ব্যাংকিং সেবার ফি পুনঃনির্ধারণ

ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব, ঋণ প্রদান ও অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে কী পরিমাণ ফি নেয়া যাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ফি নেয়া যাবে না তা উল্লেখ করে নতুন নির্দেশনা (মাস্টার সার্কুলার) দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) ইস্যু করা এ সংক্রান্ত সার্কুলারে বলা হয়, দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকিং সেবার ফি নতুনভাবে নির্ধারণ ও পরিপালন সংক্রান্ত সমন্বিত নির্দেশনা দেয়া হলো।
আমানত সংক্রান্ত: সঞ্চয়ী হিসাব (সেভিংস একাউন্ট) খোলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা এবং চলতি হিসাব (কারেন্ট একাউন্ট) খোলার ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা ফি নেয়া যাবে।
তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত তথা ১০/৫০/১০০ টাকার একাউন্ট (নন ফ্রিল একাউন্ট) খোলার ক্ষেত্রে কোন ফি নেয়া যাবে না।
একাউন্ট মেইনটেনেন্স ফি: কো একাউন্টে গড় আমানত ১০ হাজার টাকার কম হলে কোন ফি নেয়া যাবে না। তবে ১০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বার্ষিক ফি ২০০ টাকা, ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ৪০০ টাকা, ২ লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত ৫০০ টাকা এবং ১০ লাখের বেশি হলে ৬০০ টাকা।
তবে চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে বার্ষিক এই ফি ৬০০ টাকা এবং স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) একাউন্ট এর ক্ষেত্রে এই ফি ১ হাজার টাকা। কোন সঞ্চয়ী আমানত মেয়াদ পূর্তির আগে নগদায়ন করার ক্ষেত্রে কোন ফি আরোপ করা যাবে না।
একাউন্ট স্থানান্তর: একই ব্যাংকের অন্য শাখায় একাউন্ট স্থানান্তরের ক্ষেত্রে জেলায় ৫০ টাকা এবং অন্য জেলায় ১০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে।
একাউন্ট বন্ধকরণ ফি: সঞ্চয়ী হিসাবের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা এবং চলতি হিসাব ও স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট (এসএনডি) এর ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা আদায় করা যাবে। তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের একাউন্ট বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোন ফি আদায় করা যাবে না।
সলভেনসি সার্টিফিকেট এর জন্য প্রতিবার সর্বোচ্চ ২০০ টাকা করে ফি আদায় করা যাবে। চেক ফেরতের ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৫০ টাকা চার্জ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। আর চেক ইস্যু ও হারানো চেক এর বিপরীতে নতুন চেক বই ইস্যু করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ নেয়া যাবে না।
পুঁজিবাজারে লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা বিও একাউন্ট এর ক্ষেত্রে বিও সনদ প্রদানের চার্জ সর্বোচ্চ ১০০ টাকা।
পে-অর্ডার এর ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ২০ টাকা, ১০০১ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং ১ লাখ টাকার বেশি হলে ১০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে। পে-অর্ডার বাতিলের ক্ষেত্রে প্রতিবার ৫০ টাকা চার্জ দিতে হবে।
ডিমান্ড ট্রাফট, টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার, মেইল ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ২০ টাকা, ১০০১ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০ টাকা, ১ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত ১০০ টাকা, ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত ২শ টাকা এবং ১০ লাখ টাকার বেশি হলে ফি ৩০০ টাকা। ট্রান্সফার বাতিল করতে প্রতিবার ৫০ টাকা ফি আদায় করা যাবে।
ঋণ প্রদান সংক্রান্ত ফি: ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে লোন প্রসেসিং ফি ০.৫০ শতাংশ। তবে কোনভাবেই ১৫ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না। ৫০ লাখ টাকার অধিক হলে এই হার ০.৩০ শতাংশ, তবে ২০ হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না। ঋণ আবেদন ফি নামে কোন ফি নেয়া যাবে না।
কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ (সিএমএসএমই) এবং কৃষিখাতের ঋণ পুন:তফসিল বা পুনর্গঠন এর ক্ষেত্রে কোন ফি আদায় করা যাবে না।
তবে অন্যান্য খাতের জন্য যে পরিমাণ ঋণ পুন:তফিসল বা পুনর্গঠন করা হবে তার ০.২৫ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ফি নেয়া যাবে।
রপ্তানির জন্য নেয়া ঋণের ক্ষেত্রে সুদহারের অতিরিক্ত কোন সার্ভিস চার্জ, ঋণ ব্যবস্থাপনা ফি, সুপারভিশন ফি, ঝুঁকি ফি ইত্যাদি নামে কোন চার্জ আরোপ করা যাবে না।
কোন গ্রাহক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে বকেয়া ঋণের ০.৫০ শতাংশ 'আরলি সেটেলমেন্ট' ফি আদায় করা যাবে। তবে কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র এবং চলতি বা ডিমান্ড লোনের ক্ষেত্রে এই ধরনের ফি আদায় করা যাবে না।
এলসি খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ টাকা আমদানিকারক দিলে প্রতি তিন মাসে ০.২৫ শতাংশ কমিশন বাবদ ফি ব্যাংককে দিতে হবে। বিলম্বে আমদানি ব্যয় পরিশোধের জন্য খোলা এলসির ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাসে এই হার ০.৫০ শতাংশ এবং ব্যাংক টু ব্যাংক এলসির ক্ষেত্রে প্রতি তিন মাসে এই হার ০.৪০ শতাংশ।
ব্যাংক টু ব্যাংক এলসি সার্টিফিকেট চার্জ, সিএন্ডএফ সার্টিফিকেট ইস্যুর চার্জ, রপ্তানি মূল্য আদায়ের সার্টিফিকেট ইস্যুর চার্জ ৫০০ টাকার বেশি হবে না।
এছাড়া বছরে দুই বার ব্যাংকের আমানত ও ঋণ হিসাবধারী প্রত্যেক গ্রাহককে হিসাবের স্থিতি নিশ্চিত করণ সনদ (ব্যালেন্স কনফারমেশন সার্টিফিকেট ফি) প্রদানের জন্য কোন ফি নেয়া যাবে না। তবে দুইবারের বেশি এই সনদ নিতে হলে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত ফি'র বাইরে অন্য কোন অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। প্রতি বছর ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বর ফি সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রেরণ করতে হবে।
চার্জ/ফি/কমিশনের কোন পরিবর্তন হলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়ে, ব্যাংকের স্ব স্ব শাখায় দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।