Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
June 08, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JUNE 08, 2025
মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান যে জাদুকর

ফিচার

সালেহ শফিক
17 February, 2023, 01:05 pm
Last modified: 17 February, 2023, 01:36 pm

Related News

  • সেই সব আশ্চর্য সন্ধ্যা—ঢাকার বিস্মৃত জাদুকরনামা
  • ‘বাংলার মিস্টার বিন’ জাদুও জানেন
  • বিখ্যাত আমেরিকান জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড এখন কোথায়? 
  • 'পাঠান' এর ধারেকাছে নেই! প্রথম দিনে জমলো না সালমানের ম্যাজিক  
  • ছু-মন্তর ছু

মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান যে জাদুকর

আরেকবারের ঘটনা ধানমন্ডি লেকের। মাঝে মাঝে বিকাল বেলায় বন্ধুবান্ধব সমেত রাজু জাদু-আড্ডা দিতেন ধানমন্ডি লেকে। দূর থেকে দু-একজন বৃহন্নলা তা দেখে থাকবেন, কিন্তু কাছে আসতেন না। অথচ মুগ্ধ হয়ে ঘুরে-ফিরে দেখতেন। এর মধ্যে রাজুর এক বন্ধু তাদেরকে বলল, ইনি (রাজু) খুব বড় জাদুকর। লাখ টাকা দিলে তবে জাদু দেখান। দিনকয় পরে তারা (বৃহন্নলা) ১০০ টাকার কয়েকটি বান্ডেল নিয়ে এসেছিল। বলেছিল, এই যে ১০ হাজার টাকা, এর বেশি নেই আমাদের কাছে। আপনি আমাদের পাড়ায় চলেন, জাদু দেখাবেন। রাজু অবাক হয়েছিলেন আর বন্ধুর দুষ্টুমিতে দুঃখও পেয়েছিলেন। তারপর বলেছিল, আপনারা যদি আমাকে বেগুন ভর্তা, ডাল আর গরুর গোশত খাওয়াতে পারেন তবে কোনো টাকা ছাড়াই জাদু দেখাব।
সালেহ শফিক
17 February, 2023, 01:05 pm
Last modified: 17 February, 2023, 01:36 pm

তাসের খেলায় রাজু। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

কবি জসীম উদ্‌দীন স্মরণে ফরিদপুরে জসীম মেলা হয়। সে মেলায় পল্লীগানের আসর বসে, মুড়ি-মুড়কির দোকান বসে, নৃত্যানুষ্ঠান হয়। তবে রাজুর পছন্দ ‍ছিল সার্কাস। দি রয়্যাল লক্ষ্মণ দাস সার্কসের নাম ছিল তল্লাটে। রাজু তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র।

নব্বই দশকের শেষ দিক হবে। মামা বা চাচার সঙ্গে রাজু মেলায় যেত আর গিয়ে সোজা ঢুকে পড়ত সার্কাসের তাঁবুতে। সার্কাসে তিনটি শ্রেণি ছিল—ভিআইপি, মিডল ক্লাস, লোয়ার ক্লাস। ভিআইপি টিকেটের দাম ছিল বেশি আর ভিআইপি শ্রেণির লোক বসত একেবারে মঞ্চের কাছে। রাজু বায়না ধরত ভিআইপিতে বসার, মামা-চাচারা তা মেনেও নিত। দড়ি লাফ, হাতি নাচানো, রিংবাজিতে নয়, রাজুর আগ্রহ ছিল ম্যাজিক শোয়ে।

রাজুর কাছে ম্যাজিকম্যান ছিল অন্যলোকের প্রাণী, যার অসাধ্য কিছু নেই। রাজু পারলে তার পায়ের কাছে গিয়ে বসে, তাই ভিআইপি শ্রেণী ছাড়া অন্য কোথাও সে বসতে চাইত না। কোনো কোনোবার এমন হয়েছে যে তিন-চার শো পরপর দেখে তবে বাড়ি ফিরেছে। ওই জাদুকরেরা রাজুর মনে দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। 

কেমন জাদু দেখাত তখন সার্কাসের লোক? জানতে চাইলাম। রাজু বললেন, ট্রাডিশনাল জাদু বেশি দেখাত, যেমন বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, শূন্য থেকে বল ধরা, চাল থেকে মুড়ি বানানো ইত্যাদি। সোজা-সাপটা সব জাদু, তবে আমাকে ওই বয়সে তাজ্জব করে দেওয়ার জন্য ছিল যথেষ্ট।

প্রশ্ন: কী ধরনের পোশাক পরতেন ওই জাদুকরেরা?

রাজু: কেউ কেউ রাজা-বাদশার মতো পোশাক পরতেন—মাথায় মুকুট, সোনালি রঙের কাজ করা কোর্তা, পায়ে নাগরা ইত্যাদি। আবার একদম স্যুট-বুট পরা জাদুকরও দেখেছি। তারা হ্যাট থেকে খরগোশ বের করতেন।

প্রশ্ন: ট্রাডিশনাল জাদুকে আপনার কেমন লাগে?

রাজু: সাদাসিধে জাদু। তবে সেগুলোতেও মজা আছে। যেমন বেদে দলের (জিপসি) জাদুর কথা ধরুন।রাজা-বাদশাদের আমলে বৈদ্যরা হতেন নবরত্ন সভার সদস্য। তাদের সামাজিক মর্যাদাও ছিল উঁচুতে। শেষে যখন সে আমল ফুরাল, তখন তারা অচ্ছুৎ হয়ে পড়ল। ডাকিনী বিদ্যার চর্চাকারী বলে তাদের একঘরে করে দেওয়া হলো। তখন তাদের খাওয়া-পরায় টান পড়ল। তখন নানারকম তুকতাক, গুপ্তিমন্ত্র, ভোজবাজি, ভেলকিবাজির আশ্রয় নিল তারা। একসময় নিজেরাই নিজেদের পেশাকে আর সম্মান করত না। অথচ তাদের হাতসাফাইয়ের (স্লেইট অব হ্যান্ড) কাজ সত্যি বিস্মিত করে। দাঁত থেকে পোকা বের করার মতো কাজ কিন্তু সোজা কোনো ব্যাপার নয়।

প্রশ্ন: কামরুপ-কামাখ্যা থেকে তন্ত্রমন্ত্র শিখে এসে ওস্তাদ বনে যাওয়ার বিষয়টি আসলে কি?

রাজু: দেখুন, ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয় ছিল কামরুপ কামাখ্যা। আর তাদের শেল্টারকে ব্রিটিশ সৈন্যদের হামলা থেকে মুক্ত রাখতে নানান কথা ছড়ানো হয়েছিল। তার মধ্যে অতিলৌকিক, অতীন্দ্রিয় ইত্যাদি ব্যাপারও ছিল।

ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

শিশুমেলায় জাদু কিনেছিল

রাজুর পুরো নাম সাজেদুর রহমান রাজীব। তার জন্ম ১৯৯৪ সালে। ফরিদপুরে রাজুদের সম্ভ্রান্ত পরিবার। বাবা প্রভাবশালী পরিবহন ব্যবসায়ী। অবশ্য আদিতে তাদের বাড়ি ছিল লক্ষ্মীপুরে। তবে রাজুর দাদার এক বড় ভাই ব্রিটিশ আমলে ব্যাংকার  ছিলেন। ফরিদপুরে ছিল তার পোস্টিং। সেই থেকে পরিবারের একটা অংশ ফরিদপুরে স্থায়ী বসত নিয়েছিল।

রাজু প্রাথমিক ক্লাসগুলো পড়েছেন ফরিদপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন চার্চ স্কুলে। ক্লাস থ্রি বা ফোরে থাকতে রাজু একবার মায়ের সঙ্গে এসেছিলেন ঢাকার শ্যামলীর শিশুমেলায় বেড়াতে। শিশুমেলায় তখন জাদু বিক্রি হতো।

ব্যাপারটি কেমন? জিজ্ঞেস না করে পারলাম না। রাজু বললেন, 'তখন সেখানে এক ম্যাজিশিয়ান এমন সব জাদু দেখাতেন যা ছোটদের খুব আনন্দ দিত। আর ম্যাজিকগুলো কেনাও যেত। আমি তাসের ওপর ম্যাচের কাঠি ভাসানোর ম্যাজিকটি কিনতে চাইলাম। দাম ধরল ৩০০ টাকা। মাকে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে রাজি করিয়েছিলাম। ম্যাজিক কিনে নেওয়ার অর্থ হলো ম্যাজিকটি শিখে নেওয়া। সেবারই আমি প্রথম কোনো ম্যাজিক শিখেছিলাম। সেটি আমি আজও দেখাই এবং মানুষকে অবাক করি।'

প্রশ্ন: মানুষকে অবাক করাই কি ম্যাজিশিয়ানের কাজ?

রাজু: হ্যাঁ, একরকমভাবে তা-ই বলা যায়। অবাক হলে তো মানুষের উদ্দীপনা তৈরি হয়, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ইতিবাচক। তবে আমি আসলে মানুষকে হাসাতে চাই, মানে খুশি করতে চাই। আর তার জন্য ম্যাজিক আমার মাধ্যম।

উচ্চাকাঙক্ষার ম্যাজিক

রাজু মাধ্যমিক ক্লাসগুলো পড়েছেন ফরিদপুর জিলা স্কুলে। ফরিদপুরে তখন দুটি বিখ্যাত লাইব্রেরি ছিল। তারা কলকাতা থেকে ভালো ভালো সব বই আনাত। রাজু মাঝেমধ্যে লাইব্রেরিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত আর জানতে চাইত, আংকেল কোনো ম্যাজিকের বই আছে? কোনো কোনো দিন রাজু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে লাইব্রেরির সামনে।

ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় রাজুকে এক লাইব্রেরিয়ান শেষে একটি বই দিল, নাম উচ্চাকাঙ্ক্ষার ম্যাজিক। বইটি পেয়ে রাজু খুশিতে আটখানা তবে বাড়িতে গিয়ে খুলে দেখার পর তো মাথায় হাত। বইটি আসলে ছিল সাইকোলজি, মানে মনোবিদ্যার বই। কীভাবে আকাঙ্ক্ষার পূরণ ঘটাতে হয়, উচ্চাকাঙ্ক্ষাও কীভাবে আয়ত্তে আসে, তা জানার কৌশল শেখানোর বই ছিল সেটি। তবে বইটি রাজুকে উপকৃত করেছে। সে মানুষের মনের অলিগলি জানতে শিখেছে বইটি থেকে।

জাদুকর রাজু। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

রাজু বলছিলেন, 'আমি গোয়েন্দা, রহস্য-রোমাঞ্চ ধরনের বই বলতে গেলে পড়িনি। আধ্যাত্মিক বই প্রচুর পড়তাম—যেমন ইমাম গাজ্জালী, জালালউদ্দিন রুমীর বই। সব বুঝতেও পারতাম না, কিন্তু সেগুলোই পড়তাম। জাদু শেখার বই পেয়েছিলাম পিসি সরকারের লেখা ইন্দ্রজাল, মেসমেরিজম এবং হিপনোটিজম। বইগুলো পড়তাম আর প্রচুর প্র্যাকটিস করতাম। একেকটা বই যে কত সহস্রবার পড়েছি, তা গুনে শেষ করতে পারব না। অন্যরা যেমন বইয়ের ভেতর লুকিয়ে গোয়েন্দা গল্প পড়ত, আমি তেমন জাদুর বই পড়তাম। তবে ক্লাসের পড়াশোনাতেও আমি ভালো ছিলাম। কোনো কোনোদিন আমি ১৭-১৮ ঘণ্টাও পড়েছি। ক্লাস এইট বা নাইনে পড়ার সময় আমি ভাইবোনদেরকে সাধারণ কিছু কিছু জাদু দেখাতে শুরু করলাম, যেমন রুমাল গায়েব করে দেওয়া বা একটা কয়েন থেকে দুটি কয়েন বানানো ইত্যাদি। আর তাসের ওপর ম্যাচের কাঠি ভাসানোর জাদুটি তখন আমার কাছে ডালভাত। আমি সে সময় টিভিতে ডেভিড কপারফিল্ডের শো দেখি আর তাতে মুগ্ধ হয়ে যাই। কপারফিল্ডের শো ছিল অত্যন্ত আধুনিক আর আমাদের এখানে প্রচলিত ম্যাজিকের তুলনায় বেশিই আলাদা। আমিও তাই আধুনিক ম্যাজিক জানতে চাইলাম, পারতে চাইলাম।' 

প্রশ্ন: জাদু কতটা সম্মানজনক শিল্প, মানে চিত্রকলা বা কবিতার তুলনায়?

রাজু: ছোট বা বড়র ব্যাপার নয় এটা। আমি ছোটবেলা থেকেই ভালো ছবি আঁকতে পারি। চারুকলায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পাশও করেছিলাম, কিন্তু পরিবারের সম্মতি ছিল না বলে পড়তে পারিনি। কিন্তু জাদুর ব্যাপারটি আমার কাছে স্পেশাল। আপনি দেখবেন কারো ভালো লাগে বিমূর্ত শিল্প, কারো রিয়েলিস্টিক। কেউ জীবনানন্দে ডুব দেয় কেউ আবার বোদলেয়ারে ভাসে। জাদুর বেলায় এমনটা হয় না। সবার কৌতূহল জাগায় জাদু, তা সেটা রাস্তায় হোক বা মঞ্চে। আমার কাছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, জাদু দিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে অবাক করতে পারব, খুশি করতে পারব। তাই আমার ধ্যানজ্ঞান হলো জাদু। এখন অবস্থা আমার এমন যে চাকরি-বাকরি সব ছাড়তে পারব, কিন্তু জাদু নয়। মানুষের মুখে হাসি দেখতে আমি খুবই ভালোবাসি। 

রাজু প্রথম স্টেজ শো করেছিলেন ক্লাস টেনে পড়ার সময়। সেটা ছিল কোনো একটা সামাজিক সংগঠনের বার্ষিক সম্মিলনী অনুষ্ঠান। পরিচিত এক বড় ভাই বলেছিল, তুমি দুটি জাদু দেখিও রাজু।

শেষে উতরে গিয়েছিলেন

প্রথম স্টেজ শো বলে কথা। রাজুর ঘুম উড়ে গিয়েছিল। তবে শেষমেশ প্রশংসা পেয়েছিলেন খুব। নাম হয়ে গিয়েছিল এলাকায়। ওই শোতে রাজু কোকের বোতল নিঃশেষ করা এবং মুখ দিয়ে দুধ খাইয়ে কান দিয়ে বের করার খেলা দুটি দেখিয়েছিলেন।

ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

এসএসসি পাশের পর রাজু ঢাকার কুইন্স কলেজে এসে ভর্তি হন। সঙ্গে আনেন একটি ট্রাঙ্ক। সেটাতে জাদুর সব যন্ত্রপাতি, যেমন ফুলের রং পরিবর্তন করার রোল, কার্ড বক্স, ফানেল ইত্যাদি। কলেজে নাম ছড়িয়ে পড়তে বেশি দেরি হলো না।

'কারণ ততদিনে আমি ক্লোজ-আপ ম্যাজিকের অনেক ট্রিক শিখে ফেলেছি।'

প্রশ্ন: ক্লোজ আপ ম্যাজিক বিষয়টা কী? 

রাজু: খুব কাছ থেকে যে ম্যাজিক দেখানো হয়, সেগুলো ক্লোজ আপ ম্যাজিক। যেমন তাসের খেলা, কয়েনের খেলা, কলমের খেলা ইত্যাদি। একটি উদাহরণ হলো, দর্শকের কাছ থেকে তার চশমাটি নিয়ে শূন্যে ভাসিয়ে রাখা।

প্রশ্ন: কত ধরনের ম্যাজিক আছে?

রাজু: স্ট্রিট ম্যাজিক, হাত সাফাই ম্যাজিক ইত্যাদি।

প্রশ্ন: আপনি তো ততদিনে জেনে ফেলেছেন যে জাদুতে অলৌকিক বা অতিলৌকিক কিছুই নেই, তবু এর টানে পড়ে থাকলেন কেন?

রাজু: আগেই বলেছি, মানুষের মুখে আমি হাসি দেখতে চাই। ম্যাজিক আমার জীবন। আমি যত বুঝলাম এটা আসলে কৌশল আর বিজ্ঞানের খেলা, ততই তা আয়ত্ত করার আগ্রহ পেয়ে বসল। ততদিনে আমি ডেভিড ব্লেইনের জাদুও দেখে ফেলেছি। মার্কিন এই জাদুশিল্পীকে স্ট্রিট ম্যাজিকের মাস্টার বলা হয়। তার দেখানো ম্যাজিকের কিছু কৌশল আয়ত্তে এনে আমি বলতে গেলে দুর্দান্ত হয়ে উঠেছি।

ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

প্রশ্ন: ম্যাজিশিয়ানরা আসলে কী করে?

রাজু: আমরা মানুষের মন নিয়ে খেলি। দেখবেন একইসঙ্গে অনেকগুলো কথা আমরা বলি, যেমন ডান হাত আলতো করে খুলুন, বাঁ হাত টান টান করুন, আমার চোখের দিকে সোজা তাকান। এতসব কথার মধ্যে যে জিনিসটায় তার নজর রাখার কথা সেটা তাকে অল্প সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিই। এতে যে টাইম গ্যাপ তৈরি হলো সেটুকুই দর্শককে চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সে কারণে ম্যাজিশিয়ানদের বলা হয় মেন্টালিস্ট। আরেকটা কাজ করি, সেটা হলো বিভ্রম তৈরি করা, বাস্তবকে হাজির করি অবাস্তব থেকে।

পেশায় রাজু ক্যান্সার গবেষক

কুইন্স কলেজ থেকে পাশ করার পর রাজু স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভাইরোলজি নিয়ে পড়েছেন। ২০১৭ সালে এমবিএ করেছেন। পেশায় তিনি একজন ক্যান্সার গবেষক। তবে তার কাছে সব কিছুর ঊর্ধ্বে হলো জাদু। তিনি আমন্ত্রিত হয়ে মীর্জাপুর ক্যাডেট কলেজের রিইউনিয়নে শো করেছেন, ব্যারিস্টারদের পুনর্মিলনীতে শো করেছেন। কোভিডের আগে তিনি মাসে গড়ে ৪টি শো করতেন। প্রতি শোতে ৫০ হাজার টাকা ফি নেন রাজু।

কিন্তু এখানেই শেষ হয় না রাজুর গল্প। আসল গল্পটা এখনো আড়ালেই আছে। সেটি হলো ম্যাজিক দিয়ে মানুষকে খুশি করার গল্পগুলো। একটা গল্প তো পরিবারের মধ্যকার। তার দূর-সম্পর্কের এক নানা ক্যান্সারে আক্রান্ত। কুটোটি নাড়ার ক্ষমতাও হারিয়েছেন। মারা যাওয়ার আশঙ্কায় গোনেন প্রতিটি ক্ষণ। সেই নানাকে ছিঁড়ে যাওয়া একটি টিস্যু পেপার জোড়া লাগিয়ে দেখিয়েছেন। নানার মুখে অল্প একটু হাসি ফুটেছিল। ঘটনাটি ভোলেন না কখনোই রাজু।

আরেকবারের ঘটনা ধানমন্ডি লেকের। মাঝে মাঝে বিকাল বেলায় বন্ধুবান্ধব সমেত রাজু জাদু-আড্ডা দিতেন ধানমন্ডি লেকে। দূর থেকে দু-একজন বৃহন্নলা তা দেখে থাকবেন, কিন্তু কাছে আসতেন না। অথচ মুগ্ধ হয়ে ঘুরে-ফিরে দেখতেন। এর মধ্যে রাজুর এক বন্ধু তাদেরকে বলল, ইনি (রাজু) খুব বড় জাদুকর। লাখ টাকা দিলে তবে জাদু দেখান। দিনকয় পরে তারা (বৃহন্নলা) ১০০ টাকার কয়েকটি বান্ডেল নিয়ে এসেছিল। বলেছিল, এই যে ১০ হাজার টাকা, এর বেশি নেই আমাদের কাছে। আপনি আমাদের পাড়ায় চলেন, জাদু দেখাবেন। রাজু অবাক হয়েছিলেন আর বন্ধুর দুষ্টুমিতে দুঃখও পেয়েছিলেন। তারপর বলেছিল, আপনারা যদি আমাকে বেগুন ভর্তা, ডাল আর গরুর গোশত খাওয়াতে পারেন তবে কোনো টাকা ছাড়াই জাদু দেখাব।

তারপর রাজু তাদের পাড়ায় গিয়ে জাদু দেখিয়েছেন ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। তারা এতো খুশি হয়েছিল যে নাচতে শুরু করেছিল। রাজুর সঙ্গে দিনে দিনে তাদের সম্পর্ক এমন দাঁড়িয়েছে যে তিনি তাদের কোড ওয়ার্ড বুঝতে পারেন।

পিতৃপরিচয়হীন শিশুদের মাঝে

আরেকটা ঘটনা দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীর শিশুদের জাদু প্রদর্শন। অধ্যাপক আলতাফ হোসেন এবং একটি সমাজকল্যাণ সংস্থার সহযোগিতায় সেখানে গিয়েছিলেন রাজু। পল্লীসংলগ্ন এক বড় হলঘরে প্রায় ৫০ জন শিশুকে জাদু দেখিয়েছিলেন রাজু। তাদেরকে জাদু করে চকলেট বানিয়ে খাইয়েছেন, বেলুন থেকে কবুতর বের করে দেখিয়েছেন। এই শিশুগুলো স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে বাবার নামের জায়গা খালি রেখে আসে। ঠিক ওই মুহূর্তে কী চলে ওদের মনের মধ্যে, ভেবে পান না রাজু। 

ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত

রাজু বলছিলেন, মানুষের আসলে কষ্ট অনেক। কাউকে শোনাতে পারলেও কিন্তু কষ্ট লাঘব হয়। অথচ অনেক মানুষই একজন মনোযোগী শ্রোতা পায় না। শুধু শ্রোতা হয়েও আপনি মানুষের উপকারে আসতে পারেন। স্ট্যামফোর্ডে পড়ার সময় ইউনিভার্সিটিরই একটা কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সাফল্যের সংজ্ঞা কী? কেউ বলেছিল বিখ্যাত হওয়া, কেউ বলেছিল বড় উদ্যোক্তা হওয়া ইত্যাদি। আমি বলেছিলাম, রাতে শান্তিমতো ঘুমাতে পারাই সাফল্য। এটা আমি এখনো বিশ্বাস করি, আর সবসময় করেই যাব। মানুষকে খুশি করতে পারলে যতটা  শান্তি পাওয়া যায় তা আর কিছুতেই পাওয়া যায় না।

শেষে রাজু আরেকটি বিষয় যোগ করলেন, সেটি হলো অ্যাংকরিং। জাদুর জন্য ভালো উপস্থাপক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। 

'আপনি আর আমি একই জাদু দেখাতে পারি। কেবল উপস্থাপনা গুণে আপনার জাদু তুমুল করতালি পেতে পারে, আমারটা হাসির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আমি শাহরুখ খান আর সৌরভ গাঙ্গুলিকে অ্যাংকরিংয়ের গুরু মানি। আর জাদুর ক্ষেত্রে ওস্তাদ মানি ডেভিড ব্লেইনকে।'

প্রশ্ন: উঠতে উঠতে রাজুকে জিজ্ঞেস করি, আমাদের দেশে জাদু বিষয়ক পরিস্থিতি কেমন?

রাজু জানালেন, 'জাদু আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ মোগল বাদশাহদেরও জাদু দেখিয়ে মাত করেছেন এমন জাদুকর ছিলেন ভূ-ভারতে। আমাদের এখানে ইনস্ট্রুমেন্টাল ম্যাজিকের (টুল-টেবিল নিয়ে এসে স্টেজে দাঁড়িয়ে খেলা দেখানো) চল আছে এখনো। তবে ইউরোপ-আমেরিকায় জাদু এগিয়েছে অনেকদূর। আমাদের এখানে চর্চাই উঠে যাচ্ছে। আগে সার্কাসে জাদু দেখানো হতো, এখন সার্কাসও হয় কম।'   

প্রশ্ন: তাহলে এর শেষ কোথায়?

রাজু: আমি আশাবাদী। নতুন প্রজন্ম এই অদ্ভুত মজার খেলাটাকে আপন করে নেবে। মানুষকে আনন্দিত করার সুযোগ কে ছাড়তে চায়! জুয়েল আইচের মতো শিল্পী তো আমাদের দেশেই আছেন। আশা করি একদিন অফিসফেরত কর্মক্লান্ত মানুষ পথের ধারে জাদু দেখে আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরবে।

Related Topics

টপ নিউজ

জাদু / জাদুকর / ম্যাজিশিয়ান / ম্যাজিক

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • চাটগাঁইয়াদের চোখে ‘ভইঙ্গা’ কারা? কেনই-বা এই নাম?
  • জি-৭ সম্মেলনে মোদিকে আমন্ত্রণ, তোপের মুখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী
  • গাজায় ইসরায়েল-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব কে?
  • বন্ধু থেকে শত্রু: ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের নাটকীয় অবসান
  • শেখ পরিবারের একচ্ছত্র শাসন থেকে দুই ভাইয়ের মনোনয়ন লড়াই: বাগেরহাটের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া
  • রাশিয়ার ‘আন্ডারকভার’ ড্রোন যুদ্ধ: ‘হোম কল’, ছদ্মবেশ—আরও যত কৌশল

Related News

  • সেই সব আশ্চর্য সন্ধ্যা—ঢাকার বিস্মৃত জাদুকরনামা
  • ‘বাংলার মিস্টার বিন’ জাদুও জানেন
  • বিখ্যাত আমেরিকান জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ড এখন কোথায়? 
  • 'পাঠান' এর ধারেকাছে নেই! প্রথম দিনে জমলো না সালমানের ম্যাজিক  
  • ছু-মন্তর ছু

Most Read

1
ফিচার

চাটগাঁইয়াদের চোখে ‘ভইঙ্গা’ কারা? কেনই-বা এই নাম?

2
আন্তর্জাতিক

জি-৭ সম্মেলনে মোদিকে আমন্ত্রণ, তোপের মুখে কানাডার প্রধানমন্ত্রী

3
আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েল-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব কে?

4
আন্তর্জাতিক

বন্ধু থেকে শত্রু: ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্কের নাটকীয় অবসান

5
বাংলাদেশ

শেখ পরিবারের একচ্ছত্র শাসন থেকে দুই ভাইয়ের মনোনয়ন লড়াই: বাগেরহাটের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া

6
আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার ‘আন্ডারকভার’ ড্রোন যুদ্ধ: ‘হোম কল’, ছদ্মবেশ—আরও যত কৌশল

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net