খুশদিল ঝড়ের ম্যাচে কুমিল্লার সহজ জয়

১৫ ওভারে স্কোরকার্ডে ১০০ রান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর কতোই আশা করছিল! ১৪০ কিংবা ১৫০? আরও ভালো হলো ১৬০। কিন্তু উইকেটে গিয়ে প্রথম কয়েকটি বল দেখে খেলা খুশদিল শাহ ব্যাট হাতে ঝড় তুলে সব হিসেব পাল্টে দেন। ধুঁকতে থাকা কুমিল্লার স্কোরকার্ডও ফুলেফেঁপে ওঠে। আসরের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করে কুমিল্লাকে যেখানে পৌঁছে দেন খুশদিল, সেখানকার নাগাল পায়নি ঢাকা ডমিনেটর্স।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ঢাকাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা। ছয় ম্যাচে তৃতীয় জয় তুলে নিলো বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তিন নম্বরে আছে তারা। অথচ হারে শুরু করা কুমিল্লা টানা তিন ম্যাচ হারে। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচ দিয়ে জয়ে ফিরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দলটি। টানা তিন হারের পর টানা তিন ম্যাচ জিতলো কুমিল্লা। হার মানা ঢাকা পাঁচ ম্যাচে এক জয় নিয়ে তালিকার তলানির দল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে কুমিল্লা। ম্যাচসেরা খুশদিল শাহর দানবীয় ইনিংস, মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাফ সেঞ্চুরি ও অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের মাঝারি ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৮৪ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে কুমিল্লা। জবাবে মোহাম্মদ মিথুনের পর অধিনায়ক নাসির হোসেনের দারুণ লড়াইও ঢাকাকে হার থেকে বাঁচাতে পারেনি। দলটির ইনিংস শেষ হয় ৪ উইকেটে ১৫১ রানে।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকা ১২ রানের মধ্যেই ২ উইকেট হারায়, ফিরে যান সৌম্য সরকার ও রবিন দাস। মিথুনের সঙ্গে ২২ রানের জুটি গড়ে এই চাপ কাটিয়ে তোলেন ১৭ বলে ১৯ রান করা পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ। এরপর মিথুনের সঙ্গে জুটি গড়ে তোলেন নাসির, এই জুটি থেকে আসে ৪৯ রান। তবে তারা প্রয়োজনীয় গতিতে রান তুলতে পারেননি।
৩৪ বলে ৩৬ রান করে মিথুন যখন আউট হন, ১৩.১ ওভারে ঢাকার সংগ্রহ তখন ৮৫ রান। জয়ের জন্য ৪১ বলে তখন ঢাকার দরকার ১০০ রান। এখান থেকে লড়াই শুরু করেন নাসির-আরিফুল, দারুণ লড়াইয়ে ৬৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন। কিন্তু জয়ের জন্য আরও পথ বাকি থেকে যায়। দারুণ ছন্দে থাকা নাসির অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ৪৫ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। আরিফুল ১৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৪ রানে অপরাজিত থাকেন। কুমিল্লার হাসান আলী, তানভীর ইসলাম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা কুমিল্লা কোনো রান করার আগেই ওপেনার লিটন কুমার দাসকে হারায়। শেষ তিনটি ম্যাচে তার ব্যাটেই ভালো শুরু পাওয়া কুমিল্লা এরপরও রিজওয়ান ও ইমরুলের ব্যাটে চাপ কাটিয়ে ওঠে। এই জুটি ৪৭ রান যোগ করে, তবে দ্রুততার সাথে ওঠেনি। ৭.২ ওভারে ৪৭ রান পায় কুমিল্লা। এ সময় ইমরুলের বিদায়ে ভাঙে জুটি, এর আগে ২৬ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৩ রান করেন কুমিল্লার অধিনায়ক।
এরপর জনসন চার্লসের সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়েন এক পাশ আগলে খেলতে থাকা রিজওয়ান। চার্লস ১৯ একটি ছক্কায় ২০ রান করে আউট হন। এরপর উইকেটে যান খুশদিল। শুরুতে ধীর মেজাজের মনে হলেও সপ্তম বল থেকে শুরু হয় তার ঝড়। ঢাকার আমির হামজার করা ১৬তম ওভারে টানা তিন ছক্কা ও একটি চার মারেন খুশদিল, এই ওভার থেকে আসে ২৯ রান। খুশদিলের তাণ্ডব চলে ১৯ ওভার পর্যন্ত। এর মধ্যে ১৮ বলে পূর্ণ করে ফেলেন হাফ সেঞ্চুরি, যা এবারের আসরের দ্রুততম।
তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ৫ ওভারে ৮৪ রান পায় কুমিল্লা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৬৬ রানের খুনে ইনিংস খেলেন পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার। রিজওয়ান ৪৭ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ঢাকার তাসকিন আহমেদ, নাসির হোসেন, মোহাম্মদ ইমরান ও সৌম্য সরকার একটি করে উইকেট নেন।