দেশি একাদশ নিয়ে রংপুরের বিপক্ষে দুর্বার জয় রাজশাহীর

রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটি খেলা সহজ ছিল না দুর্বার রাজশাহীর জন্য। ম্যাচের দিন ঠিকানা বদলাতে হয় ক্রিকেটারদের, এক হোটেল ছেড়ে যেতে হয় আরেক হোটেলে। পারিশ্রমিক না পেয়ে ম্যাচটি খেলতে মাঠে আসতে রাজি হননি বিদেশি ক্রিকেটাররা। দেশি ক্রিকেটারদের খেলা নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। শেষ মুহূর্তে পারিশ্রমিকের চেক দিয়ে দেশি ক্রিকেটারদের মাঠে আনে দলটি। তবে মাঠে নামতে হয় বিদেশি ক্রিকেটার ছাড়াই।
এই ইস্যুতে বিপাকে পড়তে হয় রাজশাহীকে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নিয়ম অনুয়ায়ী সর্বোচ্চ চারজন ও সর্বনিম্ন দুজন বিদেশি ক্রিকেটারকে খেলাতে হয়। বিদেশি ক্রিকেটার না থাকায় ম্যাচ খেলা নিয়েই অনিশ্চয়তায় পড়ে তারা। পরে অবশ্য বিসিবির দেওয়া 'বিশেষ ব্যবস্থায়' দেশি একাদশ নিয়ে মাঠে নামে চলমান বিপিএলে পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা রাজশাহী।
অনেক অনিশ্চয়তা শেষে মাঠে নেমে আগে ব্যাটিং করা রাজশাহী বড় সংগ্রহও গড়তে পারেনি। তখন মনে হচ্ছিল সহজেই জিতে যাবে রংপুর রাইডার্স। কিন্তু বল হাতে দারুণ শুরুর পর রংপুরকে চেপে ধরে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে রাজশাহী। শেষ দুই ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ব্যাটে সম্ভাবনা জাগলেও শেষ হাসি হাসে রাজশাহীই। দেশি একাদশ নিয়ে দারুণ এক জয় তুলে নেয় দলটি। রাজশাহীর উদযাপনই বলে দিচ্ছিল এই জয়টি তাদের কাছে কতোটা বিশেষ। জয়ের পর গোল হয়ে উল্লাস করেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা, অধিনায়ক তাসকিনকে তুলে নেন কাঁধে। সীমানার পাশে আরও একবার গোল হয়ে বিজয় উল্লাস করতে দেখা যায় রাজশাহীর ক্রিকেটারদের।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে রংপুরকে ২ রানে হারিয়েছে রাজশাহী। ম্যাচটি রংপুরের জন্য প্রতিশোধের হলেও ফের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো তাসকিন আহমেদের দল। আগের সাক্ষাতেও রংপুরকে হারায় রাজশাহী, যা ছিল এবারের আসরে রংপুরের প্রথম হার। টানা আট ম্যাচ জেতার পর রাজশাহীর বিপক্ষে হার মানা দলটি আজও থাকলো পরাজিতর দলে। ১১ ম্যাচে পাঁচ জয়ে ১০ পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে রাজশাহী। সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করা রংপুর ১০ ম্যাচে আট জয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই আছে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা রাজশাহীর ইনিংস অল্পতেই গুটিয়ে যায়, ৯ উইকেটে ১১৯ রান তোলে তারা। দলটির কোনো ব্যাটসম্যান ৩০ রানের গণ্ডিও ছাড়াতে পারেননি। ২০ রানের সীমানা ছাড়াতে পারেননি কেউ-ই। জবাবে ৩০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ঘোর সঙ্কটে পড়ে যাওয়া রংপুর শেষ দিকে সাইফউদ্দিনের ব্যাটে লড়েও জয়ের সীমানায় পৌঁছাতে পারেনি। শেষ ওভারে ১২৫ রান দরকার দাঁড়ালে তিন ছক্কা ও এক চারে ২২ রান তোলেন সাইফউদ্দিন, ২ রানের ব্যবধান থেকেই যায়। ৮ উইকেটে ১১৭ রানে থামে রংপুরের ইনিংস।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই দিক হারায় রংপুর। রাজশাহীর জয়ের নায়ক মৃত্যুঞ্জয়ের দুবার বোলিংয়ের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে রংপুরের ইনিংস। প্রথম ছয়জন ব্যাটসম্যানের মধ্যে পাঁচজন দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। মৃত্যুঞ্জয়ের তোপে ৪৯ রানের মধ্যেই ৭ উইকেট হারায় রংপুর। এখান থেকে হাল ধরে দলকে জয়ের খুব কাছাকাছি নিয়ে সাইফউদ্দিন, তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন স্পিনার রকিবুল হাসান। যদিও এ দুজনের লড়াই শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি। অষ্টম উইকেটে ৩৬ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন এ দুজন।
ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা সাইফউদ্দিন ৩১ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় অপরাজিত ৫২ রান করেন। রকিবুল ২২ বলে ২টি চারে ২০ রান করেন। এ ছাড়া ইফতেখার আহমেদ ১৪ ও খুশদিল শাহ ১০ রান করেন। রংপুরের আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। আসরজুড়ে আলো ছড়ানো তাসকিন ৪ ওভারে ২৫ রানে ২ উইকেট নেন, গড়ে ফেলেন দারুণ এক রেকর্ড। ১১ ম্যাচে তাসকিনের উইকেট ২৪টি, যা বিপিএলে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড। ডানহাতি এই পেসার ছাড়িয়ে গেছেন ২৩ উইকেট নেওয়া সাকিব আল হাসানকে। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচসেরা হওয়া মৃতুঞ্জয় ৪ ওভারে ১৮ রানে ৪টি উইকেট নেন। মোহর শেখও ছিলেন দুর্দান্ত, ৪ ওভারে ১৫ রানে ২টি উইকেট পান তিনি।
এর আগে রাজশাহীর বিবর্ণ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন স্পিনার সানজামুল ইসলাম। ২৯ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করেন তিনি। এ ছাড়া সাব্বির হোসেন ১১, এনামুল হক বিজয় ১৩, মৃত্যুঞ্জয় ১০, আকবর আলী ১৯ ও অধিনায়ক তাসকিন ১৩ রান করেন। ৪ ওভারে ১৯ রানে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন রংপুরের পাকিস্তানি অলরাউন্ডার খুশদিল। সাইফউদ্দিন ও রকিবুল ২টি করে উইকেট পান। একটি উইকেট নেন আকিফ জাভেদ।