লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে রপ্তানি বাড়াতে শিল্প মালিক সমিতির ৭ প্রস্তাব, এক্সপো শুরু ২৯ মে

লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতকে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা এবং রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাত দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বাইশিমাস)। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে আধুনিক 'লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং জোন' গড়ে তোলা, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা।
সমিতির মতে, কার্যকর সরকারি উদ্যোগ ও নীতিগত সহায়তা পেলে এ খাতটি দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতে পারে।
২৭ মে রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সুপারিশগুলো তুলে ধরেন বাইশিমাস সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক।
তিনি জানান, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে আগামী ২৯ ও ৩০ মে মিন্টো রোডে শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে 'বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপো ২০২৫'। এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস (ইসি৪জে) প্রকল্প এবং বাইশিমাস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারক, দেশীয় শিল্পপতি ও বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন।
এক্সপোতে দেশের শীর্ষস্থানীয় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রাংশ ও উদ্ভাবনী পণ্য প্রদর্শন করবে। অংশ নেবে ডাই ও মোল্ড, শিল্প যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি, স্পেয়ার পার্টস, মেটাল কাস্টিং এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সুপারিশ
সংবাদ সম্মেলনে আবদুর রাজ্জাক একটি পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ এবং মান নিয়ন্ত্রিত লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং জোন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, যা বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী কমপ্লায়েন্স–সম্মত পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করবে।
তিনি গবেষণাভিত্তিক উদ্ভাবন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেন।
উৎপাদন ব্যয় বাড়ার জন্য কাঁচামালে উচ্চ শুল্ককে দায়ী করে বাইশিমাস সভাপতি বলেন, এ পরিস্থিতিতে শুল্ক হ্রাস এবং আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি।
চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উন্নত প্রযুক্তি, মানসম্পন্ন ডিজাইন এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশীয়ভাবে উদ্ভাবিত যন্ত্রাংশ ও ডিজাইন যাতে নকল না হয়, সেজন্য সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর পেটেন্ট ও ডিজাইন নিবন্ধন ব্যবস্থার প্রস্তাব দেন আবদুর রাজ্জাক।
শ্রমনির্ভর এই খাতে নারীদের এবং তরুণদের সম্পৃক্ত করতে প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য নগদ সহায়তা এবং সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।
জমির দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, মুন্সিগঞ্জে শিল্পপার্কে প্রতি কাঠা জমির দাম এখন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা, যা উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দে নিরুৎসাহিত করছে। এটি খাতটির অগ্রগতির বড় বাধা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি ৩ লাখ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। খাতটি দেশের জিডিপিতে প্রায় ৩ শতাংশ অবদান রাখছে এবং বছরে ৭৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় করছে।