চীনে বেকার হয়ে পড়েছেন ৮ কোটি মানুষ

চীনের বাজারে চাকরি খুঁজতে অভ্যস্ত ছিলেন ওয়াং। ২৬ বছর বয়সী তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এই কর্মী গত বছরের পুরোটাই এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানিতে চাকরি করতে বাধ্য হন। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সংঘাতের ডামাডোলে চীনের প্রযুক্তিখাত এক ধরনের অস্থিরতায় পড়ে। এবং পুঁজিবাজারেও শেয়ারের দর উত্থানপতনের শিকার হলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে বৃহৎ কোম্পানি সীমিত পরিসরে হলেও কর্মী ছাঁটাই করে।
ওয়াং সর্বশেষ চাকরি করেছেন বেজিংভিত্তিক একটি ইন্টারনেট কোম্পানিতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটি ওয়াংকে চাকরীচ্যুত করে। গত বছরের দুঃসময়ের পর যখন সামনে সুদিনের আশা করেছিলেন ঠিক তখনই পরিস্থিতি যে অসহনীয় হয়ে উঠবে তা ছিল ওয়াংয়ের ধারণার বাইরে।
সিএনএন বিজনেসকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গতবছর যেন জাহান্নামে ছিলাম। কিন্তু ২০২০ সাল তার চাইতেও খারাপ। করোনাভাইরাস আমাদের অর্থনীতিকে সামনে থেকেই শক্ত আঘাত করেছে।
নিজের পুরো নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ওই সাক্ষাৎকার দেন। নাম প্রকাশ করা হলে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের কাছে তিনি যে বেকার সেটা প্রকাশ হয়ে যাবে, ফলে তারা দুশ্চিন্তা করবেন- এমন চিন্তা থেকে শুধু ওয়াং নন, চীনের অনেকেই চাকরি হারানোর পরেও তা গোপন রেখেছেন।
এছাড়াও, জনসম্মুখে বেকারত্বের কথা প্রকাশ করলে পরবর্তীতে চাকরি পাওয়া অসম্ভব হবে এমন আশঙ্কাতো আছেই।
তবে লুকোছাপা যতোই চলুক, করোনার মহামারি চলতি বছরের বেশ কয়েক সপ্তাহ চীনা অর্থনীতির বিশাল চাকাকে প্রায় থামিয়ে দিয়েছিল। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে কোটি কোটি মানুষ কর্মসংস্থান হারান।
ঠিক কত মানুষ এখন সেখানে কর্মহারা তার সঠিক তথ্য পাওয়া খুব মুশকিল। বেজিং প্রকাশিত সরকারি তথ্য খুবই অস্বচ্ছ বলে অভিযোগ রয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষজ্ঞদের।

দেশটির সরকারি তথ্যানুসারে, গতবছরের শুরুর ৪ শতাংশ থেকে চলতি বছর নাগাদ শহুরাঞ্চলে বেকারত্বের হার ৫ শতাংশের কিছু বেশি হারে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ এই তথ্য বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয়নি। অর্থাৎ এখানে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে।
তবে সমালোচনা থাকলেও সরকারি তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির সূচনা দেওয়া হচ্ছে। মার্চে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যা আগের মাসের ৬ দশমিক ২ শতাংশের রেকর্ড হারের চাইতে কিছুটা কম। অতি সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে শুধু গত মার্চেই দুই কোটি ৭০ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন। চীনের সরকারি তথ্যকে নিজস্ব এক হিসাবে গণনা করে বার্তা সংস্থা সিএনএন এই সংখ্যা তুলে ধরে। এর ফলে মার্চ নাগাদ মোট ৮ কোটি লোক কর্মসংস্থান হারিয়েছে বলেও জানানো হয়।
এব্যাপারে হংকংয়ের চাইনিজ ইউনিভার্সিটির চীন গবেষণা কেন্দ্রের সহকারি অধ্যাপক উইলি ল্যাম নিজ মতামত দেন। তার পর্যবেক্ষণ, চীন সরকার বেকারত্ব নিয়ে যে তথ্য দিচ্ছে নিঃসন্দেহে তা প্রকৃত সংখ্যার চাইতে ও অনেক কম। অর্থনীতি নিয়ে মন্দ তথ্য-উপাত্ত চীন সরকার প্রকাশ করতে আগ্রহী হবে্ এমনটা ভাবা ঠিক নয়। বরং অধিকাংশ সময়েই সঠিক তথ্যকে কেটেছেটে বা তা অনেকটা পরিমার্জন করে কর্মকর্তারা উপস্থাপন করেন। তাই প্রকৃতপক্ষে ৮ কতির বেশি মানুষ বেকার হতে পারেন।
কর্মসংস্থান বিষয়ক চীনা সরকারি তথ্য-উপাত্তের আরেক দুর্বলতা এখানে গ্রামীণ অর্থনীতির কর্মী বা অভ্যন্তরীণ অভিবাসী নির্মাণখাতের শ্রমিকদের বেকারত্ব গণনা করা হয় না। দেশটিতে এমন অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ২৯ কোটি। এদের অনেকেই কম মজুরির বেশ কিছু উৎপাদনখাতের ওপর কর্মসংস্থানের জন্য নির্ভরশীল। কিন্তু জানুয়ারি থেকেই এসব খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মচাঞ্চল্য হ্রাস পাওয়ার কথা আশঙ্কা করা হয়েছিল।