কুমিল্লার চতুর্থ নাকি মাশরাফির পঞ্চম?

এক মাস ৯ দিনের লড়াই শেষে পাওয়া গেছে বিপিএলের সেরা দুই দলকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও সিলেট স্ট্রাইকার্স; শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিততে আজ মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই দল। ম্যাচটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে। দুই দলই এবারের বিপিএলে শাসন করেছে। শেয়ানে শেয়ানে লড়াই বলে ধুন্ধুমার এক ম্যাচের অপেক্ষায় সবাই।
প্রতিবারই হতাশার গল্প লিখলেও এবার ভাগ্য বদলেছে সিলেটের। এবার তারা যা করে দেখিয়েছে, তা করতে পারেনি সিলেটের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই। জয় দিয়ে বিপিএল শুরু করা দলটি প্রথম পাঁচ ম্যাচে টানা জয় পায়। শুরুতেই শীর্ষস্থান দখল করা সিলেট প্লে-অফ নিশ্চিত করে সবার আগে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নেওয়া সিলেট মাঝে কেবল ২৪ ঘণ্টার জন্য শীর্ষস্থান হারায়। প্রথম কোয়ালিফায়ারে না পারলেও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে শক্তিতে বেশ এগিয়ে থাকা রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে সিলেট।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পথচলাও ছিল দুর্বার। যদিও তাদের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। হার দিয়ে শুরু করা দলটি পরের দুই ম্যাচেও হেরে যায়। তারকায় ঠাসা দল গড়ে শিরোপায় চোখ রাখা দলটি টানা তিন ম্যাচ হেরে কোণঠাসা অবস্থাতেই পড়ে যায়। তবে খেই হারায়নি বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। পরের ম্যাচ থেকে যে তাদের দাপট শুরু হয়েছে, তা এখনও থামেনি। ফাইনালের টিকেট কাটার পথে টানা ১০ ম্যাচে জিতেছে কুমিল্লা। ফাইনালে জিতলে টানা ১১ ম্যাচে অপরাজিত থাকবে তারা।
একটি জায়গায় দুই দলের মধ্যে আছে দারুণ মিল। বিপিএলের অন্যতম সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কখনও ফাইনালে হারেনি। আগে খেলা তিনটি ফাইনালেই শেষ হাসি হেসেছে তারা। চতুর্থ শিরোপা জিতে ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি কুমিল্লার সামনে।
প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজারও ফাইনাল হারের রেকর্ড নেই। অধিনায়ক মাশরাফি চারবার ফাইনাল খেলে প্রতিবারই শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছেন। বিপিএলের প্রথম তিন আসরেই তার হাতে ওঠে শিরোপা। প্রথম দুই আসরে শিরোপা জেতেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে। ২০১৫ সালে শক্তিশালী দল না পেলেও কুমিল্লাকে শিরোপা জেতান মাশরাফি।
২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সকে এনে দেন সেরার মুকুট। ছয় বছর পর ফাইনালে উঠে এবার সিলেটকে শিরোপা জেতানোর অপেক্ষায় জাতীয় দলের সফলতম এই অধিনায়ক। ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসরটিতে মাশরাফির পর অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুইবার বিপিএলের শিরোপা জিতেছেন ইমরুল কায়েস। ২০১৮ ও ২০২২ সালে কুমিল্লার হয়ে শিরোপা জেতেন তিনি।
অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে দল গড়ে দারুণ সাফল্য পাওয়া সিলেট প্রতিপক্ষ হিসেবে কুমিল্লাকে সমীহ করছে। তবে শক্তিতে এগিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে জিতে শিরোপা উৎসব করতে প্রস্তুত তারা। মাশরাফির ভাষায়, 'কুমিল্লা এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা তাদের বিপক্ষে কোনো ম্যাচেই পারব না। আমরা যদি আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলি এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এগিয়ে থাকতে পারি, তাহলে আমরা শিরোপা জিততে পারব। ছেলেরা এখন পর্যন্ত ভালো খেলেছে এবং আমি চাই আরেকটি ম্যাচে তারা জ্বলে উঠুক।'
অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেও ফাইনালে সিলেটকে নিয়ে সতর্ক কুমিল্লা। যদিও নিজেদের সেরাটা খেলে চতুর্থ শিরোপা জিততে দৃঢ়প্রত্যয়ী তারা। ইমরুল কায়েস বলেন, 'অবশ্যই ভালোভাবে দেখছি (প্রতিপক্ষ সিলেট সম্পর্কে)। তারা দারুণভাবে টুর্নামেন্টটা শুরু করেছিল এবং ফাইনালে উঠেছে। এটা তাদের কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। বিশেষ করে তাদের যারা স্থানীয় ক্রিকেটার আছে, তারা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আমরা তাদের দুটি ম্যাচে হারিয়েছি। তবে সিলেট অবশ্যই শক্তিশালী দল। আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, তাহলেই সম্ভব (চ্যাম্পিয়ন হওয়া)।'