Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
June 07, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, JUNE 07, 2025
অ্যান্টি-ভ্যাক্সার!

ইজেল

আন্দালিব রাশদী
22 May, 2021, 12:45 pm
Last modified: 22 May, 2021, 01:37 pm

Related News

  • দেশের প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট গোপালগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে স্থানান্তরের পরিকল্পনা সরকারের
  • ক্যান্সারের নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কার; ২০২৫ সালেই রোগীদের ওপর প্রয়োগ শুরু করবে রাশিয়া
  • এমপক্স’র প্রথম টিকার অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 
  • ওষুধ ও ভ্যাকসিন উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করতে পারে বাংলাদেশ: ইআইবি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী
  • চিকুনগুনিয়ার সম্ভাব্য প্রথম ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফলাফল

অ্যান্টি-ভ্যাক্সার!

আমাদের ক্লাসমেট শামসুন নাহার বলল, তোমার টিকা দেখাও, আমি শার্টের হাতা উঠিয়ে দেখালাম, টিকার চিহ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে, ফ্রকের হাত তুলে শামসুন দেখালো তার ফর্সা হাতে টিকা ফুলে ঢোল হয়ে আছে। আমার সেই ক্লাসমেট শামসুন করোনার প্রথম ঢেউয়েই প্রয়াত, আমি দ্বিতীয় ঢেউ পার করছি।
আন্দালিব রাশদী
22 May, 2021, 12:45 pm
Last modified: 22 May, 2021, 01:37 pm

করোনার চেয়ে শক্তিশালী যে জাতি কিংবা যে জন তারাও নাকি বোল পাল্টে, ভোল পাল্টে ভ্যাকসিন কই, ভ্যাকসিন কই শোরগোল তুলেছেন? শুনেছেন নাকি? মোদিও বলেছিলেন, করোনা হেরে গেছে, এখন খেসারত দিচ্ছে ভারতবর্ষ।

স্বামী চক্রপানি মহারাজের গোমূত্র পার্টির কথা তো বিবিসি সিএনএন শুনিয়েছে। রয়টার মূত্রসেবনরত বিশিষ্টজনদের ছবি দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে। গোমূত্র পার্টি। মানে কোনো রাজৗনতিক দল নয়, তবে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার একটি খানাপিানার পার্টি। ম্লেচ্ছদের ককটেল পার্টি, ভারতবর্ষীয় সুধীজনের 'গোমূত্র পাটি'। ১৪ মার্চ ২০২০ অনুষ্ঠিত এ পার্টিতে গোমূত্র তো ছিলই, লুচি সবজি ডাল পায়েশও ছিল। চক্রপানি মহারাজ করোনাদানবের গায়ে গোমূত্র ছিটিয়ে তাকে হত্যা করেছেন,  ভ্যাকসিন-ট্যাকসিনের নামে ধর্মনাশের যে কোন অশুভ উদ্যোগ প্রতিহত করার আহবান জানান। তিনি গোপনে কি তা স্পষ্ট না হলেও জনসমক্ষে তিনি একজন অ্যান্টি-ভ্যাক্সার।

চক্রপানি মহারাজ যেন তেন মহারাজ নন, অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী গোমূত্রভক্ত নরেন্দ্র মোদী তাদেরই আশীর্বাদ পুষ্ট।

ভ্যাকসিনেশন পোস্টার

বাংলা আজ যা ভাবে ভারত ভাবে আগামীকাল। কিন্তু  ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে গোমূত্রের প্রশ্নে ভারত বাংলাকে দু'দিন পেছনে ফেলে দিয়েছে। রাজ্য বিজেপির প্রেসিডেন্ট দিলীপ ঘোষ এবং গরু উন্নয়ন কোষের প্রেসিডেন্ট সুব্রত গুপ্ত ১৬ মার্চ ২০২০ উক্ত এবং অনুক্ত কথায় বুঝিয়ে দিলেন গোমূত্র সেবন করলে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ভাইরাসকে পাত্তা দেবার কোনো প্রয়োজন নেই। দিলীপ ঘোষ অবশ্য বাঙ্গালি চরিত্রের একটি দ্বৈততার উপর আলো ফেলেছেন, বলেছেন আধুনিক সাজার জন্য গোমূত্র বিরোধী সমালোচনা করেও সঙ্গোপনে মাটির ভাড় উল্টে পুরো মূত্রটুকুই সেবন করে নিচ্ছেন ভ্যক্সিনবাদীরা। ভাড়ে দু'এক ফোঁটা রয়ে গেলে চেটে পুটে সেটাও খাচ্ছেন।
 
অ্যান্টি ভ্যাক্সার হিসেবে হিন্দুরাই সুনাম কুড়াবে আর সংখ্যালঘু হয়ে মুসলমানরা পিছিয়ে থাকবে তা তো হবার নয়। টিকা ও  ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে বসল ভারতের নয়টি মুসলিম সংগঠন: মুসলমানরা টিকা নেবে না, বিশেষ করে চীনের উৎপাদিত টিকা মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করা যাবেই না।

এখানে সিপাহী বিদ্রোহের মতো একটি পঠভূমি রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করেন। সে সময় এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজের মুখে গরু ও শুকুরের চর্বি মিশ্রিত একটি নিরোধক দেওয়া হতো যা দাঁত কেটে কার্তুজ বন্দুকে ভরতে হতো। গরুতে ক্ষুব্ধ হিন্দু শূকরে ক্ষুব্ধ মুসলমান; সুতরাং ধর্মীয় অনৈক্য ভুলে ধর্ম রক্ষার জন্যই হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সৃষ্টি হলো। সিপাহি যুদ্ধের মর্মান্তিক পরণতির সাক্ষ্য ভিক্টেরিয়া পার্ক এলাকার প্রাচীন বৃক্ষগুলো বহুবছর বহন করেছে। বহু সংখ্যক সিপাহির ঝুলন্ত দেহের ভার এই গাছগুলোকে বইতে হয়েছে। এবার ভারতের মুসলমান সংগঠনগুলো বলেছে চীন করোনা  ভ্যাকসিনে পর্ক জিলোটিন ব্যবহার করছে। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার প্রেসিডেন্ট স্বামী চক্রপানি খবর নিয়ে জেনেছেন আমেরিকায় উৎপাদিত কোভিড টিকাতে গরুর রক্ত ব্যবহার করা হয়েছে, ভারতীয় এবং অভারতীয় কোনো হিন্দু এই  ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পারেন না, এটা নাজায়েজ।

লেডি মন্টেগু বসন্তের টিকার প্রচলনে অসামান্য ভূমিকা যার

এর মধ্যেও প্রগতিশীল বক্তব্য রেখেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফতোয়া কাউন্সিলের প্রধান আবদুল্লাহ বিন বায়াহ- যে  ভ্যাকসিন মানুষের কল্যাণে ব্যবহ্নত হবে, মানুষকে যা মৃত্যু থেকে রক্ষা করবে তা নিয়ে ফতোয়া জারি করা অনুচিত।

তারপরও প্রশ্ন, আপনি যে ধর্মবলম্বীই হোন না কেন, আপনি কি অ্যান্টি-ভ্যাক্সার?
 
বঙ্গবাসীর টিকা বিমুখতা কমছে

টিকাওয়ালা ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের বাড়ির দহলিজে এসে হাজির হয়েছে এই সংবাদ গোপন রইল না। গ্রামে কোনো ধরণের গণমাধ্যম নেই, সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রচারের একটি পন্থা ব্যক্তিগতভাবে খবর দেওয়া যে টিকাওয়ালা এসেছে। একান ওকান হতে হতে দেখা গেল টিকার ভয়ে গ্রামের সবচেয়ে শক্তিশালী নওজোওয়ান থেকে শুরু করে হাড়জিরজিরে বৃদ্ধও পালিয়েছেন। টিকাওয়ালা তার টার্গেটের একাংশ মাত্র টিকা দিয়ে ফিরে গেলেন। টিকাতঙ্ক বাংলায় বড়াবরই ছিল, তবুও একটি সফল বছর ১৯১৭, সে বছরের স্বাস্থ্য সমাচারের থেকে একটি অনুচ্ছেদ উদ্বৃত করছি :

টিকা: গতবর্ষে (১৯১৭) ১৬,১৪,৬০১ টিকা দেওয়া হইয়াছিল, গত পূর্ব বৎসরের (১৯১৬) সংখ্যা ইহা অপেক্ষা ১২৯৪৮ অধিক ছিল। রোগের অল্পতার জন্য অনেক জেলায় টিকার সংখ্যা কম হইয়াছে। চব্বিশ পরগণা এবং বাখরগঞ্জের এক মহকুমার বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। জলপাইগুড়িতে জেলাবোর্ড টিকার ব্যয় বহন করিয়াছিল। 

আসানসোলের খনি বসতি সমূহেও জেলাবোর্ডের খরচে টিকা দেওয়া হইয়াছিল। লাইসেন্সপ্রাপ্ত টিকাদারগণকে ফি দিতে অস্বীকার করায় ফরিদপুরে একটি স্থানে টিকা দেওয়া বন্ধ রাখিতে হইয়াছিল। 

(স্বাস্থ্য সমাচার ৭ম বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, ১৩২৫ বঙ্গাব্দ।)

ভ্যাকসিনেশনকে তুলনা করা হয়েছে শিশুদের এই জন্তুর খাদ্যে পরিণত হওয়ার সঙ্গে, ১৮০২ সালের এচিং

অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব বেঙ্গল বার্ষিক প্রতিবেদনসমূহে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে এবং মহামারির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটছে বলে উল্লেখ করা হয়। ১৯১৭ সালে কলেরায় মৃতের সংখ্যা ৪৫০২১ জন, আগের বছরের চেয়ে ২৫৮১৫ জন কম। ১৯১৫ সালে যেখানে বসন্তে মৃতের সংখ্যা ছিল ৩২৭৮৫, দুবছরের ব্যবধানে তা ৭০১০-এ নেমেছে। ১৯১৭ সালে প্লেগমৃত্যু ঘটেছে 'অতি সামান্য'- ১৬৩ জন; কোলকাতা ২৪ পরগণা, হুগলি ও হাওড়ার শহরাঞ্চলে এই মৃত্যু ঘটেছে। কোনো গ্রামে প্লেগ প্রবেশ করেনি।
তখন ম্যালেরিয়ার ঔধষ ছিল কুইনিন, টিকা তখনো আসেনি। ১৮১৭ থেকে চলমান বেঙ্গল কলেরার মৃতের সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে যায়, ১৮৮১ থেকে চলমান কলেরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছিল, মৃত্যু হয় অন্তত ৩ লক্ষ মানুষের।
 
শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞান গ্রন্থে মুহম্মদ এলতাস উদ্দিন অ্যান্টি-ভ্যাক্সার এসডিপিও-র স্ত্রীর কথা লিখেছেন:

কলেরা পানিবাহিত রোগ হওয়ায় একে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কিন্তু বসন্ত বায়ুবাহিত রোগ হওয়ায় একে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ ব্যাপার ছিল না। একমাত্র প্রতিষেধক ছিল টিকা। ব্রিটিশ আমলে আমরা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতাম, তখনই বাধ্যতামূলকভাবে আমাদের বসন্ত নিরোধক টিকা নিতে হয়েছিল। ...চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসডিপিও সাহেবের স্ত্রীও এই বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে নাবালক সন্তানাদি রেখে অকালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন যা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। এসডিপিও সাহেব পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। বাসাতে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এসেছিলন টিকা দেয়ার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মহিলা টিকা নিতে রাজি হন নি। সে বছর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে এই রোগে শত শত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আমার মাও এই বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার বিয়ের পরপরই যুবতী অবস্থায়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মুখমন্ডলে স্থায়ী ভাবে বসন্তের দাগ রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য পরবর্তীকালে তিনি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৬০-এর দশকে একটি স্কুল ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম ছিল। আমি তখনও স্কুলের প্রাইমারি পর্ব ডিঙ্গাতে পারিনি। ১৯৬৬ সালের একদিন, ক্লাস টিচার ঘোষণা দিলেন পরের দিন সবাইকে স্কুলে আসতে হবে। সদাশয় সরকার ঢাকা শহরের যে কয়েকটি স্কুলকে ভ্যাকসিনেশনের জন্য নির্বাচন করেছে তার মধ্যে আমাদেরটি অন্যতম। একটি টিকার অনেক দাম। আমাদের ফ্রি দেওয়া হবে। তাতে বাবা-মার টাকা বেঁচে যাবে।

অ্যান্টি ভ্যাকসিন কার্টুন, ১৮৯৪ সালের একটি প্রকাশনা

টিকা বাহিনীতে ছিলেন তিনজন- একজনের হাতে কয়েকটি পোস্টার দু'জনের হাতে ব্যাগ। পোস্টারওয়ালার প্রথম পোস্টারে সাধারণ মশার চেয়ে হাজারগুণ বড় একটি মশার ছবি- এর নাম অ্যানোফিলিস। দ্বিতীয় পোস্টারে একজন রোগীর ছবি। তৃতীয় পোস্টারের একজন টিকাদার শিশুদের টিকা দিচ্ছেন। চতুর্থ পোস্টারে একটি হাস্যোজ্জ্বল শিশু। যেহেতু মশা দিয়ে শুরু টিকাটা ছিল ম্যালেরিয়ার। আমরা যখন হাস্যোজ্জ্বল শিশুটিকে দেখছিলাম তখন আমাদের দু'জন ক্লাসমেট জানালা দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় পড়ে ভোঁ দৌঁড়। তাদের সাফল্য দেখে আমিও জানালার দিকে এগোই, কিন্তু ক্লাসটিচার আমাকে বললেন, তুমি জানালাগুলো বন্ধ করো। তিনি নিজে একটা বন্ধ করলেন এবং আমি ঠিক মতো বন্ধ করেছি কিনা পরীক্ষা করলেন। আমাদের ক্লাসমেট সম্ভবত সাইদা (ভাবুন! ষাটের দশকের কো-এডুকেশন স্কুলের ছাত্র আমি) গলা উচুঁ করে বলল, আমি টিকা দেব না। মশা আমার কচু করবে? 

মশার মতো তুচ্ছ প্রাণী বড় জোর কামড় দিতে পারে, একটু চুলকালেই শেষ- কিন্তু মানুষ মেরে ফেলতে পারে এটা আমাদের বিশ্বাস হতে চায়নি। তবে ম্যালেরিয়া যে যেনতেন কোনো রোগ নয় সফদার ডাক্তার নামের একটি কবিতা পড়ে আমরা আগেই নিশ্চিত হয়েছি।

ম্যালেরিয়া হলে পরে নাহি কারো নিস্তার
ধরে তারে কেঁচো দেয় গিলিয়ে

তার ব্যবস্থাপত্র টিকার চেয়েও ভয়ঙ্কর। সেদিন ইচ্ছে থাকার পরও পর্যাপ্ত সাহস না থাকার কারণে জানালা দিয়ে রাস্তায় লাফিয়ে পড়তে পারিনি। সুতরাং টিকওয়ালার সামনে হাত বাড়িয়ে দিতে হলো। ক্লাস টিচার আমার মাথা দু'হাতে ধরে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। আমি দু'বার আহ্ আহ্ করে উঠলাম। আমার মেয়ে ক্লাসমেটদের কেউ কেউ এমন করে কাঁদলো যে তাদের কান্না দেখে আমাদের চোখেও কান্নার প্ররোচনা সৃষ্টি হলো। শুধু জানালা নয়, আমরা যাতে পালাতে না পারি সে জন্য দুটো দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেটি ছিল ম্যালেরিয়া  ভ্যাকসিন।

টিকা বিরোধী সোসাইটিতে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন। অ্যান্টি ভ্যাকসিনেশন সোসাইটি অফ আমেরিকা ১৯০
 
 
এরপর এলো বসন্তের টিকা। সে কালের টিকা কেবল সামান্য একটি সূঁচের গুতোর মতো ছিল না। টিকা দিয়ে ধারালো যন্ত্রটি হাতের উপর ঘুরানো হতো, তাতে গোল করে খানিকটা জায়গা কেটে যেত। তারপর জায়গাটা পেকে উঠত, কখনো পুঁজও বেরোতো, তারপর এক সময় সারা জীবনের জন্য একটি ক্ষতচিহ্ন তৈরি করে টিকার জায়গাটা শুকিয়ে যেত। টিকাওয়ালার সামনে এসে আমাদের পাশের ক্লাসের একটি তরতাজা ছেলে 'আমি যাই আমি যাই' বলে অজ্ঞান হয়ে গেল। তার ক্লাস টিচার খুব ঘাবড়ে গেলেন- যদি জ্ঞান না ফেরে তাহলে কি তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে?

হাতের অ্যাটেন্ডেন্স রেজিস্টার দিয়ে তিনি তাকে বাতাস করলেন, টিউবওয়েল থেকে আনা পানি ছিটিয়ে দিলেন। জ্ঞান ফেরার পর তার প্রথম প্রশ্ন, টিকাওয়ালা চলে গেছে?

টিকাওয়ালা তখনও না যাওয়ায় সে ভীষণ হতাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। কাঁদতে শুরু করল। তার অজ্ঞান হওয়া ও কান্না দেখে আমাদের ক্লাস টিচার তাকে বললেন। তুমি কি মেয়ে নাকি?

যেন অজ্ঞান হবার অধিকার কেবল মেয়েদের? অথচ টিকা নিতে গিয়ে আমার স্কুলে একটি মেয়েও অজ্ঞান হয়নি। দু'একজন ছাড়া কেউ হাউমাউ করে কাঁদেওনি।

টিকা বিরোধী সোসাইটিতে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞাপন। অ্যান্টি ভ্যাকসিনেশন সোসাইটি অফ আমেরিকা ১৯০

টিকাওয়ালারা বললেন, সাবধান টিকার জায়গাটিতে যেন ধুলোবালি না পড়ে, মশামাছি না বসে। টিকার কারণে জ্বর হতে পারে, তবে ভয়ের কিছু নেই, দু'দিনেই সেরে যাবে।

যেহেতু জ্বরের সম্ভাবনা আছে হেডস্যার এসে জানিয়ে গেলেন, কাল স্কুল ছুটি। যাদের জ্বর আসবে তারা শুয়ে থাকবে। যাদের জ্বর আসবে না তারা পড়াশোনা করবে।

জ্বর এসে গেছে কিনা পরীক্ষা করার জন্য আমরা ছেলেরা ছেলেদের কপালে এবং মেয়েরা মেয়েদের কপালে হাত রেখে পরীক্ষা করতে শুরু করলাম। তখনও কারো জ্বর আসেনি। জ্বরের জন্য অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে থাকা একটি মেয়ে ক্লাসটিচারকে জিজ্ঞেস করল, আর ক'মিনিট পর জ্বর উঠবে স্যার?

জ্বর উঠার মতো 'টিকা উঠা'-ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। টিকা উঠা মানে টিকার জায়গাটা পেকে যাওয়া- এ থেকে কিছু যন্ত্রণা ও ভোগান্তি অনিবার্য ছিল।

একদিন ছুটি ভোগের পর স্কুলে এসে বুঝতে পারি উপস্থিতি কম। তার মনে অনেকের জ্বর এসেছে, টিকা উঠেছে। আমার কিছুই হয়নি। আরও একদিন কি দু'দিন পর আমাদের ক্লাসমেট শামসুন নাহার বলল, তোমার টিকা দেখাও, আমি শার্টের হাতা উঠিয়ে দেখালাম, টিকার চিহ্ন মিলিয়ে যাচ্ছে, ফ্রকের হাত তুলে শামসুন দেখালো তার ফর্সা হাতে টিকা ফুলে ঢোল হয়ে আছে। আমার সেই ক্লাসমেট শামসুন করোনার প্রথম ঢেউয়েই প্রয়াত, আমি দ্বিতীয় ঢেউ পার করছি।

আমরা প্রায় সবাই টিকাভীতু ছিলাম- একালের ভাষায় অ্যান্টি-ভ্যাক্সার ছিলাম কিনা বলা মুশকিল।

তবে আমাদের ক্লাস টিচার যিনি আমাদের টিকা নিতে বাধ্য করেছিলেন তিনি যে টিকা নেননি এবং টিকাকে 'বোগাস' বলেছেন এটা পরে জেনেছি। 

যে দিনগুলোতে টিকা শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত কাহিনীতে এসে পৌঁছেনি, শ্রীকান্তের বন্ধু গহর গুটি বসন্ত আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত থেকে নিজেও তাদের কাছ থেকে বসন্ত এনে অকালে মৃত্যুবরণ করে। বেঁচে থাকলে গহর নিশ্চয়ই প্রো-ভ্যাক্সার হতো।

 

Related Topics

ভ্যাকসিন / অ্যান্টি ভ্যাক্সার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক
  • চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান
  • পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর
  • নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার
  • অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ
  • কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ

Related News

  • দেশের প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট গোপালগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জে স্থানান্তরের পরিকল্পনা সরকারের
  • ক্যান্সারের নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কার; ২০২৫ সালেই রোগীদের ওপর প্রয়োগ শুরু করবে রাশিয়া
  • এমপক্স’র প্রথম টিকার অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 
  • ওষুধ ও ভ্যাকসিন উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করতে পারে বাংলাদেশ: ইআইবি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী
  • চিকুনগুনিয়ার সম্ভাব্য প্রথম ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফলাফল

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক

2
আন্তর্জাতিক

চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান

3
আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

4
বাংলাদেশ

নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার

5
ফিচার

অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ

6
বাংলাদেশ

কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net