আবারও রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহ, মার্চে প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ

করোনার মাঝেও চলতি অর্থবছরের শুরুতে রেমিট্যান্সের যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, পরবর্তী মাসগুলোতে সেটি কমতে থাকলেও মার্চে এসে আবারো উল্লম্ফন হয়েছে।
মার্চ শেষে গেল বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। গেল মাসে রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ১.৯২ বিলিয়ন ডলার।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে রেমিট্যান্সের এই হালনাগাদ তথ্য পাওয়া গেছে।
মার্চে এমন উল্লম্ফনের বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি'র সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গেল বছরের মার্চে, ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এর সাথে তুলনা করলে চলতি বছরের মার্চে প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি দেখাচ্ছে। কিন্তু ২০১৯ সালের সাথে তুলনায় করলে এটা খুব বেশি না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের মার্চে রেমিট্যান্স আয় হয়েছিল ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা গেল বছরের মার্চে ছিল ১.২৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে মোট রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ১৮.৬ বিলিয়ন ডলার। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের জুলাই-মার্চে রেমিট্যান্স আয় হয়েছিল ১৩.৭৭ বিলিয়ন ডলার।
করোনার মাঝেও রেমিট্যান্সের এমন প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূলত করোনার ফলে হুন্ডির চক্র ভেঙ্গে পড়েছে, তথা অবৈধ পথ পুরোপুরি বন্ধ থাকায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো অনেক বাড়ছে।
এছাড়া রেমিট্যান্সের বিপরীতে ২ শতাংশ প্রণোদনা (কোন ব্যাংক ৩ শতাংশও দিচ্ছে), কাগজপত্র ছাড়াই ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধা, সেকেন্ড ওয়েভকে সামনে রেখে আত্মীয়স্বজনদের প্রয়োজন পূরণ করার মত বিষয়গুলোর কারণে রেমিট্যান্স আয় বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'প্রবাসীদের হাতে যা সঞ্চয় ছিল তা পাঠানো হয়ে গেছে। নতুন করে আগের মত শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে আবার দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়েছে। তাতে আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কতটা বাড়বে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না'।
রেমিট্যান্স সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসে করোনার মাঝে ৩৬,১৭৬ জন প্রবাসী বিদেশে গেছেন, যাদের মধ্যে ৩ হাজারের বেশি নারীও আছেন। গেল অর্থবছরের একই সময়ে ২ লাখের বেশি শ্রমিক বিদেশে গিয়েছিল। যার মধ্যে নারী ছিল ২৬ হাজারের বেশি।
মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে সম্প্রতি রেমিট্যান্স নিয়ে সিপিডি যে গবেষণা করেছে তাতে ২ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ অব্যাহত রাখা, বৈধ উপায়কে আরো জনপ্রিয় করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া যেসব দেশে শ্রমিকরা ছাঁটাইয়ের মুখে পড়ছে তাদের সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ এবং সরকারি উদ্যোগে জনশক্তি রপ্তানির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ প্রণোদনার সুবিধা নিয়ে আবার রেমিট্যান্স হয়ে দেশে প্রবেশ করছে কিনা অর্থাৎ সার্কুলার ফ্লো হচ্ছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত।
রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে। উচ্চ রেমিট্যান্সের প্রভাবে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও।
এ প্রসঙ্গে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার রিজার্ভ থেকে অর্থ নিয়ে যে অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল করেছে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এই অর্থ নেয়া সহজ হবে।