ব্যাংকগুলোকে অফশোর ইউনিটে আমানত বাড়ানোর নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে (ওবিইউ) প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমানত সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল রোববার (২৮ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্র্যাক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সিটি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের এক সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত একটি ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) টিবিএসকে বলেন, "ব্যাংকখাতে একটা সময় নগদ ডলারের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছিল। তবে এখন আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ বৈডেশিক মুদ্রা জমার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।"
আরএফসিডি হলো বৈদেশিক মুদ্রার অ্যাকাউন্ট। বাংলাদেশে বসবাসকারী ব্যক্তিরা মূলত বিদেশ ভ্রমণ থেকে ফেরার সময় নিয়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
একইভাবে ওবিইউ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে এই ব্যাংকার আরও বলেন, এখানে সুদের হারও অনেক বেশি। ফলে এখানে ডলার জমা করলে প্রবাসীরা অনেক বেশি লাভবান হবেন এবং এসব সুদের ওপর কোনো ট্যাক্সও দিতে হবে না।
সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব আমানত সংগ্রহ করতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আছেন– এমন দেশগুলোতে মার্কেটিং করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশি ঋণদাতা (ফরেন লেন্ডার) এবং আমানতকারীদের জন্য ব্যাংকগুলোকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত এসওএফআর অফারের অনুমোদন দেয়। মূলত, অফশোর ইউনিটে বৈদেশিক মুদ্রা জমা করাতে উৎসাহ দিতেই এই সুযোগ দিয়ে থাকে। বর্তমান এসওএফআর বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলো অফশোর আমানতের ওপর সর্বোচ্চ ৯.৩০ শতাংশ সুদহার অফার করতে পারে।
এই আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ঘাটতি কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব মন্তব্য করে সভায় উপস্থিত আরেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, "আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে (লেনদেনের ভারসাম্য) ট্রেড ডেফিসিট (বাণিজ্য ঘটাতি) অনেক কমে এসেছে। এছাড়া, কারেন্ট অ্যাকাউন্টে (চলতি হিসাব) আমরা সারপ্লাসে (উদ্বৃত্ত) আছি। বর্তমানে আমাদের সমস্যা ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ডেফিসিট (আর্থিক হিসাবে ঘাটতি)।"
ওবিইউ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করে এই ঘাটতি কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন এই ব্যাংকার।
সভা শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হুসেন সাংবাদিকদের বলেন, "আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার বিষয়টি সারা পৃথিবীতে প্রচারের চেষ্টা করছি আমরা। বিশেষ করে, যেসব বাংলাদেশি বিদেশে থাকেন, তারা যেন ফরেন কারেন্সি এখানে এনে রাখেন সে চেষ্টা করছি। যেহেতু দেশের ব্যাংকগুলো আরএফসিডি অ্যাকাউন্টে ফরেন কারেন্সির বিপরিতে ভালো সুদহার অফার করে। সুতরাং, এটি একটি ভালো উদ্যোগ।"
"গত ৫ থেকে ৭ বছরে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ ভারতবর্ষে অনেক দেশে এই উদ্যোগ সফল হয়েছে। এখন আমরাও আরাম্ভ করেছি। বছরখানেকের মধ্যে এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একটা ভালো অ্যামাউন্ট বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারবো আমরা," যোগ করেন তিনি।
ওবিইউ অ্যাক্ট পাশ করার কারণে এখানে ফরেন কারেন্সি ডিপোজিটের সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "এখন আমাদের ব্যাংকগুলোর প্রয়োজন এটাকে ভালো করে বুঝে প্রোগ্রাম তৈরি, মার্কেটিং ও কর্মকর্তাদের ট্রেনিং করার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে এটাকে প্রমোট করা। রেমিটারদের বাইরেও দেশের বাইরে যেসব বাংলাদেশি প্রফেশনাল রয়েছেন, তারা এখানে বিদেশি মুদ্রা জমা রাখবেন। ফলে দেশে ফরেন কারেন্সির প্রবাহ বাড়বে।"
"এখানে আমরা ভালো মুনাফা দেব, অন্যদিকে আবার সরকারের পুরো গ্যারেন্টি দেওয়া হচ্ছে। এতে কোনো ট্যাক্স চার্জ করা হবে না। তাই নিশ্চিতভাবে এখানে ডলার ডিপোজিট আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস," বলেন তিনি।