জাপানের ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙন, সানায়ে তাকাইচির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন শঙ্কায়

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বড় ধরনের হোঁচট খেলেন কট্টরপন্থী নেত্রী সানায়ে তাকাইচি। তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে ২৬ বছরের জোট ভেঙে বেরিয়ে গেছে জোটসঙ্গী কোমেইতো পার্টি।
শুক্রবারের এই নাটকীয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর মুখে পড়েছেন সানায়ে। এর ফলে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ হঠাৎ করেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গত সপ্তাহান্তে জাপানের দীর্ঘদিনের শাসক দল এলডিপির প্রধান নির্বাচিত হন রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত সানায়ে তাকাইচি। নিয়ম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে তাকে চলতি মাসের শেষে পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে।
জোটের কারণে বিষয়টি এত দিন প্রায় নিশ্চিতই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী কোমেইতোর বিদায়ে এবং বিরোধী দলগুলোর বিকল্প প্রার্থীকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৎপরতায় সব হিসাবনিকাশ পাল্টে গেছে।
শুক্রবার সানায়ের সঙ্গে এক বৈঠকের পর কোমেইতোর নেতা তেতসুও সাইতো জোট ভাঙার ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, এলডিপির রাজনৈতিক তহবিল কেলেঙ্কারি নিয়ে দুই বছরের অচলাবস্থা নিরসনে ব্যর্থ হওয়ায় তারা এই সম্পর্ক আর এগিয়ে নিতে পারছেন না। সাইতো সাফ জানিয়ে দেন, পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে সানাইকে সমর্থন দেবে না কোমেইতো।
কোমেইতোর এই সিদ্ধান্তকে 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক' বলে অভিহিত করেছেন সানাই। তবে তিনি বলেছেন, পার্লামেন্টের সমর্থন পেতে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই তিনি করে যাবেন।
জাপানের রাজনীতিতে এই অস্থিরতা এমন একসময়ে এল, যখন সামনে মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বহুপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলন এবং মাসের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য সফরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে।
এই খবরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দর ০.৫ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে সানাইয়ের বিপুল ব্যয় পরিকল্পনায় অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরির আশঙ্কায় ইয়েনের আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দরে পতন হয়েছিল।
জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন কেইদানরেনের প্রধান ইয়োশিনোবু সুৎসুই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'দেশে-বিদেশে যখন জরুরি নীতিগত চ্যালেঞ্জ জমে আছে এবং গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কর্মসূচি আসন্ন, তখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। এই পরিস্থিতিতে কোমেইতোর ঘোষণাটি সত্যিই দুঃখজনক।'
কোমেইতো জোট ছাড়ার পর সানাই এখন মধ্য-ডানপন্থী ইনোভেশন পার্টির মতো দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়ার চেষ্টা করতে পারেন।
তবে টেম্পল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জেমস ব্রাউন মনে করেন, অন্য দলগুলো জোটে যোগ দেওয়ার আগে একাধিকবার ভাববে। তার কথায়, 'এই সরকার শুরু থেকেই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এটি একটি অজনপ্রিয় ও স্বল্পস্থায়ী সরকার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। কোনো দল কি এমন একটি সরকারের সঙ্গে নিজেদের নাম জড়াতে চাইবে?'
এই সুযোগে প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (সিডিপি) প্রধানমন্ত্রী পদে সানাইকে চ্যালেঞ্জ জানাতে অন্য বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেতা ইউচিরো তামাকিকে সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে।
পপুলিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি ফর দ্য পিপলের (ডিপিপি) প্রধান তামাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, তিনি 'প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের সেবা করতে প্রস্তুত' এবং সিডিপির সমর্থনে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন।
সংসদের নিম্নকক্ষে এলডিপির আসন ১৯৬টি, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে ৩৭টি কম। অন্যদিকে, সিডিপি ও ডিপিপির মিলিত আসন সংখ্যা ১৭৫। কোমেইতো ও অন্য বিরোধীরা একজোট হলে সানায়ের পক্ষে আস্থা ভোটে জেতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
নোমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ তাকাহিদে কিউচি বলেন, 'বিরোধী দল ও কোমেইতো যদি তামাকিকে নেতা হিসেবে বেছে নেয়, তাহলে বিরোধী জোটের সরকার গঠিত হবে। তখন সানাইয়ের অর্থনৈতিক নীতি ঘিরে বাজারে যে ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, তা পুরোপুরি উল্টে যাবে।'
কোমেইতোর মহাসচিব মাকোতো নিশিদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাপান এখন 'বহুদলীয় ব্যবস্থার যুগে' প্রবেশ করেছে। তাদের দল এখন 'কেন্দ্রপন্থী ও সংস্কারমুখী রাজনৈতিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু' হয়ে উঠবে।
বিদেশিদের বিষয়ে সানায়ের কঠোর মনোভাব এবং জাপানের অতীত সামরিক আগ্রাসনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ইয়াসুকুনি মন্দিরে তার সফরের মতো বিষয়গুলোরও কট্টর সমালোচক কোমেইতো।