পুতিনের পরমাণু ঘোষণা ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রোববার তার বাহিনীর পারমাণবিক অস্ত্রের বহরকে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনের মাঝে দেওয়া এই নির্দেশ উত্তেজনা বাড়ানোর একটি চাল। কিন্তু এরপরও, প্রসঙ্গ যখন পারমাণবিক অস্ত্র, তখন একে কেন্দ্র করে মানুষের কৌতূহল ও ভীতি একটু বেশিই। এই প্রতিবেদনে রাশিয়ার পরমাণু ইস্যু নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে।
শক্তিমত্তা কেমন রাশিয়ার?
টিভিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবস্থাকে যুদ্ধের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন পুতিন। তার এই নির্দেশনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা।
জাতিসংঘ পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের সম্ভাবনাকে "অচিন্তনীয়" বলে অভিহিত করেছে। ইউক্রেন সরকার বলেছে, তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য এই নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন।
তবে ন্যাটোর মতো রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের একটি অংশও সবসময় প্রস্তুত থাকে, প্রেসিডেন্ট চাইলে যা ব্যবহার করতে পারবেন ১০ মিনিটের মধ্যে।
জেনেভা সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির পারমাণবিক বিস্তার বিশেষজ্ঞ মার্ক ফিনাউড বলেন, "হয় পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলোকে ইতোমধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রতে সুসজ্জিত করেছে তারা, অথবা বোমাগুলোকে জাহাজে তোলা হয়েছে।"
গত শুক্রবার বুলেটিন অফ দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টের একটি নিবন্ধে বলা হয়, রাশিয়া প্রায় ১৬০০ ওয়ারহেড মোতায়েন রেখেছে।
উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে কেন?
বেশিরভাগ বিশ্লেষক বলছেন, বুধবার ইউক্রেনে আক্রমণের ক্ষেত্রে দেশটির সামরিক বাহিনী হালকা বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়ায় তা ঢাকতে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসঙ্গ এনেছে রাশিয়া।
প্যারিস-ভিত্তিক থিংক-ট্যাঙ্ক জিন জাউরেস ফাউন্ডেশনের ডেভিড খালফা বলেন, "ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের মুখে রাশিয়া হতাশ হয়ে পড়েছে।
দ্রুত জিতে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে নামা মস্কোর সাঁজোয়া বাহিনী এখন শহুরে এলাকায় গেরিলা হামলারও মুখোমুখি হচ্ছেন। এক্ষেত্রে রাশিয়ান সৈন্যদের হতাহত হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) এর এলিয়ট এ. কোহেন বলেন, "চার দিন মধ্যেই আকাশপথে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে বসেছে তারা। এটা দেখেই তো বুঝা যায়। যুদ্ধক্ষেত্রের দুর্বলতাগুলো চোখে পড়া শুরু হয়েছে এখন। তারা একটি শহর দখল করেও ধরে রাখতে পারছে না, এটাই আপনাকে অনেক কিছু বলে দিবে।"
প্রকাশ্যে ঘোষণা কেন?
ইউক্রেনে পশ্চিমা দেশগুলো সহায়তা দিয়েই যাচ্ছে এবং রাশিয়ার উপর আরোপ করে যাচ্ছে নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা। এমন অবস্থায় পুতিনের এই প্রকাশ্য ঘোষণা তার শত্রুদের বিভক্ত করার প্রচেষ্টা হতে পারে।
কোহেন বলেন, "পুতিনের মধ্যে জুয়াড়িসুলভ ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা অনেক পুরনো। এখানে তিনি মনস্তাত্ত্বিক পাশায় আমাদের হারাতে চাইছেন।"
ডেভিড খালফা বলেন, যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক দিকটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা দেশগুলো যেন নতুন কোনো অর্থনৈতিক চাল নিয়ে না আসে, সেজন্য হয়তো এই চাল খেলছেন পুতিন।
পারমাণবিক নীতি থেকে কি বের হয়ে আসছেন পুতিন?
২০২০ সালে একটি পারমানবিক নীতি ঘোষণা করে মস্কো। পুতিন কর্তৃক অনুমোদিত এই নীতি অনুযায়ী চারটি ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে রাশিয়া।
সেগুলো হচ্ছে- যদি রাশিয়া বা তার মিত্র অঞ্চলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, যদি শত্রুপক্ষ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, যদি কোনো রাশিয়ান পারমাণবিক অস্ত্র সম্বলিত এলাকায় আক্রমণ চালানো হয় এবং যদি কেউ রাশিয়ার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
বর্তমান সংঘাতে এসব মানদণ্ডের কোনোটিই পূরণ হয়নি।
এছাড়া, গত জানুয়ারিতেও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অন্য চার স্থায়ী সদস্যদের সাথে নিয়ে একটি নথিতে স্বাক্ষর করে, যাতে বলা হয়, "পরমাণু যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না এবং এই যুদ্ধ কখনোই কাম্য হয়।"
ফিনাউড বলেন, "পুতিনের সর্বশেষ মৌখিক বক্তব্যই এ ধরনের ঘোষণার অস্পষ্টতা, কপটতা ফুটিয়ে তুলেছে।
"এই নীতিকে (জাতিসংঘের যৌথ বিবৃতি) বাস্তবায়ন করতে হলে আপনাকে নিরস্ত্রীকরণের দিকে হাঁটতে হবে। কিন্তু সেটা করার কোনো প্রয়াসই দেখিনি আমরা।"
তবে ভুলে বা ইচ্ছাকৃত হেরফেরের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রকে এই যুদ্ধেও ব্যবহার করা হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
সূত্র: মস্কো টাইমস।