ইউরোপের দেশগুলোতে বাধ্যতামূলক হচ্ছে মেডিকেল গ্রেড-মাস্ক

করোনাভাইরাসের অধিক সংক্রমণশীল নতুন ধরন এবং শীতকালে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশংকা থেকে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ মেডিকেল গ্রেড ফেস মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে শুরু করেছে। তারা আশা করছে যে, হয়তো এভাবে করোনাভাইরাসের বিস্তার কিছুটা কমানো সম্ভব।
নাগরিকদের একবার ব্যবহারযোগ্য সার্জিক্যাল এফএফপি১ মাস্ক এবং আরো প্রতিরক্ষামূলক এফএফপি২ ফ্যাব্রিক মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছে ফরাসি সরকার। এককথায় হাতে তৈরি মাস্ক আর চলবে না।
মঙ্গলবার জার্মান সরকারের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ,সকল মানুষকে হয় এফএফপি১ অথবা এফএফপি২ মাস্ক পরতে হবে।
অস্ট্রিয়াও ২৫ জানুয়ারি থেকে গণ-পরিবহন ও দোকানে ব্যবহারের জন্য তাদের নিজস্ব এফএফপি২ মাস্ক বাধ্যতামূলক করবে।
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে প্রথম সনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন এ ধরনটির উল্লেখ করে বলেন, জার্মান সরকারের কঠোর হবার প্রয়োজন পড়েছে।
তিনি বলেন, 'আমি জনগণকে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় করোনার তৃতীয় ধাপ প্রতিরোধ করা কঠিন।'
গত বৃহস্পতিবার মার্কেল বার্লিনে সাংবাদিকদের সামনে মহাদেশে উত্থিত বিভিন্ন বৈচিত্র্যের ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের একটি ভিডিও সামিটের উল্লেখ করেন।
বৃহস্পতিবার সামিটের সময় ইইউ নেতারা অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ সীমিত করার জন্য কঠোর সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলেন এবং ক্রমশ করোনা পরীক্ষার জন্য একটি সমন্বিত কাঠামো গ্রহণে সম্মত হন, তবে মাস্ক পরা নিয়ে সেখানে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (ইসিডিসি) বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছে যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি সারা ইউরোপ জুড়ে হাসপাতালে আরো অনেক মানুষের ভর্তি এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যখন শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবেনা তখনো ইসিডিসি ঘরোয়া এবং বাইরের পরিস্থিতিতে ফেস মাস্ক পরার সুপারিশ করেছে। যদিও কি ধরনের ফেস মাস্ক ব্যবহার করা উচিত তা উল্লেখ করেনি তারা।
ইতোমধ্যে ব্রিটেনে অত্যন্ত সংক্রমণশীল করোনাভাইরাসের একটি ধরনের মারাত্মক তৃতীয় ধাপ চলছে। অথচ সেখানে জনসম্মুখে মেডিকেল গ্রেড মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়নি। শুধু যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে- যেমন গণ-পরিবহন, দোকান এবং অন্যান্য ঘরোয়া জায়গায় মাস্ক পরতে বলা হয়েছে ।
যুক্তরাজ্য সরকারের কোভিড নির্দেশিকায়, স্কার্ফ এবং ব্যান্ডানাকে মুখের আবরণ হিসেবে যথাযথ বিবেচনা করা হয়, যদিও সেগুলো কার্যকরভাবে পরিধানকারীর শ্বাস-প্রশ্বাসে কণা ঢোকা বন্ধ করে না।
বিজ্ঞানী্রা জানান, ভাইরাস প্রতিরোধে ভাইরাল এরোসল এক্সপোজারের পরিমাণ যতটা সম্ভব সীমিত করার উপর মনোযোগ দেওয়া করা উচিত। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে- অন্যান্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণের ভেতর মেডিকেল গ্রেড মাস্কের ব্যবহার সবচেয়ে ভাল উপায়।
মহামারীর প্রথম ধাপের সময় কাপড়ের মাস্ক পরার উপর নির্দেশিকা জারি করা হয়। তখনো খুব একটা জানা যায়নি যে কিভাবে কোভিড-১৯ এরোসলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মেডিকেল গ্রেডের মাস্ক সরবরাহও তখন অনিশ্চিত ছিল। এখন মেডিকেল গ্রেড মাস্কের পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
মেডিকেল গ্রেড মাস্কের সরবরাহ বেড়ে যাবার পর ইউরোপে নতুন চাহিদা তৈরি হয়েছে, তবে প্রাথমিক আশঙ্কা রয়ে গেছে যে তা সামনের সারির কর্মীদের জন্য যথেষ্ট হবে না।
কাপড়ের মাস্ক এখনো জনসাধারণ কর্তৃক অন্য মাস্ক পরার চেয়ে ভালো বলে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু সোমবার ফ্রান্সের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কাউন্সিল যুক্তি দিয়েছে যে কাপড়ের মাস্ক নতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে পারবে না।
কাউন্সিলের একজন সদস্য ড্যানিয়েল কামাস ফ্রান্সের পাবলিক ব্রডকাস্টারকে বলেন, 'আমরা এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত মাস্ক নিয়ে প্রশ্ন করছি না... কিন্তু যেহেতু নতুন সমস্যার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কোন নতুন অস্ত্র নেই, তাই আমরা শুধু আমাদের কাছে থাকা অস্ত্রের উন্নতি করতে পারি।'
কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে যে মেডিকেল গ্রেড মাস্ক অধিক সুরক্ষা দেয় এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
জুন মাসে ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এন৯৫ এবং অন্যান্য রেসপিরেটর-টাইপ মাস্ক অস্ত্রোপচার বা বহুস্তরীয় তুলা মুখোশের চেয়ে ভাইরাল ট্রান্সমিশন থেকে বেশি সুরক্ষা দিতে পারে।
আগস্ট মাসে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, সবচেয়ে কার্যকর ছিল এন৯৫, এরপরে তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক। ঘাড়ে বাঁধা রুমাল, ভাঁজ করা ব্যান্ডানা এবং গিঁট দিয়ে বেঁধে রাখা মাস্ক খুব বেশি সুরক্ষা প্রদান করেনি।
তারপরেও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের মাস্ক শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, কোভিড-১৯ উপসর্গ থাকা ব্যক্তি এবং যারা তাদের সংস্পর্শে আসছে, যাদের বয়স ৬০ বছর বা তার বেশী, সেই সাথে যাদের অভ্যন্তরীণ কোন রকমের অসুস্থতা রয়েছে তাদেরই পরা উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবাইকে তিন স্তরের ফ্যাব্রিক মাস্ক ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ করেছে।
- সূত্রঃ সিএনএন