Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
June 15, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JUNE 15, 2025
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখনীতে ফুটবল-বন্দনা

ইজেল

ফারাহ জাহান শুচি
11 December, 2022, 05:50 pm
Last modified: 11 December, 2022, 05:51 pm

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ: স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের দীর্ঘ সারি
  • ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে
  • ম্যারাডোনার মৃত্যু মামলার বিচারপ্রক্রিয়া 'বাতিল'
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখনীতে ফুটবল-বন্দনা

মার্কেজ তার ১৯৮৫ এর রোমান্টিক উপন্যাস 'লাভ ইন দ্য টাইম অভ কলেরা'-তে ভালোবাসাকে দেখিয়েছিলেন একটি ছোঁয়াচে রোগ হিসেবে। 'দ্য ওথ' গল্পেও তিনি ফুটবলকে ছোঁয়াচে হিসেবেই দেখিয়েছেন যেখানে এক সমর্থক থেকে আরেক সমর্থকের মধ্যে এর উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে, একসময় তা মহামারির আকার ধারণ করে; কিংবা হয়তো ফুটবলের প্রতি ভক্তদের উন্মাদনা উপাসনার মতোই। কথক স্টেডিয়ামে ঢোকামাত্রই যেন ব্যাপ্টাইজড হলেন। তিনি বলতে থাকেন, তার বন্ধুরা তাকে কখনো রোববারের ফুটবল আসরে নিমন্ত্রণ জানায়নি। হয়তো তারা বুঝতে পেরেছিল যে তিনি খুব দ্রুতই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবেন যেমনটা এস্তাদিও মিউনিসিপ্যালে ঢুকে তার হয়েছিল।
ফারাহ জাহান শুচি
11 December, 2022, 05:50 pm
Last modified: 11 December, 2022, 05:51 pm
গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস

'জীবনে কী হলো, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং আপনি কী মনে রাখলেন এবং কীভাবে সেটি মনে রাখলেন, তা-ই গুরুত্বপূর্ণ।'

কথাটি নোবেলজয়ী কলম্বিয়ান সাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের (১৯২৭-২০১৪)। মাত্র ৪০ বছর বয়সেই তিনি লিখে ফেলেছিলেন শত বছরের নিঃসঙ্গতার কথা। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী এ সাহিত্যিক ভক্তকূলের মাঝে 'গাবো' নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। সাহিত্যে জাদু বাস্তবতা ধারণার অন্যতম বরপুত্র তিনি।

'তারপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে এবার তবে স্টেডিয়াম থেকে ঘুরে আসা যাক।' নিজের অনেক গল্পকেই এভাবে শুরু করতে পছন্দ করতেন মার্কেজ, যেখানে সময় বয়ে চলার একটা ধারণা পাওয়া যায়। বাস্তবতা এবং কল্পনার মিশেলে ১৯৮৩ সালে তিনি লিখেন 'দ্য ওথ'; গল্পের বিষয়বস্তু কলম্বিয়ার বারানকিয়ার অ্যাটলেটিকো জুনিয়রদের একটি ম্যাচকে ঘিরে আবর্তিত। গত শতাব্দীর বহু প্রতীক্ষিত এ ম্যাচে নিজেদের চিরচেনা প্রতিপক্ষ বোগোটা মিয়োনারিয়োসের মুখোমুখি হয়েছিল তারা।

জীবনে প্রথমবারের মতো ফুটবল দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছেন কথক। সেখানে যাওয়ামাত্রই তিনি টের পেলেন কেন এই খেলাটি ততদিনে বিশ্ব সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী এবং অপরিহার্য উপকরণে পরিণত হয়েছে, কেন দিগ্বিদিক এর আবেদন বেড়েই চলছে। খেলোয়াড়দের শৈলীকে স্বচক্ষে দেখতে পারার মধ্যেও একটি জাদু আছে। অ্যাটলেটিকোর এলেনো দ্য ফ্রেইতাস কিংবা মিয়োনারিয়োসের আল্ফ্রেদো দি স্তেফানো - দু'জনই তখন অপ্রতিরোধ্য ফুটবল তারকা। 

হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে ক্রীড়ার সম্মোহনী মূর্ছনায় কথক খুব দ্রুতই নিজেকে হারিয়ে ফেললেন। ক্রীড়া নিয়ে, বিশেষ করে, ফুটবল নিয়ে লিখতে গেলে যে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ, এই গল্পটি তারই জানান দেয়। কারণ ফুটবল নিয়ে লেখালেখি সবসময়ই ব্যক্তিনির্ভর, এতে কল্পনার আশ্রয় হরহামেশাই নেওয়া হয়।

কথক বলতে শুরু করেন, 'ম্যাচটি ছিল বহুল আলোচিত। আমি সময়ের আগেই সেখানে পৌঁছে গেলাম। এটাও সত্যি যে আমি আগে কখনো কোথাও নির্ধারিত সময়ের এত আগে গিয়ে উপস্থিত হইনি। আর যখন ফিরলাম, তখনও খুব ক্লান্ত ছিলাম।' তিনি আরও বললেন, ম্যাচটিতে কী দেখলেন তা পাঠক-শ্রোতাকে জানাবেন, অন্তত তিনি যা দেখেছেন ভাবছেন, তা-ই জানাবেন।

মার্কেজ তার ১৯৮৫ এর রোমান্টিক উপন্যাস 'লাভ ইন দ্য টাইম অভ কলেরা'-তে ভালোবাসাকে দেখিয়েছিলেন একটি ছোঁয়াচে রোগ হিসেবে। 'দ্য ওথ' গল্পেও তিনি ফুটবলকে ছোঁয়াচে হিসেবেই দেখিয়েছেন যেখানে এক সমর্থক থেকে আরেক সমর্থকের মধ্যে এর উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে, একসময় তা মহামারির আকার ধারণ করে; কিংবা হয়তো ফুটবলের প্রতি ভক্তদের উন্মাদনা উপাসনার মতোই। কথক স্টেডিয়ামে ঢোকামাত্রই যেন ব্যাপ্টাইজড হলেন। তিনি বলতে থাকেন, তার বন্ধুরা তাকে কখনো রোববারের ফুটবল আসরে নিমন্ত্রণ জানায়নি। হয়তো তারা বুঝতে পেরেছিল যে তিনি খুব দ্রুতই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবেন যেমনটা এস্তাদিও মিউনিসিপ্যালে ঢুকে তার হয়েছিল।

কাফকা-অনুরাগী মার্কেজ জানতেন, গল্প যতই উদ্ভট বা অদ্ভুতুড়ে হোক না কেন, তা সোজাসাপ্টা ভঙ্গিতে বলে যেতে হবে যেন পাঠকের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। আবার বাস্তবতা এবং কল্পনাকে মিশিয়ে একাকার করে দেওয়া গল্পকথনের ঢঙ সবসময়ই তার প্রিয় ছিল। যেমন এস্তাদিও মিউনিসিপ্যাল বাস্তবেই আছে, এস্তাদিও রোমেলিও মার্তিনেজ নামেই তা বেশি পরিচিত। পূর্বোল্লিখিত অ্যাটলেটিকো জুনিয়র, মিয়োনারিয়োস আর তাদের তারকা ফুটবলার দ্য ফ্রেইতাস আর দি স্তেফানোও বাস্তবে ছিলেন। তবে মার্কেজ যে ম্যাচটির কথা বলছেন, তা বাস্তবে ছিল কি-না, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। কারণ এই ম্যাচটি যদি বাস্তবেই হয়ে থাকে, তাহলে সেটি হয়েছিল ১৯৫০ এর জুনে, কেবল সেবারই এই দুই ফুটবলার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু সেই খেলার বিস্তারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত আর কারো কাছে অবশিষ্ট নেই। 

তাহলে মার্কেজের এই গল্পটিকে ঠিক কোন কাতারে ফেলা যায়? এটি কি কেবলই কল্পনা-আশ্রিত একটি গল্প? নাকি গত শতাব্দীর দুই ফুটবল মহারথীর মুখোমুখি হওয়ার অবশিষ্ট একমাত্র দলিল? হয়তো তার মাঝামাঝি কিছু একটা হবে।

পরিবারের সঙ্গে মার্কেস

মার্কেজের ক্ষেত্রে নিজের দলকে সমর্থন জানিয়ে সেই দলের জার্সি পরে ফুটবল স্টেডিয়ামে যাওয়ার ব্যাপারটিও কিছুটা অবাস্তব। তার স্বভাববিরুদ্ধ। এস্তাদিওতে পা রাখামাত্র তিনি তো আর মার্কেজ রইলেন না। মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যে এত জনপ্রিয় একটি খেলায় একজন অবিশ্বাসী কীভাবে 'ধর্মান্তরিত' হয়ে গেলেন? তার মতো এমন বিশ্বসেরা গুণিজন কীভাবে ফুটবলের উন্মাদনা-উত্তেজনায় নিজেকে উজাড় করে দিলেন?

মার্কেজ অবশ্য এর পেছনের কারণটি দেখিয়েছেন। তার মতে, প্রতিটি ফুটবল ম্যাচ শুরু হয় এক অন্যরকম মুগ্ধতায়। স্টেডিয়ামে ঢুকে তিনি অবশেষে বুঝতে পারলেন যে এত মার্জিত রুচিবান ভদ্রলোকেরাও কীভাবে এখানে ভিড়ের মধ্যে অতি সহজে মিশে যান। নিজেদের দলের টুপি বা জার্সি পরামাত্রই কেন তারা অন্য একজনে পরিণত হন, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্যক্তিত্ব ধারণ করেন।

নিজেদের পতাকা, ব্যানার নিয়ে যে সমর্থকেরা আসেন, দলের টুপিতে-জার্সিতে নিজেদের সুসজ্জিত করেন, তারা তো আর আগের মানুষটায় থাকেন না। মার্কেজের মতে, এ যেন এক জাদুকরী শক্তি। স্রেফ বর্ণিল পোশাকে সুশোভিত নন তারা। তাদের ভেতরই একটা মৌলিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। মার্কেজের কাছে ব্যক্তির এই রূপান্তর, ফ্রানৎস কাফকার সেই 'মেটামরফোসিসই', ফুটবলের সবচেয়ে বড় আবেদন।

রোজারিওর ৩১ বছর বয়সী লিওনেল মেসির কথাই ভাবুন। তখন তিনি স্প্যানিশ ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে খেলছিলেন। শনিবার বিকেলগুলো বার্সেলোনার লাল-নীল জার্সি পরে ক্লাবটির জন্য খেলে কাটাতেন। পরিবার-প্রিয়জনদের কাছে 'লিও' নামেই বেশি পরিচিত। কিন্তু মাঠে এসে বলটাকে পায়ে ঠেকানোমাত্রই লাখো লাখো ভক্তের কাছে তিনি পরিণত হন 'মেসি'-তে। বন্ধু-বান্ধবের কাছে পরিচিত লিও কিন্তু আর লিও থাকেন না তখন।

ফুটবলার আর তার ভক্ত-সমর্থকের সম্পর্কটাকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন মার্কেজ। মেসি নামটির সাথে আমরা সকলেই কম-বেশি পরিচিত, তবে নামটির সাথে আমরা যেসব অর্থ জুড়ে দিই, তার সঙ্গে ব্যক্তি মেসির মিল আদতে কতটুকু? মেসিকে নিয়ে আমাদের যে ধারণা, তা-ও কি তবে কল্পনা-আশ্রিত নয়? ঠিক তেমনি ফুটবল নিয়ে লেখালেখিও কি তাহলে একটি বাস্তব ঘটনার ব্যক্তিনির্ভর চিত্রায়ণ নয়? আর সেখানে কল্পনার ছোঁয়া থাকে হরহামেশাই।

কেবল 'দ্য ওথ' গল্পেই মার্কেজ ফুটবল নিয়ে বিস্তরভাবে লেখালেখি করেছিলেন। নইলে তার লেখনীতে এমন মূলধারার গতানুগতিক ধারার বিষয় খুব কমই এসেছে। মার্কেজের শ্রেষ্ঠ কাজ হলো তার ১৯৬৭ সালের মাস্টারপিস, 'হান্ড্রেড ইয়ারস অভ সলিট্যুড' বা নিঃসঙ্গতার ১০০ বছর। ইংরেজিতে অনূদিত হওয়ার পরপরই এটি তুমুল সাড়া পেয়েছিল, নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ল্যাটিন আমেরিকার বাসিন্দাদের জীবনাচরণ এবং ইতিহাসের দলিল এই বই। গল্পকথনে মার্কেজ সেখানে ব্যবহার করেছিলেন জাদু বাস্তবতা।

প্যারিসে মার্কেস

ইদানীংকালে যত্রতত্রই ম্যাজিক রিয়ালিজম শব্দযুগলের ব্যবহার দেখা যায়। ল্যাটিন আমেরিকা থেকে উৎসারিত এই ধারণাটি অস্পষ্টই থেকে গেছে। ভুলভাল প্রয়োগের কারণে পরিণত হয়েছে ক্লিশেতে। এমনকি অনেকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি কিংবা ফ্যান্টাসির সাথেও এই ঘরানাকে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু মনে রাখা জরুরি, জাদু বাস্তবতা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত একটি ধরন। জাদু আর বাস্তবতা দু'টো ভিন্ন সত্ত্বা, তাই না? কিন্তু সাহিত্যের এই বিশেষ ধরনে ভিন্ন দু'টো বিষয়কে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে তা মিলে-মিশে একাকার হয়ে যায়। জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছুর ব্যাখ্যা আমরা করতে পারি না। কিন্তু তাই বলে তা তো আর অবাস্তব নয়।

মার্কেজের মতে, জাদু বাস্তবতার ভিত্তি বাস্তবেই আছে। '৮২ সালে সাহিত্যে নোবেল জয়ের পর ভাষণেও তিনি বলেছিলেন যে ল্যাটিন আমেরিকার বাস্তবতাই জাদু বাস্তবতার অনুপ্রেরণা, সেখানের জনপদ থেকেই উঠে এসেছে এর কথকতা। সাহিত্যে প্রথম হোর্হে লুইস বোর্হেসের লেখাকে ব্যাখ্যা করার সময় জাদু বাস্তবতা শব্দযুগলের ব্যবহার করা হলেও, ধারণাটিকে পাকাপোক্ত এবং জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন মূলত মার্কেজ। জাদু বাস্তবতায় গতানুগতিক যেকোনো কিছু অবাস্তব; আবার অসম্ভব যেকোনো কিছুই বরং সেখানে চিরাচরিত, স্বাভাবিক।

ফুটবলে ফিরে যাই। ফুটবল-ভক্তমাত্রই জানেন যে খেলাটির প্রতি তাদের অনুরাগ-উন্মাদনা দিনশেষে অনেকটা অযৌক্তিক। অযৌক্তিক এই অর্থে যে যুক্তি দিয়ে ফুটবলের প্রতি তাদের ভালোবাসাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। তারা যে দলটির সমর্থক, সেটিকেও তারা বাছাই করেছেন কিছুটা নির্বিচারী ভঙ্গিতে৷ গোল হলে কিংবা এক ফুটবলারের পা থেকে আরেক ফুটবলারের পায়ে বল গেলে দর্শকের যে উন্মত্ততা, সেটিকেও যুক্তির নিরিখে নিরপেক্ষভাবে ব্যাখ্যা করা কঠিন। তাহলে এরকম একটি খেলা নিয়ে কি আদৌ বস্তুনিষ্ঠভাবে লেখা সম্ভব? প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যও যেখানে আছে, এরকম একটি ব্যক্তিনির্ভর ঘটনার চিত্রায়ণ কি আসলেই বস্তুনিষ্ঠ ভাষার ব্যাখ্যায় সম্ভব?

এই প্রশ্নটি রেখে যাওয়ার পাশাপাশি, 'দ্য ওথ' সেই ম্যাচের একরকম প্রতিবেদনও পেশ করে, আবার বিমূর্ত একটি ন্যারেটিভও দাঁড় করায়। কথক বলছেন, 'একদম প্রথম থেকেই আমার মনে হলো যেন অ্যাটলেটিকো জুনিয়রেরা ম্যাচ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যে সাদা লাইনটি দিয়ে মাঠকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়, ৫০ গজের সেই সেন্টারলাইনটির যদি আদতে কোনো গূঢ়ার্থ থাকে, তাহলে অবশ্যই আমার কথাটি সত্য। জুনিয়রদের বিপক্ষে গোল করার জন্য মিয়োনারিয়োস নিজেদের কাছে বলটি প্রথম ভাগে একদম পায়নি বললেই চলে। কথা প্রসঙ্গে বলে নিই, ফুটবল নিয়ে আমার প্রথম লেখা এটি; কেমন এগোচ্ছে?'

ফুটবলকে এখানে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেন তা অজ্ঞাত কোনো জাদুবিদ্যা, তবে মার্কেজের লেখনীতেই তা প্রাণ পায়। তিনি দূর থেকে খেলাটিকে দেখছেন আর সেটির বর্ণনা দিচ্ছেন, তবে ফুটবলের ক্রিয়া-কৌশলের সাথে পরিচিত যে-কেউই বুঝবেন যে অ্যাটলেটিকো জুনিয়রদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল মিয়োনারিয়োস। 

কিন্তু ফুটবল নিয়ে উন্মাদনার ব্যাপারটা যখন আমরা বুঝতে শুরু করি, যখন বুঝি যে এখানে মোহনীয় একটি ব্যাপার আছে, সাথে সাথেই আপাত দুর্বোধ্য এই খেলাটি একদম জলের মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে, একজন আনাড়িও তখন এর ব্যাখ্যা করতে পারবেন। এই মূর্ছা কেটে যাওয়ার একটি সুবিধাও আছে বৈকি, কারণ এই যে খেলার সরলতা, এটিই এর জাদু।

মাঠে জমকালো বর্ণিল পোশাক পরিহিত এই ২২ জন মানুষ তখন আর স্রেফ খেলোয়াড় নন। বরং নিজেদের রচিত উপন্যাসে তারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন একেকটি চরিত্র, বলকে নিজেদের পায়ের নিয়ন্ত্রণে এনে সেখানে নতুন কিছু না কিছু তারা সংযোজন করে চলছেন প্রতিটি মুহূর্তে। সেরা ফুটবলাররা এখানে হয়ে ওঠেন নিজেদের গল্পের নির্মাতা। বোতাফোগোর কিংবদন্তি এলেনো দ্য ফ্রেইতাসের কথাই ভাবুন না! 

জুনিয়রের খেলোয়াড়েরা যদি ফুটবলার না হয়ে লেখক হতেন, তাহলে এলেনো হয়তো চমৎকার কোনো রহস্য ঔপন্যাসিক হতেন। বিচক্ষণতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা, স্থিতধী ব্যক্তিত্ব আর একইসাথে অপ্রত্যাশিত ক্ষিপ্রতা তার মধ্যে। এর প্রত্যেকটিই তো গোয়েন্দা উপন্যাসের লেখক আর তার চরিত্রদের মাঝে দেখা যায়।

মার্কেজের বর্ণনাত্মক লেখনীর কারণে দ্য ফ্রেইতাসের দক্ষতার ব্যাপারে পাঠকের ধারণা এতক্ষণে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। ব্রাজিলের জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ১৮টি ম্যাচে খেলেছিলেন, গোল করেছিলেন ১৯টি। অর্থাৎ, দলের টার্গেট ম্যান ছিলেন তিনি। গোয়েন্দা উপন্যাসের মূল চরিত্র হিসেবে মার্কেজ যে তাকে চিত্রায়িত করেছেন, সেটিও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা কঠিন। কীভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণকে এড়াতে হবে, শক্তিমত্তার চেয়ে ধুরন্ধর বুদ্ধির উপর বেশি নির্ভর করতে হবে, তা ভালোই জানা ছিল এলেনোর৷ স্রেফ হেড মারতেই মাথার ব্যবহার নয়; বরং কৌশলী হয়ে খেলার জন্যও মগজকে ব্যবহার করা তিনি ভালোভাবে জানতেন।

ফুটবলের আক্রমণভাগ যদি নতুন সাহিত্য-রচনার মতো হয়, তাহলে এর রক্ষণভাগ হলো সাহিত্য সমালোচনার মতো। যেমন জুনিয়রের সেন্টার-ব্যাক দস সান্তোসকে নিয়ে মার্কেজ লিখেছেন যে তার নাম 'দস'-র অর্থ যদিও দুই, কিন্তু তিনি যখন খেলছেন, তখন যেন চার জনের শক্তি একা নিয়েই সামনে দৌড়াচ্ছেন। সান্তোস ভালো একজন আর্ট ক্রিটিক হতে পারতেন, যেসব স্ট্রাইকার গোল করে নিজেদের শিল্প-রচনায় নতুন দুয়ার উন্মোচন করে অমরত্ব পেতে চাইতেন, আক্ষরিক অর্থেই তাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন এই সেন্টার-ব্যাক। সেরা সেন্টার-ব্যাকদের বৈশিষ্ট্যকে মার্কেজ তুলে ধরেছেন: তারা মূলত অন্যদের নতুন শিল্প সৃষ্টিতে বাধাপ্রয়োগ করেন।

অবশ্য ফুটবল নিয়ে লেখালেখি সবসময় নিন্দাপূর্ণ, ধ্বংসাত্মক বা সন্দেহপ্রবণ হবে, ব্যাপারটি এমন নয়। তবে এটি টেকনোক্র্যাটিক। এ ধরনের লেখালেখিতে একটা বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। ফুটবলের নিজস্ব ভাষা আছে, শব্দভাণ্ডার আছে। ফুটবল নিয়ে লেখালেখি প্রায়ই গদ্যনির্ভর। নির্দিষ্ট বাক্য-গড়ন-বিধি মেনে সেটি এগোয়। 

কিন্তু ফুটবল অনুরাগী যারা, তাদের কাছে এর যেমন গুরুত্ব, সেটি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন আর কিছুটা অপ্রয়োজনীয়ও বটে৷ হয়তো এজন্যই ফুটবল নিয়ে উৎকৃষ্ট মানের লেখালেখিতে কাব্যিক ঢঙের ছোঁয়া থাকা গুরুত্বপূর্ণও বটে। ফুটবলের ভাষা এবং সাহিত্যের ভাষার দ্বন্দ্বটা এভাবেই উপস্থাপন করেছেন মার্কেজ।

সাহিত্য যেভাবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সহজাত অসংগতি প্রকাশ করে, তেমনি ফুটবল নিয়ে লেখালেখিও ভক্তের অভিজ্ঞতার অন্তর্নিহিত অসংগতিকে তুলে আনে। অভিন্ন একটি ম্যাচেই প্রতিটি দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি অনন্য, মৌলিক আর ব্যক্তিনির্ভর; তাই এর লেখালেখিতেও লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিটিই সর্বাগ্রে উঠে আসে। এখানে নিরপেক্ষতার ভূমিকা তখন স্রেফ প্রশ্নবিদ্ধই নয়, তার অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায় অতি সহজে। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের 'দ্য ওথ' পাঠককে আবার এই বিষয়টিরই মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।

Related Topics

টপ নিউজ

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ / ফুটবল / ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইরানের হিসেবের ভুল, যে কারণে ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
  • ‘ইসরায়েলকে ছাড়ো’: ইরানের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা যেভাবে ট্রাম্প সমর্থকদের বিভক্ত করছে
  • হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনা : ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে এই সমুদ্রপথ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
  • ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের কতটা কাছাকাছি?
  • আজ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ পেতে শুরু করবে বাংলাদেশ
  • ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ১০, আহত ২০০; হামলা করেছে হুথিরাও

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ: স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শকদের দীর্ঘ সারি
  • ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে
  • ম্যারাডোনার মৃত্যু মামলার বিচারপ্রক্রিয়া 'বাতিল'
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ইরানের হিসেবের ভুল, যে কারণে ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

2
আন্তর্জাতিক

‘ইসরায়েলকে ছাড়ো’: ইরানের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা যেভাবে ট্রাম্প সমর্থকদের বিভক্ত করছে

3
আন্তর্জাতিক

হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনা : ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে এই সমুদ্রপথ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

4
আন্তর্জাতিক

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের কতটা কাছাকাছি?

5
বাংলাদেশ

আজ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ পেতে শুরু করবে বাংলাদেশ

6
আন্তর্জাতিক

ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ১০, আহত ২০০; হামলা করেছে হুথিরাও

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net