২০২৪ সালে জাপানে জন্মের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৯ লাখ বেশি, রেকর্ড জনসংখ্যা কমেছে

২০২৪ সালে জাপানে জন্মের তুলনায় প্রায় ৯ লাখ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৬৮ সালে সরকারি জরিপ শুরুর পর এটিই বার্ষিক জনসংখ্যা হ্রাসের সর্বোচ্চ রেকর্ড। খবর বিবিসি'র।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এই সংকটকে বর্ণনা করেছেন 'নীরব জরুরি অবস্থা' হিসেবে। দেশের ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে দায়ী করে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, শিশুদের জন্য বিনামূল্যে দেখাশোনার ব্যবস্থা ও আরও নমনীয় কর্মঘণ্টাসহ পরিবারবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ করা হবে।
তবে জাপানে নারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে জন্মহার কমে এসেছে, তা পাল্টাতে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ এখনো আশানুরূপ ফল দিচ্ছে না।
জাপানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বুধবার যে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে—২০২৪ সালে জাপানের নাগরিক সংখ্যা ৯ লাখ ৮ হাজার ৫৭৪ জন কমেছে।
ওই বছর দেশে মাত্র ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬১টি শিশুর জন্ম হয়েছে—১৮৯৯ সালে এই হিসাব রাখার শুরু থেকে যা সবচেয়ে কম। অপরদিকে, মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। অর্থাৎ, প্রতি ১টি শিশুর জন্মের বিপরীতে মারা গেছেন ২ জনেরও বেশি।
টানা ১৬ বছর ধরে দেশটিতে জনসংখ্যা কমছে। এর ফলে পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাড়ছে বড় ধরনের চাপ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, জাপানে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা বেড়ে রেকর্ড ৩৬ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ।
যদিও সরকার বিদেশি শ্রমিকদের ব্যাপারে কিছুটা নমনীয়তা দেখাচ্ছে, তবুও অভিবাসন ইস্যুতে এখনো সংরক্ষণশীল অবস্থান বজায় রয়েছে। 'ডিজিটাল নোম্যাড ভিসা' চালু এবং দক্ষতা বৃদ্ধির কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে এখনো স্পর্শকাতর।
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের শুরুতে জাপানের মোট জনসংখ্যা ০.৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১২ কোটি ৪৩ লাখে।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জাপানে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ—যা বিশ্বের মধ্যে মোনাকোর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে, কর্মক্ষম ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর হার নেমে এসেছে প্রায় ৬০ শতাংশে।
এদিকে, দেশের বহু শহর ও গ্রাম ক্রমেই জনশূন্য হয়ে পড়ছে। সরকারি তথ্য বলছে, গত দুই দশকে প্রায় ৪০ লাখ বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
জন্মহার বাড়াতে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন প্রণোদনা চালু রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাড়িভাড়ার ভর্তুকি, বেতনসহ পিতামাতার ছুটির সুযোগসহ আরও নানা সুবিধা। তবুও বেশ কিছু গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধা এখনো রয়ে গেছে।
জীবনযাত্রার উচ্চ খরচ, মজুরি স্থবিরতা এবং কঠোর কর্মসংস্কৃতি তরুণ-তরুণীদের অনেককেই পরিবার শুরু করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে। বিশেষ করে নারীরা পড়ছেন কঠিন পরিস্থিতিতে—কারণ পুরোনো সামাজিক রীতিনীতির কারণে অধিকাংশ সময় সন্তান পালনের চাপ তাদের একাই সামলাতে হয়।
১৯৭০-এর দশক থেকেই জাপানে নারীদের গড় সন্তান জন্মের হার কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বড় ধরনের পরিবর্তন এলেও তার ফল মিলতে সময় লাগবে আরও বহু বছর।