ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু বাংলাদেশের

তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলী অনিকের কল্যাণে স্কোরকার্ডে যে রান জমা হয়, তা নিয়ে ভারতের লম্বা ব্যাটিং লাইন আপের বিপক্ষে লড়ার আশা করাই ছিল 'বাড়াবাড়ি'। তবু বাংলাদেশের বোলাররা খেই হারালেন না, পুরোটা সময় সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন। তাসকিন, মিরাজ, রিশাদদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে রান তুলতে সংগ্রাম করতে হলো ভারতের সব ব্যাটসম্যানকেই। রোহিত শর্মার দাপুটে শুরুর পর দীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেন ওপেনার শুভমান গিল। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি, তার সঙ্গে থাকলো লোকেশ রাহুলের অবদানও। চাপে পড়লেও শেষ হাসি হেসে মাঠ ছাড়লো ভারতই।
বৃহস্পতিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এমন হারের পর ব্যাটিংয়ের হতাশা আরও বাড়তে পারে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। স্কোরকার্ডে আরও ৩০-৪০ রান থাকলে লড়াইয়ের পথটা যে ভিন্ন হতো, ম্যাচ চলাকালীনই সেটা বুঝতে পেরেছে তারা। তাতে অবশ্য কিছুই যায় আসে না, দিন শেষে ফলটাই তো মূখ্য। কারণ, রেকর্ড বইয়ে কেবল ভারতের জয়ের কথাই লেখা থাকবে, যেখানে আলাদা করে লেখা থাকবে না বাংলাদেশের ভালো বোলিংয়ের কথা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশ দিক হারায়, ৩৫ রানেই খোয়ায় ৫ উইকেট। এখান থেকে হাল ধরে রেকর্ড জুটি গড়েন হৃদয় ও জাকের। অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়, হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান জাকের। শেষ দিকে ছোট ক্যামিও ইনিংস খেলেন রিশাদ হোসেন। ২ বল আগে অলআউট হওয়া বাংলাদেশ তোলে ২২৮ রান। জবাবে ম্যাচসেরা শুভমানের সেঞ্চুরি এবং রোহিত ও রাহুলের চল্লিশোর্ধ ইনিংসে ২১ বল হাতে রেখে জিতে যায় ভারত।
লক্ষ্য তাড়ার পথটা ভারতের জন্য সহজ ছিল না। রোহিত ৩৬ বলে ৭টি চারে ৪১ রান করে ফেরার পর তাসকিন, মিরাজ, রিশাদদের বোলিংয়ের বিপক্ষে কঠিন সময় যায় তাদের। বিরাট কোহলি, শ্রেয়াশ আইয়ার, অক্ষর প্যাটেলরা দলের স্কোরকার্ডে অবদান রাখতে পারেননি। রান তুলতে সংগ্রাম করা কোহলি ৩৮ বলে একটি চারে ২২ রান করে রিশাদের শিকারে পরিণত হন। ১৭ বলে ১৫ রান করা শ্রেয়াসকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। অক্ষর ১২ বলে ৮ রান করে রিশাদের বলে তার হাতেই ক্যাচ দেন।
চার উইকেট হারানোর পর অবশ্য ভারতকে আর চাপ বুঝতে হয়নি। ৯৮ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা শুভমান ও রাহুল। ১১৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন শুভমান। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ভারতের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ধীর গতির সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ৫১ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটা তার অষ্টম সেঞ্চুরি। রাহুল ৪৭ বলে একটি চার ও ২টি চক্কায় অপরাজিত ৪১ রান করেন। ১০ ওভারে ৩৮ রানে ২টি উইকেট নেন রিশাদ। ৯ ওভারে ৩৬ রানে এক উইকেট পান তাসকিন। এক উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজ ৯ ওভারে খরচা করেন ৬২ রান। সবচেয়ে কম রান দেন মিরাজ। ১০ ওভারে তার খরচা ৩৭, তবে উইকেট পাননি। ৮.৩ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন তানজিম হাসান সাকিব।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ অগোছালো শুরুর পর মুহূর্তেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে, ৩৫ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারায়। একে একে ফিরে যান সৌম্য সরকার, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজিদ হাসান তামিম ও মুশফিকুর রহিম। এর মধ্যে সৌম্য, শান্ত ও মুশফিক রানের খাতাই খুলতে পারেননি। প্রথম ওভারেই ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামির ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন সৌম্য। পরের ওভারে থামেন শান্তও। ভারতের আরেক পেসার হর্ষিত রানার অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কভারে বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়েন তিনি।
এরপর চার ওভারের বিরতি, ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে আবারও উইকেটের পতন। শামির বলে ব্যাট চালিয়ে সৌম্যর মতো মিরাজও উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন, ১০ বলে ৫ রান করেন তিনি। নবম ওভারে বাংলাদেশকে দিক ভুলিয়ে দেন অক্ষর প্যাটেল। ভারতের বাঁহাতি এই স্পিনার পরপর দুই বলে ফেরান তানজিদ ও মুশফিককে। এ কজনের মধ্যে কেবল তানজিদই কিছু রান করতে পেরেছেন, বাঁহাতি তরুণ এই ওপেনার ২৫ বলে ৪টি চারে ২৫ রান করেন। নবম ওভারে আরেকটি উইকেট পেতে পারতেন অক্ষর, হ্যাটট্রিকের কীর্তিতেও উঠতে পারতো তার নাম। কিন্তু জাকেরের তোলা সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি রোহিত শর্মা।
৩৫ রান থেকে জুটি গড়া হৃদয় ও জাকের অনেকটা পথ পাড়ি দেন। চাপ সামলে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন তারা। এ দুজনের ব্যাটিংয়ের কল্যাণেই ৫ উইকেট পড়ার পর নিজেদের এবং চাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪১.১ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ২০৬ বলে ১৫৪ রানের জুটি গড়েন হৃদয় ও জাকের। এই জুটিতে বেশ কয়েকটি রেকর্ড দখলে নিয়েছেন তারা। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে এটাই বাংলাদেশের সেরা জুটি। ভারতের বিপক্ষেও ষষ্ঠ উইকেটে যেকোনো দলের সেরা জুটি এটা। এ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেও এটা সেরা ষষ্ঠ জুটি।
জাকেরের বিদায়ে ভাঙে এই রেকর্ড জুটি। এর আগে ১১৪ বলে ৪টি চারে ৬৮ রান করেন জাকের, ওয়ানডেতে এটা তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এরপর হৃদয়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রথম কয়েকটা বল দেখে খেলা রিশাদ ঝড় তোলেন। তার ব্যাটে ৪৬তম ওভার থেকে ২০ রান পায় বাংলাদেশ। ১২ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮ রান করেন রিশাদ। বাঁ পায়ে চোট পাওয়ায় বাকি পথটা ভালো কাটেনি হৃদয়ের, কয়েকটি বলে নিশ্চিত এক রান হবে জেনেও দৌড়াতে পারেননি তিনি।
দুই বল বাকি থাকতে আউট হওয়া হৃদয় ১১৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০০ রানের মহাকার্যকর ইনিংস খেলেন, এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। বাংলাদেশের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। এর আগে শাহরিয়ার নাফিস, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই আসরে সেঞ্চুরি করেছেন। ভারতের অষ্টম বোলার হিসেবে ২০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছানো শামি ৫৩ রানে ৫টি উইকেট নেন। হর্ষিত ৩টি ও অক্ষর ২টি উইকেট পান।