নীতিগত ও আর্থিক সহায়তায় ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে চামড়া রপ্তানি

সঠিক আর্থিক প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা থাকলে — যা তৈরি পোশাক খাত এর আগে পেয়েছে — বাংলাদেশের চামড়া শিল্প ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিতে পৌঁছাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি)-এর সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর।
আজ রোববার (২৫ মে) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত 'চামড়া শিল্পের কৌশল নির্ধারণ: এলডিসি পরবর্তী টেকসই রপ্তানি' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর জানান, দেশের চামড়া রপ্তানি গত কয়েক বছর ধরে ১.২ থেকে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে স্থবির হয়ে আছে।
তিনি বলেন, "হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে সাভারে স্থানান্তরিত করা হলেও এখনো সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সিইটিপি) সম্পূর্ণভাবে চালু হয়নি। ফলে প্রত্যাশিত হারে রপ্তানি বাড়ছে না।"
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, বিশেষ করে এলডব্লিউজি (লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ)-এর সার্টিফিকেশন না থাকায়—বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এতে পণ্যের মূল্যায়ন কম হচ্ছে এবং রপ্তানির সম্ভাবনা অপচয় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ ও সামাজিক মানদণ্ডে অনুপালনও খাতটির প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর অনুপযুক্ত ও নন-কমপ্ল্যায়েন্ট চামড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি 'এক্সিট স্ট্র্যাটেজি' প্রণয়নের আহ্বান জানান, যাতে টিকে থাকার মতো উদ্যোক্তারা সহজে অর্থায়ন পেয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, চামড়া খাত একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পড়ায় কার্যকর নজরদারি সম্ভব হচ্ছে না। "টেকসই উন্নয়নের জন্য এই শিল্পকে একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে হবে।"
আলোচনায় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, খাতটিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ, উৎপাদন প্রক্রিয়ার আধুনিকীকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কঠোর মানদণ্ড অনুসরণ অত্যাবশ্যক।
তিনি জানান, শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে চামড়া শিল্পের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে।
পরিবেশ সংক্রান্ত উদ্বেগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা যদি অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলেন, তাহলে তা মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত করে এবং পরোক্ষভাবে মৎস্যনির্ভর মানুষের জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কিছু ট্যানারি মালিক নিয়মিত বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করছেন না, যার ফলে সার্বিক ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।
এ অবস্থার অবসানে তিনি ব্যবসায়ীদের সময়মতো ইউটিলিটি বিল পরিশোধের আহ্বান জানান।