব্দের সঙ্গে সঙ্গে পিছনের একটি সিটে উপবেশনরত জনাব মান্নানের পাশের জানালাটির একাংশ ছিটকাইয়া পড়িয়া যায়। দিকবিদিক চিন্তা না করিয়া তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই জানালা দিয়া বাহিরে লাফাইয়া পড়েন এবং বেশ কয়েকগজ দৌড়াইয়া গিয়া পড়িয়া যান। পিছনে তাকাইয়া গজ পঁচিশেক দূরে তিনি হেলিকপ্টারটিকে সম্পূর্ণ অগ্নি প্রজ্বলিত অবস্থায় দেখিতে পান। অদূরে কর্মরত তিন ব্যক্তি আসিয়া তাহাকে ধরাধরি করিয়া কইজুরি ইউনিয়নের ইউ সি সদস্য জনাব এ মজিদ ভূঁইয়ার বাসগৃহে লইয়া যান। তথা হইতে পরে সিভিল সার্জন ও এসিস্ট্যান্ট সার্জন আসিয়া হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। জনাব মান্নান তখন কেয়ার প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড অফিসার ছিলেন বলে দৈনিক আজাদ পত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে।'

ইত্তেফাকের সংবাদদাতা ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে একটি রিস্ট ওয়াচ, একটি ভাঙ্গা ট্রানজিস্টর সেট, একটি টর্চ লাইট, একটি খোলা হোল্ড-অন, ৮ গাছা সোনার চুরি, এক গাছা হার উদ্ধার করা গেছে বলে জানিয়েছিলেন।  

ছবি- সংগৃহীত

দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক, ইপিআইডিসির দুইজন চিনি বিশেষজ্ঞ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমদ, ঢাকা পোস্তার বিশিষ্ট চামড়া ব্যবসায়ী হাজী আওলাদ হোসেনও ছিলেন।

হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানিয়ে তখনকার পিআইএর প্রেসিডেন্ট এয়ার মার্শাল আসগর খান বলেছিলেন, এর পেছনের অংশ এবং মূল পাখায় শকুনের ধাক্কা লেগেছিল। ৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান সংবাদ ছিল ওই দুর্ঘটনা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ফরিদপুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ইত্তেফাকের নিজস্ব সংবাদদাতা টেলিফোনযোগে জানান যে, একটি উড়ন্ত শকুনের সহিত সংঘর্ষই যে ফরিদপুরের অদূরে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ, সে সম্পর্কে কাহারও মনে আর সংশয় থাকিতে পারে না। হেলিপোর্টের তিন মাইল দক্ষিণ-পূর্বের তুলাগ্রামে যখন অগ্নি প্রজ্বলিত অবস্থায় হেলিকপ্টারটি মাটিতে পড়িয়া বিধ্বস্ত হইতেছে, তাহার কয়েক সেকেন্ড পূর্বে বায়তুল আমানের টেকনিক্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে ক্রীড়ারত ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক ও তাহার সঙ্গীরা আকাশ হইতে একরাশ পাখীর পালক ঝরিয়া পড়িতে দেখে ও পরক্ষণেই একটি দ্বিখণ্ডিত শকুন আসিয়া ধপাস করিয়া তাহাদের সামনে পড়ে।'

এর ১০ মাস পর আরেকটি হেলিকপ্টার  দুর্ঘটনাকবলিত হয়।  ঢাকার অল্প দূরে রূপপুর এলাকায় দ্বিতীয় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। প্রাণ হারান পাইলট সৈয়দ হাবিবুল হাসান। আরেক পাইলট আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। পরদিন ১১ ডিসেম্বরের দৈনিক আজাদের প্রধান খবর ছিল ওই দুর্ঘটনা। দুটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর পিআইএ সার্ভিসটি বন্ধ করে দেয়। বহরে আর মাত্র একটিই বাকী ছিল। সেটি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কাছে বিক্রি করে দেয় পিআইএ। বন্ধ হয়ে যায় পিআইএ'র হেলিকপ্টার সার্ভিস যা পরে আর কখনোই চালু হয়নি।  

ছবি- সংগৃহীত

খাইরুল ইসলাম খোকন নামের এক ব্যক্তি প্রথম দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি স্মৃতিচারণায় লিখছেন, 'আমি তখন ফরিদপুর জিলা স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুল ছুটি শেষে দৌড়ে চলে যাই দীর্ঘপথ, ঘটনাস্থলে। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। যাত্রীগুলোর করুণ মৃত্যু হয়েছিল অগ্নিদগ্ধ হয়ে। মানুষের পোড়া গন্ধে আশপাশের বাতাস ভারী হয়েছিল। একজন বাদে সকল যাত্রী ও পাইলট ক্রুদের মৃত্যু হয়েছিল যাদের দাফন করা আছে ফরিদপুর আলিপুর কবরস্থানে, যা অক্ষত আছে আজ অবধি। যিনি সেই দুর্ঘটনায় অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন এখন জানলাম তিনি বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান এমপি।'

স্মৃতিচারণা করেছেন মীর সিদ্দিকুজ্জামান ইলাও। তিনি লিখছেন, 'ফরিদপুরের দুর্ঘটনার হেলিকপ্টারটিতে সেদিন ঢাকা থেকে ফরিদপুরে আসার কথা ছিল আমার চাচা নূরুজ্জামান সাহেবের। বাসায় তখন কান্নাকাটি। নূরুজ্জামান নামে এক যাত্রী  হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন, এই খবরও পাওয়া গেল। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য ঢাকা থেকে চাচা ফোন দিয়ে জানান তিনি সিট পাননি। অন্য আরেক নূরুজ্জামান সেদিন সেই ট্রিপের যাত্রী হয়েছিলেন।'

তবে সার্ভিসটি সচল থাকার সময় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল দেশজুড়েই। সারাদেশে তখন বিমানবন্দর ছিল মোটমাট ৪টি। হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেকগুলো হেলিপ্যাড চালু হয়। সবগুলোই ছিল ফাঁকা মাঠের মধ্যে। সেগুলো ঘিরে জটলা তৈরি হতো প্রতিদিনই। ফেরিওয়ালার দল সুযোগটি কাজে লাগাত। বাদাম, চানাচুরসহ মুখরোচক সব খাবার বিক্রি করত। খোলা মাঠে যেন মেলা বসে যেত।

সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেলেও স্মৃতি কিন্তু থেকে গেছে। মইন উদ্দিন আহমেদ বাবু যেমন একটা মজার স্মৃতি শেয়ার করেছেন, ১৯৭৮-৭৯ সাল হবে, পাকিস্তান ক্রিকেট খেলতে এসেছিল চট্টগ্রামে। তখন রেডিওতে শুনতাম সার্কিট হাউস প্রান্ত থেকে বোলার এগিয়ে আসছেন। প্রান্ত বদল হলে শুনতাম, হেলিপোর্ট প্রান্ত থেকে বোলিং করছেন।

স্টেডিয়ামে বসেও অবাক হতাম, কেন হেলিপোর্ট বলছে। সার্কিট হাউজ তো দেখা যেত, অন্যদিকে দেখতাম অব্যবহৃত উঁচু জায়গা। তখন এক বন্ধু জানাল, মুক্তিযুদ্ধের আগে ওখানে হেলিকপ্টার ওঠানামা করত। পরে হাতিয়ার এক বড়ভাই জানান, তিনি ২০ টাকায় চট্টগ্রাম-হাতিয়া আসা যাওয়া করতেন।

একটি বিশেষ স্মৃতিচারণা

ছবি- সংগৃহীত

সন্দ্বীপে আলেকজান্ডার অলক ঢালীর জন্ম সার্ভিসটি চালু হওয়ার তিন বছর আগে। তাঁর মা তখন সন্দ্বীপে কর্মরত ছিলেন।  দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে একটি বড় স্মৃতিচারণা লিখে পাঠিয়েছেন তিনি হেলিকপ্টার সার্ভিসটি সম্পর্কে, সেটি তুলে দেওয়া হলো এখানে,  'বিয়ের আগেই মা নার্সিং ট্রেনিং নিয়েছিলেন। একটা সরকারি বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি আবেদন করেন এবং তাঁর চাকরি হয়েও যায়। মায়ের প্রথম কর্মস্থল ছিল সন্দ্বীপ। আমাদের পৈতৃক বাড়ি ছিল বরিশাল। বাবা ছিলেন মেরিন টেকনিশিয়ান। সময়মতো টাকা পাঠানোর সুযোগ সবসময় হতো না বাবার। অথচ মায়ের ততদিনে তিনটি সন্তান। সবাই ছোট ছোট। তাই তখনকার হিসাবে সুদূর সন্দ্বীপের কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে উপায় ছিল না মায়ের।

'প্রথম যাত্রায় মাকে একাই যেতে হয়। তখনো হেলিকপ্টার সার্ভিসটি চালু হয়নি। মাকে প্রথমে বরিশাল থেকে স্টিমারে ঢাকা যেতে হয়েছিল। তারপর ঢাকা থেকে ট্রেনে সীতাকুণ্ডের কুমিরা। সেখান থেকে বড় সাম্পানে করে সন্দ্বীপ। চট্রগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল সন্দ্বীপ। তাই অফিসিয়াল কাজে মাকে চট্টগ্রামও যাতায়াত করতে হতো। কিন্তু সন্দ্বীপ থেকে কুমিরা হয়ে চট্টগ্রাম যেতে লেগে যেত ৩ দিন । এভাবেই চলছিল মায়ের সন্দ্বীপ বাস। বাবা অবশ্য দেশে এলে সন্দ্বীপ যেতেন, মাকে সঙ্গ দিতেন। কিন্তু সেটা বেশিদিনের জন্য সম্ভব হতো না। এর মধ্যে মহাজলোচ্ছ্বাসে সন্দ্বীপ দুবার ডুবে গেল। আতঙ্ক আর অস্থিরতার মধ্যেই কাটছিল মায়ের দিন।  

'১৯৬৩ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) ঢাকা ও আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করে। ২৫ আসনের হেলিকপ্টারগুলো পিআইএ কিনেছিল আমেরিকা থেকে যা ছিল তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকৃতির যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার। প্রথম দুটি রুট ছিল ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-ফরিদপুর। পরে সন্দ্বীপ রুটও চালু হলে মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। অফিসিয়াল কাজে পরে যতবারই তাঁকে জেলা শহরে যেতে হয়েছে হেলিকপ্টার সার্ভিসই নিয়েছেন। এর ভাড়াও তুলনামূলক কম ছিল আর সময়ও লাগতো কম।

ছবি- সংগৃহীত

'হেলিকপ্টার চালুর বছরটি অবশ্য আমাদের জন্য বিরাট দুঃখও বয়ে এনেছিল। ওই বছরই বাবার জাহাজ আটলান্টিক মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে এবং আমার বাবা চিরকালের জন্য নিখোঁজ হয়ে যান। তাই মায়ের চাকরিই ছিল আমাদের জীবিকার উপায়।  কিছুকাল পরে মা বদলি হয়ে যান ময়মনসিংহ। তারপর ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত অল্পস্থায়ী যুদ্ধের সময় আমরা ছিলাম নোয়াখালী। যুদ্ধের পরে মায়ের অফিসিয়াল কিছু তথ্য আনতে সন্দ্বীপ যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আমার বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে আমিও যাই মায়ের সঙ্গে। নোয়াখালী  থেকে বাসে করে যাই চট্টগ্রাম তারপর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে সন্দ্বীপ। আমি ৫/৬ বার ওই হেলিকপ্টারে চড়েছি।'

হেলিকপ্টার সার্ভিসের টুকিটাকি

তখন বঙ্গের প্রধান শস্য ছিল চাউল, পাট, চা ইত্যাদি। বেশিরভাগই  রপ্তানি হতো সমুদ্রপথে। পাট রপ্তানি হতো রেলে কলকাতা হয়ে।  প্রায় সকল কাজের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল ঢাকা। হেলিকপ্টার সার্ভিসটি ঢাকার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ সহজ করেছিল। সেসঙ্গে সংবাদপত্র, চামড়াজাত পণ্য ইত্যাদিও পরিবহন করত অল্প সময়ের ব্যবধানে।

১৯৬৩ সালের নভেম্বরে হেলিকপ্টার সার্ভিসটি যাত্রী পরিবহন করেছে ৩৮২১ জন, ঠিক তিন মাস পরে মানে ১৯৬৪ সালের মার্চে পরিবহন করে ৬ হাজার ৯৮৯ জন। মালামাল পরিবহনও প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল,  ২৯ হাজার ৫৪৬ পাউন্ড থেকে ৫২ হাজার ৭৬৩ পাউন্ড। স্থানভেদে প্রতি নটিক্যাল মাইলে ভাড়া ছিল ৪৬ থেকে ৮০ পয়সা। তবে মালের ভাড়া প্রায় সর্বত্রই একই ছিল, প্রতি পাউন্ড ১০ পয়সা।

ছবি- সংগৃহীত

সেসময় সবচেয়ে ব্যস্ত রুট ছিল খুলনা ও ফরিদপুর। সাধারণত হেলিকপ্টারগুলো উড়ত ৫০০ ফুট ওপর দিয়ে, খারাপ আবহাওয়ায় আরো নীচ দিয়ে। এপ্রিল ও মে এর মতো দুর্যোগপ্রবণ মাসগুলোয় প্রতিটি আবহাওয়া স্টেশন নিয়মিত বার্তা প্রদান করত হেলিকপ্টারগুলোয়।

হাল আমলে হেলিকপ্টার সার্ভিস

সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স ১৯৯৯ সালে দেশে প্রথম বাণিজ্যিক হেলিকপ্টারের প্রচলন ঘটায়। তবে ফ্লাইট পরিচালনা করতে থাকে ২০০০ সাল থেকে। সেসময় তাদের দুটি হেলিকপ্টার ছিল যা তখনকার চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল। মূলত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোই ছিল তাদের ক্লায়েন্ট যারা পরে নিজেরাই এভিয়েশন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। স্কয়ার এয়ার, মেঘনা এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ, বিআরবি এয়ার লিমিটেড, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, পারটেক্স এভিয়েশন এদের অন্যতম।

ছবি- সংগৃহীত

হেলিকপ্টার পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট নিতে হয় সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের কাছ থেকে। সার্টিফায়েড প্রতিষ্ঠানগুলোকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হ্যাঙ্গার ও অফিস প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রয়োজন ছাড়াও হেলিকপ্টারগুলো ভাড়ায় খাটানোর  সুযোগ রয়েছে। এর জন্য গ্রাহককে প্রতি ঘণ্টায় গুনতে হয় ৬৫ হাজার থেকে সোয়া লক্ষ টাকা। চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণ বা এয়ার ট্যুরিজমে এর ব্যবহার বাড়তে পারে।

সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের শৌর্য ও গুরুত্ব প্রদর্শনের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহারের উদাহরণ তৈরি করেছেন।

হেলিকপ্টার সার্ভিস একটি বিপুল বিনিয়োগ মাধ্যম। আমাদের দেশে বেশি আছে বেল আর রবিনসন কোম্পানির হেলিকপ্টার। মাঝে মধ্যে বিয়েতে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে ভাড়ায় যাওয়া কিংবা কারখানা পরিদর্শনে যাওয়া বাদে এগুলো বসেই থাকে। তাই পরিচালন ব্যয় অপারেটরদের জন্য বোঝা হয়ে উঠছে।

আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন, স্কয়ার এয়ার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো হেলিকপ্টার সেবাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে যার চাহিদা আগামীতে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

Related Topics

টপ নিউজ

হেলিকপ্টার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক
  • চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান
  • পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর
  • নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার
  • অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ
  • কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ

Related News

  • সিট খালি থাকার কথা শুনে হেলিকপ্টারে মাগুরা গিয়েছি: সারজিস
  • হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ দিয়েছে কে?
  • যারা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেছে ও নির্দেশ দিয়েছে, তারা সবাই অপরাধী: হাইকোর্ট
  • বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া পুলিশদের হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার
  • ভারতের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১ লাখ কর্মসূচি বাংলায়

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক

2
আন্তর্জাতিক

চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান

3
আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

4
বাংলাদেশ

নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার

5
ফিচার

অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ

6
বাংলাদেশ

কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net