মেলায় এসেছে পূর্ববঙ্গের নীল চাষ ও বিদ্রোহ এবং সতীদাহ প্রথা নিয়ে দুটি আকরগ্রন্থ

নীল চাষ ও সতীদাহ প্রথা—ভারতবর্ষের ইতিহাসে দুটি মর্মান্তিক অধ্যায়। নীলচাষের ইতিহাস হয়ে আছে অর্থনৈতিক আগ্রাসন, ব্রিটিশদের নিপীড়ন ও সামাজিক সংগ্রামের। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সদ্যবিধবা নারীকে স্বামীর চিতায় সহমরণ বা আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করার এক অমানবিক প্রথা সতীদাহ।
পূর্ববঙ্গে এ দুইয়ের ইতিহাস নিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দিব্যপ্রকাশ থেকে এসেছে দুটি বই। লেখক মোঃ মাহমুদ আলী।
পূর্ববঙ্গে নীল চাষ ও নীল বিদ্রোহের ইতিহাস
একসময় সমগ্র পূর্ববঙ্গ তথা বর্তমান বাংলাদেশে আনুমানিক দুই শতাধিক ছোট-বড় নীলকুঠি ও নীল ফ্যাক্টরি (কারখানা) ছিল বলে প্রতীয়মান। কালের পরিক্রমায় অধিকাংশ নীলকুঠি ও নীল ফ্যাক্টরি ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ বইটিতে প্রায় ১০০টি নীলকুঠি ও নীল কারখানার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে।

পাঠকদের সুবিধার্থে বইটিতে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) বিভিন্ন জেলায় নীল চাষের বিবরণ, উল্লেখযোগ্য নীলকুঠি ও নীল কারখানাসমূহের ইতিহাস বর্ণনার পাশাপাশি ছবি সংযোজন করা হয়েছে। বইটিতে ভারতবর্ষে নীল চাষ প্রচলনের ইতিহাস, নীল চাষ সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন-কানুন, নীল চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা, নীল উৎপাদনের প্রক্রিয়া এবং অবিভক্ত বাংলায় নীল চাষের এলাকাসমূহ ও নীল উৎপাদনের পরিমাণ, নীল চাষে লাভ ও ক্ষতির পরিমাণ এবং নীলকরদের অত্যাচার, নীল বিদ্রোহ ও নীল কমিশন-১৮৬০ প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বইটিতে তৎকালীন ভারতবর্ষের যেসব অঞ্চলে নীল চাষ করা হতো, অবিভক্ত বাংলার যেসব অঞ্চলে ব্যাপক নীল চাষ করা হতো, পূর্ববঙ্গের যেসব অঞ্চলে নীল চাষ করা হতো, পূর্ববঙ্গের উল্লেখযোগ্য নীলকুঠি, নীল কারখানা, কয়েদখানা, নীলকর সাহবদের সমাধি ও বাড়িগুলোর অবস্থান এবং অবিভক্ত বাংলার যেসব স্থানে ব্যাপক নীল বিদ্রোহ হয়েছিল, তা ৫টি মানচিত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়া বইটিতে পূর্ববঙ্গের উল্লেখযোগ্য নীলকর সাহেবদের তালিকাও সংযোজন করা হয়েছে। যোগ করা হয়েছে নীল চাষ পদ্ধতি, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন-সংক্রান্ত বিভিন্ন চিত্রকর কর্তৃক অঙ্কিত বেশকিছু চিত্র।
সতীদাহ প্রথা এবং পূর্ববঙ্গের সতীদাহ মন্দির
একসময় সমগ্র পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ) বেশ কিছু সতীদাহ মন্দির ছিল। কালের পরিক্রমায় অধিকাংশ সতীদাহ মন্দির ধবংস হয়ে গেছে অথবা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই বইটিতে পূর্ববঙ্গের কিছু উল্লেখযোগ্য সতীদাহ মন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনার পাশাপাশি এসব স্থাপনার আলোকচিত্র সংযোজন করা হয়েছে।

পাঠকদের সুবিধার্থে বইটিতে ভারতবর্ষে সহমরণ বা সতীদাহ প্রথার ইতিহাস, বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র/ধর্মগ্রন্থে এবং পৌরাণিক কাহিনীতে সহমরণ বা সতীদাহ প্রথার বিবরণ, বিভিন্ন বিদেশি পরিব্রাজকদের চোখে দেখা সে সময়ের সহমরণ বা সতীদাহ প্রথার বিবরণ, তৎকালীন বাংলা সাহিত্যে ও সংবাদপত্রে সহমরণ বা সতীদাহ প্রথার বিবরণ, সহমরণ বা সতীদাহ প্রক্রিয়া, বঙ্গদেশে সতীদাহ প্রথা উৎপত্তির কারণ ও সতীদাহের সংখ্যা, সহমরণ বা সতীদাহ প্রথা বন্ধের পদক্ষেপসমূহ এবং এ সম্পর্কিত আইন-কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বইটিতে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) কিছু উল্লেখযোগ্য সতীদাহ মন্দির ও শ্মশানের অবস্থান একটি মানচিত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া বইটিতে তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন দেশের চিত্রকরদের আঁকা সহমরণ বা সতীদাহ প্রথা-সংক্রান্ত বেশ কিছু চিত্র সংযোজন করা হয়েছে।