আসল ছবি বেচে জাদুঘর কর্মকর্তা কিনলেন রোলস রয়েস, হাতঘড়ি!

জার্মানিতে জাদুঘরের একজন কর্মকর্তা নকল চিত্রকর্মের সঙ্গে আসলটির অদল-বদল ঘটিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। ওই ব্যক্তি নানা সামগ্রীর ভুয়া সংস্করণ তৈরি করে তা জাদুঘরে রেখে আসল জিনিস বিক্রি করে রোলস রয়েস, মূল্যবান হাতঘড়ি সহ নানা বিলাসবহুল পণ্য কিনেছেন। জার্মানির মিউনিখ আদালত এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জার্মানির কঠোর গোপনীয়তা আইনের কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। ৩০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি আরও তিনটি শিল্পকর্ম চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। তার কারাদণ্ড হয়নি, তবে তাকে ২১ মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া তাকে ৬০ হাজার ৬০০ ইউরো অর্থ ফেরত দিতে হবে।
গত সপ্তাহে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিউনিখ ডিসট্রিক্ট আদালত জানান, সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির স্বীকারোক্তি প্রদান এবং অনুশোচনার মনোভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আদালতের আদেশে বলা হয়, 'তিনি কিছু না ভেবেই কাজটি করেছেন। সে তার আচরণ ব্যাখ্যা করতে পারেনি।'
অভিযুক্ত ব্যক্তি মিউনিখের ডয়েচেস জাদুঘরে কাজ করেন। তিনি সেখানে ২০১৬ সালের মে থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জাদুঘরের সংগ্রহশালা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময় তিনি ফ্রাঞ্জ ফন স্টাকের 'দ্য টেল অব দ্য ফ্রগ প্রিন্স' শিল্পকর্মটি ভুয়া ছবি দিয়ে প্রতিস্থাপন করে আসলটি নিলামে বিক্রি করেন। মিউনিখের নিলাম কর্তৃপক্ষকেও তিনি মিথ্যা বলেছিলেন। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান, ওই চিত্রকর্ম তার পিতামহ এবং প্র-পিতামহের কাছে ছিল। পরে তিনি শিল্পকর্মটি ৭০ হাজার ইউরোর বিনিময়ে সুইস গ্যালারিতে বিক্রি করে দেন। নিলামসংক্রান্ত মাশুল পরিশোধের পর ৫০ হাজার ইউরো নগদ গ্রহণ করেন তিনি।
অভিযুক্ত ব্যক্তি জাদুঘরের মজুদখানা থেকে আরও তিনটি চিত্রকর্ম চুরি করে দুটিই বিক্রি করে দেন। এর মধ্যে একটি নিলামে ও আরেকটি নিলাম কক্ষে সরাসরি বিক্রি করা হয়। এই পর্যায়ে সাকুল্যে এসবের মূল্য দাঁড়ায় ১১ হাজার ৪৯০ ইউরো।
অভিযুক্ত ব্যক্তি এ অর্থ ঋণ পরিশোধ এবং বিলাসদ্রব্য কিনতে ব্যয় করেছেন। আদালত বলেন, 'বিবাদী ব্যক্তি সংগ্রহশালার মজুদখানার কক্ষে প্রবেশের সুযোগ নির্লজ্জভাবে অপব্যবহার করেছেন। এবং নিজের উচ্চস্তরীয় বিলাসি জীবন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেখানোর মনোবৃত্তি থেকে মূল্যবান সাংস্কৃতিক সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন।'
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া প্রশ্নের জবাবে নিলাম কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র কেটেরার কুন্সট জানান, চুরি করে সংগৃহীত সামগ্রী চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের দায়িত্ব যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে পালন করছি এবং ওইসব সামগ্রীগুলো সম্পর্কে গবেষণা করেছি। সামগ্রীগুলো যে জাদুঘর থেকে চুরি হয়েছে, সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করেছি এবং মামলাটি সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে জিনিসগুলো হস্তান্তর করেছি।'
ডয়েচেস মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের একজন মুখপাত্র জানান, তারা খোয়া যাওয়া সামগ্রীগুলো পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। সবগুলো সামগ্রীই জাদুঘরে ফিরিয়ে আনতে চান তারা। এরই মধ্যে একটি শিল্পকর্ম পুলিশের হাতে এসেছে।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ আরও জানান, যে জায়গা থেকে জিনিসগুলো হারিয়েছে সেটি 'প্রকৃতপক্ষে বেশ সুরক্ষিত'। এছাড়া যে ব্যক্তি এর দায়িত্বে ছিলেন তার আগের অপরাধসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।