সমালোচনা ছাপিয়ে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ উপহার দিতে প্রস্তুত কাতার

ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার সুখবরটি এক যুগ আগে পেয়েছিল কাতার। ২০১০ সালে ফিফা ঘোষণা দেয়, ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। তৎকালীন ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটার কাতারের নাম ঘোষণার সময় জানান, প্রথম কোনো আরব দেশ হিসেবে কাতারের বিশ্বকাপ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
দূর্নীতির দায়ে পদ হারানোর পাশাপাশি ফুটবল থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হওয়া ব্লাটারই অবশ্য আবার ভিন্ন মত দিয়েছেন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে তার দাবি, ওই সময় আয়োজক হিসেবে কাতারকে বেছে নেয়া সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যেকোনো বড় আসরকে ঘিরেই বিতর্ক থাকে, সেটা কম অথবা বেশি। তবে আয়োজক কাতারকে নিয়ে সমালোচনা একটু বেশিই হচ্ছে। যদিও সব সমালোচনা ছাপিয়ে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ উপহার দিতে প্রস্তুত তারা। বিশ্বকাপ শুরুর আগেরদিন এক নজরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দেখে নেওয়া যাক।
আয়োজক কাতার:

এটা বিশ্বকাপের ২২তম আসর। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারে অনুষ্ঠিত হবে 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'। প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ ও এশিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়। এবারই শেষবারের মত ৩২টি দেশের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ৪৮টি দেশ অংশ নেবে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হতে আগ্রহীদের বিডিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৮ টুর্নামেন্ট আয়োজনের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর ২০২২ বিশ্বকাপের বিডিং থেকে ইউরোপের সব দেশ তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। শেষ পর্যন্ত ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য পাঁচটি বিড টিকে ছিল: অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ২২ সদস্যের ফিফা কার্যনির্বাহী কমিটি ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে দুই আসরের আয়োজক দেশ বেছে নেয়।
কাতারের প্রচন্ড গরমের কথা বিবেচনা করে প্রথমবারের মত জুন-জুলাই থেকে সরিয়ে টুর্নামেন্ট নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একইসাথে আসরটির ব্যাপ্তী কমিয়ে ২৯ দিন শেষ করা হচ্ছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর কাতারের জাতীয় দিবসে টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্বকাপের ভেন্যু:

বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ব পাওয়ার পর আটটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে কাতার। নির্মাণ করা স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম। দোহার ১৫ কিলোমিটার উত্তরে দুই লাখ জনসংখ্যার পরিকল্পিত একটি শহর লুসাইল। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটি। এই স্টেডিয়ামে আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। রোববার কাতার বনাম ইকুয়েডরের মধ্যকার উদ্বোধনী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে। এ ছাড়া অন্যান্য ভেন্যুগুলো হলো, এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম, খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল থুমামা স্টেডিয়াম, স্টেডিয়াম ৯৭৪ ও আল-জানুব স্টেডিয়াম।
অংশগ্রহণকারী দল:

কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩২টি দেশের মধ্যে ২৪টি দেশই চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেছে। আগের বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হওয়া নেদারল্যান্ডস, ইকুয়েডর, ঘানা ও ক্যামেরুন এবারের বিশ্বকাপে সুযোগ করে নিয়েছে। ১৯৮৬ সালে একমাত্র বিশ্বকাপ খেলা কানাডা ৩৬ বছর পর ফিরেছে আসরটিতে। ৬৪ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে ওয়েলস। ফিফা বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে একমাত্র বাদ পড়েছে ষষ্ঠ স্থানে থাকা ইতালি। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
রেফারি:

এবারের বিশ্বকাপ পরিচালনার জন্য ৩৬ জন রেফারি, ৬৯ জন সহকারী রেফারি ও ২৪ জন ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারির নাম ঘোষণা করেছে ফিফা। ৩৬ জন রেফারির মধ্যে প্রথমবারের মতো তিনজন নারী রেফারি ম্যাচ পরিচালনা করবেন। তারা হলেন ফ্রান্সের স্টিফেনি ফ্র্যাপার্ট, রুয়ান্ডার সালিম মুকানসানগা ও জাপানের ইউশিমি ইয়ামাশিতা। তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন আরও তিনজন সহকারী নারী রেফারি।
এ নিয়ে সর্বোচ্চ তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করতে যাচ্ছেন গাম্বিয়ান রেফারি বাকারি গাসামা ও আর্জেন্টিনার সহকারী রেফারি হুয়ান পাবলো বেলাত্তি। ২০১৮ সালের ফাইনালে বেলাত্তি সহকারী রেফারি ছিলেন।
সূচি:

৩২টি দেশ আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথম পর্বে লড়াই করবে। ২০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে গ্রুপ পর্বের খেলা। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি দল নক আউট পর্বে উঠবে। ৩-৬ ডিসেম্বর শেষ ১৬' এবং ৯-১০ ডিসেম্বর হবে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচগুলো। ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর হবে দুই সেমি-ফাইনাল। ১৭ ডিসেম্বর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ ও ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল।
বল:

প্রখ্যাত ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুদকরী প্রতিষ্ঠান এডিডাসের সঙ্গে ফিফার সম্পর্কটা বেশ পুরোনো। ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বকাপের জন্য বল প্রস্তুত করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। গত মার্চে কাতার বিশ্বকাপের বলটি উন্মোচন করে ফিফা। বলের নাম 'আল রিহলা'। আরবি ভাষায় শব্দটির অর্থ ভ্রমণ। কাতারের পতাকা, ঐতিহ্যবাহী নৌকা, স্থাপত্য ও সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হয়েছে বলটি।