ট্রাম্পের সহযোগীরা এবং তাদের আইনি বিপত্তির ইতিহাস

বন্ধু নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে কী মানুষ চেনা যায়! কথাটা ভাবিয়ে তোলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ পারিষদ মহলে নজর দিলে।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) একটি আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন।
তবে তিনিসহ ট্রাম্পের প্রাক্তন অনুচররা অনেকেই আইন লঙ্ঘনের নানা ধরনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। অপরাধমূলক একাধিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় আইনের আওতায় আসেন তারা। কেউ আগে -কেউবা পড়ে, পার্থক্য শুধু এটাই।
আইনভঙ্গকারী সহযোগীর তালিকা:
স্টিভ বেনন: এককালে ট্রাম্পের রাজনৈতিক গুরু এবং প্রধান কৌশলবিদ স্টিভ বেনন- বৃহস্পতিবার যে অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন- তা পুরোটাই আর্থিক কেলেঙ্কারির ব্যাপার। ট্রাম্পের বৈষম্যমূলক অভিবাসন নীতি নিয়ে যখন মার্কিন কংগ্রেস মেক্সিকো সীমান্তে তার দেয়াল নির্মাণে অর্থবরাদ্দ দিতে অস্বীকৃতি জানায়, ঠিক তখনই তার একাধিক শীর্ষ সমর্থক এ দেয়াল নির্মানে উৎসাহীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার উদ্যোগ নেন। স্টিভ এমন একজন- যিনি বর্ণবাদী রাজনীতির লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ করেছেন- আর নিজের স্বার্থে তা আত্মসাৎ করেছেন। জালিয়াতি করা অর্থের অংক প্রায় ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি ডলার।

আর এভাবেই ২০১৭ সালে নিজের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো এবং এককালে ওভাল অফিসের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরামর্শকটি ফেঁসে গেছেন। অবশ্য দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই তার সঙ্গে প্রেসিডেন্টের খুব একটা বনিবনা হচ্ছিল না। অবশেষে নানামুখী বিরোধে তিনি সরে দাঁড়াতেই বাধ্য হন।
২০১৯ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রাক্তন রাজনৈতিক প্রচারণা ব্যবস্থাপক ব্যাননের সঙ্গে তিনি গত দেড় বছর ধরে কোনো কথা বলেননি। তবে ট্রাম্পকে বহিষ্কার করার ডেমোক্র্যাট দলের উদ্যোগের সময় ব্যানন যেভাবে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন- তা নিয়ে সাবেক উপদেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন ট্রাম্প।
আরো সাম্প্রতিক সময়েও ব্যাননের প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। চলতি গ্রীষ্মেই ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ''স্টিভ ব্যানন সরকারি দায়িত্বের বাইরে থেকেই অনেক ভালো আছেন। তিনি বলেন, আমি নাকি সবচেয়ে মহান প্রেসিডেন্ট। মানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি, তিনি আমার কথাগুলোই বলছেন। তাই আমার মনে হয়, স্টিভের দায়িত্বের বাইরে থাকাই ভালো, সেখান থেকেই তিনি আমার জন্য ভালো কাজ করছেন। তারা সকলেই (রাজনৈতিক) কার্যক্রমে জড়িত আছেন।''

মাইকেল কোহেন: ট্রাম্পের এক সময়ের বিশ্বস্ত আইনজীবী আর অসৎ কাজের ব্যবস্থাপক- কোহেন ২০১৮ সালে কর জালিয়াতি, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ- কংগ্রেসে মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়া এবং নির্বাচনী প্রচারণায় আর্থিক লেনেদেনের নিয়ম ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হন। এছাড়া, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনকারী- দুই নারীর মুখ বন্ধেও, তাদের গোপনে অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন এ আইনজীবী। ট্রাম্প অবশ্য এসব নারীর সঙ্গে তার পূর্ব সম্পর্কের বিষয়টি শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন।
গত সপ্তাহে কোহেন তার লেখা একটি বইয়ের কথা জানান, যা অচিরেই প্রকাশিত হবে। বইতে ট্রাম্পের অবৈধ সম্পর্ক আর ব্যবসায়ে ঠিকাদারদের ফাঁকি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় মধ্যস্ততাকারী হিসেবে তার ভূমিকার কথা থাকবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন কোহেন। এছাড়াও বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের গোপন মিত্রতার বিষয়টিও উঠে আসবে বইটিতে।

পল ম্যানাফোর্ট: ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার চেয়ারম্যান ম্যানাফোর্ট ২০১৮ সালের জুন থেকে কারান্তরীন। সম্প্রতি অবশ্য তাকে মহামারির কারণে নিজগৃহে বন্দি থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কর কেলেঙ্কারি এবং ব্যাংকিং লেনদেনে অসাধু উপায় অবলম্বনের দায়ে সাড়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তিনি ষড়যন্ত্র এবং বিচারকার্যে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ম্যানাফোর্ট তার সাজা কমানোর এক আপিলে নিজের অবৈধ অর্থ পাচার, কর জালিয়াতি এবং বিদেশি শক্তির সঙ্গে অনৈতিক যোগসাজশের কথা স্বীকার করেন।

রিক গেটস: ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান গেটস ৪৫ দিনের কারাবাস এবং তিন বছরের প্রভেশন দিয়েছেন আদালত। তিনি পল ম্যানাফোর্টকে বিদেশি কয়েকটি ব্যাংক হিসাবে সাড়ে ৭ কোটি ডলার লুকিয়ে রাখা এবং ইউক্রেনের কিছু রাজনীতিবিদের হয়ে তার লবিং করার কাজে সহযোগী ছিলেন। ট্রাম্পের নানা গোপন তৎপরতা নিয়েও তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের প্রধান তদন্তকারী রবার্ট মুল্যারকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিলেন রিক গেটস।

রজার স্টোন: ট্রাম্পের বন্ধু এবং রাজনৈতিক পরামর্শক, স্টোনের বিরুদ্ধেও প্রেসিডেন্টকে বাঁচাতে প্রতিনিধি পরিষদে মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়া প্রমাণিত হয়েছে। চলতি গ্রীষ্মেই তাকে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত একটি কারাগারে পাঠানোর আগে, স্টোনের দণ্ড নিজ ক্ষমতাবলে কমান ট্রাম্প।
কংগ্রেসে মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়া, সাক্ষ্য-প্রমাণে যোগসাজশের চেষ্টা এবং প্রতিনিধি পরিষদের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বাধা দানসহ সাতটি অভিযোগে- তাকে দণ্ডিত করা হয়। মুল্যার কমিশনের ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা অনসন্ধানে স্টোনের গোপন অপরাধগুলো ফাঁস হয়ে যায়।

মাইকেল ফ্লিন: ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা; ফ্লিন এফবিআই- এর কাছে মিথ্যে সাক্ষ্য দেন। তৎকালীন রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পরিকপনা করে এর মাধ্যমে ওবামা প্রশাসনের নীতিগুলো বাধাগ্রস্ত করার কথা তিনি গোপন করেছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাটির কাছে। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ষড়যন্ত্রের এ জাল বোণা হয়।
ফ্লিনের মামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একটি উত্তপ্ত বিষয়ে পরিণত হয়। ট্রাম্প এবং ফ্লিন উভয়েই আদালতের বিরুদ্ধে অন্যায্য বিচারের অভিযোগ করেছেন।
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বাইরেও আরো অনেকে নানা প্রকার আইনভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত। এদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন; জর্জ পাপাদোপৌলাস, জর্জ নাদের এবং ক্রিস কলিন্স।
- সূত্র: সিএনএন