Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
June 13, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, JUNE 13, 2025
ভারতে পর্তুগিজদের ইতিহাস নৃশংসতা আর রক্তে ভেজা

ইজেল

জান্নাতুল নাঈম পিয়াল
13 February, 2022, 03:40 pm
Last modified: 13 February, 2022, 03:37 pm

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

ভারতে পর্তুগিজদের ইতিহাস নৃশংসতা আর রক্তে ভেজা

এক শ বছর ধরে ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করে গেছে পর্তুগিজরা। এ সময়ের মধ্যে কেবল একবারই তারা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। এছাড়া বাদবাকি সময় বেশ আরামসে উপমহাদেশের লোকজনের ওপর খবরদারি করে গেছে তারা। এই এক শ বছরে তারা অসংখ্য ভারতীয়ের রক্তে হাত রাঙিয়েছে।
জান্নাতুল নাঈম পিয়াল
13 February, 2022, 03:40 pm
Last modified: 13 February, 2022, 03:37 pm

'আপনার অধীনে যত বেশি দুর্গ থাকবে, ততই দুর্বল হতে থাকবে আপনার শক্তি। তার চেয়ে বরং আপনার সব শক্তিকে সমুদ্রে পাঠিয়ে দিন। কেননা (ঈশ্বর না করুন) আমরা যদি সমুদ্রে শক্তিশালী হতে না পারি, সবকিছুই এক নিমিষে আমাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে।'

কথাগুলো ভারত মহাসাগরে পর্তুগালের প্রথম স্থায়ী কমান্ডার ডম ফ্রান্সিসকো দে আলমেইদার। ১৫০৮ সালে পর্তুগালের রাজার উদ্দেশে কথাগুলো বলেছিলেন তিনি। এবং ভারতে পর্তুগিজ উপনিবেশের ইতিহাস ঘাঁটলে এই কথারই সত্যতা মেলে। 

দুই.

১৫০২ সালে ভাস্কো দা গামা ভারত ছাড়ার পরপরই তার চাচা ভিনসেন্ত সোদরে জাহাজ ভাসান উত্তরে, ধনাঢ্য আরব জাহাজগুলোকে কবজা করার লক্ষ্যে। কিন্তু আরব সাগরে গিয়ে তার নৌবহর ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়। ডুবে যান তিনি। 

এই সুযোগের ফায়দা লুটতে চান কালিকটের জামোরিন (বংশগত রাজা)। কোচিনের রাজাকে হুমুক দেন যে তিনি যেন কোচিনে ভাস্কো দা গামার ফেলে যাওয়া সৈন্যদের তার হাতে তুলে দেন। কিন্তু কোচিনের রাজা সেই হুকুম না মানলে বেধে যায় যুদ্ধ। জামোরিনের সৈন্যরা কোচিন আক্রমণ করে, পুড়িয়ে দেয় সারা শহর। পর্তুগিজরা এবং রাজার সেনাবাহিনীর যারা প্রাণে বেঁচেছিল, তারা সবাই পালিয়ে যায় নিকটবর্তী দ্বীপ ভাইপিনে। কিন্তু তাদের সৌভাগ্য, আফনসো দে বুকার্কের অধীনে একটি নৌবহর এসে উদ্ধার করে তাদের। কৃতজ্ঞ রাজা তখন পর্তুগিজদের অনুমতি দেন কোচিনে একটি দুর্গ গড়ে তোলার। পামগাছের গুঁড়ি দিয়ে চতুর্ভুজ আকৃতির দুর্গটি গড়ে তোলা হয়। দুর্গের প্রতি কোণে থাকে একটি করে কামানভর্তি কেল্লা। আর গোটা দুর্গটি বেষ্টিত থাকে একটি পরিখা দিয়ে। ১৫০৩ সালের ১ অক্টোবর একজন ফ্রান্সিসকান ভিক্ষু ভারতের প্রথম ইউরোপিয়ান দুর্গটির খ্রিষ্টান নামকরণ করেন। পর্তুগালের রাজার সম্মানে দুর্গটির নাম দেওয়া হয় ফোর্ট ম্যানুয়েল। এরপর ভারতজুড়ে বহু দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছে বটে, কিন্তু তার আগে পর্তুগিজদের নিশ্চিত করতে হয়েছে আরব সাগরের দখলদারিত্ব।

প্রথম যখন পর্তুগিজরা মালাবারে এসে পৌঁছায়, তখন ভারত মহাসাগরে আরব বা ভারতীয় কারোই খুব শক্তিশালী নৌবাহিনী ছিল না। আরবরা এ অঞ্চলে এসেছিল শুধুই বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। সাম্রাজ্য বিস্তারের অভিসন্ধি তাদের ছিল না। ভারতীয় শাসকদের ছোট ছোট জাহাজের বিশালাকার নৌবহর ছিল। কিন্তু সেগুলোর কাজ ছিল কেবলই দস্যুদমন করা, উপকূল পাহারা দেওয়া এবং সৈন্যদের পরিবহণ করা। 

কিন্তু পর্তুগিজ যুদ্ধ জাহাজদের আগমন উসকে দেয় আরবদের। লোহিত সাগরে একটি নৌবহর ছিল মিসরীয়দের। ১৫০৭ সালে তারা আরব সাগরে চলে আসে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। এরপর তারা গুজরাটের অদূরে দিউ দ্বীপের দিকে ধাবিত হয়। দিউ দ্বীপের গভর্নর ছিলেন মালিক আয়াজ নামের এক রুশ মুসলিম। সেখানে গিয়ে নৌবহরটি জোট বাঁধে কালিকটের জামোরিনের সঙ্গে। এই মিলিত শক্তি তখন দক্ষিণ অভিমুখে যাত্রা করে পর্তুগিজদের মুখোমুখি হতে। ভাইসরয়ের পুত্র লরেন্সো দে আলমেইদার নেতৃত্বে পর্তুগিজরাও উত্তর দিকে আসতে থাকে। দুই দলের দেখা হয় চাউলে। যুদ্ধে ভরাডুবি হয় পর্তুগিজদের। তারা পালিয়ে যায়। তবে মারা পড়েন ভাইসরয়ের ছেলে। 

ওদিকে ভাইসরয় ফ্রান্সিসকো দে আলমেইদা নিজে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন বছর দুয়েক আগে। তিনিই প্রথম পর্তুগিজ যিনি সম্মানসূচক 'ভাইসরয় অব ইন্ডিয়া' খেতাবটি পেয়েছিলেন। তাকে দেওয়া হয়েছিল আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে পর্তুগিজদের যাবতীয় কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ। যুদ্ধ কিংবা শান্তিচুক্তি, সবই করার ক্ষমতা ছিল তার হাতে। ছেলের মৃত্যুর খবর কানে যেতে ক্রোধে ফেটে পড়েন তিনি। বলেন, 'যারা মুরগির বাচ্চা খেয়েছে, তাদের আসল মোরগের সামনেও এসে দাঁড়াতে হবে, নয়তো কৃতকর্মের মূল্য চোকাতে হবে।' নিজের সব জাহাজ একাট্টা করে তিনি উত্তর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। ১৫০৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তার নৌবহর মিশরীয় নৌবহরের মুখোমুখি হয় দিউয়ে। দিউয়ের গভর্নর তার অধীন অন্য মুসলিমদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে গোপনে পর্তুগিজদের সঙ্গে হাত মেলান। মিসরীয় নৌবহরকে তাদের প্রয়োজনীয় মালসামান না দিয়ে বিপদে ফেলে দেন। যুদ্ধ শুরু হলে পর্তুগিজরা তাদের কামানের গোলা দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় জামোরিনের জাহাজগুলোকে। মিসরীয়রা অচিরেই বুঝে যায়, এ যুদ্ধে তাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। তাই তারা লেজ গুটিয়ে পালায়। পরে কখনোই আর ফিরে আসেনি। এরপর থেকে যদিও তারা ভারত মহাসাগরের উপকূলগুলোতে টুকটাক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, কিন্তু মাঝসমুদ্রে রাজত্ব চালিয়ে গেছে পর্তুগিজরাই। 

আলমেইদা এরপর ফিরে আসেন কোচিনে তার ঘাঁটিতে। বন্দী হিসেবে তিনি সঙ্গী করে নিয়ে এসেছিলেন অনেককেই। দক্ষিণে যাওয়ার সময় ধাপে ধাপে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা হয় এদের কাউকে কাউকে, বাকিদের শরীর কেটে টুকরো টুকরো করা হয় এবং কামান দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন মুসলিম শহরে।

তিন.

তবে আলমেইদা খুব বেশিদিন তার এই বিজয় উদ্যাপন করতে পারেননি। আফনসো দে আলবুকার্কের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দ্বন্দ্বের কারণ ছিল ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি। এরপর ১৫০৯ সালেই আলবুকার্ক জাঁকালো 'গভর্নর অব ইন্ডিয়া' খেতাব গ্রহণ করেন। শুনে যতই অবাক লাগুক, আসলে ভাস্কো দা গামা নন, আলবুকার্কই ছিলেন পর্তুগিজ ভারতের মূল স্থপতি। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি শুরু করেন গোয়া জয়ের পরিকল্পনা।

চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে বেশ কয়েকবারই এ দ্বীপে প্রতিদ্বন্দ্বী হিন্দু ও মুসলিম সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে। ১৪৭০ সালের পর এটি চলে আসে মুসলিম নিয়ন্ত্রণের অধীনে। আর ১৫১০ সালে গোয়া শাসন করছিলেন বিজাপুরের সুলতান ইউসুফ আদিল শাহ।

১৫১০ সালের শুরুর দিকে আলবুকার্ক বিশটি জাহাজের এক নৌবহর নিয়ে কোচিন থেকে গোয়ায় পাড়ি দেন। হোনাভারে গিয়ে তিনি মিলিত হন টিমোজার সঙ্গে, যার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি পালতোলা জাহাজ ছিল। টিমোজা আরও খবর নিয়ে এসেছিলেন যে গোয়া প্রতিরক্ষার জন্য নাকি মাত্র ২০০ জন তুর্কি সৈন্য রয়েছে।

মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে মান্দবী নদীর মুখে পৌঁছায় সম্মিলিত নৌবহরটি। তারা আক্রমণ চালায় পানজিমের দুর্গে। খুব একটা প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি তাদের। সৈন্যরা সবাই পুরোনো গোয়ায় পালিয়ে যায়। সেখানকার অধিবাসীরা সিদ্ধান্ত নেয় আত্মসমর্পণের। আলবুকার্ক ঘোড়ায় চেপে আসার পর তাকে ফুলেল অভ্যর্থনা জানানো হয়। শহরের আটজন বিশিষ্ট নাগরিক তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেন। শহরের চাবি তুলে দেন তার হাতে। অবশিষ্ট তুর্কিরা পালিয়ে যায়, আর গোয়ার শাসক বনে যান আলবুকার্ক। 

দুই মাস পর অবশ্য আরেক যুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে। ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে গোয়া পুনর্দখলে আসেন ইউসুফ আদিল শাহ। সাধারণত মধ্য-জুনে বর্ষার শুরু হলেও সেবার বর্ষা এসেছিল আগাম। অসময়ের বৃষ্টিতে বেকায়দায় পড়ে যায় পর্তুগিজরা। অল্প সময়ের মধ্যেই আদিল শাহের সৈন্যরা শহর দখল করে নেয়। পর্তুগিজরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পুরোনো গোয়ার দুর্গগুলোতে। কিন্তু সেই দুর্গগুলোতেও আদিল শাহের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু মুসলিম পর্তুগিজদের হয়রানি করতে থাকে। এক সপ্তাহ যুদ্ধের পর আলবুকার্ক উপলব্ধি করেন, তার পক্ষে আর টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিনি পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার আগে হত্যাযজ্ঞ চালান পুরোনো গোয়ার মুসলিমদের ওপর। অল্প কিছু শিশুকে রেখে দেওয়া হয় ধর্মান্তরের জন্য। এছাড়াও কিছু ধনী পুরুষকে জিম্মি হিসেবে এবং কিছু নারীকে তাদের স্ত্রী বানানোর জন্য রাখা হয়। বাদবাকি সব নারী, পুরুষ ও শিশুদেরই মেরে ফেলা হয়।

পর্তুগিজরা তাদের বন্দীদের সঙ্গে করে জাহাজে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় ঠিকই, কিন্তু বর্ষার ভীষণ তোড়ে মান্দবী নদী পার হওয়া অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তারা পানজিমে অবস্থান করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সঙ্গে থাকা খাবারদাবার ফুরিয়ে আসে। কথিত আছে, আদিল শাহ নাকি যুদ্ধবিরতির নিশানাসমেত একটি খাবারভর্তি নৌকা পাঠান পর্তুগিজদের কাছে। কিন্তু পর্তুগিজরা সেই শান্তির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। এর বদলে তারা কয়েকজন বন্দীর বিনিময়ে খাবার কিনে খেতে থাকে। কিন্তু সেই উপায়ও একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেলে তাদেরকেবল ইঁদুর খেয়েই দিন কাটাতে হয়। আগস্ট মাস নাগাদ বৃষ্টি কমে। পর্তুগিজরা তাদের নৌবহর নিয়ে ফিরে যায়। কিন্তু আলবুকার্ক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, শিগগিরই আবার ফিরে আসবেন তিনি।

এদিকে ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন ইউসুফ আদিল শাহ। তার জায়গায় সিংহাসনে আরোহণ করেন পুত্র, শিশু রাজা ইসমাইল আদিল শাহ। তার বিশাল সৈন্যবাহিনী সরিয়ে নেওয়া হয় গোয়া থেকে। রয়ে যায় শুধু পারসি ও তুর্কি ৮ হাজার সৈন্য। 

১৫১০ সালের ২৫ নভেম্বর পর্তুগিজরা আক্রমণ করে। প্রথম দফায় মান্দবী নদী ও পুরোনো গোয়ায় বিপুলসংখ্যক প্রতিরক্ষা বাগিনীর সৈন্য আটকা পড়ে ও মারা যায়। এরপর তারা আক্রমণ করে মূল শহরের দুর্গগুলোতেও। মেরে ফেলা হয় হাজার হাজার বিরোধীদলীয় সৈন্য। পর্তুগিজরা তখন ক্যাথলিক রীতিতে থ্যাংকসগিভিংয়ের মাধ্যমে বিজয় উদ্যাপন করে। উদ্যাপন শেষ করে আলবুকার্ক নির্দেশ দেন অবশিষ্ট মুসলিমদেরও সমূলে নিধন করার। তিনদিন লাগে একে একে সব মুসলিমকে খুঁজে বের করে হত্যা করতে। রেহাই পায় না কেউই। মসজিদে নামাজরত অবস্থায়ও জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় অনেক মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে। শেষমেশ যুদ্ধে নিহতের পরিসংখ্যান দাঁড়ায় এমন: ৪০ জন পর্তুগিজ ও ৬ হাজার মুসলিম।

পরের কয়েক মাস ধরে আলবুকার্ক নগরীর দেয়ালগুলো পুনর্নির্মাণ করেন, ভেতরে একটি দুর্গ নতুন করে বানানোর কাজেও হাত দেন। এছাড়াও চলতে থাকে অসংখ্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। অনেক দালানকোঠা ও ভবন তৈরির কাজেই ব্যবহার করা হয় মুসলিম গোরস্থান থেকে নিয়ে আসা পাথর।

চার.

আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের অভিযানের পর পর্তুগিজদের গোয়া বিজয়ই ভারতীয় উপমহাদেশে ইউরোপিয়ানদের প্রথম দখল। আর এর মাধ্যমে প্রাচ্যের ওপর পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণের পথও সুগম হয়।

তবে পর্তুগিজদের জয়রথে ক্যাথলিক চার্চের ভূমিকার কথা ভুললে চলবে না। যেকোনো যুদ্ধ শুরুর আগেই সব পর্তুগিজ সৈন্যকে একসঙ্গে কম্যুনিওন দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। চার্চের তরফ থেকে তাদেরকে আশীর্বাদও করা হতো যে কেউ যদি যুদ্ধরত অবস্থায় মারা যায়, তাহলে তাদের স্বর্গে যাওয়ার রাস্তা মসৃণ হবে। 

খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার ভারতশাসনে পর্তুগিজদের প্রধান নীতিগুলোর একটি হলেও ব্যাপারটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্য দেওয়ার শুরু হয় আরও খানিকটা পরে। 

১৫৩৮ সালে গোয়ায় প্রথম বিশপ আসেন। আর আসার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ইঙ্গিত দিয়ে দেন, এখন থেকে পর্তুগিজ খ্রিষ্টান ও ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা সহজ হবে না। ১৫৪০ সালে সব হিন্দু মন্দির ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে ধর্মান্তরকরণের সূচনা হয়। পরের বছর চার্চ দখল করে নেয় মন্দিরের সব জমি। 

এক শ বছর ধরে ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করে গেছে পর্তুগিজরা। এ সময়ের মধ্যে কেবল একবারই তারা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে।

গোয়ায় প্রথম জেসুইট আসেন ১৫৪২ সালে। ফ্রান্সিস জেভিয়ার নামের সেই মানুষটির ছিল অসাধারণ ক্ষমতা। ১০ বছর ভারত ও দূরপ্রাচ্যে থাকাকালীন তিনি বহু মানুষকে খ্রিষ্টান ধর্মে রূপান্তর করেন। বলা হয়, দক্ষিণ মালাবারের এক গ্রামে তিনি এক মাসেই ১০,০০০-এর বেশি মানুষকে ধর্মান্তরিত করেন। গোয়ায় তিনি প্রতিদিনই শত শত গণধর্মান্তরের তত্ত্বাবধায়ন করতেন। ধর্মীয় প্রশাসন ও শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনি ঢেলে সাজান। পর্তুগিজ সরকারি কর্মকর্তাদের ভারতীয় হিন্দুদের ওপর বৈষম্যও তারা ধর্মান্তরের কাজকে আরও সহজ করে দেয়। 

১৫৫২ সালে চীনের উপকূলে মৃত্যু হয় ফ্রান্সিস জেভিয়ারের। তাকে প্রথমে দাফন করা হয় মালাক্কায়। কিন্তু এরপর গুজব ওঠে, তার মরদেহটি নাকি অলৌকিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে। তাই ১৫৫৪ সালে সেটিকে গোয়ায় নিয়ে আসা হয়। শেষ পর্যন্ত বাসিলিকা অব বোম জেসাসে তার মরদেহটি সংরক্ষণ করা হয়। 

মৃত্যুর আগে ফ্রান্সিস জেভিয়ার পোপকে বলে গিয়েছিলেন গোয়ায় ইনকুইজিশন প্রতিষ্ঠা করার জন্য।১৫৬০ সালে শুরু হয় ইনকুইজিশন কার্যক্রম। প্রাথমিকভাবে ইনকুইজিশনের লক্ষ্য ছিল কেবল নব্য খ্রিষ্টানদের শাস্তি দিয়ে ও ভয় দেখিয়ে প্রকৃত খ্রিষ্টান হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু ক্রমেই এর শিকারে পরিণত হয় স্থানীয় হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি সকলেই। এমনকি অনেক ইউরোপিয়ানকেও ইনকুইজিশনের নামে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।

ইনকুইজিশনের অংশ হিসেবে খ্রিষ্টান যাজকেরা প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় নজরদারি করে বেড়াতেন এবং যদি তাদের মনে কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রতি ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ জন্মাত যে ওই ব্যক্তি সঠিকভাবে খ্রিষ্টধর্ম পালন করছে না, সাথে সাথে তাকে ধরে নিয়ে এসে অকথ্য নির্যাতন চালাতেন তারা। ১৮১২ সাল পর্যন্ত গোয়ায় ইনকুইজিশন চলে এবং এই সময়কালের মধ্যে অগণিত মানুষকে শাস্তির নামে বন্দিশালায় বন্দি রাখা হয়, এমনকি জীবন্ত পুড়িয়েও মারা হয়। এসবের পাশাপাশি ইনকুইজিশন চলাকালীন প্রচুর মন্দির ও দেবতার মূর্তিও ধ্বংস করা হয়।

পাঁচ.

ভারতীয়দের ওপর এ ধরনের অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়নের পরও গোয়া সবসময়ই ভরে ছিল ভারতীয় জনগোষ্ঠীতে। প্রতিবছর হাজার দুয়েক পর্তুগিজ আসত ভারতে। এরকম একটা প্রবাদও ছিল: 'ভারতে আসা প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ফিরে না একজনও।'

অনেকে এমনকি পুরো যাত্রাটুকুও টিকে থাকতে পারত না। এমনিতে ভারতে মৃত্যুর হারও ছিল আকাশচুম্বী। ষোড়শ শতকের শেষদিকে পুরোনো গোয়ার জনসংখ্যা ছিল ৭৫,০০০। তাদের মধ্যে পর্তুগিজ, ইউরোপিয়ান বা মিশ্র রক্তের মানুষ ছিল দুই হাজারেরও কম। তবে হ্যাঁ, এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর হাতেই কুক্ষিগত ছিল সব ক্ষমতা ও সম্পদ। বলা হয়ে থাকে, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ ছিল। একই কথা পর্তুগিজদের বেলায়ও প্রযোজ্য। পর্তুগাল থেকে প্রশাসনিক বা ধর্মীয় দায়িত্ব নিয়ে যারা ভারতে পাড়ি জমাত, তাদের লেজুড় হিসেবে কিছু গরিব আত্মীয় বা অনুসারীও আসত ভারতে এসে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার লোভে। অভিজাত সম্প্রদায়ের অবৈধ সন্তানদের কাছেও একটি প্রিয় গন্তব্য ছিল ভারত। যেসব পর্তুগিজ ভারতে টিকে থাকতে পারত, সত্যি সত্যিই কপাল খুলে যেত তাদের।

তবে ভারতে পা রাখা অধিকাংশ পর্তুগিজের জীবনই খুব একটা সহজ ছিল না। জাহাজের ক্রু হিসেবে, কিংবা সেনাবাহিনীর সৈন্য হিসেবে দক্ষ লোক খুঁজে বের করতে গিয়ে গলদঘর্ম দশা হতো তাদের। তাই এমন অনেক দৃষ্টান্তও ছিল যে নিজ দেশে খুন করে যাবজ্জীবন পাওয়া অনেক পর্তুগিজকে কাজের জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে ভারতে। এ ধরনের মানুষও যে ভারতে এসে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করত, তা নয়। ১৫৩৯ সালে ভাইসরয় রাজার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, বেতনভুক্ত ১৬,০০০ কর্মীর মধ্যে কেবল ২,০০০ জনকেই তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

গোয়ায় পর্তুগিজ নারীদের আগমন ঘটত খুবই কম। যারা আসত, তাদের মধ্যেও সম্মানিত নারীর সংখ্যা ছিল মুষ্টিমেয়। পুরুষেরা রক্ষিতা রাখত। তাদের মধ্যে কাউকে বেশি ভালো লাগলে বিয়ে করে ফেলত, অন্যরা দাসী হয়েই থাকত। আসলে গোয়ার মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশই ছিল দাস-দাসী। একজন নিম্নসারির পর্তুগিজের দাসের সংখ্যা হয়তো ছিল বিশ, যেখানে একজন উঁচুসারির পর্তুগিজের দাসের সংখ্যা এক শ ছাড়িয়ে যেত। দাসীদের অর্ধনগ্ন করে নিলামে বিক্রি করা হতো। কোনো দাসী কুমারী হলে তার দাম উঠত বেশি।

এক শ বছর ধরে ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তার করে গেছে পর্তুগিজরা। এ সময়ের মধ্যে কেবল একবারই তারা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে। ১৫৩৮ সালে একটি তুর্কি নৌবহরের পাল্লায় পড়ে তারা। অবশ্য শেষ হাসি হাসে পর্তুগিজরাই।

১৫৬৫ সালে মুসলিমরা বিজয়নগর সাম্রাজ্য দখল করে নেওয়ার পর সব মুসলিম শাসকেরা একত্র হয়ে পর্তুগিজ দুর্গগুলোতেও হামলা চালায়। এর ফলে ১৫৭০ সালে ১০ মাসের মতো অবরুদ্ধ ছিল গোয়া। কিন্তু সে যাত্রায়ও শেষ অবধি বেঁচে যায় পর্তুগিজরা এবং ভারত সাগরের আধিপত্যসহ মসলা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ থাকে তাদের হাতেই।

পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধটি এসেছিল কালিকট থেকে।

সাগরে পর্তুগিজদের এই আধিপত্য ও নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা বজায় ছিল কার্তাজ পদ্ধতির কল্যাণে। পর্তুগিজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত মহাসাগর অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য এ ধরনের অনুমতিপত্রের প্রচলন করে। কার্তাজে নির্দিষ্ট করে বলা থাকত যে একটি জাহাজ কোন রুট ধরে চলবে এবং কোন কোন মালামাল বহন করতে পারবে। কিছু মালামালের ওপর পর্তুগিজদের মনোপলি ছিল। যেমন মসলা পরিবহনের সুযোগ কেবল তারাই নিত। তাছাড়া কিছু কিছু মালালাল নির্দিষ্ট বন্দরে নামানোর বাধ্যবাধকতাও ছিল। যেমন ঘোড়া নিয়ে যাওয়া হতো গোয়া বন্দরে। কোনো জাহাজের কাছে যদি কার্তাজ না থাকত, কিংবা সেটি কার্তাজের শর্ত ভঙ্গ করত, তাহলে সেই জাহাজের সব মালামাল জব্দ করা হতো। এই কার্তাজ পদ্ধতি বাস্তবায়নে সবাইকে বাধ্য করার জন্য পর্তুগিজরা কয়েকটি অস্ত্রসজ্জিত নৌবহরের ব্যবস্থাও করেছিল।

ছয়.

পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধটি এসেছিল কালিকট থেকে। শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের চেষ্টা চালালেও একপর্যায়ে জামোরিনরা হয়ে ওঠে পর্তুগিজদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। এ ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করে দক্ষ নৌ কমান্ডারদের বংশ, কুঞ্জালি মারাক্কাররা।

জামোরিনরা অবশ্য শুরুর দিকে সাহায্য আশা করেছিল আরবদের কারও কাছ থেকে, যারা কালিকটে বাণিজ্য করতে আসত। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। ১৫০৬ সালে অনেক আরব বণিকই পর্তুগিজদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জামোরিনের অধীনে তাদের দীর্ঘদিনের ব্যবসাগুলো বিক্রি করে দিয়ে পাততাড়ি গোটায়। আরবের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে যখন তারা পান্টালায়িনি কোল্লাম পর্যন্ত পৌঁছায়, একটি পর্তুগিজ জাহাজ আক্রমণ চালিয়ে বসে তাদের ওপর। প্রচুর পরিমাণ সোনাদানা লুট করে পর্তুগিজরা। আর আরবরা মারা যায় দুই হাজারের মতো। 

তবে কুঞ্জালি মারাক্কাররা এমন ছিল না। তারা ছিল স্থানীয় মুসলিম, যারা ব্যবসা করে প্রচুর ধনসম্পদ কামিয়েছিল। বিদেশি মুসলিমদের মতো ভয় না পেয়ে, তারা চেয়েছিল পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। তাই তারা হিন্দু জামোরিনকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়ে তার নৌবহরের অ্যাডমিরাল বনে যায় এবং নিয়মিত পর্তুগিজ জাহাজদের হেনস্তা করতে থাকে।

একপর্যায়ে পুরোনো জামোরিন মারা যান। নতুন জামোরিন পর্তুগিজদের প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই তিনি ভেবেছিলেন, পর্তুগিজদের সঙ্গে বুঝি একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবেন। তাই তিনি আলবুকার্কের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেন এবং কালিকটে পর্তুগিজদের দুর্গ নির্মাণের অনুমতি দেন।

আলবুকার্কের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সবকিছু ভালোয় ভালোয়ই চলছিল। কিন্তু এরপর পর্তুগিজরা চুক্তির শর্ত ভাঙতে আরম্ভ করে। জোর খাটিয়ে নিজেদের পছন্দমাফিক মসলা নিতে থাকে তারা এবং ভারতীয় জাহাজে লুটতরাজ চালায়। ১৫২২ সালে পর্তুগিজদের প্রতি বন্ধুবৎসল জামোরিনও পরলোকগমন করেন। তারপর নতুন রাজা এসে তার নৌবাহিনীর ওপর নির্দেশ দেয় পর্তুগিজদের ওপর আক্রমণ চালানোর। কুঞ্জালি মারাক্কাররা, বিশেষত কুট্টি আলী নামের একজন নাবিক, সে নির্দেশ মানতে থাকে অক্ষরে অক্ষরে।

জামোরিন কমান্ডাররা অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝে যান যে তাদের পক্ষে শক্তিমত্তায় পর্তুগিজ যুদ্ধজাহাজগুলোর সঙ্গে সমানে সমানে টেক্কা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা ছোট ছোট নৌকা তৈরি করতে থাকেন, যেগুলো ৩০-৪০ জন মিলে বাওয়া সম্ভব। এসব নৌকা দিয়ে তারা গেরিলা আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করেন। 

ভারতীয়রা এমন শত শত নৌকা লুকিয়ে রাখে মালাবাল উপকূলে। পর্তুগিজ জাহাজ সামনে এলেই হামলে পড়ত তারা। বিশেষ করে যখন হাওয়ার বেগ কম থাকত, পর্তুগিজদের পালানোর উপায় থাকত না। সংখ্যায় ভারতীয়রা অনেক বেশি হওয়ায়, তাদের হাতে কচুকাটা হতো পর্তুগিজরা। এভাবে হাতে তলোয়ার নিয়ে ত্রাস ছড়াতে থাকে ভারতীয় যোদ্ধারা। 

কিছু যুদ্ধে ভারতীয়রা জিতত, আবার কিছু যুদ্ধে পর্তুগিজরা। তবে একটা ভারসাম্য বজায় ছিল। লম্বা সময় ধরে কোনো পক্ষই যুদ্ধে এগিয়ে যেতে পারছিল না। এভাবে ষোড়শ শতকের শেষ পর্যন্ত পর্তুগিজদের সঙ্গে মারাক্কারদের লড়াই অব্যাহত থাকে। এরপর অবনতি ঘটে জামোরিনদের সঙ্গে মারাক্কারদের সম্পর্কে। 

এক দুর্বল জামোরিন পর্তুগিজদের সঙ্গে সন্ধি করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি মারাক্কারদের অঞ্চল পোন্নানিতে পর্তুগিজদের দুর্গ নির্মাণ করতে দেন। তখন মারাক্কাররা সেখান থেকে সরে কালিকটের উত্তরে ঘাঁটি গাড়ে। কোট্টা নদীর ঠিক মুখে একটি উপদ্বীপ তারা একটি কেল্লা গড়ে তুলে, সেখান থেকে ভারতের পশ্চিম উপকূল ও পূর্ব উপকূল—দুই দিকেই পর্তুগিজ জাহাজে হামলা করতে থাকে। তবে একপর্যায়ে মোহাম্মদ কুঞ্জালি মারাক্কার বিদ্রোহ করে বসেন। তিনি জামোরিনদের থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন এবং নিজেকে কোট্টার রাজা বলে ঘোষণা দেন।

পর্তুগিজরা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। তারা জামোরিনের সঙ্গে রফা করে কোট্টায় যৌথভাবে আক্রমণ চালায়। ধারণা করা যায়, জামোরিনের এই রফার কারণ ছিল কেবলই ভয় দেখিয়ে মারাক্কারকে নিজের দলে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু মারাক্কার সিদ্ধান্ত নেন জামোরিনকে অপদস্থ করার। তাই তিনি রাজ আস্তাবল থেকে একটি হাতি নিয়ে সেটির লেজ কেটে দেন। রেগে গিয়ে জামোরিন তখন সেনাবাহিনী পাঠান মূলভূমি থেকে কোট্টায় আক্রমণ চালানোর। ওদিকে পর্তুগিজরাও প্রস্তুতি নেয় সাগর থেকে জলপথে হামলার।

সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, ১৫৯৯ সালের ৪ মার্চ ঠিক ভোরের আগে যৌথআক্রমণ চালানো হবে। কথা ছিল, খুব উঁচু কোনো জায়গা থেকে যুদ্ধ শুরুর সংকেত দেওয়া হবে। কিন্তু রহস্যজনকভাবেএ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যে লোককে, সে নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ঘণ্টা আগেই সংকেত দিয়ে বসে। ফলে অপ্রস্তুত অবস্থায় যুদ্ধ শুরু করবে কি করবে না, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় জামোরিনের সেনাবাহিনী ও পর্তুগিজরা। শেষমেশ ওই যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় হয় তাদের। 

১৫৯৯ সালের শেষদিকে জামোরিন ও পর্তুগিজরা মিলে একটি নতুন আক্রমণের পরিকল্পনা আঁটে। পর্তুগিজরা লিসবন থেকে নতুন অনেক সৈন্য নিয়ে আসে। এদিকে জামোরিনও জড়ো করেন ৫,০০০ সৈন্য, ১,০০০ কর্মী, কাঠ ও ১৫টি হাতি। এছাড়া নদী পাহারার জন্য ছিল কিছু জাহাজ। পর্তুগিজরা কোট্টা থেকে সমুদ্র অবরুদ্ধ করে দেওয়ায় ফলে মারাক্কারা আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

যুদ্ধ শুরু হলে অল্প সময়ের মধ্যেই মাত্র কয়েক শ সৈন্যে পরিণত হয় মারাক্কাররা। তারা শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দেয়। জামোরিন এতে রাজি ছিলেন। তিনি কেবল মারাক্কারদের আত্মসমর্পণই চাইছিলেন। কিন্তু পর্তুগিজরা মোহাম্মদ কুঞ্জালি মারাক্কারকে প্রাণে মারতে চায়। তাই মারাক্কার সিদ্ধান্ত নেন নিজেকে সঁপে দেবেন জামোরিনের কাছে। তাহলে তার ও তার অধীনদের প্রাণ বেঁচে যাবে।

কিন্তু ততক্ষণে তলে তলে জামোরিন আরেক ষড়যন্ত্রও করে ফেলেছেন। পর্তুগিজদের কথা দিয়েছেন, তারা মারাক্কারকে মারতে চাইলে তিনি বাধা দেবেন না।

১৬০০ সালের ১৬ মার্চ মারাক্কার আত্মসমর্পণ করেন। প্রথমে তার অধীনস্থ চার শ সৈন্য এসে জামোরিনের সামনে এসে দাঁড়ালে জামোরিন তাদের মুক্ত করে দেন। চারদিকে যখন লোকে লোকারণ্য অবস্থা, তার ভেতর মাথায় একটি কালো কাপড় পরে এবং হাতে তলোয়ার নিচু করে জামোরিনের সামনে দাঁড়ান মারাক্কারও। হাতে তলোয়ারটি তুলে দিয়ে তিনি পায়ে পড়েন জামোরিনের। ঠিক তখনই পর্তুগিজরা মারাক্কারকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে।

এমন বিশ্বাসঘাতকতার জন্য প্রস্তুত ছিল না জামোরিনের সৈন্যরা। তারা মারাক্কারকে ছাড়ানোর জন্য হই-হট্টগোল শুরু করে দেয়। তুমুল বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এসবের পরও পর্তুগিজরা ঠিকই তাদের কাক্সিক্ষত ব্যক্তি মারাক্কার এবং তার ৪০ জন অনুসারীকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সমর্থ হয়। কোট্টা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়। এর এক সপ্তাহ পর পর্তুগিজরা জাহাজ ভেড়ায় গোয়ায়। মারাক্কার ও তার সৈন্যরা তখন শেকলবন্দী অবস্থায়।

গোয়ায় তখন প্রচণ্ড উৎসব-আয়োজন চলছে। বিজয়ী পর্তুগিজদের সাড়ম্বরে বরণ করে নেওয়া হয় গান স্যালুট দিয়ে। বন্দীদের মধ্যে প্রথম কয়েকজনকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। মারাক্কারকে অবশ্য ইনকুইজিশনের জন্য ব্যবহৃত কারাগার ট্রনকোয় নিয়ে যাওয়া হয়।

এক শ ট্রায়ালে মারাক্কারকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। প্রচুর মানুষের সামনে ভাইসরয় ও আর্চবিশপের তত্ত্বাবধানে, গলায় একটি কুঠার চালিয়ে হত্যা করা হয় মারাক্কারকে। কুটি কুটি করে কাটা হয় তার শরীরকে। এরপর প্রদর্শনের জন্য রেখে দেওয়া হয় সমুদ্রসৈকতে। এরপর একে একে তার বাদবাকি সব সহচরকেও মেরে ফেলা হয়।

মারাক্কারের মৃত্যুর পর জামোরিনকে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করার মতো আর কেউ ছিল না। এভাবে পর্তুগিজদের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়ার মতো জামোরিনদেরও শেষের শুরু হয়। আর কখনোই তারা পর্তুগিজদের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
 

Related Topics

টপ নিউজ

পর্তুগিজদের অত্যাচার / ইজেল / ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ / উপনিবেশ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • আহমেদাবাদে মেডিক্যাল হোস্টেলের ওপর বিমান বিধ্বস্ত: নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক, ১ জনকে জীবিত উদ্ধার
  • দেশেই কোচ অ্যাসেম্বল করতে তিন কারখানার আধুনিকায়নে ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প রেলের
  • চুক্তি 'হয়ে গেছে', চীন দেবে বিরল খনিজ, যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে পারবেন চীনা শিক্ষার্থীরা: ট্রাম্প
  • এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট দুর্ঘটনা: ফের আলোচনায় মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং
  • এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের শেয়ারদরে ৮ শতাংশ পতন
  • আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত; দেখুন ভিডিও

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

আহমেদাবাদে মেডিক্যাল হোস্টেলের ওপর বিমান বিধ্বস্ত: নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক, ১ জনকে জীবিত উদ্ধার

2
বাংলাদেশ

দেশেই কোচ অ্যাসেম্বল করতে তিন কারখানার আধুনিকায়নে ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প রেলের

3
আন্তর্জাতিক

চুক্তি 'হয়ে গেছে', চীন দেবে বিরল খনিজ, যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে পারবেন চীনা শিক্ষার্থীরা: ট্রাম্প

4
আন্তর্জাতিক

এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট দুর্ঘটনা: ফের আলোচনায় মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং

5
আন্তর্জাতিক

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের শেয়ারদরে ৮ শতাংশ পতন

6
আন্তর্জাতিক

আহমেদাবাদে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত; দেখুন ভিডিও

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net