বাইডেন কেন পুতিনের মেয়েদেরকে শাস্তি দিতে চাইছে? রহস্যঘেরা পুতিনের মেয়েদের সম্পর্কে কতটুকু জানি

নিজের পরিবার নিয়ে বরাবরই সতর্ক অবস্থানে থেকেছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন।
২০১৫ সালে একটি ম্যারাথন সংবাদ সম্মেলনের সময় তিনি তার মেয়ের পরিচয় সম্পর্কে করা একটি প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
পুতিন বলেন, "আমার মেয়েরা রাশিয়ায় থাকে এবং এই দেশেই পড়াশোনা করেছে। আমি তাদের নিয়ে গর্বিত।"
তিনি আরও বলেন, "তারা তিনটি বিদেশী ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলে। আমি কখনই আমার পরিবারের কাউকে নিয়ে আলোচনা করি না।"
তিনি পরিচয় না জানালেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন তার দুই মেয়েই। ৩৬ বছর বয়সী মারিয়া ভরোতসোভা এবং ৩৫ বছর বয়সী কাতেরিনা টিখোনোভাকে নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু করেছে আমেরিকা।
এ বিষয়ে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, পুতিনের অনেক সম্পদ পরিবারের সদস্যদের কাছে লুকিয়ে আছে এবং সে কারণেই আমরা তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি।"
বুধবার ঘোষিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের তথ্য অনুযায়ী, পুতিনের কন্যা কাতেরিনা ভ্লাদিমিরোভনা টিখোনোভা একজন প্রযুক্তি নির্বাহী। রাশিয়ান সরকার এবং এর প্রতিরক্ষা শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত তার কাজ।
অন্যদিকে মারিয়া ভ্লাদিমিরোভনা ভরোতসোভা সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত কিছু প্রোগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জেনেটিক্স গবেষণার জন্য ক্রেমলিন থেকে বিলিয়ন ডলার পেয়েছে এসব প্রোগ্রাম। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, এসব কাজ পুতিন ব্যক্তিগতভাবে তত্ত্বাবধান করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, "আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে তিনি তার সম্পদ পরিবারের লোকদের মাঝেই লুকিয়ে রেখেছেন। পুতিনসহ তার অনেক সহচর এবং অলিগার্করা এই উপায়েই তাদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখে। আবার তাদের মধ্যে অনেকেই মার্কিন ফিনান্সিয়াল সিস্টেমে সম্পদ সুরক্ষিত রাখে।"

যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে পুতিনের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে খুব কমই নিশ্চিত হওয়া গেছে, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত নথিপত্র, মিডিয়া রিপোর্ট এবং মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে আসার ফলে সহজেই তার দুই মেয়ের পরিচয় পাওয়া যায়।
পুতিন ও তার প্রাক্তন স্ত্রী লিউডমিলার সন্তান এই দুই মেয়ে। ১৯৮৩ সালে বিয়ে করেন এই জুটি। তৎকালীন কেজিবি অফিসার পুতিনের স্ত্রী লিউডমিলা ছিলেন একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট।
৩০ বছরের বিবাহজীবন শেষে ২০১৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে পুতিন বলেছিলেন, "এটি একটি যৌথ সিদ্ধান্ত। আমরা একে অপরের সাথে খুব কমই দেখা করি। আমাদের দুজনেরই নিজস্ব একটি জীবন আছে।"
অন্যদিকে লিউডমিলা বলেছিলেন, পুতিন 'সম্পূর্ণভাবে কাজে নিমজ্জিত' হয়ে গিয়েছিলেন।
তাদের জ্যেষ্ঠ সন্তান মারিয়া ভরোতসোভা ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান এবং মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
বর্তমানে তিনি একজন শিক্ষাবিদ এবং এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে বিশেষজ্ঞ। শিশুদের বৃদ্ধি বিষয়ক বই লেখার পাশাপাশি তিনি মস্কোর এন্ডোক্রাইনোলজি রিসার্চ সেন্টারের একজন গবেষকও।
এছাড়া, মারিয়া একজন ব্যবসায়ীও বটে। রাশিয়ায় একটি বিশাল চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাকারী কোম্পানির সহ-মালিক তিনি।
তিনি ডাচ ব্যবসায়ী জরিট জুস্ট ফাসেনকে বিয়ে করেছিলেন। তবে, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যারা তার সাথে কথা বলেছে তারা জানিয়েছে, সে তার বাবাকে সমর্থন করে এবং যুদ্ধের আন্তর্জাতিক রিপোর্টিং নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে, তার তুলনায় তার বোন কাতেরিনা তিখোনোভা জনসাধারণের সামনে বেশি এসেছেন; মূলত একজন রক এন' রোল নৃত্যশিল্পী হিসবে তার প্রতিভার কারণে। এছাড়া, ২০১৩ সালে তিনি এবং তার সঙ্গী একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পঞ্চম স্থানেও ছিলেন।
একই বছর তিনি পুতিনের দীর্ঘদিনের বন্ধুর ছেলে কিরিল শামালভকে বিয়ে করেন। সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে একটি এক্সক্লুসিভ স্কি রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয় তাদের বিয়ে। সেখানকার কর্মীরা জানান, বিয়েতে এই দম্পতি তিনটি সাদা ঘোড়ায় টানা একটি স্লেইজে করে এসেছিলেন।

রাশিয়ার জ্বালানি খাতে ভূমিকার জন্য ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শামালভের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মার্কিন ট্রেজারি বলে, "বিয়ের পর তার ভাগ্যের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে"।
তবে, ইতোমধ্যে এই জুটির বিচ্ছেদ হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইউক্রেন আক্রমণের পর, শামালভের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল ভিলা দখল করার জন্য দুই রুশ কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার বোনের মতো কাতারিনাও এখন একাডেমিয়া এবং ব্যবসার সাথে জড়িত। ২০১৮ সালে রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় মিডিয়াতে নিউরোটেকনোলজি এবং ২০২১ সালে একটি ব্যবসায়িক ফোরামে কথা বলার জন্য উপস্থিত হন তিনি। কিন্তু কোনোক্ষেত্রেই পুতিনের সাথে তার সম্পর্কের কথা প্রকাশ করা হয়নি।
দুই বোনের কারোরই পুতিনের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর উল্লেখ পাওয়া যায় নি।
ভ্লাদিমির পুতিনের নাতি-নাতনিও রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে একটি কথোপকথনে তিনি তাদের কথা বললেও তার কয়জন নাতি-নাতনি আছে বা তারা কোন মেয়ের সন্তান, সে বিষয়ে কিছু বলেন তিনি পুতিন।
"আমার নাতি-নাতনিদের মধ্যে একজন রয়েছে নার্সারী স্কুলে। আমি চাই না যে তারা রাজকুমারদের মতো বেড়ে উঠুক। আমি চাই তারা সাধারণ মানুষের মতো বেড়ে উঠুক," বলেন তিনি।
- সূত্র- বিবিসি, রয়টার্স