Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
August 10, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, AUGUST 10, 2025
হিসাবের খাতা, নিমন্ত্রণপত্র, পুরোনো ছবি আর স্মৃতির ঝাঁপি নিয়ে বঙ্গভিটা

ফিচার

সালেহ শফিক
22 January, 2023, 08:30 pm
Last modified: 22 January, 2023, 08:39 pm

Related News

  • ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা নয়, দাবি জেলা প্রশাসকের
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • আরেফিন স্যার, অভিবাদন গ্রহণ করুন, আপনার স্থান আমাদের হৃদয়ে
  • গোলাপী এখন কোথায়?
  • রেস্টুরেন্ট বলতে চু চিং চাও, শাহবাগ হোটেল আর ইন্টারকন্টিনেন্টাল…

হিসাবের খাতা, নিমন্ত্রণপত্র, পুরোনো ছবি আর স্মৃতির ঝাঁপি নিয়ে বঙ্গভিটা

‘বঙ্গভিটা’, ফেসবুকের এই পেইজ এক সুতায় বেঁধেছে দুই বাংলার মানুষকে। দেশভাগের সময় নিজেদের ভিটেমাটি হারানো অনেকেই এ পেইজের মাধ্যমে আবারও নিজেদের ভিটের সন্ধান পেয়েছেন। অনেকে খুঁজে পেয়েছেন পুরোনো বন্ধু। অনেকে হয়তো ভার্চুয়ালিই (ছবির মাধ্যমে) নিজেদের পৈতৃক বাড়িটা ছুঁয়ে দেখতে পারছেন। শুধু তা-ই নয়, পেইজ থেকে জানা যায় সেসময়কার নানা অজানা ইতিহাসও!
সালেহ শফিক
22 January, 2023, 08:30 pm
Last modified: 22 January, 2023, 08:39 pm
ফেলে আসা বাড়ির কথায় অনেকেই কান্না ধরে রাখতে পারেন না। ছবি: বঙ্গভিটা পেইজ থেকে

উমা বসুর মামাবাড়ি ছিল খুলনার মূলঘর গ্রামে। ভূষণার রাজা সীতারাম রায়ের (১৬৫৮-১৭১৪) আমলে হুগলি থেকে মজুমদার পরিবারটি মূলঘরে আসে। উমার বাবা বঙ্কিম মজুমদার কলকাতার পাথুরেঘাটা জমিদারদের মূলঘরের সেরেস্তায় কাজ করতেন। কাজের সূত্রে বাগেরহাট থেকে ছেড়ে আসা রেলগাড়িতে যেতেন শিয়ালদহ, আর কাজ সেরে ফেরার সময় বইয়ের দোকান ঘুরে ঘুরে কিনতেন বই। 'সরস্বতী লাইব্রেরি' নাম ছিল তার ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারের। হাজারের কাছাকাছি বই ছিল তাতে।

উমা বসুর মেয়ে তপতী বসু (এখন থাকেন দিল্লী) ফেসবুকের 'বঙ্গভিটা' নামক পেইজে জানাচ্ছেন, 'মূলঘর গ্রামে কো-অপারেটিভ ব্যাংক, নারী কল্যাণ সমিতি এবং পার্ক ছিল। গাঁয়ের ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মানুষ রেলে চাকরির সুবাদে সারা ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছিলেন। উমার ভাইয়েরাও চাকরি সুবাদে কলকাতায় ছিলেন, এরমধ্যে ভাগ হয়ে যায় দেশ, হিন্দুস্তানেই থেকে যান উমার ভাইয়েরা। তবে তার বাবা বহুদিন জন্মভূমি আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দেশভাগের পরপরই গ্রামটি জনশূণ্য হয়ে যাওয়ায় তিনি ভারতবাসী হন।'

উমা বসু নিজের বাবার বাড়ির বর্ণনা করতেন এভাবে, দুর্গামন্দিরের সামনে বিশাল উঠান। একপাশে বড় বেল গাছ, যার তলায় বোধন হতো। পূজার সময় আত্মীয়স্বজনে ভরে যেত ঘর। অথচ গ্রামে মানুষের অভাবে বাবা দেশ ছাড়লেন!

তপতী আরো লিখছেন, 'মূলঘর থেকে দিল্লী অনেক দূর। সেখানে সিআর পার্ক এলাকায় সবাই বাংলায় কথা বলে- এমনকি বেঁচে আছে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরের উপভাষাও। এখানকার কালীবাড়ি মন্দিরে যেসব স্মৃতিফলক আছে তার একটি মূলঘরের ডা. প্রমোদালাল বসুর। মা একজন ডাক্তারের কথা বলতেন, জানি না ইনি সেইজন কি না। তবে ফলকটি মূলঘরকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই দিল্লীতে।'

’৪২ সালে লেখা একটি চিঠি

পুষ্প পত্র

বঙ্গভিটায় ১৯৩৮ সালের নভেম্বরের ৫ তারিখে লেখা শ্রী হেমেন্দ্রকুমার রায়ের একটি পত্র পাওয়া গেল যার প্রাপক কুমারি পুষ্প দত্ত। সিলেটের দত্তপাড়ায় তাদের বাড়ি ছিল আর সিলেট তখন ছিল আসামের অন্তর্ভুক্ত। পত্রটি ছন্দে ছন্দে লেখা। প্রথম চার বাক্যে করা হয়েছে প্রশংসা আর শেষ বাক্য চারটি উপদেশমূলক। নিচে পুরো চিঠিটি তুলে দেওয়া হলো:

পুষ্প যখন পত্র লেখে, জবাব দেয়াই ভালো
পুষ্প বিলায় রংমহালে রংমশালের আলো!
পুষ্প যখন কইবে কথা, শুনবে না কার সাধ্য
পুষ্প পেলে দেবতা খুশি, কবিরাও হয় বাধ্য!
নামটি যখন পুষ্প তোমার, শিখো ফুলের নীতি
শুকনো ধুলোয় ছড়িয়ে দিও রঙিন পরাগ-প্রীতি
ফুলেল হাওয়ায় করবে বরণ প্রজাপতির পুঞ্জ
রূপে-গুণে মঞ্জু কোরো এই ধরনীর কুঞ্জ।

১৯২৯ সালে সিরাজগঞ্জে একটি অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানের হিসাবপত্র

স্নেহা ধর আবার তুলে ধরেছেন তার দাদুর বিয়ের আমন্ত্রণপত্র। দাদুর বসতভিটা ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবিনগরে। আমন্ত্রণপত্রটি ১৩৫২ বাংলা সনের, সে হিসেবে ৭৭ বছর আগের। তাতে লেখা, 'শ্রীযুক্ত প্রতাপ নারায়ণ ধরের সহিত শ্রীযুক্তা কল্যাণী রানীর শুভ পরিণয়োপলক্ষে মিলন উচ্ছ্বাস'। এরপর কবিতার মাধ্যমে বিবাহের সংজ্ঞা ও বিয়ের ফলে দুজন মানুষের মধ্যে যেমন জোট বাঁধে তার উপমা দেওয়া হয়েছে:

এক প্রাণ এক ধ্যান একই স্বপন
বিবাহ তাহার নাম দুজনে মিলন।
শুন তোমাদের শুভ মিলন মহিমা
কেমন হইবে তার দিলাম উপমা।

যেমন- গোঁফ আর দাড়ি
             নর আর নারী
            বাগান আর বাড়ি।

তেমনি- তোমরা দুজনে যেন
             চেন আর ঘড়ি।

হিসাবের খাতা

১৯৩৮ সালে আমার (পিয়াসী দাশগুপ্ত) পিসি শাশুড়ীকে সিলেটের ঠিকানায় লেখা বাঙালি সাহিত্যিক ও গীতি

কলকাতা থেকে কুহেলিকা কর তুলে দিয়েছেন বাবার হিসাবের খাতার একটি পৃষ্ঠা। লিখেছেন, 'আজ বাবার একটা হিসাবের খাতা পেলাম। ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসাব দেওয়া আছে। তখনকার দিনে সাধারণ মধ্যবিত্তরা হিসাব এভাবেই রাখতেন। বাবা ভীষণ মিতব্যয়ী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন মাত্র দশ বছর বয়সে জলপানি পেয়ে। বাবা বলতেন, বড় দাদা খালি বর্ডারটা পার করিয়েছিলেন। তারপর এদেশে এসে একা স্ট্রাগল করা, উচ্চশিক্ষা লাভ এবং সরকারি কর্মে যোগদান।'

হবিগঞ্জের জলসুখা গ্রামের একটি ভবন

'হিসাবটা দেখালাম এই কারণে যে আজ থেকে ৩৩ বছর আগে বাজারদর কেমন ছিল, জিনিসপত্রের দাম কেমন ছিল তা দেখাতে। কারণ এটা একটা সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল। শুধু তা-ই নয়, একজন মানুষের জীবনসংগ্রামের কাহিনী- যাকে সারাজীবন দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে বহন করে বেড়াতে হয়েছে। তখন এক ডলারের দাম ছিল ১৭.৭৬ টাকা। সেটাও বাবা লিখে রেখেছেন।'

কুহেলিকার বাবা ঊননব্বই সালের ১৩ ডিসেম্বরের বাসভাড়া বাবদ খরচ লিখেছেন চার টাকা। আগের দিন গেঞ্জি কিনেছিলেন সাড়ে ষোল টাকায়। ১৭ তারিখে মোমবাতি, ম্যাচ+বাতাসা ও মলম বাবদ খরচ করেছেন যথাক্রমে সাড়ে ৩ টাকা, ৪ টাকা ৬০ পয়সা এবং আড়াই টাকা।

স্নেহা ধরের দাদুর বসত ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। ৭৭ বছর আগে তার বিয়ের আমন্ত্রণপত্র

এসব স্মারক তুলে ধরার আসল উদ্দেশ্য কিন্তু পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ফিরিয়ে আনা এবং বসতভিটার অনুসন্ধান। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে শংকর মুখার্জি যেমন লিখছেন, 'চুয়াডাঙ্গা জেলার মুখার্জিদের সম্পর্কে আপনারা কেউ কি খোঁজ দিতে পারেন? আমার বাবা সিদ্ধেশ্বর মুখার্জি ও ঠাকুরদা ইন্দুভূষণ মুখার্জি জন্মেছিলেন চুয়াডাঙ্গায়। বাবা ১৯৪২-৪৩ সালে মেট্রিক পাশ করেন। চুয়াডাঙ্গার পুরনো স্কুলগুলোর একটি তালিকা পেলে আমার শেকড়ের সূত্র সন্ধান করা সহজ হবে।

'সাগরকূলের নাইয়াআআআ…'

১৯৪০ সালে বাংলাদেশের চাঁদপুর থেকে কেনা সেই চিত্রকর্ম হতে ফাল্গুনী দত্ত রায়

খুব মজার একটি ঘটনা পোস্ট করেছেন আশাভরী সেন। ঘটনাটি ছিল একটি গানের অনুষ্ঠানের। মধ্য কলকাতায় এক শীত সন্ধ্যায় হচ্ছিল সে জলসা। তাতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো রথি-মহারথিরা উপস্থিত। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় যখন গাইছিলেন তখনই সাউন্ড সিস্টেম গেল বিগড়ে। অনুষ্ঠানের কর্মকর্তারা অনেক চেষ্টা করেও মাইক ঠিক করতে পারছিলেন না। ব্যাপারটি ক্রমশ হাতাহাতি, মারামারির পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল। তখনই দর্শকদের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়ালেন একজন, হাতে ম্যান্ডোলিন। তিনি স্টেজের সামনে গিয়ে বললেন, 'আপনারা আমাকে গাইতে দেবেন? আমার মাইক লাগে না!'

সুরসিক মানবেন্দ্র লোকটিকে হাত ধরে টেনে স্টেজে তুললেন আর বললেন মার-টার খেলে কিন্তু বাঁচাতে পারব না। লোকটি বুক চিতিয়ে 'সাগর কূলের নাইয়াআআআ' বলে দিলেন এক বাঘা টান। মানবেন্দ্রর মনে হয়েছিল ধনুকের ছিলা ছিঁড়ে বিদ্যুৎগতিতে যেন একটা তীর বেড়িয়ে গেল। একে একে চারটি গান গাইলেন সে অজানা গায়ক। দর্শক মন্ত্রমুগ্ধ। মানবেন্দ্র এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । বললেন, 'আপনি কে ভাই?' লোকটি শান্ত স্বরে জবাব দিল, 'আমি সিলেট থন আইসি।'

কলকাতার নিউটাউনের বাড়িতে চাঁদপুরের সেই চিত্রকর্ম

এই মানুষটিই কিন্তু পরবর্তীকালের লোক সংগীত আইকন নির্মলেন্দু চৌধুরী।

শেকড় খুঁজতে বন্ধু চাই

পিতৃভূমির প্রতি মানুষের টান এমনই যে শুধু তথ্য আর ছবি চেয়েও আবেদন জানান অনেকে। কলকাতা থেকে তথাগত দাসগুপ্ত যেমন লিখছেন, 'আপনাদের (বঙ্গভিটার সদস্য যারা) মাধ্যমে নড়াইল জেলার কালিয়া সম্পর্কে তথ্য চাই। আমার বাবার নাম রথিশ দাসগুপ্ত। আমার পূর্ব পুরুষেরা বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। আমার দাদুর নাম সুশীল কুমার দাশগুপ্ত যিনি পরে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে চলে যান। তার বাবার নাম ছিল হেমন্ত কুমার দাসগুপ্ত, তিনি উকিল ছিলেন এবং কালিয়া গ্রামে থাকতেন। যদি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি, এখনকার কালিয়ার ছবি পোস্ট করেন তবে বাবাকে এবং অন্য আত্মীয়দের দেখাতে পারতাম। আমাদের সবার অনেকদিনের ইচ্ছে পূরণ হতো।'

কুহেলিকা করের বাবার হিসাবের খাতা ‘৮৯ সাল

সৌভিক বিশ্বাস খুঁজছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার এমন কিছু বন্ধু যারা তাকে শেকড় সন্ধানে সহযোগিতা করবে। তিনি লিখেছেন, 'আমরা বর্তমানে কলকাতা নিবাসী কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল বাংলাদেশ। যেটুকু জানতে পেরেছি আমার ঠাকুরদার বাড়ি ছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার করারচক গ্রামে। ঠাকুরদার নাম ছিল দেবেন্দ্রচন্দ্র বিশ্বাস। ঠাকুরদার বাবার নাম ছিল বনমালী বিশ্বাস। তাদের ছিল সুতোর ব্যবসা। বিশ্বাস বাড়ি পরিচিত ছিল তাদের বাড়ি। এখন আমার কাকা আর পিসি ছাড়া কেউ বেঁচে নেই। বাবা কাকাদের কাছে শুনেছি, ঠাকুরদা দেশ স্বাধীন হবার আগেই কলকাতা চলে এসেছিলেন এবং এখানে রেলে চাকরী করতেন। ঠাকুরদা শেষ ঢাকা গিয়েছিলেন ১৯৬০ সালে। আপনারা (নারায়ণগঞ্জের বন্ধুরা) যদি কোনোভাবে বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।'

সৌভিক বিশ্বাসের ঠাকুরদার পাসপোর্ট

সত্যজিৎ সরকারের আগ্রহ আরেকটু বেশি। তিনি বাংলাদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে সিরাজগঞ্জের ঐ ভিটেটুকু দেখে আসতে চান যেখানে জন্মেছিল তার বাবা, ঠাকুরদা। তার ঠাকুরদা ঈশ্বর শশীভূষণ সরকার সিরাজগঞ্জের ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। দেশভাগের আগেই সত্যজিতের বাবা ভারতে চলে যান। ঠাকুরদার ভিটা দেখার খুব ইচ্ছা তার। যদি বাংলাদেশের বন্ধুরা কোনো সংবাদ দিতে পারেন তবে খুবই খুশি হবেন।

ছবিতে কলকাতার অনিন্দিতা মিত্রের দাদু ও ঠাকুমা। পিছনে বাবা ও জেঠু। তাদের বসত ছিল ঝিনাইদহে

ইতিহাসও বলে বঙ্গভিটা

ইতিহাস জানারও সুযোগ হয় 'বঙ্গভিটা' পেইজটি থেকে। ড. সুভাষ দেব যেমন জানাচ্ছেন, হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী গ্রামটি ছিল স্বনামধন্য। এই গ্রামে বেশ কয়েকটি জমিদার পরিবার, শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ও চাকুরিজীবীর বাস ছিল। বলা হয়ে থাকে, জমিদারের আঞ্চলিক শব্দ মিরাশদার থেকেই মিরাশী শব্দের উৎপত্তি। গ্রামটি খোয়াই নদীর পূবপাড়ে অবস্থিত। গ্রামের পূবদিকে ছিলেন দত্ত পরিবারের জমিদারেরা আর পশ্চিম অংশে ছিলেন বিশ্বাস ও চৌধুরী বংশের জমিদারেরা। এই গ্রামের একটি জমিদার পরিবারেই জন্মেছিলেন ভারতবর্ষের বিখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস (১৯১২-১৯৮৭)।

নন্দা গুহার দাদু ও দিদা। সিরাজগঞ্জে ছিল বসতভিটা

বন্ধু আর ভিটা খুঁজে পাওয়ার গল্পও আছে 'বঙ্গভিটা'য়। প্রদীপ মাইতি লিখছেন, '৪২ বছর পর বঙ্গভিটার বন্ধুদের সহযোগিতায় পুরনো বন্ধুকে খুঁজে পাওয়ার পর বাংলাদেশের খুলনায় বেড়াতে আসি। সুহৃদ বন্ধু স্বপন কুমার বিশ্বাসের পরিবারের সঙ্গে সারাটা দিন সুন্দরভাবে কাটালাম। বৌদির আতিথেয়তা, বাড়ির প্রতিটি মানুষের সান্নিধ্য কত সুমধুর তা লিখে বোঝাতে পারব না।'

ঠাকুমার শৈশব ফেরানোর প্রয়াস

পিনাকীর গল্পটা একটু বেশি অন্যরকম। তার ঠাকুমার ঝুলিতে ছিল সে দেশের কথা যা একটি দ্বীপ, অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে, যেখানে ঠাকুমার চাচা ঘোড়া দাবড়ে বেড়াতেন। এটা সেই দ্বীপ যেখানে পর্তুগীজ রাজা গনজালভেস ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। সেটা অবশ্য মুঘল আমলে। আর পিনাকীর ঠাকুমা বলেন ব্রিটিশ আমলের কথা। সেটা ছিল ব্রিটিশ রাজের শেষ সময়। তখন এটাও নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, দেশটাও দুই ভাগ হয়ে যাবে। সেই তখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ল নোয়াখালিতে। আঁচ এসে পড়ল বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ সন্দ্বীপেও।

পাপ্পু রায়ের দাদু নোয়াখালী থেকে ভারতে চলে গিয়েছিলেন দেশভাগের সময়

এককালে দ্বীপটি নোয়াখালির সঙ্গে লাগানোই ছিল। এই দ্বীপে তিন হাজার বছর ধরে মানুষের বাস। জাহাজ নির্মাণে দ্বীপবাসীদের নাম ছিল। তুরস্কের অটোমান সুলতানরাও এখান থেকে জাহাজ বানিয়ে নিতেন। দাঙ্গা ও দেশভাগের আরো প্রায় এক যুগ পরে পিনাকীর ঠাকুমা যখন কোলকাতা গিয়ে ঠাই গাড়েন, চাকুরি পেয়েছিলেন কোস্ট ট্রাস্টে। পিনাকী আরো জানিয়েছেন, সমুদ্র পাড়ের মানুষ বলেই হয়তোবা সন্দ্বীপের অনেক মানুষই ইন্ডিয়ান নেভিতে কাজ পেয়েছিলেন।

দাঙ্গার সময়, মানে ১৯৪৬ সালের শেষদিকে পিনাকীর ঠাকুমার বয়স ছিল ৯ কিংবা ১০। যে রাতে ঠাকমাদের বাড়িতে আগুন লাগানো হয় তার আগের দিনেই খবর পাওয়া গিয়েছিল, কিছু একটা হবে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঠাকুমা পিছনের বাগানে লুকিয়ে বাড়ি পোড়ানো আগুন দেখেছেন। শেষে কোনোমতে জোগাড় হয়েছিল একটি নৌকা আর তাতে চড়ে বাড়ির সবাই চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিলেন।

পূর্বপুরুষের শেকড় এর সন্ধানে কলকাতা থেকে বাংলাদেশের যশোরে

চট্টগ্রামে আগে থেকেই ঠাকুমাদের ভালো একটি বাড়ি ছিল। সে বাড়িতে উঠলে পরে আতঙ্ক কাটে কিন্তু মনের ভার কমে না। ক্ষণে ক্ষণেই মনে পড়ে উত্তর ভিটির জামগাছটার কথা, দক্ষিণধারের পুকুরটির কথা। কাছারিবাড়ি তো ঠাকুমার খেলাবাড়ি ছিল। সমবয়সীদের সঙ্গে গোল্লাছুট, কানামাছি খেলে দিন কোন দিক দিয়ে পার হতো বুঝতেও পারতেন না। সন্দ্বীপের স্মৃতিগুলো নিয়েই পার হচ্ছিল ঠাকুমাদের চট্টগ্রামের দিন। দিনে দিনে অনেকদিন গেল। বয়স ১৮ হলে ঠাকুমার বিয়েও হলো। কিন্তু সন্দ্বীপে আর ফেরা হলো না।

পিনাকীর ঠাকুরদার বাবা কোলকাতায় কিছু সম্পত্তি করে রেখেছিলেন আগেই। সে ভরসায় ষাটের দশকের শুরুতেই পরিবারটি সারাজীবনের জন্য পাড়ি জমাল কলকাতায়। কিন্তু কখনোই তারা ভোলেনি তাদের পিতৃভিটা সন্দ্বীপের কথা। ঠাকুরদা পিনাকীর বাবার জন্য পাত্রীও খুঁজে নিলেন সন্দ্বীপের। পিনাকীর নানাবাড়ি ছিল সন্দ্বীপের মগধরায়। পর্তুগীজরা বর্মীদের ধরে অনেকদিন এখানে আটকে রেখেছিল বলে নাকি মগধরা নাম হয়েছে। পিনাকীদের খাওয়া-দাওয়ায় এখনো পূর্ববাংলার প্রভাব আছে; যেমন শুটকি তাদের বাড়িতে খুব চলে।

ভারতের আসামের কাছাড় জেলার শিলচরের বিধায়ক দ্বীপায়ন চক্রবর্তী রাজু বাংলাদেশে পূর্বপুরুষের

পিনাকী এখন পড়াশোনাসূত্রে তিন বছর ধরে ঢাকায় । দৃক পাঠশালায় আলোকচিত্র বিষয়ে পড়ছে সে। বলছিল, 'আলোকচিত্রের পাঠ নেওয়ার জন্য পাঠশালা সমৃদ্ধ স্থান, তার ওপর বাংলাদেশ আমার পিতৃভূমি। খুব দেখার ইচ্ছা ছিল, খুব টান অনুভব করতাম। তাই পড়ার ছলে একে দেশে ফেরাও বলতে পারেন।'

পিনাকী এখন চাইছে ক্যামেরাকে হাতিয়ার করে তার ঠাকুমার শৈশব ফিরিয়ে আনতে মানে ঠাকুমার শৈশবকে রিক্রিয়েট করতে।

'বঙ্গভিটা' পেইজটা খুঁজে পেয়ে নন্দা গুহর মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। তিনি লিখেছেন, 'এই গ্রুপটা হঠাৎ খুঁজে পাই আর মনটা ভালো হয়ে যায়। একটাই দুঃখ দিদা দাদু থাকতে যদি পাওয়া যেত! দাদু বলতো সিরাজগঞ্জে তাদের বাড়ি ছিল বাপ্পি লাহিড়ীর মা বাসরী লাহিড়ীর বাপের বাড়ির পাশে। সেই জায়গাটা যদি একবার দাদুকে ছবিতে দেখানো যেত! আজ তো আর দাদু নাই, কিন্তু ছবি পেলে মা-মাসি-মামারা সেই দেশটা ভার্চুয়ালভাবে একটু যদি ছুঁয়ে দেখতে পারে! সম্ভব হলে সেই জায়গার কেউ থাকলে বলবেন। না দেখা সেই শেকড়টা আজও বড্ড টানে যে আমাদের সবাইকে।'

সূচনাকালের গল্প

মূলঘরের স্মৃতিফলক দিল্লীতে

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধি সুরক্ষা ট্রাস্টের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বঙ্গভিটা পেইজের অ্যাডমিন। ২০১৫ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বারাসাত পৌঁছে একটা চায়ের দোকানে বসেছিলেন চা খেতে। ওই দোকানে বসেই তিনি ঢাকায় মাকে ফোনে বলছিলেন, চিন্তা করো না, ভালোভাবে পৌঁছেছি।  

কথাগুলো শুনে চায়ের দোকানি প্রায় বৃদ্ধা নারীটি সাইফুলের কাছে জানতে চাইলেন, 'বাবা তুমি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছ?'

সাইফুল যখন বলেন তিনি বাংলাদেশ থেকেই এসেছেন, তখন সেই দোকানি বলেছিলেন, 'বাবা আমার বাড়ি ছিল বরিশালে। আমি স্বামী পরিত্যক্তা গরীব মানুষ। আমার কিছু আত্মীয়-স্বজন আগেই এপারে চলে এসেছিল। আমি এসেছি ২০০০ সালে।'

শেকড় এর টানে পূর্বপুরুষের দেশ বাংলাদেশের সোতাল গ্রামে সবেদা গাছের নীচে

সাইফুল জানতে চেয়েছিলেন, 'আপনার কি যোগাযোগ আছে বরিশালের সঙ্গে?'

দোকানি বলেন, 'গিয়ে দুদিন থাকব-খাবো তেমন কেউ নেই। মুখ চেনা যারা আছেন তারা থাকতে-খেতে দেবেন বলে ভরসা হয় না। তবে যেতে খুব ইচ্ছা হয়।'

সত্যজিৎ পালের দাদু-দিদা এই হাঁড়িতে করে শাড়ি, গহনা আর কিছু খাবার নিতে পেরেছিলেন।

সেই থেকে সাইফুলের ভাবনা এলো যারা ভিটা ছাড়া হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে তাদের তো পিতৃভূমি দেখার বাসনা জাগে। যদি এপার-ওপারের মানুষের মেলবন্ধন ঘটানোর কোনো প্লাটফর্ম তৈরি করা যায় তবে একটা কাজের কাজ হবে।

সে থেকে তিনি বঙ্গভিটা পেইজ খোলেন এবং প্রচুর সাড়া পান। বঙ্গভিটা মারফত অচেনা লোকেরাও পরস্পরের আত্মীয় হয়ে যাচ্ছেন, দুচারদিন বেড়িয়ে যাচ্ছেন একে অন্যের বাড়িতে।

Related Topics

টপ নিউজ

স্মৃতি রোমন্থন / পৈতৃকভিটা / স্মৃতিচারণ / স্মৃতিকথা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে
  • প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে
  • “স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন
  • সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাতের রোগ নিরাময় করছে
  • গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার
  • মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে

Related News

  • ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা নয়, দাবি জেলা প্রশাসকের
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • আরেফিন স্যার, অভিবাদন গ্রহণ করুন, আপনার স্থান আমাদের হৃদয়ে
  • গোলাপী এখন কোথায়?
  • রেস্টুরেন্ট বলতে চু চিং চাও, শাহবাগ হোটেল আর ইন্টারকন্টিনেন্টাল…

Most Read

1
বাংলাদেশ

ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে

2
বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে

3
বাংলাদেশ

“স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন

4
অর্থনীতি

সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাতের রোগ নিরাময় করছে

5
বাংলাদেশ

গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

6
আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net