Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
August 24, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, AUGUST 24, 2025
বিলুপ্ত হওয়া তাসমানিয়ান টাইগার কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
10 February, 2023, 02:30 pm
Last modified: 10 February, 2023, 02:46 pm

Related News

  • উশুতে মেডেল পেলে চাকরি মিলবে, তাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সান্ত্বনারা
  • নুসরাত, সুমাইয়ারা ছিল কোচিং ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়...
  • ২০ বছর ধরে কালু মিয়ার কালাভুনায় মজে আছে সিনেপাড়া
  • ৬ মাসে দ্বিগুণ বড় হয়েছে সেই 'ডায়ার উলফ' ছানাগুলো
  • বাটি ছাঁট থেকে রোনাল্ডো কাট: সেলুনগুলো যেভাবে বদলে যাচ্ছে জেন্টস পারলারে

বিলুপ্ত হওয়া তাসমানিয়ান টাইগার কি ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

“আমি মনে করি তাসমানিয়ান বাঘের মতো অসাধারণ আর কিছু নেই। এই আশ্চর্যজনক, সুন্দর মার্সুপিয়াল প্রজাতির প্রাণী, যেটিকে মানুষ নির্মমভাবে শিকার করে বিলুপ্ত করে ফেলেছে; আমরা সেই প্রজাতিকে বাস্তুতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি; এরজন্য আমরা সময় এবং অর্থ ব্যয় করে আমাদের অতীতের ভুলগুলোর প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।” 
টিবিএস ডেস্ক
10 February, 2023, 02:30 pm
Last modified: 10 February, 2023, 02:46 pm
বয়ামে সংরক্ষিত থাইলাসিন পাউচ-ইয়ং। ছবি: মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে

অক্টোবরের এক ঠাণ্ডা বিকেলে হাতে নোটবুক আর কলম নিয়ে সোয়েটশার্ট, জিন্স এবং স্নিকার্স পরা অ্যান্ড্রু পাস্ক মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক তোরণগুলো দিয়ে যাচ্ছিলেন।  

তাকে দেখে অনায়াসেই ছাত্র বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। তবে বাস্তবে ৪৮ বছর বয়সী পাস্ক জীববিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি বিজ্ঞানীদের এমন একটি দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন, যে ধরনের দল (বৈজ্ঞানিক) আগে কখনও গঠিত হয়নি। বিলুপ্তপ্রায় এক প্রাণীকে পুনরায় জীবিত করে তোলার কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

পাস্কের ডেস্কটপ কম্পিউটারের পাশে যত্ন করে স্টার ওয়ার্সের স্যুভনির, মাথার খুলি এবং ডাইনোসরের ছোট রেপ্লিকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এগুলোর কেন্দ্রে রয়েছে তার উচ্চাভিলাসী প্রজেক্টের মূল বস্তুটি। ডোরাকাটা এবং চওড়া চোয়াল দেখে সহজেই যে কেউ থাইলাসিনকে চিনে ফেলতে পারেন, যেটি সবার কাছে পরিচিত তাসমানিয়ান টাইগার নামে। 

১৯৩০-এর দশকের সর্বশেষ জীবিত থাইলাসিনের একটি কালো-সাদা ছবি আঁকা মাউসপ্যাডের ওপর নিজের মাউস ঘোরাতে ঘোরাতে উৎসাহী পাস্ক বলেন, "আমি মনে করি তাসমানিয়ান বাঘের মতো অসাধারণ আর কিছু নেই। এই আশ্চর্যজনক, সুন্দর মার্সুপিয়াল প্রজাতির প্রাণী, যেটিকে মানুষ নির্মমভাবে শিকার করে বিলুপ্ত করে ফেলেছে; আমরা সেই প্রজাতিকে বাস্তুতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি; এরজন্য আমরা সময় এবং অর্থ ব্যয় করে আমাদের অতীতের ভুলগুলোর প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।" 

ড. অ্যান্ড্রিউ পাস্ক। ছবি / আল জাজিরা

এক মর্মান্তিক কাহিনী

অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রজাতি থাইলাসিন অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড এবং পাপুয়া নিউগিনি থেকে দুই হাজার বছরেরও আগে হারিয়ে গেছে। কেউ কেউ এর পেছনে আরেক শিকারী প্রাণী ডিঙ্গোর আগমনকে দায়ী করেন। তবে অনেকেই এই যুক্তি মানতে নারাজ। তবে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে থাকা তাসমানিয়া দ্বীপে বাস করা ৫ হাজারেরও বেশি থাইলাসিনের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।

উনিশ শতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের তাসমানিয়ায় পা রাখার সাথে সাথেই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে 'গণহত্যা' চালিয়েছিল বলে বিশ্বাস করা অনেকেই মনে করেন, তাসমানিয়ার অন্যতম শীর্ষ এই শিকারী প্রাণীর ওপরেও একইভাবে 'গণহত্যা' চালিয়েছিল তারা।

জীববিজ্ঞানী, সংরক্ষণবাদী এবং তাসমানিয়ার অন্যতম থাইলাসিন বিশেষজ্ঞ নিক মুনি মাথা নেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, "এটি এক মর্মান্তিক কাহিনী।"

অস্ট্রেলিয়ার ও তাসমানিয়াকে ১৪ হাজার বছর ধরে আলাদা করে রাখা ব্যাস প্রণালীর একটি খাঁড়ির কিনারায় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মুনি ব্যাখ্যা করতে লাগলেন কীভাবে ঔপনিবেশিকরা লাজুক ও নিশাচর এই মার্সুপিয়াল তাসমানিয়ান টাইগারকে শেষ করে দিয়েছিল।

"অনেক ইংরেজই এখানে আসার আগে ভারতীয় বাঘের সম্পর্কে জেনেছিল। থাইলাসিনের গায়ের ডোরাকাটা দেখে তারাও একে বাঘ বলা শুরু করে।"

মুনির মতে, "এটি ইউরোপীয়দের এক ধরনের হিস্টেরিয়া। বড় দাঁত বা থাবাওয়ালা যেকোনো প্রাণীই তাদের কাছে বিপদজনক।"

"তবে তাসমানিয়ায় বসতি স্থাপনের পর খামারের কাজে ভেড়া আনার সাথে সাথেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এক সময় গিয়ে দাবি করা হয়, প্রচুর পরিমাণে ভেড়া মেরে ফেলছে থাইলাসিনরা। এবং তারা যে সংখ্যা দাবি করেছিল, সে পরিমাণ ভেড়া তাসমানিয়াতে ছিলই না। ট্যাবলয়েড পত্রিকার গালগল্প ছাড়া এটি আর কিছুই নয়। তাই একে মারার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়, এবং এই কাণ্ডই হয়ে ওঠে থাইলাসিনের মৃত্যুর কারণ।"

১৮৩০-এর দশকের গোড়া থেকেই তাসমানিয়ান টাইগারের ওপর বেসরকারিভাবে বাউন্টি প্রবর্তন করা হয়; অর্থাৎ মারতে পারলেই অর্থপুরস্কার। উনিশ শতকের শেষদিকে সরকারও পুরস্কার ঘোষণা করে। যেসব থাইলাসিন এই বাউন্টি হান্টারদেরকে এড়িয়ে যেতে সফল হয়, তারাও শিকার হয় অন্য প্রাণীদের জন্য পেতে রাখা ফাঁদে।  

১৯১০ সালে বিউমারিস চিড়িয়াখানায় মা এবং তিন তরুণ থাইলাসিন। ছবি: তাসমানিয়ান মিউজিয়াম এবং আর্ট গ্যালারির সৌজন্যে

শিকার এবং বিলুপ্তি

শেষ বন্য থাইলাসিনটিকে মারার কৃতিত্ব দেওয়া হয় ১৯৩০ সালে ইয়র্কশায়ার থেকে আসা কৃষক উইলফ্রেড ব্যাটিকে। তাসমানিয়ার উত্তর-পশ্চিমে থাকা মাওবান্নায় তার মুরগির খামারের কাছে তিনি প্রাণীটিকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। এই উর্বর কৃষি অঞ্চল একসময় ছিল থাইলাসিনের প্রধান আবাসস্থল।

ব্যাটির নাতি বেভান অ্যান্ডারসন এখনও ওই এলাকায় থাকেন। প্রতিবেশীর বাসায় বসে তিনি তার কোলে রাখা তার দাদার ছবিটি দেখছিলেন। ছবিটিতে দেখা যায় হাস্যোজ্জ্বল ব্যাটিকে। তিনি তার বন্দুকটি ধরে তার আতঙ্কিত কুকুর এবং মারাত্মকভাবে আহত থাইলাসিনটির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। 

তার দাদার কুখ্যাতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে অ্যান্ডারসন বলেন, "পপ যখন বাঘটিকে গুলি করে, তখন তারা স্ট্যানলি [তাসমানিয়ার শহর] থেকে একজন প্রতিবেদককে পাঠিয়েছিলেন। সাথে এসেছিলেন একজন ফটোগ্রাফারও।"
 
"আমি নিশ্চিত নই, এটি গর্বের বিষয় নাকি লজ্জার। তবে আমার মনে হয়, এই থাইলাসিনগুলো তার জীবিকার জন্য হুমকি ছিল। সেগুলো তার মুরগি চুরি করতো। তাই তাকে তার মুরগিগুলোকে রক্ষা করার জন্যই এই কাজ করতে হয়েছিল। তবে তিনি যদি জানতেন, এটি এই প্রজাতির শেষগুলোর একটি, তবে তিনি সম্ভবত এ কাজ করতেন না।"

ছবির দিকে তাকিয়ে শেষবারের মতো অ্যান্ডারসন বলেন, "আমি এটিই বিশ্বাস করি।" 

ছবি / আল জাজিরা

নিষ্ঠুর অবহেলার শিকার

হোবার্ট জাদুঘরের বেজমেন্টের সংগ্রহশালায় দেখা গেল জাদুঘরের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কিউরেটর এবং থাইলাসিন বিশেষজ্ঞ, ক্যাথরিন মেডলককে। ফ্লুরোসেন্ট বাতির আলোতে চোখে পড়লো তাকের মধ্যে রাখা অসংখ্য লেবেলযুক্ত বাক্স। সেগুলোর মধ্য থেকে সাবধানে একটি থাইলাসিনের খুলি বের করলেন তিনি।

কপালের একটি গর্তের দিকে ইঙ্গিত করে জানালেন, "এই মাথার খুলিটি বেশ আকর্ষণীয়, কারণ এতে একটি বুলেটের ছিদ্র রয়েছে।" 

তিনি ব্যাখ্যা করলেন, কীভাবে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ থাইলাসিনের এই নমুনাগুলো সংগ্রহ করেছে। তার ক্যাটালগ অনুযায়ী, এক ট্র্যাপার (ফাঁদ পেতে প্রাণী ধরা শিকারী) একটি থাইলাসিনকে ১৯২৮ সালে বন্দী করে ২৫ পাউন্ডের বিনিময়ে একটি চিড়িয়াখানায় বিক্রি করে দেয়। এটি মারা গেলে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ চিড়িয়াখানার কাছ থেকে থাইলাসিনের মৃতদেহটি ৫ পাউন্ডে কিনে নেয়। 

"এটি অদ্ভুত যে, একদিকে জাদুঘর থাইলাসিনের মৃতদেহ সংগ্রহ করতো। আবার একই সময়ে জাদুঘরের তিনজন পরিচালক থাইলাসিন সংরক্ষণ, তাদের আইনি সুরক্ষা, এবং শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞার জন্য কাজ করে যাছিলেন। দুটো সম্পূর্ণ বিপরীতই বটে," বলে জানালেন ক্যাথরিন। 

১৯৩৬ সালের জুলাই মাসে অবশেষে তাসমানিয়ার সরকার থাইলাসিনকে একটি সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। হোবার্টের কেন্দ্রে থাকা বর্তমানে পরিত্যক্ত বিউমারিস চিড়িয়াখানায় শেষ থাইলাসিনটি তার কিছুদিন পরেই মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে নিষ্ঠুর অবহেলার শিকার হয় সেটি।

থাইলাসিনের অস্তিত্বের ভিডিওগুলো করা হয়েছে তাকে বন্দী রাখা অবস্থাতেই। থাইলাসিনটিকে বন্দী করে হোবার্ট চিড়িয়াখানায় আনার পরপরই বেঁচে থাকা থাইলাসিনটির ভিডিও করা হয়। অস্পষ্ট কালো এবং সাদা ভিডিওতে পুরুষ থাইলাসিনটিকে অস্থিরভাবে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়, যেখানে ছোট সিমেন্টের ঘরের মধ্যে তারের বেড়া দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। ভিডিওটি কষ্টদায়ক হলেও এটিই এ প্রজাতির একমাত্র প্রমাণ; প্রজাতিটি মানুষের হাতে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীদের একটি আইকন হয়ে উঠেছে। থাইলাসিনটি যেদিন মারা যায়, সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই অস্ট্রেলিয়া সরকার বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণীদের দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

ছবি / আল জাজিরা

তাসমানিয়ান টাইগার দর্শণার্থী

১৯৮২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার থাইলাসিনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও, তাসমানিয়ার অনেকেই এখনো বিশ্বাস করেন প্রাণীটি এখনও সেখানে রয়েছে।

যেখান থেকে ১২ মাস ধরে থাইলাসিন খোঁজার অভিযান শুরু করেছিলেন, সেই জায়গার উদ্দেশ্যে ঘন ঝোপভর্তি জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে নিক মুনি জানান, "থাইলাসিন দেখতে পেয়েছে এমন হাজারো রিপোর্ট আমি পেয়েছি। আমি অনেক লোকের সাথে দেখা করেছি যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তারা থাইলাসিন দেখেছেন। তারা দৃঢ়তার সঙ্গেই এই দাবি করেন। কিন্তু তারা দেখেছে, নাকি দেখেনি, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়।"  

১৯৮২ সালে তার ঊর্ধ্বতন সহকর্মী বন্যপ্রাণী সার্ভিস অফিসার হান্স নার্ডিং এলাকাটিতে পাখি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছিলেন। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাতটি তার গাড়িতেই কাটাবেন। নার্ডিং-এর বিবরণ স্মরণ করে মুনি বলতে থাকেন, "তিনি হঠাৎ জেগে উঠে গাড়ির চারপাশে টর্চ ঘোরালেন। কী অদ্ভুত! একটি থাইলাসিন তার গাড়ি থেকে মাত্র তিন বা চার মিটার দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।"

তবে ১২ মাস ধরে চিরুনিসূক্ষ্ম অভিযানের পরও থাইলাসিন বেঁচে থাকার কোনো প্রমাণ পাননি তিনি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনি নার্ডিংকে অবিশ্বাস করেন কিংবা তিনি মনে করেন, থাইলাসিন ত্রিশের দশকের পর আর বাঁচতে পারেনি।

তিনি জোর গলায় বলেন "আমি মনে করি, এটি মানুষের দাম্ভিকতার অন্যতম বড় উদাহরণ যে, আমরা প্রাণীটিকে শেষ করে ফেলেছি।"

জাতীয় গর্ব

তাসমানিয়ার জনগণের গর্ব এই তাসমানিয়ান টাইগার, বা সংক্ষেপে ট্যাসি টাইগার। গাড়ির নম্বর প্লেট থেকে শুরু করে পর্যটকদের জন্য তৈরি ড্রকার্ডেও চোখে পড়বে এই ট্যাসি টাইগারের ছবি।।

১৯৮৪ সালে মোল ক্রিক থেকে শুরু হয়েছিল থাইলাসিন সন্ধানের শেষ সরকারি অভিযান। সেখানে ঢুকলেই চোখে পড়বে বিশাল এক বিলবোর্ড, 'বাঘের দেশে স্বাগতম'। স্পটলাইট দিয়ে সাজানো 'বিশ্ববিখ্যাত ট্যাসি টাইগার বার'-এর মূল আকর্ষণও ট্যাসি টাইগার বিয়ার থেকে শুরু করে ট্যাসি টাইগার বার্গার, ট্যাসি টাইগার পাই পর্যন্ত সবকিছুই। বারটির ভেতরে ঢুকলেই এর ভেতরের দেয়ালজুড়ে ট্যাসি টাইগার দেখার খবর প্রকাশ হয়েছে, এমন অসংখ্য নিউজপেপার ক্লিপিং চোখে পড়বে। 

বারটির মালিক ডৌগ ওয়েস্টব্রুকও; তিনি বিশ্বাস করেন, ট্যাসি টাইগার বেঁচে আছে এবং এটি মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়। তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, আমি এই প্রাণীর একটি দেখেছি। আমার স্ত্রীও নিশ্চিত সেও একটি দেখেছে।"

অনেকেই ঝোপের মধ্যে লাগানো ক্যামেরা থেকে ভিডিও প্রমাণ নিয়ে আসেন। তবে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা অগণিত ভিডিওর কোনোটিই মুনির মতো বিশেষজ্ঞদের গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ভিডিওগুলো এতটাই অস্পষ্ট যে এগুলো তাসমানিয়ান টাইগারের ফুটেজ হিসেবে প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট নয়।  

"প্রচুর পরিমাণ ভিডিও আমার চোখে পড়েছে। কিন্তু আমি এমন কিছুই দেখিনি যা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে এটি কোনো থাইলাসিন," জানান মুনি। তবে তার মধ্যে থাকা বৈজ্ঞানিক সত্ত্বা এখনও থাইলাসিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে না। 

"আমার কিছু সহকর্মীর সাথে আমার মতামত মেলে না, কারণ আমি এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, থাইলাসিন নেই। আমি বলব না এটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আসলে, বিজ্ঞান কখনোই তা বলে না। আপনি বলতে পারেন যে থাইলাসিন থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু আপনি কখনোই বলতে পারবেন না যে প্রাণীটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত।"

বেশ কয়েকজন ধনী ব্যক্তি তাসমানিয়ান টাইগার খুঁজে বের করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। ১৯৮৩ সালে সিএনএন-এর প্রতিষ্ঠাতা টেড টার্নার তার জন্য থাইলাসিন খুঁজে বের করার পুরস্কার হিসেবে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া টাইকুন কেরি প্যাকার সে অঙ্ক বাড়িয়ে এক মিলিয়ন ডলার করলেও জীবিত থাইলাসিন নিয়ে যেতে পারেনি কেউ। 

একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান প্যালিওন্টোলজিস্ট মাইক আর্চার সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দেন, যখন তিনি ঘোষণা করেন যে- তিনি একটি সংরক্ষিত থাইলাসিনের নমুনা থেকে থাইলাসিনের ডিএনএ বের করেছেন। সেই সময়ের হিসাবে আপাতদৃষ্টিতে এটি এক অসাধারণ কীর্তি ছিল। তিনি আশা করেছিলেন ১০ বছরের মধ্যে একটি ট্যাসি টাইগার তৈরি করবেন।

বলাই বাহুল্য, এটি ঘটেনি। ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের মতো কম বাজেট এবং মানুষের ডিএনএ মিশে যাওয়া থাইলাসিন ডিএনএ থেকে কাজটি করা সম্ভব হয়নি।

বিশ বছর পরে, পোষা থাইলাসিনকে নিয়ে হেঁটে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখা প্রফেসর এখন নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের বেজমেন্টে বসে থাইলাসিনের হাড় থেকে তাদের বিবর্তনের ধাপ নিয়ে গবেষণা করার চেষ্টা করছেন। রিভারসলে ফসিল সাইট থেকে পাওয়া চুনাপাথরের খণ্ড থেকে থাইলাসিনের সেই হাড়ের অনুসন্ধান করছেন তিনি।

ওয়েফারের মতো পাতলা একটি খুলি হাতে নিয়ে আর্চার জানান, "এটি আসলে ১৫ মিলিয়ন বছরের পুরানো।" 

২৫ মিলিয়ন বছর আগে, থাইলাসিনের বিভিন্ন প্রজাতি ছিল। কয়েকটি ছিল নেকড়ের মতো; অন্যগুলো বেশ ছোট, ৩০  সেন্টিমিটারেরও কম লম্বা। তবে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে বাকি সব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়, কেবল একটি প্রজাতিই অবশিষ্ট থাকে। এই প্রাণীটিই তাসমানিয়ান থাইলাসিনের পূর্বসূরি ছিল।

আর্চার আশা করেন, তাসমানিয়ার বসতি স্থাপনকারী ইউরোপীয়রা যদি ট্যাসি টাইগারের এই বিবর্তনের ধাপ জানতো, তবে হয়তো এই নিষ্ঠুর বিলুপ্তির শিকার হতে হতো না।

ছবি / আল জাজিরা

"আমি ভাবতে চাই, তারা এই প্রাণী শিকার করার আগে দুইবার ভেবেছিল যে, এটি এমন কোনো প্রাণী নয়, যেটি এ ধরনের শিকার সত্ত্বেও টিকে থাকতে পারবে। বাস্তবতা হলো, প্রাণীটি তার বিবর্তনীয় অবস্থার শেষ পর্যায়ে ছিল, এবং এই নির্বিচারে শিকার তাদেরকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে।"

"প্রাণীর বিলুপ্তিকরণ আরও চলতে থাকবে কিনা তা নিয়ে আলোচনার শুরু হয়েছিল এর মাধ্যমেই। আমরা কি আরও প্রাণীকে বিলুপ্ত করে দিতে চাই? সবাই স্বীকার করে, গতকালের সায়েন্স ফিকশন আগামীকালের বিজ্ঞানে পরিণত হতে পারে। আমরা জানি না, থাইলাসিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কিনা। তবে এটি নিশ্চিত, আমরা যদি চেষ্টাই না করি, তবে এটি কখনোই হবে না।"

মানুষ ঈশ্বরের ভূমিকা পালনের চেষ্টা করছে বলে তাদের যারা সমালোচনা করেন, তাদের উদ্দেশ্যে আর্চার বলেন, "আমরা যখন এই প্রজাতিকে নির্মূল করেছিলাম, তখনই আমরা ঈশ্বরের ভূমিকা পালন করেছি। তখন আমরা 'ঈশ্বরের ভূমিকা পালন' করে যা ভুল করেছি, স্মার্ট মানুষ হিসেবে পৃথিবীকে আবার ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলার জন্য তার উল্টো কাজ করাটা জরুরি।"

সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য অতীতের ভুল শুধরানো

ট্যাসি টাইগার ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে সাম্প্রতিক প্রজেক্টের পিছনে যারা রয়েছেন, তারা হলেন- মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পাস্ক। সাথে রয়েছেন তার সহযোগী ও অর্থদাতা, আমেরিকান বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কলোসাল।

২০২১ সালের শেষদিকে কোম্পানিটি 'রিস্টোরিং দ্য পাস্ট ফর আ বেটার ফিউচার' স্লোগানটি চালু করেছিল, যখন এটি কিংবদন্তিতুল্য উলি ম্যামথ প্রজাতিটিকে জেনেটিক্যালি পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের কথা ঘোষণা করা হয়।

প্রায় ১০ হাজার বছর ধরে বিলুপ্ত এই প্রজাতিটিকে এশিয়ান হাতির জিনোম এডিটিং করে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে বলে দাবি করেছে কলোসাল। আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে এটি করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের। এটি করার জন্য ইতোমধ্যেই ৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে তারা।

এই স্লোগানটিকেই এখন থাইলাসিনের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার আইকনিক তাসমানিয়ান টাইগার ফিরিয়ে আনার জন্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ।

প্রজেক্টগুলোর পেছনে বিনিয়োগদাতা হিসেবে রয়েছে বড় বড় নাম। তাদের মধ্যে রয়েছে হলিউড মেগাস্টার ক্রিস হেমসওয়ার্থ এবং প্যারিস হিলটনের মতো তারকারা। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নামটি সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।

কলোসালের প্রতিষ্ঠাতা বেন ল্যামের জন্যেও সিআইএ নামটি বেশ আগ্রহোদ্দীপক ছিল: "আমার মনে হয় ফেডারেল সরকার এই প্রযুক্তিগুলোর ক্ষমতা সম্পর্কে আন্দাজ করতে চাইছে। তারা বুঝতে চাইছে এই প্রযুক্তিগুলোকে কখন থামাতে হবে। কীভাবে এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যায়, তা সম্পর্কেও বুঝতে চাইছেন তারা।"

ল্যাম হয়তো থাইলাসিনের ব্যবসায়িক লাভ দেখেই এ পথে সাম্প্রতিক সময়ে পা বাড়িয়েছেন, তবে এই প্রজেক্টে তার অংশীদার ২০ বছর ধরে এই মার্সুপিয়াল প্রজাতির রিস্টোর বা ফিরিয়ে আনা নিয়ে গবেষণা করছেন।

মাইক আর্চারের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন পাস্ক। আর্চারকে তিনি অভিহিত করেছেন এমন একজন 'পায়োনিয়ার' হিসেবে, যিনি তার ধারণাকে কার্যকর করার জন্য তার সময়ে পর্যাপ্ত জেনেটিক প্রযুক্তি পাননি। জাদুঘরের নমুনা থেকে ডিএনএ বের করার সম্ভাবনা দেখে পাস্ক মুগ্ধ হয়েছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি প্রজাতিটির আরও সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারবেন।

তিনি বলেন, "আমরা জানি, সময়ের সাথে সাথে ডিএনএ নষ্ট হয়ে যায়। যেমন, ডাইনোসরের হাড়গুলোতে কোনো ডিএনএ অবশিষ্ট নেই। তাই, আমাদের প্রথম কাজ ছিল জাদুঘরের নমুনাগুলোতে কি ডিএনএ আছে সেটি বের করা।"

এ কাজ করার জন্য পাস্কের প্রথম লক্ষ্য ছিল মেলবোর্ন মিউজিয়াম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে থাকা এই জাদুঘরটিতে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা থাইলাসিনের সংগ্রহ।

ছবি / আল জাজিরা

 'হারকিউলিয়ান চ্যালেঞ্জ'

জাদুঘরের পেছনের দিকের একটি রুমে ড্রয়ার বোঝাই হয়ে রয়েছে থাইলাসিনের পেল্ট (লোমযুক্ত চামড়া) দিয়ে। তাদের চামড়াগুলো এখনো মলিন হয়নি। আবছা আলোতে আরও প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে। তবে সম্ভবত সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হলো শিশু থাইলাসিনের বয়ামগুলো। মায়ের থলি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বেশি ছোট হওয়ায় এগুলোকে ডাকা হয় পাউচ-ইয়াং বলে। তাদের চোখ এখনও খোলেনি। ছোট, নিখুঁতভাবে গঠিত, মোমের মতো দেহগুলো শান্তভাবে ভাসছে একটি পরিষ্কার দ্রবণে।

ডিএনএ আবিষ্কারের বহু আগে, ১১০ বছর আগে সংরক্ষণ করা একটি পাউচ-ইয়াং গবেষণার কাজে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মুখের কাছে ধরে মুগ্ধ হওয়া পাস্ক ব্যাখ্যা করলেন কীভাবে এটি অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠেছে।

"এটিকে ইথানলে রাখা হয়েছিল। ইথানলের মধ্যে রাখার ফলে নমুনাটির মধ্যে থাকা ডিএনএ খুব ভালোভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই এটিই প্রকৃতপক্ষে আমাদের পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করতে সাহায্য করেছে। এটিই থাইলাসিনকে ফিরিয়ে আনার মূলভিত্তি হবে, যোগ করেন তিনি।

কিন্তু জিনোমকে জীবন্ত প্রাণীতে পরিণত করার জন্য একটি হারকিউলিয়ান (কঠিন) চ্যালেঞ্জ পার করতে হবে। 

একটি সম্পূর্ণ থাইলাসিন ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষকরা ডুনার্টের (ইদুরাকার প্রাণী) সাহায্য নিতে চান। এটি থাইলাসিনের সবচেয়ে কাছের জীবিত আত্মীয়, কিন্তু না জানলে কখনোই এটি বোঝা সম্ভব নয়। কারণ ইঁদুর আকারের এই ছোট মার্সুপিয়ালটি থাইলাসিনের আকারের প্রায় একশ ভাগের একভাগ।

পাস্ক এবং তার দল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান ভবনের সুরক্ষিত বেসমেন্টে প্রায় ১০০টি ডুনার্টের একটি কলোনি তৈরি করেছেন। তারই একটি হাতে ধরে পাস্ক জানালেন, ডুনার্টের জিনোমটি থাইলাসিনের সাথে ৯৫ ভাগ মিলে যায়। বাকি ৫ ভাগ জিন এডিটিং করে একে ডোরাকাটা মার্সুপিয়ালের রূপ দেওয়া হবে, যাকে পুরো বিশ্ব চিনবে থাইলাসিন হিসেবে। 

ডুনার্টটিকে একটি প্লাস্টিকের বাক্সে আলতো করে রাখতে রাখতে পাস্ক জানান, "এরকম একটি ছোট মার্সুপিয়াল তাসমানিয়ান বাঘের জন্ম দিতে পারে এমন ভাবতে পারাটাই আশ্চর্যজনক।" 

সহজ কথায়, রিস্টোরিং প্রজেক্টকে সফল করার জন্য পাস্কের দল প্রথম ধাপে ডুনার্ট থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করবে। দ্বিতীয় ধাপে, এই কোষের জিন এডিট করে থাইলাসিনের জিনের সাথে মেলানো হবে। তৃতীয় ধাপে, ডুনার্টের একটি ডিম্বাণু থেকে সেটির নিউক্লিয়াস সরিয়ে জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড থাইলাসিনের নিউক্লিয়াস বসানো হবে। এবং শেষ ধাপে, এই ভ্রূণটি একটি হোস্টের গর্ভে বসানো হবে, যেখান থেকে জন্ম নেবে থাইলাসিন। 

পাস্ক বিশ্বাস করেন, তার দল আগামী ১০ বছরের মধ্যে একটি জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড থাইলাসিন কোষ তৈরি করতে সক্ষম হবে। তবে একটি থাইলাসিনকে জন্ম দিয়ে সেটিকে বনে ছেড়ে দেওয়া পর্যন্ত কয়েক দশক সময় লেগে যেতে পারে। 

কলোসালের সিইও অবশ্য সময় নিয়ে আরও বেশি আশাবাদী। হাতিদের প্রায় দুই বছরের গর্ভকালীন সময়ের তুলনায় মার্সুপিয়ালের গর্ভকালীন সময় অনেক সংক্ষিপ্ত; মাত্র ১৪ দিন। সে হিসাব করেই তিনি নিশ্চিত যে, কোম্পানি উলি ম্যামথের আগেই থাইলাসিনকে পুনর্জীবিত করতে পারবে। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে থাইলাসিন উৎপাদন দেখা সম্ভব কিনা, তিনি দ্রুত মাথা নেড়ে বলেন, "আমার মনে হয় এটি সত্যিই একটি ভাল মূল্যায়ন।" 

ছবি / আল জাজিরা

সমালোচনা

২০২২ সালের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ হওয়া মাল্টিমিলিয়ন ডলারের থাইলাসিন ফিরিয়ে আনার প্রকল্পের সংবাদ কেবল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেই সমালোচনার ঝড় তোলেনি, বিজ্ঞানী এবং সংরক্ষণবাদীদের মধ্যেও বিতর্কের ঝড় বইয়ে দিয়েছে।

সিডনির অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের পরিচালক এবং প্রধান বিজ্ঞানী ক্রিস হেলগেন থাইলাসিনের পেল্ট এয়ার ডুনার্টকে পাশাপাশি রেখে বিদ্রূপাত্মক ইঙ্গিত করে বলেন, "এটি দেখে কি আপনার কাছে থাইলাসিনের মতো কিছু মনে হয়?"

এদিকে, ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়ামে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দায়িত্বে থাকা সাবেক কিউরেটরকে যখন কলোসাল এবং পাস্কের থাইলাসিন বি-বিলুপ্তিকরণ প্রকল্পকে মূল্যায়ন করতে বলা হয়, তখন তিনিও এর সমালোচনা করতে পিছপা হননি। তিনি একে 'কাল্পনিক' অভিহিত করে বলেন, কেবল ডুনার্ট এবং থাইলাসিনের আকারগত পার্থক্য নয়, থাইলাসিন আর ডুনার্ট দূরগত সম্পর্কের প্রাণী। এটি অনেকটা কুকুরকে বিড়াল কিংবা ঘোড়াকে গন্ডারে পরিণত করার মতো বিষয় হবে।

"থাইলাসিন অন্যান্য সমস্ত মার্সুপিয়াল থেকে এতটাই আলাদা যে এটির নিজস্ব প্রজাতিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে।" তিনি প্রশ্ন করেন, "আপনি কি কখনো ডুনার্টের ডিএনএ পরিবর্তন করে একে থাইলাসিন বানাতে পারবেন? আমার মনে হয়, এটি একেবারেই সম্ভব না। অস্ট্রেলিয়ায় আরও অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। সেগুলোর পেছনে অর্থ খরচ না করে এর পেছনে এত বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার মানে অন্য প্রজাতিগুলোকে বিলুপ্তি থেকে বাঁচানোর সুযোগ হাতছাড়া করা।"

দাবানল, খরার পাশাপাশি বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল ব্যাপকহারে ধ্বংস করার ফলে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশের ওপর বিধ্বংসী প্রভাব পড়েছে। দেশটি অন্য যেকোনো মহাদেশের তুলনায় অনেক বেশি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী হারিয়েছে। একইসাথে, দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে।

এই বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতিগুলোর একটি হলো আরেকটি মার্সুপিয়াল, তাসমানিয়ান ডেভিল। দীর্ঘকাল ধরে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে থাকা প্রাণীদের একটি আইকনিক প্রজাতি এটি। অত্যন্ত সংক্রামক এবং মারণাত্মক মুখের টিউমারের ফলে তাসমানিয়ান ডেভিলের ৮০ শতাংশেরও বেশি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। অ্যান্ড্রু পাস্ক এবং কলোসালের দাবি, তাদের থাইলাসিন প্রকল্পটি তাসমানিয়ান ডেভিলকেও বাঁচিয়ে রাখার আশা দেবে। কিন্তু সেটি কীভাবে?

পাস্ক জানান, "যদি তাসমানিয়ান টাইগার এখনো আশেপাশে থাকতো, তবে তারা অসুস্থ এবং আহত তাসমানিয়ান ডেভিলগুলোকে খেয়ে ফেলতো। টিউমার ছড়ানোর সুযোগ দেওয়ার আগেই সেগুলো সরিয়ে দেবে তারা। এভাবে তাসমানিয়ান টাইগার ফিরিয়ে আনলে কেবল তাসমানিয়ান ডেভিলের জন্যই নয়, বাস্তুতন্ত্রের অন্যান্য অংশেও ভারসাম্য আসবে।"

তবে এ ব্যাপারে একমত নন তাসমানিয়ার সংরক্ষণবাদী নিক মুনি, যিনি অসুস্থ তাসমানিয়ান ডেভিলদের যত্ন নেওয়ার জন্য তার সারাজীবন কাটিয়েছেন। এই তত্ত্বকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন থাইলাসিন প্রকল্পটিকে একটি 'মিথ্যা ভিত্তি'র মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

"যতদিনে থাইলাসিনকে ফিরিয়ে আনা হবে, ততদিনে আরও অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি হবে এবং তাদের আবাসস্থলের সামান্য অংশ অবশিষ্ট থাকবে। আর থাইলাসিনের আবাসস্থলও বেড়া দিয়ে ঘেরা থাকবে, চারণভূমিসহ বাকি সবকিছু সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে।"

এবং ডেভিলকে বাঁচানোর জন্য একটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার হাস্যকর বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরেন মুনি, যেটি তাসমানিয়ান ডেভিলকে আরও কোণঠাসা করে ফেলবে।

"এমনিতেই ডেভিল খুব বিরল হয়ে উঠেছে। আপনি কী করবেন? থাইলাসিনগুলোকে সেখানে রেখে এগুলোকে আরও কমিয়ে আনবেন? আর তাছাড়া, আপনি রোগটিকে দমিয়ে রাখতে পারবেন, এমন কোন উপায় নেই। এর নিজস্ব গতি আছে। এবং এই পুরো বিলুপ্তকরণ প্রক্রিয়াতেই অনেকগুলো চলমান বিষয় রয়েছে। রাস্তায় গাড়ির নিচে চাপা পড়া থেকে শুরু করে অন্যান্য 'উন্নয়ন', কীটনাশক, জলবায়ু পরিবর্তন এই পুরো বিলুপ্তিকরণে ভূমিকা রাখছে।"

মুনি বিশ্বাস করেন, প্রকৃত সংরক্ষণ হল বিলুপ্তি রোধ করা। তিনি বলেন, "আমরা যদি একটি প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার দিকে মনোযোগ দেই, তাহলে আমরা মানুষকে পারবো শেখাবো যে, কোনো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সেগুলোকে আমরা পরে ফিরিয়ে এনে সবকিছু ঠিক করতে পারি। আমার মনে হয়, এই প্রকল্পটি বাস্তবিক প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য একটি গুরুতর বিভ্রান্তি।"

ক্রিস হেলগেনও একই ধরনের ধারণা পোষণ করে বলেন যে, থাইলাসিন ফিরিয়ে আনার প্রকল্পটি একটি 'পাবলিসিটি স্টান্ট' ছাড়া আর কিছু নয়। এর মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদেরকে প্রকৃত উদ্যোগ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

"যেহেতু প্রাণীটি খুবই জনপ্রিয়, তাই সবাই এই গল্পে বিশ্বাস করতে চায় যে, এটিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আপনি যদি সত্যিই রিস্টোরিং প্রজেক্টকে সম্ভব করে দেখাতে চান, তাহলে আপনি এমন প্রাণীদের দিয়ে শুরু করুন, যা অনেক কম ক্যারিশম্যাটিক। অস্ট্রেলিয়ার বিলুপ্ত দেশীয় ইঁদুর, কিংবা বিলুপ্ত স্থানীয় ব্যান্ডিকুটের মতো অনেক প্রাণী রয়েছে, যাদের খুব ঘনিষ্ঠ জীবিত আত্মীয় বেঁচে আছে। এবং এগুলো ফিরিয়ে আনা তুলনামূলক আরও সহজ হবে। তবে সেগুলো দশ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আনার মতো ক্যারিশম্যাটিক হবে না।"

ছবি / আল জাজিরা

যুগান্তকারী প্রযুক্তি

বেন ল্যামের অবশ্য সমালোচনা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন। পাল্টা আঘাত করে তিনি বলেন, "আমি মনে করি, আপনি যখনই প্রযুক্তির সীমানা ছাড়িয়ে নতুন কিছু সাহসী করার চেষ্টা করবেন, আপনার সমালোচনা হবেই। আমি আপনাকে যা বলতে চাই তা হলো, এই পৃথিবীর সমস্যাগুলোর জন্য কিছু সাহসী সমাধান দরকার।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের থাইলাসিন ইন্টিগ্রেটেড জিনোমিক রিস্টোরেশন রিসার্চ (টিআইজিজিআর) ল্যাবরেটরিতে ঢোকার সময়ও অ্যান্ড্রু পাস্ককে দারুণভাবে শান্ত দেখা যায়; তিনি তার কাজের পাশাপাশি বেন ল্যামের বেঁধে দেওয়া পাঁচ বছর সময়সীমা সম্পর্কে অবগত। 

তিনি তার পরিবারের প্রথম ব্যক্তি, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। তিনি বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি যিনি, বিলুপ্ত ডিএনএ-এর একটি টুকরোকে জীবিত করে তুলেছেন। তার রিস্টোরিং প্রক্রিয়ার সফলতা নিয়েও তিনি আশাবাদী। তবে তার মতে, তিনি তার সাফল্যের বিচার করবেন, এই পুরো প্রজেক্টের মধ্যে- তিনি নতুন কী কী আবিষ্কার করবেন তার ওপর ভিত্তি করে। 

"এই প্রজেক্টটিকে ভালোবাসার কারণ হলো, শেষ ফলাফল যা-ই হোক না কেন, আমরা যে সংরক্ষণ প্রযুক্তিগুলো আবিষ্কার করবো, সেটি মার্সুপিয়ালদের জীবন বদলে দেবে," বলেন তিনি। 

তার ঘোষণায় জোর দিতে কী কী করা সম্ভব তার তালিকা বলতে থাকেন তিনি; দাবানলের পর পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মানবসৃষ্ট পাউচ তৈরি, রোগ এবং শিকারীদের সাথে ভালোভাবে লড়াই করার জন্য দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার কৌশল। একইসাথে, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বাড়ানোও এই তালিকায় রয়েছে।

পাস্ক দৃঢ়তার সাথে বলেন, "এগুলো এমন জিনিস যা আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে অর্জন করতে সক্ষম হবো। সেইসাথে থাইলাসিন ফিরিয়ে আনার বিষয়টি তো রয়েছেই।"
 

Related Topics

টপ নিউজ

তাসমানিয়ান বাঘ / ফিচার / বিলুপ্ত প্রাণী

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কুমিল্লায় ইউটার্ন দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ৪ জন নিহতের ঘটনায় মামলা, ইউটার্ন বন্ধের সিদ্ধান্ত
  • পিআর পদ্ধতি সংবিধান ও আইনে নেই, ভবিষ্যতে আইন হলে আলাদা বিষয়: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
  • আমাকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে: অমর্ত্য সেন
  • পিআর প্রত্যাখ্যান বিএনপির, চালু করার পক্ষে জামায়াতের চাপ; তীব্র মতবিরোধ
  • দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর রাজধানীর পথেই থাকার অধিকার পেল ভারতের ১০ লাখ বেওয়ারিশ কুকুর
  • এমন পরিণতি আর কারও না হোক: সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন

Related News

  • উশুতে মেডেল পেলে চাকরি মিলবে, তাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সান্ত্বনারা
  • নুসরাত, সুমাইয়ারা ছিল কোচিং ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়...
  • ২০ বছর ধরে কালু মিয়ার কালাভুনায় মজে আছে সিনেপাড়া
  • ৬ মাসে দ্বিগুণ বড় হয়েছে সেই 'ডায়ার উলফ' ছানাগুলো
  • বাটি ছাঁট থেকে রোনাল্ডো কাট: সেলুনগুলো যেভাবে বদলে যাচ্ছে জেন্টস পারলারে

Most Read

1
বাংলাদেশ

কুমিল্লায় ইউটার্ন দুর্ঘটনায় এক পরিবারের ৪ জন নিহতের ঘটনায় মামলা, ইউটার্ন বন্ধের সিদ্ধান্ত

2
বাংলাদেশ

পিআর পদ্ধতি সংবিধান ও আইনে নেই, ভবিষ্যতে আইন হলে আলাদা বিষয়: প্রধান নির্বাচন কমিশনার

3
আন্তর্জাতিক

আমাকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে: অমর্ত্য সেন

4
বাংলাদেশ

পিআর প্রত্যাখ্যান বিএনপির, চালু করার পক্ষে জামায়াতের চাপ; তীব্র মতবিরোধ

5
আন্তর্জাতিক

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর রাজধানীর পথেই থাকার অধিকার পেল ভারতের ১০ লাখ বেওয়ারিশ কুকুর

6
বাংলাদেশ

এমন পরিণতি আর কারও না হোক: সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের ছোট ভাই চিররঞ্জন

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net