Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
December 27, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, DECEMBER 27, 2025
আকবর বাদশারও ‘হাই ফ্লায়ার’ কবুতর ছিল, তবে তার সানগ্লাস-দুরবিন ছিল না!

ফিচার

সালেহ শফিক
26 March, 2023, 06:40 pm
Last modified: 26 March, 2023, 06:39 pm

Related News

  • বই সংগ্রহের নেশা: ঠিক কতগুলো বইকে অসংখ্য কিংবা অনেক বেশি বলা যেতে পারে?
  • মুম্বাইয়ে পাবলিক স্পেসে কবুতরকে খেতে দিলেই শাস্তি; ভারতজুড়ে তীব্র বিতর্ক
  • কেন আপনার কম কাজ করে শখের পেছনে বেশি সময় দেওয়া উচিত?
  • রেডিও! আজও না শুনে যারা থাকতে পারেন না
  • স্তন্যপায়ীরা পায়ুপথে শ্বাস নিতে পারে প্রমাণ করে ইগ নোবেল পেল যে দল 

আকবর বাদশারও ‘হাই ফ্লায়ার’ কবুতর ছিল, তবে তার সানগ্লাস-দুরবিন ছিল না!

পুরো ভারতেই একটা জনপ্রিয় খেলা কবুতরবাজি, যার বয়স ৫০০ তো বটেই, পাঁচ হাজারও হতে পারে। কবুতরবাজিতে ছেদ পড়েনি কোনো কালেই, একালের এক ওস্তাদ যেমন সৈয়দপুরের মোহাম্মদ ইমরান খান । তিনি হাই ফ্লায়ার কবুতরবাজির ওস্তাদ।
সালেহ শফিক
26 March, 2023, 06:40 pm
Last modified: 26 March, 2023, 06:39 pm
ফকিরগুল জাতের কবুতর। ছবি: মো. ইমরান খানের সৌজন্যে

সম্রাট আকবর চলেছেন কাবুল অভিযানে ১৫৮১ সালে। সঙ্গে ৫০ হাজার অশ্বারোহী যোদ্ধার বিশাল বহর। রণহস্তির দলটিও ছোট নয়, সংখ্যায় ৫০০। মস্ত মস্ত হাতি-ঘোড়ার দলে আছে কয়েকজোড়া কবুতরও। সম্রাটের শখের ধন এগুলো। প্রাসাদে ২০ হাজার কবুতর পোষেন সম্রাট। অবসরের ক্রীড়াসামগ্রী হিসাবে কিছু কবুতর তিনি অভিযানেও সঙ্গে রাখেন। এগুলোর খেয়াল রাখার জন্য ১৫ জনের এক কর্মীদল নিযুক্ত আছে, যাদের বেতন ২ থেকে ৪৮ রুপি পর্যন্ত। যব, গম, ভুট্টা, বাদাম দিয়ে তাদের আপ্যায়িত করার ব্যবস্থা আছে।

বাদশার মাচানের কিছু কবুতর লাট্টুর মতো ঘুরতে ওস্তাদ, কিছু আছে শূন্যেই চরকিবাজি করতে পারে। দেখার মতো সেসব দৃশ্য। রণক্লান্ত বাদশাহকে দুদণ্ড শান্তি দেয় কবুতরগুলো। তাই এদের কদর খুব। এগুলো খোরাসান, ইরান বা ইরাক থেকে আনানো। উপহার হিসাবেও পাওয়া গেছে বেশ কিছু।

আকবর বাদশার ছেলে জাহাঙ্গীরের জেবেও (জোব্বার পকেটে) দু-চারটি কবুতর থাকত। সবাই তো জানে জাহাঙ্গীর মশগুল ছিলেন নূরজাহানের প্রেমে। একদিন জাহাঙ্গীর গেছেন মীনাবাজারে। নূরজাহানও সখীদের নিয়ে হাজির। হঠাৎই জাহাঙ্গীরকে অন্য একটা কাজে বিশেষ ব্যস্ত হয়ে যেতে হলো। তিনি সেদিন কাছে থাকা কবুতর দুটি রাখতে দিলেন নূরজাহানকে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখেন একটি কবুতর নেই। নূরজাহানকে শুধালেন, আরেকটি কোথায় গেল? নূরজাহান বললেন, উড়ে গেছে। শাহজাদা রেগে বললেন, কীভাবে? নূরজাহান হাসতে হাসতে অন্য কবুতরটিও উড়িয়ে দিয়ে বললেন, এইভাবে। এই ঘটনায় শাহজাদা মজনু থেকে দিওয়ানা বনে গেলেন। এই ঘটনায় কবুতরের মাহাত্ম্য বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। 

সম্রাট আকবরের কবুতর ছিল খুব পছন্দ। ছবি: সংগৃহীত

কবুতরবাজির সিলসিলা রাজা-বাদশাহদের থেকে তাদের উজির-নাজিররাও পেয়েছিলেন। ব্রিটিশরা আসার পর নবাব আর জমিদাররাও অবসর কাটাতে কবুতরবাজি করতেন। লখনৌয়ের ভাগ্যবিড়ম্বিত নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ কলকাতায় এসে মেটিয়াবুরুজে বাগিচা, চিড়িয়াখানা বসালেন। ঘুড়ি ওড়ালেন আর সেসঙ্গে কবুতরবাজি।

পুরো ভারতেই একটা জনপ্রিয় খেলা কবুতরবাজি, যার বয়স ৫০০ তো বটেই, পাঁচ হাজারও হতে পারে। কবুতরবাজিতে ছেদ পড়েনি কোনো কালেই, একালের এক ওস্তাদ যেমন সৈয়দপুরের মোহাম্মদ ইমরান খান । তিনি হাই ফ্লায়ার কবুতরবাজির ওস্তাদ।

হাই ফ্লায়ার কবুতর

কিছু কবুতর আছে রেসার, কিছু ফ্যান্সি (সৌন্দর্যের জন্যই যারা খ্যাত), আর কিছু কবুতরকে বলা হাই ফ্লায়ার। এরা দীর্ঘক্ষণ ধরে অনেক ওপরে থাকতে পারে। রামপুরী, শিয়ালকোটি, দেওবন্দি, বাজরি, ফকিরগুল ইত্যাদি হাই ফ্লায়ারের মধ্যে বিখ্যাত। তবে সবচেয়ে বেশি পারদর্শিতা দেখায় টেডি। রামপুরী কবুতর থেকে এর উৎপত্তি। টানা ১৫ ঘণ্টা আকাশে বন্দি থাকাও এর জন্য অবাক করা ব্যাপার নয়। টেডির উৎপত্তির ইতিহাস সম্পর্কে মো. ইমরান খান যে গল্প শোনালেন সেটি এমন।

পঞ্চাশ দশকের ঘটনা। পাকিস্তানের এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মিস্ত্রী আব্দুল রশীদ তার নাম, ভারতের আলীগড় থেকে ডাক পেয়েছেন। কোনো বিশেষ যন্ত্র সারানোয় তার দক্ষতা ছিল। কিছুদিন যাওয়ার পর রশীদ সাহেব তার অধস্তন এক কর্মীকে বললেন, তোমাদের এখানে ভালো জাতের (ওল্ড ব্লাড লাইনের) কবুতর কী আছে? আমাকে এনে দিতে পারো?

একদল কবুতরপ্রেমী। ছবি: মো. ইমরান খানের সৌজন্যে

কর্মী বললেন, আমাকে তিন দিনের ছুটি দিতে হবে। আমি আপনাকে একজোড়া রামপুরী কবুতর এনে দেব। উত্তরপ্রদেশের এক ঐতিহাসিক শহর রামপুর। বলা হয় বাগদাদের পরে জ্ঞান-বিজ্ঞানের শহর হিসাবে এটি মশহুর ছিল। তিন দিন সময় লাগিয়ে যখন একজোড়া রামপুরী কবুতর আলীগড়ে নিয়ে আসা হলো তখন রশীদ সাহেব তো মহাখুশি। তিনি তার অ্যাসাইনমেন্ট সেরে পাকিস্তানে ফিরলেন রামপুরী ওই কবুতরজোড়া নিয়ে। তারপর তা নিয়ে চালালেন গবেষণা আপন ভাই মিস্ত্রী দীনের সঙ্গে মিলে। 

জসিরি (স্ত্রী জাত) এবং মিশার (পুরুষ জাত) সঙ্গে মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রায় ১০ বছর সাধনার পর তৈরি হলো টেডি। কবুতরটি গড়ে ৯-১১ ঘণ্টা আকাশে থাকতে পারে, কখনো কখনো ১৪-১৫ ঘণ্টার রেকর্ডও গড়েছে। মিস্ত্রীদের পরে কবুতরটি নিয়ে অধিকতর গবেষণা চালিয়েছেন পাকিস্তানের উস্তাদ চৌধুরী সাকি মোহাম্মদ ভাট্টি, ওস্তাদ হাজি মেহের আজগর প্রমুখ।

ইমরান খান আরও জানালেন, এখন সারা বিশ্বেই হাই ফ্লায়ারদের মধ্যে টেডি এক নম্বর। ইমরান খান নিজেও ওস্তাদ পদবি পেয়েছেন কবুতর শখ করে। ওস্তাদ তকমা তখনই কেউ পায় যখন তার অনেক শাগরেদ থাকে আর সেই শাগরেদরাও প্রতিযোগিতায় ট্রফি জেতে। ওস্তাদরা তাদের কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ পাগড়িও লাভ করেন।

ইমরান খানের কথা কিছু

ইমরানের নানীর ছিল কবুতরবাজির শখ। দেশভাগের সময় যখন তারা বাংলাদেশের সৈয়দপুর চলে এসেছিলেন, আর সব বাক্সপেটরার সঙ্গে কবুতরও নিয়ে এসেছিলেন। নানী মারা যাওয়ার পর ইমরানের বড় মামার ছেলের হাওলায় ছিল সে কবুতরগুলো। কিন্তু মামাতো ভাই কবুতরগুলোর ভালো দেখভাল করতে পারেননি। তাই অনেকগুলোই হারিয়ে যায় বা পড়শিদের মধ্যে বিলি করা হয়। 

ব্ল্যাক প্যান্থার জাত। ছবি: মো. ইমরান খানের সৌজন্যে

ইমরানের বাবার আবার কবুতরের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। ইমরানের বয়স যখন ৭-৮, তখন তার মধ্যে কবুতর পোষার শখ জাগে। কিছু মুর্শিদাবাদী কবুতর পালতে শুরু করেন। এর মধ্যে একবার মামার সঙ্গে বিহারের পাটনা গেলে সেখানকার এক নামী লোকের মেহমান হন তারা। সে লোকের অনেক কবুতর ছিল। ছোট্ট ইমরান মামার কানে কানে বলে, আমি মেজবানের কাছে কয়েকটি কবুতর চাইতে পারি?

ইমরানের মামা একটু কৌশলে কবুতরের কথা তুললে মেজবান কয়েকজোড়া কবুতর ইমরানকে দেন আর সেসঙ্গে কবুতর যত্ন নেওয়ার কিছু কৌশলও শিখিয়ে দেন। পরে ইমরান ভারতের রাজস্থান, গোরখপুর, উড়িষ্যায়ও গিয়েছেন এবং সেখানকার কবুতর নিয়ে এসে নিজের মাচানে রেখেছেন। তবে ইমরানের সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে রামপুর গিয়ে। 

মমতাজ গনি খান রামপুরের অভিজাত ব্যক্তি। নবাব ঘরের লোক, তার ওপর রাশভারী। ৮ হাজার কবুতর আছে তার কাছে। তার সঙ্গে দেখা করার খুব আগ্রহ ইমরানের। তিনি দোস্তি পাতালেন গনি খান সাহেবের ভাতিজার সঙ্গে। তারপর সেই ভাতিজার মারফত একদিন গনি সাহেবের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। 

গনি খান বাইরে থেকে যতটা রাশভারী ভিতরে ততটাই নরম। বিশেষ করে কবুতরের জন্য তার মায়া সাগরসম। কবুতরবিষয়ক আলাপেও তিনি বাঁধভাঙ্গা। ইমরান বাংলাদেশ থেকে গিয়েছেন শুনে ভালো আদর-আপ্যায়ন করলেন আর বলে দিলেন যদি কোনো প্রয়োজন পড়ে তবে যেন তার শরনাপন্ন হন। 

এখন ইমরানের শাগরেদ আছেন ভারতের উড়িষ্যায় আর গোরখপুরেও। তারা প্রতিযোগিতায়ও জিতেছেন।

কবুতর চেনারও কায়দা আছে

ভাই-বোনদের মধ্যে ইমরান সবার ছোট। তার রেডিমেড গার্মেন্টের ব্যবসা আছে। আবুধাবিতেও বছরের অনেকটা সময় কাটান তিনি। কবুতরবাজিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে তার। প্রধান কারণ হলো, কবুতরের নেশা মানুষকে মাদকের মতো নেশা থেকে দূরে রাখে। কবুতরের জন্য সময় দেওয়া লাগে, তাই অন্য 'বাজে' কিছুতে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ হয় না।

ইমরান খানের সংগ্রহের গোল্ডেন ব্রিড। ছবি: মো. ইমরান খানের সৌজন্যে

ইমরান বলছিলেন, 'আমার কথাই ধরুন, ২০০৩ সাল থেকে আমি কবুতর শখ (লালন-পালন, পরিচর্যা, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ) করি। কবুতর চিনতেই (কোনটা কোন জাতের, কোনটার ব্লাড লাইন ওল্ড, কোনটার নিউ) কিন্তু আমার অনেক সময় গেছে। যেসব কবুতরেরর ব্লাড লাইন ওল্ড, মানে ৫০০-৬০০ বছরের পুরোনো জাত, তাদের খাদ্যাভ্যাস, বন্ধুতা গড়ার ধরন আলাদা। নিউ ব্লাড লাইন পিজিয়নের (নিউ ক্রস ব্রিড, বয়স ৫০-৬০) এগুলো ভিন্ন। 

'কবুতরকে কেবল নিজের বাসা চেনানোও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এগুলো বছরের বছর ধরে কবুতরের সঙ্গে থাকার পর আয়ত্ত হয়। কবুতরবাজদের বিভিন্ন পার্টি আছে। আমার পার্টির প্রধান, মানে আমার ওস্তাদ হলেন আরব আমিরাতের এক শেখ। পেশায় তিনি একজন কূটনীতিক। বেশ দীর্ঘ তার নাম। আমরা ওস্তাদ বাখিত নামে তাকে পরিচিত করাই। পার্টিটা তার নামেই। 

'আমাদের পার্টির সদস্য ছড়িয়ে আছে এশিয়ার অনেক দেশে। পার্টির সদস্যরা মিলে আমরা একটি পরিবারের মতো। তাই যখন যেখানে যাই, এয়ারপোর্ট থেকেই মেহমানদারি পেতে শুরু করি। কবুতরবাজি যারা করেন, প্রত্যেকের কাছেই কবুতর সন্তানের মতো। পার্টির কোনো সদস্যকে পেলে কবুতর নিয়ে আলাপ, ট্রিক শেখা ইত্যাদি চলতে থাকে। 

'প্রত্যেক পার্টিই দিনে দিনে বিশেষ কিছু ট্রিক আয়ত্ত করে। আর এসব ট্রিক সাধারণত অন্য পার্টির লোক জানতে পারে না। যেমন একটি পাখিকে বাসা চেনানোর ক্ষেত্রে আমরা প্রথম প্রথম তার বাঁ দিকের পাখার কয়েকটা পালক বেঁধে রাখি, তারপর কয়েকদিন ডানদিকের পাখার কিছু পালক বেঁধে রাখি। তাতে পাখিটা বেশিদূর উড়ে চলে যেতে পারে না, একটু উড়েই বাড়ি ফিরে আসে। এভাবে কয়েকদিন গেলে পাখিটার বাসা চেনা হয়ে যায়।'

তারা সবাই কবুতরপ্রেমী। ছবি: মো. ইমরান খানের সৌজন্যে

ইমরান আরও বলেন, 'পাখির জন্য আমরা সব ত্যাগ স্বীকার করি। যেমন ধরেন, ফজরের আগে, অন্ধকার থাকতেই ঘুম থেকে উঠি। পাখিকে খাবার, ওড়ানো প্র্যাকটিস করাই। প্রতিদিন অন্তন্ত আড়াই-তিন ঘণ্টা আমরা এই কাজটা করি। অনেকে বিকালেও পাখি ওড়ায়। সব মিলিয়ে সময় কম যায় না। তারপর পাখির খাবার কিনতে হয়। পানির সঙ্গে মিলিয়ে গ্লুকোজের মতো খাবারও আমরা দিই। হাই ফ্লায়ার পাখির মধ্যে রামপুরী, টেডি ছাড়াও বাজরী, কাসুরী, শিয়ালকোটি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। 

'সারা মধ্যপ্রাচ্য পাকিস্তান থেকে কবুতর নিয়ে থাকে। তাতে কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। শ্রমশক্তিও নিয়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্য। ব্যাপারটি হলো এমন—ধরা যাক, কুয়েতি এক আমিরের কবুতরের শখ আছে। কিন্তু তাঁর নিজের সময় নেই। তখন তিনি পাকিস্তান থেকে কর্মী হায়ার করলেন। বললেন যে, তুমি এক বছর আমার ছাদের (কবুতরের) দেখভাল করবে। পাখিগুলোকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করবে। এজন্য প্রতি মাসে তোমাকে এই পরিমাণ বেতন দেওয়া হবে। আর যদি কবুতর প্রতিযোগিতায় জেতে তুমি বিশেষ পরিমাণ টাকা পুরস্কারও পাবে। এরকম হয়ে থাকে পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই, আর এক্ষেত্রে প্রচুর শ্রমশক্তি রপ্তানি করে পাকিস্তান।'

হাই ফ্লায়ার কম্পিটিশন

আর যত প্রতিযোগিতা দেখেছি জীবনে, তার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন এ প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা জেলাওয়ারি হয়, বিভাগওয়ারি হয়, দেশব্যাপীও হয়। ১৮ মার্চ নির্ধারিত ছিল বিক্রমপুর হাই ফ্লায়ার সমিতির প্রতিযোগিতার দিন। আমার দাওয়াত ছিল মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানের বি ব্লকের একটা ছাদে। আমাদের দেশে প্রতিযোগিতাটির বয়স অনেক কম, মাত্রই ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে। তার ওপর করোনার চোখ রাঙানিতে দুই বছর বন্ধও ছিল। 

বিক্রমপুর হাই ফ্লায়ার প্রতিযোগিতায় ঢাকার লোকও অংশ নিতে পারবে, তবে ছাদে বিচারক থাকবেন বিক্রমপুরের লোক। এ ছাদ থেকে যিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন, তার নাম রিফাত। সকাল ৮টায় তিনটি কবুতর ছাদ থেকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার পৌঁছাতে সাড়ে তিনটা বেজে গেল। ছাদের পরিবেশ একটু থমথমে। ৮ ঘন্টা ৩৯ মিনিট উড়ে একটি কবুতর অল্পক্ষণ আগেই ছাদের মাথায় এসে বসেছে। সময়ের হিসাবে এটা বেশ ভালো সময়। কিন্তু কবুতরটা ডিসকোয়ালিফাই করা হয়েছে কারণ যেখান থেকে এর নেমে আসার কথা ছিল সেখান থেকে নামতে সে ব্যর্থ হয়েছে। 

দুরবিন দিয়ে দেখছেন কেমন উড়ছে তার কবুতর। ছবি: মো. ইমরান খানের সৌজন্যে

ইমরান ব্যাপারটি আমাকে বোঝাতে লাগলেন, 'প্রথমত কবুতরগুলো ৬,৫০০ ফুট থেকে ৭,০০০ ফুট ওপরে চলে গিয়ে নিজেকে বন্দি করে ফেলে। মানে হলো যেখানে তাপমাত্রা আরামদায়ক (১৮-২৪ ডিগ্রি), সেখানে গিয়ে ওড়া বন্ধ করে দিয়ে স্থির হয়ে থাকে, মানে আরাম করতে থাকে। আমরা এটাকেই বলি বন্দি করে ফেলে। মাঝে মধ্যে ওপর-নিচও করে, সেটা বাতাসের গতির ওপর নির্ভর করে। 

'তবে যে বিপদটা কবুতরকে বেশি বিপদে ফেলে সেটা হলো বাজের মাইর (আক্রমণ)। বাজপাখি, এমনকি চিলও কবুতরকে কাবু করে ধরে নিয়ে যায়। বাজের হাত থেকে বাঁচতেও কবুতর ওপর-নিচ করে। কবুতরটি ওড়ানোর সময় আমরা এর পাখায় একটা সিল মেরে দিই। সেই সিলটিই এর পরিচয় নির্দেশ করে। আরেকটা ব্যাপার প্রতিযোগিতায় উল্লেখযোগ্য কবুতরটি যে ছাদ থেকে ওড়ানো হয় তার ধারেকাছে থাকাই তার যোগ্যতা। যদি সে ছাদটি থেকে বেশি দূরে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায় তবে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, যেমন এই পাখিটির ক্ষেত্রে করা হয়েছে।'

ইমরান খান আরও বললেন, 'এটা বস্তুত দমের খেলা। ঝড়-ঝাপটা সইয়ে কতক্ষণ নিজের জায়গায় কবুতরটি টিকে থাকতে পারে, তা-ই পরীক্ষা করা হয় এক্ষেত্রে। এখানে দৌড়াদৌড়ি নেই, কে কার আগে যাবে, তারও কোনো ব্যাপার নেই। শুধু টিকে থাকা, অটল থাকা। আজকে ধরুন, ১৫টি ছাদ থেকে কবুতর ওড়ানো হচ্ছে—কোনোটি মুন্সিগঞ্জ, কোনোটি মানিকগঞ্জ, কোনোটি বা লালবাগ থেকে। কোথা থেকে ওড়ানো হচ্ছে সেটা ব্যাপার নয়, কতক্ষণ ধরে হচ্ছে সেটাই ব্যাপার। এমনও প্রতিযোগিতা আমি মিডল ইস্টে দেখেছি, একই পাখি পর পর উড়ছে টানা ৫ দিন, ৭ দিন, এমনকি ১১ দিন পর্যন্ত।'

এখানে পাখিওয়ালার কৃতিত্বটা কোথায়? না জিজ্ঞেস করে পারলাম না। ইমরান বললেন, 'দেখুন ভালো যত্ন নিলে কবুতর ২০ বছরের বেশি বাঁচে। একজন কবুতরবাজ একটা পাখিকে গড়ে তোলে তার শিশু অবস্থা থেকে। তাকে খাওয়ায়, বাসা চেনায়, উড়তে শেখায়, ফিরতে শেখায়, আক্রমণ এড়িয়ে চলতে শেখায়, বাতাসের ধাক্কা সইতে শেখায়, মেঘ চেনায়, মেঘকেই ছাতা বানাতে শেখায়। এবার তাহলে বলুন, কৃতিত্ব কতটা পাখিওয়ালার আর কতটা পাখির। পাখিরও কৃতিত্ব নিশ্চয় আছে—সেটা তার ব্লাডলাইনে, যেমন টেডির ক্ষেত্রে বা রামপুরীর ক্ষেত্রে হয়। তবে ভালো ব্লাডলাইন চেনাও পাখিওয়ালার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যারা কবুতরবাজ তারা পাখা, চোখ, পাখার ভাঁজ , লেজের গড়ন, ঘাড়, বসার কায়দা, দাঁড়ানোর ভঙ্গি ইত্যাদি দেখতে জানে। সাধারণ মানুষ তো এসব জানে না। তাই বলতে হয় পাখিওয়ালার কৃতিত্বই বেশি ।' 

১৮ মার্চ দিনটা মেঘলা ছিল

হাই ফ্লায়ার কবুতরবাজি শীতকালে হয় না। কারণ দুটি—আকাশ কুয়াশায় ঢাকা থাকে এবং বাজের আক্রমণ থাকে বেশি। সাধারণত বসন্তকাল থেকে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত হাই ফ্লায়াররা প্রতিযোগিতা চালিয়ে যান। প্রধান কারণ, মেঘলা দিন ছাড়া এ সময় আকাশ পরিস্কার থাকে। 

কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১৮ মার্চ (প্রতিযোগিতার দিন) ছিল একটা অপরিস্কার দিন। ঢাকা উদ্যানের যে ছাদে হাই ফ্লায়াররা জড়ো হয়েছেন সে ছাদটিতে পৌঁছে দেখি মোটমাট ৪ জন। সানগ্লাস চোখে দিয়ে মাদুরের ওপর তারা চিত হয়ে শুয়ে আছেন। কিন্তু প্রত্যেকের চোখ খোলা ও সজাগ। পাখি দেখার কাজ চলছে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে এ কাজটি তারা করে চলেছেন গত ৯ ঘণ্টা ধরে। সাড়ে ছয় থেকে ৭ হাজার ফুট ওপরে থাকা পাখিটাকে মাঝেমধ্যে পোকার মতো দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের চোখ হয়তো এড়িয়ে যাবে, কিন্তু কবুতরবাজরা পাখি চিনতে ভুল করেন না। 

কিছুক্ষণ আগে নেমে আসা পাখিটা ডিসকোয়ালিফাইড হওয়ায় ছাদে বিষাদ নেমে এসেছে, আর বাকি আছে ২টি। সেগুলোও যদি বিকাল ৫টার মধ্যে না নামে তবে অটো বাদ পড়ে যাবে প্রতিযোগিতা থেকে। অথচ অংশগ্রহণকারী রিফাত আগের পুরো রাত ঘুমাননি। ৪টা বেজে গেছে, অথচ খাওয়া হয়নি তার। চোখে-মুখে উদ্বেগ স্পষ্ট—প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ার ক্লান্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে বাজের আক্রমণে পাখি হারানোর আঙ্কা। 

ইমরান খান কেবল নির্বিকার আছেন। তিনি শেষে কিছু সুন্দর কথা বললেন, 'প্রতিযোগিতা সবসময়ই এমন, তা যে প্রতিযোগিতাই হোক। এতে পরাজিতই হয় বেশিরভাগ, তাই বলে কেউ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাদ দেয় না। আজ আমাদের পার্টি ভালো করছে না কিন্তু আগামীতে আমরা ভালো করার আশা করতেই পারি, যেমন অতীতে করেছিলাম। নতুনরা ভালো করলে আশান্বিত হবে, দেশে কবুতরবাজের সংখ্যা বাড়বে। আর এটাই তো আমাদের প্রধান চাওয়া, যেন ভুলভাল কাজে জড়িয়ে না পড়ে তরুণ সমাজ, বরং পাখির সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ুক, জীবন সুন্দর হোক।'

Related Topics

টপ নিউজ

হাই ফ্লায়ার / কবুতর / কবুতর প্রতিযোগিতা / কবুতর পালন / শখ / কবুতরবাজি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাব আইএসডিবির
    ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাব আইএসডিবির
  • ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    অধ্যাদেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাদ: হোঁচট খেল দুদক সংস্কারের উদ্যোগ
  • সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
    আসিফ মাহমুদের হাদি সংক্রান্ত পোস্টে ‘গণ-রিপোর্ট’, ফেসবুক পেইজ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ 
  • ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল
    স্মৃতিসৌধে সূর্যাস্তের আগে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন
  • কার্যক্রমে ডিএনসিসির ৩৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী অংশ নেন। ছবি : সংগৃহীত
    তারেক রহমানের সংবর্ধনাস্থল থেকে ১৪৮ টন বর্জ্য অপসারণ করলো ডিএনসিসি
  • ছবি: টিবিএস
    মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমেছে ব্যাপকভাবে, বাড়ছে আর্থিক ক্ষতি

Related News

  • বই সংগ্রহের নেশা: ঠিক কতগুলো বইকে অসংখ্য কিংবা অনেক বেশি বলা যেতে পারে?
  • মুম্বাইয়ে পাবলিক স্পেসে কবুতরকে খেতে দিলেই শাস্তি; ভারতজুড়ে তীব্র বিতর্ক
  • কেন আপনার কম কাজ করে শখের পেছনে বেশি সময় দেওয়া উচিত?
  • রেডিও! আজও না শুনে যারা থাকতে পারেন না
  • স্তন্যপায়ীরা পায়ুপথে শ্বাস নিতে পারে প্রমাণ করে ইগ নোবেল পেল যে দল 

Most Read

1
ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাব আইএসডিবির
বাংলাদেশ

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাব আইএসডিবির

2
ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

অধ্যাদেশ থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাদ: হোঁচট খেল দুদক সংস্কারের উদ্যোগ

3
সাবেক ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

আসিফ মাহমুদের হাদি সংক্রান্ত পোস্টে ‘গণ-রিপোর্ট’, ফেসবুক পেইজ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ 

4
ছবি: বিএনপির মিডিয়া সেল
বাংলাদেশ

স্মৃতিসৌধে সূর্যাস্তের আগে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন

5
কার্যক্রমে ডিএনসিসির ৩৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী অংশ নেন। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ

তারেক রহমানের সংবর্ধনাস্থল থেকে ১৪৮ টন বর্জ্য অপসারণ করলো ডিএনসিসি

6
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমেছে ব্যাপকভাবে, বাড়ছে আর্থিক ক্ষতি

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net