বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং ব্যাটারি: কীভাবে যথেষ্ট উৎপাদন সম্ভব হবে

বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগ অত্যাসন্ন। এ বছরের শুরুর দিকে আমেরিকার অটোমোবাইল জায়ান্ট জেনারেল মোটরস ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ি বিক্রি বন্ধ করে দেবে। অডি-ও ২০৩৩ সালের মধ্যে পেট্রল ও ডিজেলচালিত মোটরগাড়ি উৎপাদন বন্ধের পরিকল্পনা করছে। আরও অনেক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এ রকম রোডম্যাপ হাতে নিয়েছে। কাজেই বলা যায়, আর দু-তিন দশকের মধ্যেই বিশ্বে পেট্রল ও ডিজেলচালিত মোটরগাড়ি অতীত হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে অকল্পনীয় দ্রæতগতিতে। ২০৩৫ সালের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে অর্ধেক যাত্রীবাহী গাড়ি বিদ্যুৎচালিত হয়ে যাবে।
আগামী দশকগুলোতে লক্ষ লক্ষ গাড়ি পেটের মধ্যে বিশালাকার ব্যাটারি নিয়ে রাস্তায় নামবে। এসব ব্যাটারির মধ্যে কেজি দশেক নানা ধরনের পদার্থ থাকবে।
বিজ্ঞানীরা এখন বড় দুটো সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। একটি হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিতে ব্যবহৃত দুর্লভ, ব্যয়বহুল ধাতুর পরিমাণ কীভাবে কমানো যায়। এসব ধাতুর উত্তোলন খরচ অত্যন্ত বেশি, পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে ব্যাটারির রিসাইক্লিং আরও উন্নত করা, যাতে গাড়ির ব্যাটারিতে ব্যবহৃত মূল্যবান ধাতুগুলোকে কার্যকরভাবে পুনর্ব্যবহার করা যায়।
ব্যাটারি ও গাড়ি নির্মাতারা উৎপাদন খরচ কমাতে ও বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ব্যাটারির রিসাইক্লিংয়ের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। ব্যাটারি তৈরি ও রিসাইকেল করার আরও ভালো ও সাশ্রয়ী উপায় বের করার জন্য গবেষণা হচ্ছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়ও। গবেষণাগুলোর একটা প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যবান ধাতুগুলো সস্তায় পুনর্ব্যবহারের উপায় বের করা।
লিথিয়াম-ভবিষ্যৎ
গবেষকদের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো ইভি, অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি বানানোর জন্য খনি থেকে যেসব ধাতু উত্তোলন করা হয়, ব্যাটারিতে সেসব ধাতুর পরিমাণ কমিয়ে আনা। ধাতুর পরিমাণ নির্ভর করে ব্যাটারির ধরন ও বাহনের মডেলের ওপর। তবে একটা লিথিয়াম-আয়ন (এনএমসি৫৩২ টাইপের) ব্যাটারিতে ৮ কেজি লিথিয়াম, ৩৫ কেজি নিকেল, ২০ কেজি ম্যাঙ্গানিজ ও ১৪ কেজি কোবাল্ট থাকতে পারে।
শিগগিরই অবশ্য লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ব্যবহার কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তা ছাড়া লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরির খরচ এতই কমে গেছে যে অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাটারিই আধিপত্য বিস্তার করতে পারে এই খাতে। ১৯৯০-এর দশকে প্রথম যখন বাজারে এসেছিল, সে তুলনায় এই ব্যাটারি এখন ৩০ গুণ সস্তা। সেই সঙ্গে বেড়েছে এর কার্যক্ষমতাও।
২০২৩ সালের মধ্যে লিথিয়াম-আয়ন ইভি ব্যাটারি প্যাকের খরচ প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টায় ১০০ ডলারের নিচে নেমে আসবে, অর্থাৎ বর্তমানের চেয়ে ২০ শতাংশ কমে যাবে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম বর্তমানে যা প্রথাগত গাড়ির চেয়ে বেশি দামি, চলতি দশকের মাঝামাঝি নাগাদ প্রথাগত গাড়ির সমান হয়ে যাবে। কিছু হিসাব অনুসারে, রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় বৈদ্যুতিক গাড়ির পেছনে এখনই সব মিলিয়ে পেট্রলচালিত গাড়ির চেয়ে কম খরচ হয়।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি অ্যানোড নামক স্তর থেকে ক্যাথোড স্তরে লিথিয়াম আয়ন স্থানান্তর করে। এই দুটো স্তরকে ইলেকট্রলাইট নামক তৃতীয় আরেকটি স্তরের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। ব্যাটারির পারফরম্যান্স সীমিত হয় ক্যাথোডের কারণেই এবং এই ক্যাথোডেই থাকে সবচেয়ে মূল্যবান ধাতুগুলো।
সাধারণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি সেলের ক্যাথোড হচ্ছে মাইক্রো আকারের ক্রিস্টাল-সংবলিত চটচটে পদার্থের পাতলা স্তর। এসব ক্রিস্টাল ঋণাত্মক আধানযুক্ত অক্সিজেনের সঙ্গে ধনাত্মক আধানযুক্ত লিথিয়াম ও অন্যান্য ধাতু, বেশির ভাগ ইভিতে নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ ও কোবাল্টের মিশ্রণ সংযোগ ঘটিয়ে দেয়।
লিথিয়াম দুর্লভ ধাতু নয়। এক সমীক্ষা অনুসারে, বর্তমানে আমেরিকায় ২১ মিলিয়ন টন লিথিয়াম মজুত রয়েছে। এই পরিমাণ লিথিয়াম দিয়ে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে।
তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা যত বাড়বে, সেই অনুপাতে লিথিয়াম উৎপাদন চালিয়ে যাওয়াটাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ। এর ফলে লিথিয়ামের সাময়িক ঘাটতি দেখা যেতে পারে, দামও বেড়ে যেতে পারে নাটকীয়ভাবে। তবে তাতে বাজারে দীর্ঘ মেয়াদে কোনো প্রভাব পড়বে না।
লিথিয়াম উত্তোলন বেড়ে যাওয়ার পরিবেশগত কিছু সমস্যাও আছে। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে খনি থেকে লিথিয়াম উত্তোলন করা হয়, তাতে বিপুল পরিমাণ শক্তি (পাহাড় থেকে উত্তোলনের জন্য) কিংবা পানি (সমুদ্র থেকে উত্তোলনের জন্য) লাগে। তবে ভূতাপীয় পানি থেকে ভূতাপীয় শক্তি ব্যবহার করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে লিথিয়াম উত্তোলন করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবেশের ওপর প্রভাব সত্তে¡ও লিথিয়াম উত্তোলনের ফলে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনও বন্ধ হবে।
গবেষকেরা সবচেয়ে বেশি চিন্তায় আছেন কোবাল্ট নিয়ে। বর্তমানে ইভি ব্যাটারিতে থাকা সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান হলো কোবাল্ট। গোটা বিশ্বে কোবাল্টের দুই-তৃতীয়াংশ সরবরাহ আসে গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গো থেকে। কঙ্গোর খনিতে কর্মরত শিশুশ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। ঠিকমতো না সামলাতে পারলে কোবাল্টও যেকোনো ভারী ধাতুর মতোই ক্ষতিকর। সমুদ্রগর্ভে প্রাপ্ত ধাতুসমৃদ্ধ 'ছোট পিপ্লের' মতো বিকল্প উৎস খোঁজা যেতে পারত, কিন্তু তাতেও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া ইভি ব্যাটারির আরেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিকেলেরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে ভবিষ্যতে।
ব্যাটারির ধাতু-ব্যবস্থাপনা
কাঁচামাল সমস্যার সমাধানের জন্য গবেষকেরা নি¤œমানের কোবাল্টসমৃদ্ধ কিংবা কোবাল্টবিহীন ক্যাথোড নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। কিন্তু ক্যাথোডের উপাদান খুব সাবধানে বাছাই করতে হবে, যাতে এর ক্রিস্টাল গঠন ভেঙে না যায়। তবে একেবারে কোবাল্টবিহীন ক্যাথোড বানালে ব্যাটারির শক্তি-ঘনত্ব কমে যায়।
তবে এ সমস্যার সমাধান করেছেন একদল গবেষক। যদিও এ সাফল্য এখনো গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ আছে। তাঁরা দেখিয়েছেন, ক্যাথোড থেকে কোবাল্ট বাদ দিয়েও আগের মতোই পারফরম্যান্স পাওয়া সম্ভব। ক্যাথোডে সামান্য পরিবর্তন এনে ও সামান্য পরিমাণে অন্যান্য পদার্থ যোগ করে এ সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। টেক্সপাওয়ার নামক একটি স্টার্টআপ ফার্ম এ প্রযুক্তিতে তৈরি ব্যাটারি আগামী দুই বছরের মধ্যে বাজারে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। টেসলাসহ বিশ্বজুড়ে শীর্ষস্থানীয় ইভি নির্মাতারাও চেষ্টা করে যাচ্ছে কোবাল্টবিহীন ব্যাটারি তৈরি করতে।
দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষক সান ইয়াং-কুকও কোবাল্টবিহীন ক্যাথোড বানিয়ে একই রকম পারফরম্যান্স পেয়েছেন। অনেক গবেষকই মনে করছেন, কোবাল্ট সমস্যার সমাধান প্রায় হয়েই গেছে।
কোবাল্টের মতো এত দামি না হলেও নিকেলকেও সস্তা বলা চলে না। গবেষকেরা ব্যাটারি থেকে নিকেলও সরিয়ে দিতে চান। কিন্তু কোবাল্ট-নিকেল দুটোই সরিয়ে নিলে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে ক্যাথোডের ক্রিস্টালের গঠনে।
এ সমস্যার সমাধান হতে পারে রক সল্ট। এর ক্রিস্টালের গঠন সোডিয়াম ক্লোরাইডের মতোই। ম্যাঙ্গানিজ ও রক সল্ট ব্যবহার করে ক্যাথোড বানালে খরচও অনেক কম পড়ে।
ব্যাটারি রিসাইক্লিং
তবে কোবাল্ট ছাড়া ব্যাটারি বানালে গবেষকদের আরেকটা অপ্রত্যাশিত সমস্যায় পড়তে হবে। মূলত এই ধাতুর কারণেই ব্যাটারি রিসাইক্লিং করলে অনেক সাশ্রয় হয়। কারণ, অন্যান্য ধাতু, বিশেষ করে লিথিয়াম রিসাইকেল করার চেয়ে খনি থেকে উত্তোলন করলেই বরং খরচ কম পড়ে।
রিসাইক্লিং প্লান্টে ব্যাটারিকে প্রথমে টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। তারপর ভেতরে সমস্ত পদার্থকে একসঙ্গে গুঁড়ো করা হয়। এরপর ওই গুঁড়োকে স্মেল্টারে তরল করে বা অ্যাসিডে দ্রবীভূত করে মৌলিক উপাদানে পরিণত করা হয়। সবশেষে ধাতুগুলোকে লবণ হিসেবে থিতানো হয়ে থাকে।
গবেষণাগুলোতে রিসাইকেল করা লিথিয়ামকে সাশ্রয়ী করার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে বেশি। অধিকাংশ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিই চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি হয়। ওসব দেশে রিসাইক্লিং সক্ষমতা দ্রুত বাড়ছে। চীনের বৃহত্তম লিথিয়াম-আয়ন সেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুয়াংদং ব্রæনপ বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টন ব্যাটারি রিসাইকেল করতে সক্ষম। এ পরিমাণ ব্যাটারি ১ লাখের বেশি গাড়িতে ব্যবহার করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি লিথিয়াম, কোবাল্ট ও নিকেলের সিংহভাগই পুনরুদ্ধার করতে পারে। চীনের সরকারি নীতিমালাও এ কাজে উৎসাহ দিচ্ছে। রিসাইক্লিং ফার্মগুলোকে চীন সরকার অর্থনৈতিক প্রণোদনাও দিচ্ছে।
ইউরোপিয়ান কমিশন ব্যাটারি রিসাইক্লিং বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জো বাইডেন প্রশাসনও বিলিয়ন ডলার খরচ করে দেশের ভেতরে ইভি ব্যাটারি উৎপাদনশিল্প গড়ে তুলতে ও রিসাইক্লিংকে সহায়তা দিতে চায়। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো নিয়ম-নীতি প্রণয়ন করেনি। উত্তর আমেরিকার কিছু স্টার্টআপ ফার্ম বলছে, তারা এখনই একটা ব্যাটারির লিথিয়ামসহ অধিকাংশ ধাতু স্বল্প খরচে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
এর চেয়েও মৌলিক একটা পদ্ধতি হচ্ছে ক্যাথোডের ক্রিস্টাল রিসাইকেল করা। গবেষকেরা এমন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, যার সাহায্যে ক্যাথোডের ক্রিস্টালগুলোকে নিষ্কাশিত করে ওগুলো ফের বিক্রি করা যাবে। এ পদ্ধতিতে ব্যাটারি টুকরো টুকরো করে কাটার পর একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে তাপ, রাসায়নিক পদার্থ বা অন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্যাথোডের ধাতুকে আলাদা করে ফেলা।
আরেকটা সম্ভাব্য বাধা হচ্ছে, ক্যাথোডের রসায়ন প্রতিনিয়তই বিবর্তিত হচ্ছে। আজ থেকে ১০-১৫ বছর পর উৎপাদকেরা যেসব ক্যাথোড ব্যবহার করবে, সেগুলো এখনকার চেয়ে অনেকটাই অন্য রকম হতে পারে। কাজেই ব্যাটারির ডিজাইন এমনভাবে করতে হবে, যাতে এর ভেতরের ধাতুগুলোকে সহজেই আলাদা করা যায়।
লিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাতুবিজ্ঞানী অ্যান্ডু অ্যাবটের মতে, ধাতুর কাটার ধাপ বাদ দিয়ে দিলে রিসাইক্লিং আরও বেশি লাভজনক হবে। অ্যাবট ও তাঁর সহকর্মীরা আলটাসাউন্ড ব্যবহার করে ক্যাথোডের উপাদান আলাদা করার প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। এই প্রযুক্তি গোলাকার ব্যাটারির চেয়ে সমতল ব্যাটারির ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায়
সংবাদমাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পরিত্যক্ত ব্যাটারিকে বড় সংকট বলে উল্লেখ করা হলেও বিশ্লেষকেরা একে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছেন। লক্ষ লক্ষ বড় আকারের ব্যাটারির আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেলে সেগুলো রিসাইকেল করা যাবে। এই রিসাইক্লিং ব্যবসার ওপর করে কিছু কর্মসংস্থানও হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি পেট্রলচালিত গাড়িতে যেগুলো ব্যবহার করা হয়, তা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। সিসা বিষাক্ত বলে এসব ব্যাটারিকে ক্ষতিকর বর্জ্য বলা হয়। সিসার ব্যাটারিকে নষ্টও করতে হয় খুব সাবধানে। তবে এসব ব্যাটারিকে রিসাইকেল করার জন্য দক্ষ শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ৯৮ শতাংশ সিসার ব্যাটারিই পুনরুদ্ধার ও রিসাইকেল করা হচ্ছে। সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারির মান লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চেয়ে কম হলেও পরিমাণে বিপুল হওয়ায় এসব রিসাইকেল করলে মোটের ওপর লাভই হয়।
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির বাজার পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকে। বর্তমান গাড়ির ব্যাটারিগুলো ২০ বছর পর্যন্ত টেকসই হতে পারে। আর বর্তমানে যেসব বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হয়, ওগুলোর ব্যাটারি গাড়ির চেয়ে বেশিদিন টিকবে।
এর অর্থ হলো, পুরোনো ইভি যখন বর্জ্য হিসেবে বাতিল মালের আড়তে পাঠানো হবে, তখন এর ব্যাটারি ফেলেও দেওয়া হবে না কিংবা রিসাইকেলও করা হবে না। এই ব্যাটারিগুলো বের করে নিয়ে স্টেশনারি এনার্জি স্টোরেজ কিংবা নৌকা চালানোর জন্য ব্যবহার করা হবে। দশ বছর ব্যবহারের পর ৫০ কিলোওয়াট-ঘণ্টা ক্ষমতাসম্পন্ন নিশান লিফের মতো গাড়ির ব্যাটারির সক্ষমতা বড়জোর ২০ শতাংশ কমবে।
যা হোক, বৈদ্যুতিক গাড়ির বহুল প্রচলনের পথে সবচেয়ে বড় বাধাগুলোর একটি এই ব্যাটারি সমস্যা। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এই সমস্যা সমাধানের জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সে পথে ইতিমধ্যে খানিকটা অগ্রগতিও এসেছে বলা যায়। এক দশক আগে টেসলার মতো একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করাতে ঘণ্টায় প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খরচ পড়ত এক হাজার ডলার, তা কমে এখন নেমে এসেছে ১০০ ডলারে। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায়।
- সূত্র: নেচার ডটকম