জাল নথিতে বিদেশি ফুটবলার খেলানোর অভিযোগে মালয়েশিয়ার ৭ খেলোয়াড়কে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করল ফিফা

জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য সাত বিদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারের নাগরিকত্বের নথি জাল করার অভিযোগ এনেছে ফিফা। এই অভিযোগে মালয়েশিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএএম)-কে ৩৫ হাজার সুইস ফ্রাঁ (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৪ লাখ টাকা) জরিমানা করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত সাত খেলোয়াড়কে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সোমবার ফিফা তাদের শাস্তির সিদ্ধান্তের পেছনে থাকা বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ফিফার অভিযোগ, মালয়েশিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জালিয়াতি করে জন্মসনদ তৈরি করেছিল, যেখানে দেখানো হয় যে ওই খেলোয়াড়দের দাদা-দাদি বা নানা-নানি মালয়েশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ফিফার মতে, এটি একধরণের 'প্রতারণা'।
তবে, এফএএম এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, নথিপত্রে যে অসঙ্গতি দেখা গেছে, তা একটি 'প্রশাসনিক ভুল' এর কারণে ঘটেছে। অ্যাসোসিয়েশন বলছে, খেলোয়াড়রা 'বৈধ মালয়েশীয় নাগরিক' এবং তারা ফিফার এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করবে।
ফিফার নীতিমালা অনুসারে, বিদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলাররা সেই দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, যেখানে তাদের বাবা-মা অথবা দাদা-নানি জন্মগ্রহণ করেছেন। এই নিয়মের মূল উদ্দেশ্য হলো, জাতীয় দলগুলো যাতে শুধুমাত্র নিজেদের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য বিদেশি খেলোয়াড়দের আমদানি না করে।
গত জুনে ভিয়েতনামের বিপক্ষে মালয়েশিয়ার ৪-০ গোলের জয়ের পর থেকেই খেলোয়াড়দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপর ফিফা তদন্ত শুরু করে। সেপ্টেম্বরে ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি এই সাত খেলোয়াড়কে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে এবং প্রত্যেককে ২ হাজার সুইস ফ্রাঁ (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আড়াই লাখ টাকা) করে জরিমানা করে।
সেসময় ফিফা নিষেধাজ্ঞার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি, কেবল জানিয়েছিল যে এটি 'বিকৃত নথি' সম্পর্কিত।
চলতি বছরের শুরুর দিকে এফএএম ফিফাকে যে জন্মসনদ পাঠিয়েছিল, তাতে দেখানো হয়েছিল যে, সাত খেলোয়াড়ের দাদা-নানি পেনাং ও মালাক্কার মতো মালয়েশীয় শহরগুলিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ফিফার তদন্তকারীরা খেলোয়াড়দের দাদা-নানিদের আসল জন্মসনদ সংগ্রহ করলে দেখা যায়, তারা আর্জেন্টিনা ও স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই জন্মস্থানগুলো খেলোয়াড়দের নিজ জন্মস্থানের সঙ্গে মিলে যায়।
নিষিদ্ধ হওয়া সাত খেলোয়াড়ের মধ্যে রয়েছেন স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত গ্যাব্রিয়েল ফেলিপ আরোচা, ফাকুন্ডো টমাস গারসেস এবং জন ইরাজাবাল ইরাউরগুই। এছাড়া, আছেন আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত রদ্রিগো জুলিয়ান হোলগাডো ও ইমানোল জাভিয়ের মাচুকা, নেদারল্যান্ডস-বংশোদ্ভূত হেক্টর আলেজান্দ্রো হেভেল সেরানো এবং ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত জোয়াও ভিটোর ব্রান্ডাও ফিগেইরেডো।
মালয়েশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী হান্নাহ ইওহ ফিফার এই অনুসন্ধানকে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে জানান, মন্ত্রণালয় এফএএম-এর আপিলের ফলাফল না আসা পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে না।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমি বুঝি যে সকল স্থানীয় ফুটবল ভক্ত স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ, হতাশ এবং উন্নতি দেখতে চান।'
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো প্রাকৃতিকৃত খেলোয়াড়দের নিয়োগের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া তাদের ডাচ বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের নিয়োগের কৌশল অনুসরণ করে নিজেদের পারফরম্যান্স বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
এই সপ্তাহে মালয়েশিয়ার লাওসের বিপক্ষে আরেকটি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে। তবে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে মালয়েশীয় দলের লাইনআপে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।