করোনার সংক্রমণ বাড়ছে- কিন্তু কমছে মৃত্যুর হার, কেন?

কোভিড ১৯ মৃত্যুহার কী কমছে?
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের পরিসংখ্যান তথ্যে- সংক্রমণের হার বেড়ে চলার বিষয়টি উঠে এসেছে। কিন্তু, একইসময় কমেছে কোভিড-১৯ রোগে গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতার ঘটনা এবং মৃত্যুর সংখ্যা। মহামারির প্রথমদিকের তুলনায় এ মৃত্যুহার কমার ঘটনা বিশেষ করে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বেশি প্রভাবিত হয়। আবার কিছু উন্নয়নশীল দেশ যেমন; ভারতেও সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করলেও সেই তুলনায় প্রাণহানির সংখ্যা কম।
বর্তমানে ভেন্টিলেটর বা কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সহায়তা দরকার এমন রোগীর সংখ্যা ব্রিটেনে মহামারির শীর্ষ সময়ের ৩০০০ জন থেকে নেমে এসেছে ৭০ জনে। কিন্তু, তার মানে এ নয় যে, সংক্রমণ বন্ধ। বরং যুক্তরাজ্যের অনেক অঞ্চলেই এ হারটি আবারো বাড়ছে।
এ প্রবণতার ব্যাখ্যা কী?
আসলে কী ঘটছে, চিকিৎসকরা এখনও তা নিশ্চিত নন। কেউ কেউ বলছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের সামগ্রিক প্রস্তুতি এবং কোভিড রোগীর জন্য নতুন ওষুধ ও সেবার প্রয়োগ মৃত্যুহার যেমন কমিয়েছে, তেমনি কমাচ্ছে আক্রান্তের স্বাস্থ্যগত অবনতি। উদাহরণস্বরূপ; বলা যেতে পারে ডেক্সামেথোসোন ওষুধের কথা। ওষুধটি ব্যবহারে ভেন্টিলেশন দরকার এমন রোগীদের বেঁচে থাকার সংখ্যা বেড়েছে।
অন্যদের অভিমত, এর পেছনে অন্যকিছু অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। এদের মধ্যে একদল মনে করেন, কোভিড-১৯ এখন তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি বিস্তার লাভ করায়, হ্রাস পেয়েছে মৃত্যুহার। তরুণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক শক্তিশালী হওয়ায়; তাদের প্রাণহানির ঝুঁকিও কম। সেটাকেই মূল যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছেন তারা।
মহামারির চূড়ান্ত বিপর্যয় কী তবে কাটিয়ে ওঠা গেছে?
এমনটা কল্পনা করাও বিপজ্জনক। এবং বাস্তবতাও তা সমর্থন করে না।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ২০-৩০ বছরের তরুণদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে দেখা যায়-কিন্তু এরপরেই জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের মধ্যে সংক্রমণের হার বাড়তে দেখা গেছে। এ জনগোষ্ঠীর মৃত্যুঝুঁকি বেশি হওয়ায়- একটি বিষয় পরিষ্কার ভাইরাস নানা বয়সী জনতার মধ্যে চক্রাকারে সংক্রমণ তীব্রতা তৈরির ধারাবাহিকতা সূচনা করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি আবারো প্রাণহানি বাড়াচ্ছে।
একারণে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অসাবধানতা বা শিথিলতার সুযোগ নেই। বিন্দুমাত্র অবহেলায় আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে দৈনিক হাজার হাজার প্রাণহানির ঢেউ। ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যেও আগামী কয়েক সপ্তাহের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সংক্রমণ ও প্রাণহানি বাড়তে পারে, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাস কী দুর্বল হয়ে পড়েছে?
কিছু বিজ্ঞানী এ ধারণা সমর্থন করেন। তাদের মতে, ভাইরাস একটি পরজীবী প্রাণ হওয়ায়- সে এক সময় তার পোষক দেহকে মেরে ফেলার ক্ষমতা হারিয়ে বিবর্তিত হয়। এমনটা হওয়ার কারণ; পোষক দেহকে হত্যার মাধ্যমে বস্তুত তার কোনো লাভ হয় না। তাই জীবাণু ঘাতক না হয়ে ভিন্ন কৌশলে মানবদেহে বিবর্তন হতে পারে। অতীতে এমন নজির দেখা গেছে। সার্স কোভ-২ বা কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ি জীবাণুও হয়তো এভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের আরেকদল এ তত্ত্বের বিরোধী। তারা বলছেন, এত তাড়াতাড়ি কোনো ভাইরাসের প্রাণঘাতী বৈশিষ্ট্যের রূপান্তর ঘটতে পারে না। তবে মৃত্যুহার কমার বিষয়ে তারা অন্য একটি ব্যাখ্যা দেন। তাদের মতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার অভ্যাস অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে। ফলে স্বল্প পরিমাণে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আর তুলনামূলক কম মাত্রায় সংক্রমণ হওয়ায়- দেহের প্রচলিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে। এভাবে মৃত্যুহার কমে আসার বিষয়টি বোঝা অপেক্ষাকৃত যুক্তিসঙ্গত।
তবে এনিয়ে সাধারণ মানুষের অসাবধান হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। এসবকিছু বিজ্ঞানীদের চলমান অনুসন্ধানী জিজ্ঞাসার অংশ। আরো বহুমাসের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের পরই কেবল তারা সঠিক ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। এরমধ্যে, নিজ ও আপনজনের সুরক্ষা নিয়ে হাল না ছাড়ারই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান