অভিবাসন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে জাপানে বিদেশি বাবা-মায়ের ঘরে রেকর্ড সংখ্যক শিশুর জন্ম

২০২৪ সালে জাপানে বিদেশি বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ডে পৌঁছেছে। এই ঘটনাটি দেশটির দ্রুত জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরছে এবং অভিবাসন ইস্যুটি এখন জাপানের রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০ হাজারের বেশি শিশু অ-জাপানি দম্পতির ঘরে জন্ম নিয়েছে, যা মোট নবজাতকের ৩ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে, জাপানি বাবা-মায়ের সন্তান জন্মের সংখ্যায় আবারও ব্যাপক পতন ঘটেছে, যা এক পুরোপুরি বিপরীত চিত্র তুলে ধরেছে।
নিক্কেই বিজনেস পত্রিকা জানিয়েছে, বিদেশি নবজাতকের সংখ্যা ও অনুপাত উভয়ই সর্বকালের সর্বোচ্চ। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে, এই শিশুরা 'জাপানিদের মধ্যে জন্মহারের পতন কিছুটা কমাতে সাহায্য করতে শুরু করেছে।'
জাপান বিশ্বের দ্রুততম ক্ষয়িষ্ণু জনসংখ্যার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং দেশটির জনসংখ্যা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জন্মহার বাড়াতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১২৫ মিলিয়ন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাপানে অ-জাপানি জনসংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে, কারণ শ্রম বাজারের শূন্যস্থান পূরণের জন্য আরও বেশি অভিবাসী কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। এই প্রবণতার ফলেই এই প্রথমবারের মতো অভিবাসন একটি নির্বাচনী ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ২২,৮৭৮ জন বিদেশি শিশুর জন্ম হয়েছে (যাদের বাবা-মা উভয়ই অ-জাপানি অথবা অবিবাহিত বিদেশি মা)। যা এক বছর আগের তুলনায় ৩,০০০-এরও বেশি এবং এক দশক আগের তুলনায় ৫০% বেশি।
অন্যদিকে, জাপানি দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬,৮৬,১৭৩ জনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪১,১১৫ জন কম। এই বিপরীতমুখী প্রবণতার অর্থ হলো, বিদেশি নবজাতকের জন্ম জাপানি জন্মহারের পতনকে অর্ধেকেরও বেশি পুষিয়ে দিয়েছে এবং মোট জন্মের ৩.২% এখন তাদের দখলে।
জাতীয়তার দিক থেকে, বিদেশি মায়েদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশটি ছিল চীনা নারীদের, এরপরই রয়েছে ফিলিপাইন এবং ব্রাজিলের নারীরা।
এই বৃদ্ধির কারণ জাপানে বিদেশি বাসিন্দাদের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিবাসন পরিষেবা সংস্থা গত সপ্তাহে জানিয়েছে, বৈধ বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা বেড়ে ৩.৯৫ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এদের বেশিরভাগই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী এবং তাদের দীর্ঘ সময় ধরে দেশে থাকা এবং সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বেশি।
অনেক জাপানি শহরে এখন বিভিন্ন দেশের মানুষের বসবাস, যা ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের কঠোর অভিবাসন আইন এবং আরও ভালো একীকরণের দাবি জানাতে উৎসাহিত করেছে। জুলাই মাসের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে, সানসেইতো নামে একটি ছোট জনতুষ্টিবাদী দল বিদেশি কর্মীদের বিরোধিতা করে প্রচারণা চালানোর পর বেশ ভালো ফল করেছিল।
এমনকি ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন নেত্রী সানায়ে তাকাইচি, যিনি এই মাসে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা করছেন, তিনি অভিবাসন এবং 'অসদাচরণকারী' বিদেশি পর্যটকদের তার নির্বাচনী প্রচারণার একটি অংশ করেছেন।
তবে শ্রম সংকট এবং ক্ষয়িষ্ণু জনসংখ্যা আরও বেশি অভিবাসনকে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী কেইসুকে সুজুকি সম্প্রতি বলেছেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বিদেশি বাসিন্দাদের অনুপাত মোট জনসংখ্যার ১০% ছাড়িয়ে যেতে পারে—যা ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি পূর্বাভাসের চেয়ে তিন দশক আগেই ঘটবে।
বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিদেশি পরিবারগুলোকে আরও বেশি সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছেন। কানসাই আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর তোশিহিরু মেনজু নিক্কেইকে বলেন, 'এখানে জন্ম নেওয়া বিদেশি শিশু এবং তাদের পরিবারের জন্য নীতি ও সহায়তা অনেক জায়গাতেই পিছিয়ে আছে এবং বেশিরভাগই অলাভজনক সংস্থার উপর নির্ভরশীল।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এমন একটি সমাজ তৈরি করতে হবে যেখানে বিদেশি শিশুরা বড় হয়ে জাপানি ভাষায় কথা বলবে, জাপানি নাগরিকদের মতো আয় করবে এবং নিজেদের পরিবারকে সমর্থন করতে পারবে।' তিনি সতর্ক করে বলেন, অন্যথায় 'আমরা একটি বিভক্ত সমাজে পরিণত হব।'