দক্ষিণ চীন সাগরে বাড়ছে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি

বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরে এ বছর যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক অভিযান জোরদার করেছে বলে চীনের এক সাম্প্রতিক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
বেইজিং ভিত্তিক 'সাউথ চায়না সি প্রবিং ইনিশিয়েটিভ' বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে মার্কিন সামরিক বাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরের আকাশসীমায় ৫২টি পরিদর্শন ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।
তবে অক্টোবরে পরিচালিত ফ্লাইটের সংখ্যা সেপ্টেম্বরের ৬২টি ফ্লাইটের চেয়ে কম ছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে অন্যান্য মার্কিন সামরিক অভিযানও তীব্রতর হচ্ছে।
মঙ্গলবার এক খবরে বলা হয়, মার্কিন নৌবহর ইউএসএস কার্ল ভিনসন ক্যারিয়ার ও ব্রিটিশ নৌবহর এইচএমএস কুইন এলিজাবেথ গত মাসে তাদের অনুশীলনের পর থেকে অভিযানের মাত্রা বেড়েছে। খবরে আরও বলা হয়, চলতি বছরে মার্কিন নৌবহর এই এলাকায় প্রবেশ করেছে নয় বার।
চীনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সাউথ চায়না সি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট উ শিকুন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বছর দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে ৫০০টিরও বেশি পরিদর্শন ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। পীত সাগর ও পূর্ব চীন সাগরের কথা হিসাব করলে এই ফ্লাইটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে অন্তত দুই হাজারে।
সাউথ চায়না সি প্রবিং ইনিশিয়েটিভের তথ্যমতে, গত বছর পরিচালিত মার্কিন পরিদর্শন ফ্লাইটের সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার।
উ শিকুনের মতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্বের ঝুঁকি বাড়ছে; তাই উভয় পক্ষকে আচরণবিধি সম্পর্কে দ্রুতই আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সাউথ চায়না সি প্রবিং ইনিশিয়েটিভ বলছে, কার্ল ভিনসন ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ ছাড়াও এই বছর যুক্তরাষ্ট্র থিওডোর রুজভেল্ট, নিমিৎজ এবং রোনাল্ড রিগান নামে আরও তিনটি স্ট্রাইক গ্রুপ পাঠিয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউএসএস ম্যাকিন আইল্যান্ড ও ইউএসএস এসেক্স নামের দুটি উভচর অ্যাসল্ট ভেসেল সহ মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলো এ বছর ১১ বার দক্ষিণ চীন সাগর অতিক্রম করেছে।
চীনা বিশেষজ্ঞ হু বো রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক সিসিটিভিকে বলেন, "দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন সেনা মোতায়েন ২০০৯ সাল থেকেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেনা মোতায়েন আরও তীব্র হয়েছে।"
দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক বছর ধরেই চলছে দ্বন্দ্ব। এ অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশটি মিলিত হয়েছে ব্রিটেন, জার্মানি ও কানাডা সহ তার অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে, যা সহ্য হয়নি চীনের। ফলস্বরূপ ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মাঝে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
ওয়াশিংটন বলছে, বিতর্কিত জলসীমায় নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এই অভিযানগুলোর প্রয়োজনীতা রয়েছে। অন্যদিকে, বেইজিংয়ের দাবি মার্কিন আচরণ চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে।
উ বলেন, যেহেতু চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই সাবমেরিন ও পানির নিচের ড্রোন ব্যবহার করেছে, তাই সমুদ্রে অপরিকল্পিত সংঘর্ষ এড়াতে ও অস্ত্রের ব্যবহার নির্দিষ্ট করতে আচরণবিধি তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, "আকাশ, ভূমি ও জলসীমায় প্রচলিত সাবমেরিন, পারমাণবিক সাবমেরিন ও মনুষ্যবিহীন সাবমেরিন পরিচালনায় নির্দিষ্ট নিয়মনীতি নির্ধারণ প্রয়োজন; অন্যথায় দক্ষিণ চীন সাগরে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।"
- সূত্র- সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট