বরিস জনসনের সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টি। গত পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে তৃতীয় বারের মতো ১২ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেয় জনগণ।
শুক্রবার ঘোষিত ৬৪৫টি আসনের ফলাফলে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি জয় পেয়েছে ৩৬১ আসনে এবং প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি জয় পেয়েছে ২০৩ আসনে।
কিন্তু এবার ক্ষমতায় এসে আগামী ৩১ জানুয়ারি ব্রেক্সিট কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর কনজারভেটিভ সরকার। তবে শুধু ব্রেক্সিটই নয়, বাজেটসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হবে তার সরকারকে। বিবিসি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বরিস জনসনের সামনে তিন চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরেছে।
ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে। এখন বরিসের জন্য বড় প্রশ্ন আগামী মাসে ব্রেক্সিটের পর এই সম্পর্ক কোন দিকে নিয়ে যাবে তা ঠিক করা।
ব্রেক্সিটের পক্ষে যুক্তরাজ্যের জনগণের এই বিপুল সমর্থন দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, ইইউ’র বাণিজ্যনীতির বাইরে গিয়ে নতুন বাণিজ্যনীতি করতে পারে নতুন সরকার। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কানাডার মতো বিনাশুল্কে বাণিজ্য চুক্তি অনুসরণ করবে কি না তা দেখার বিষয়।
যদি তাই হয়, তবে ছোটোখাটো বাণিজ্য সংঘাত হওয়া আশ্চর্য নয়। এর মানে হল, সমগ্র আইরিশ সাগর দিয়ে ইউরোপজুড়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রতিটি চেকপোস্টে শুল্ক দিতে হবে যুক্তরাজ্যকে।
আর এই নতুন বাণিজ্যনীতি করতে গিয়ে যুক্তরাজ্যকে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আনতে হবে। অর্থাৎ শ্রমিকদের সুষ্ঠু অধিকার নিশ্চিত, পরিবেশের সুরক্ষা এবং কর ও শুল্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক
ইইউর সঙ্গে করা বাণিজ্যনীতির চাইতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যনীতির দিকে বেশি মনোযোগী যুক্তরাজ্য।
তাদের অর্থনৈতিক মডেল যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যায় না, তবু এ মডেলকে অনুসরণ না করে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ার মতো যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা বরিস জনসনের রয়েছে।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ব্র্যান্ডিং এর জন্য বাণিজ্য সম্পর্কগুলোকে তুলে ধরতে চাইবেন, আর এটাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বরিস জনসনের বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময়।
নতুন অর্থনৈতিক নীতিগুলো যেন সমর্থকদের ধরে রাখে
ব্রিটিশ কনজারভেটিভ দলের বৈশিষ্ট্য কিছুটা পাল্টে গেছে। কারণ এর অধিকাংশ ভোটার খনি এলাকা, উৎপাদনশীল এলাকাগুলোর অর্থাৎ শিল্পায়ন হ্রাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্তের শিকার। তাই নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বিশাল জনগণগোষ্ঠীর সমর্থনকে সম্মান জানিয়ে তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
শুধুমাত্র ব্রেক্সিটের জন্য বরিসকে ভোট দেননি ব্রিটেনের ভোটাররা। বরং স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবিও রয়েছে তাদের। এ দাবিগুলোও পূরণ করতে হবে বরিস প্রশাসনকে। আর এ জন্য প্রয়োজনে তাকে কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।