টেবিলওয়্যার বিক্রিতে দেশে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এখন আকিজ সিরামিকস

মাত্র তিন বছরের মধ্যে দেশীয় টেবিলওয়্যার বাজারে শীর্ষস্থান দখল করেছে আকিজ সিরামিকস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি স্থানীয় বাজারে ২২ দশমিক ৭৪ শতাংশ মার্কেট শেয়ার অর্জন করেছে। তবে রপ্তানি বাজারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে স্টার সিরামিকস।
বাংলাদেশ সিরামিকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে ৭৫৬ কোটি টাকার টেবিলওয়্যার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আকিজ সিরামিকসের টার্নওভার ১৭১ কোটি টাকা, যা মোট মার্কেট শেয়ারের ২২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাইনপুকুর সিরামিকস ১৬ শতাংশ বাজার দখল করে ১২১ কোটি টাকার বিক্রি করেছে।
আকিজ সিরামিকসের কর্মকর্তারা জানান, নান্দনিক ডিজাইন ও উচ্চমানের কারণে আকিজের ডিনার সেট, টি সেট, কফি সেট, ফিরনি সেট, রাইস বোল, চায়ের কাপ-সসার, কফির মগ ও স্যুপ বাটি সেট বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক দামও বিক্রিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
আকিজ বশির গ্রুপের ডিরেক্টর (অপারেশনস) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, '২০২১ সালে চালু করার পরই আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের বাজারে নাম্বার ওয়ান হওয়া। এজন্য প্রোডাক্টশন ক্যাপাসিটি অন্যদের চেয়ে বেশি করেছি। শুরু থেকেই মার্কেটিং ব্যবস্থায় নতুনত্ব এনেছি। অন্যদের চেয়ে নান্দনিক নকশা ও কোয়ালিটি প্রোডাক্ট দিয়েছি। ফলে কাস্টমাররাও আমাদের প্রোডাক্ট এক্সসেপ্ট করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'লোকাল মার্কেটের পাশাপাশি রপ্তানিও দারুণ সফলতা পেয়েছি। আমাদের লক্ষ্য চলতি বছরের মধ্যে এক্সপোর্টে নাম্বার ওয়ান হওয়া'
মাত্র তিন বছরে রপ্তানি বাজারেও নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে আকিজ। গেল অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি ৫৭ কোটি টাকার টেবিলওয়্যার রপ্তানি করেছে, যা বাংলাদেশের টেবিলওয়্যার রপ্তানি বাজারে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। স্টার সিরামিকস ৯১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে শীর্ষে রয়েছে।
বৈশ্বিক বাজারে ৮১ কোটি টাকার বিক্রিসহ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস (বেক্সিমকো গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান)। তৃতীয় স্থানে থাকা প্যারাগন ৭১ কোটি টাকার, চতুর্থ স্থানে থাকা আর্টিসান সিরামিকস ৬৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।
খোরশেদ আলম বলেন, আমরা ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও নরওয়ের বাজারকে লক্ষ্য করে এগোচ্ছি। সেখানকার রিটেইল ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেছি। আমাদের পণ্যের মান ও ডিজাইন তাদের পছন্দ হয়েছে। আমরা দ্রুত ইউরোপের বাজারের বড় অংশ দখল করতে পারব।
আকিজ গ্রুপ ২০১৮ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২৫ একর জায়গায় টেবিলওয়্যার কারখানা স্থাপন করে। গ্যাস সংযোগ পেতে বিলম্ব হওয়ায় ২০২১ সালের শেষ দিকে উৎপাদন শুরু হয়। প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিল ৩০০ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে আরও বাড়ানো হয়েছে।
টেবিলওয়্যার শিল্পের সম্প্রসারণে প্রতিষ্ঠানটি একই জায়গায় ১৫০ একর জমিতে কারখানা নির্মাণ করছে। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে সিরামিক পল্লি গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আকিজ গ্রুপের কর্মকর্তারা।
টেবিলওয়্যার শিল্পে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি
আকিজ টেবিলওয়্যার ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও দেশের টেবিলওয়্যার বাজারে গত অর্থবছরে স্থানীয় বিক্রি ও রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় কমেছে।
বিসিএমইএর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টেবিলওয়্যার রপ্তানি হয়েছে ৫১৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ কম।
স্থানীয় বাজারেও সামান্য পতন দেখা গেছে। গত অর্থবছরে ৭৫৬ কোটি টাকার টেবিলওয়্যার বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের ৭৫৭ কোটি টাকার তুলনায় শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ কম।
বাংলাদেশ সিরামিকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) মহাসচিব ইরফান উদ্দিনের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় টেবিলওয়্যার খাতে বিক্রি ও রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, গ্যাস সিরামিক শিল্পের অন্যতম প্রধান উপাদান। গত পাঁচ বছরে এর দাম ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে অন্তত ৫০ শতাংশ, আর ডলার সংকটের কারণে খরচ বেড়েছে আরও ৪০ শতাংশ।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, স্থানীয় বাজারে ডেলিভারি চার্জ, মার্কেটিং খরচ ও শ্রম ব্যয়ও বেড়েছে। এসব সমস্যার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন ইউটিলিটি সরবরাহের অভাব যুক্ত হওয়ায় উৎপাদন ও রপ্তানিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।