জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ২৯ শতাংশ, ৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

সদ্য সমাপ্ত জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২.৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। তবে ছয় মাসের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সবচেয়ে কম—২.১৯ বিলিয়ন ডলার—রেমিট্যান্স এসেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, কোটাবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে, দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৯১ বিলিয়ন ডলার। অবশ্য ওই সময় ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ কমে যায়।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "এখন প্রতি মাসে গড়ে আমরা ২.৫ বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিট্যান্স পাচ্ছি। রেমিট্যান্সে ইয়ার-অন-ইয়ার প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ মানি লন্ডারিং কমে যাওয়া। ডলার পাচারের চাহিদা কম থাকায় এর প্রভাব রেমিট্যান্স প্রবাহে পড়ছে।"
তবে জুলাইয়ে আগের ছয় মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কম আসার পেছনে দুটি কারণ তুলে ধরেন এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার। তিনি বলেন, "ঈদের পরবর্তী মাসে সাধারণত রেমিট্যান্স কিছুটা কমে যায়। তাছাড়া, জুলাইয়ে ডলারের দামে কিছুটা অস্থিরতা ছিল। রেট ওঠানামা বেশি হলেও রেমিট্যান্সে প্রভাব পড়ে।"
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ
জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডলারের দাম প্রায় ৩ টাকা কমে যাওয়ায় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১৩ জুলাই অকশনের মাধ্যমে ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওইদিন ১২১.৫০ টাকা রেটে ১৭৩ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়।
তখন ব্যাংকগুলো ১২০-১২০.৫০ টাকা দরে ডলার বিক্রির প্রস্তাব দিলেও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে বেশি দামে ডলার কেনে। এতে মূলত বাজারে ডলারের রেট বাড়ানোর সংকেত দেওয়া হয়। পরে ১৫ জুলাই একই দামে আরও ৩৭৩ মিলিয়ন ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক।
টানা দুটি অকশনে বেশি দামে ডলার কেনার ফলে বাজারে ডলারের দাম আবার বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১২২-১২৩ টাকা দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে।
একটি বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের কান্ট্রি হেড বলেন, "ডলারের দাম স্থিতিশীল থাকা উচিত। কারণ দাম কমে আবার বাড়তে শুরু করলে প্রবাসীদের মধ্যে আশা তৈরি হয় যে আরও বাড়বে। তখন অনেকেই রেমিট্যান্স পাঠানো পিছিয়ে দেন। আবার, ডলারের দাম বেশি কমে গেলে হুন্ডি চ্যানেল সক্রিয় হয়ে ওঠে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোনো এক অর্থবছরে ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
গত অর্থবছরের মার্চে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ।
সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আয় ইসলামী ব্যাংকের
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক—৫৩৪ মিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক (২৪৭ মিলিয়ন ডলার), তৃতীয় স্থানে কৃষি ব্যাংক (২২৯ মিলিয়ন ডলার) এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক (১৭৮ মিলিয়ন ডলার)।
এছাড়া জনতা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে পেয়েছে ৭৭৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো পেয়েছে ১.৬৯ বিলিয়ন ডলার।