কর্মী পাঠাতে মালয়েশিয়ার ১০ শর্তের মধ্যে কয়েকটিতে শক্ত আপত্তি জানিয়েছে সরকার: প্রবাসী উপদেষ্টা
কর্মী পাঠাতে মালয়েশিয়ার ১০ শর্তের মধ্যে কয়েকটিতে সরকার শক্ত আপত্তি জানিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, 'মালয়েশিয়া থেকে যে ১০টা শর্ত দিয়েছে, কয়েকটা শর্তের ব্যাপারে আমরা শক্ত আপত্তি জানিয়েছি। আমরা রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে কথা বলার পরে মালেশিয়াকে জানিয়েছি যে এসব শর্ত মিটআপ করা সম্ভব না। কারণ এগুলো মিটআপ করতে গেলে এখানে আবার সিন্ডিকেট হবে। অল্প কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি সুযোগ পাবে। এটি আমরা চাই না।'
বুধবার (১৯ নভেম্বর) নিরাপদ অভিবাসন এবং ন্যায্য নিয়োগের লক্ষ্যে ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, 'মালয়েশিয়া আশ্বাস দিয়েছে তারা এগুলো বিবেচনা করবে। শ্রমবাজার সবসময় সবার জন্য উন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা মালয়েশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ অব্যাহত রাখব।'
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য যোগ্য বাংলাদেশি সংস্থা হিসেবে মালয়েশিয়া সম্প্রতি ১০টি নতুন মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠানো একটি চিঠির মাধ্যমে প্রবর্তিত নতুন মানদণ্ড অনুযায়ী- এজেন্সিগুলোর কমপক্ষে পাঁচ বছরের বৈধ লাইসেন্স, গত পাঁচ বছরে ৩,০০০ বিদেশি কর্মী ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা, কমপক্ষে তিনটি দেশে কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা, একটি 'গুড কন্ডাক্ট সার্টিফিকেট', জোরপূর্বক শ্রম বা পাচারের কোনো রেকর্ড না থাকা, একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মালিকানা এবং কমপক্ষে তিন বছর ধরে ১০,০০০ বর্গফুটের একটি স্থায়ী অফিস থাকা আবশ্যক।
এর আগে, মাত্র ১০০টি সংস্থাকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা একটি সিন্ডিকেট নামে পরিচিত।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বাংলাদেশ সরকার, আইএলও এবং সুইজারল্যান্ড সরকারের যৌথ উদ্যোগে ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি) চালু করেন।
প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে তৈরি এই সমন্বিত জাতীয় ডিজিটাল গেটওয়েটি শ্রম অভিবাসন চক্রের সব গুরুত্বপূর্ণ অংশকে সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অভিবাসী কর্মী, নিয়োগ সংস্থা, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, নিয়োগকর্তা, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এবং প্রত্যাবর্তন ও পুনঃএকত্রীকরণ সেবা দানকারী।
এসব প্রতিষ্ঠান ও সেবাকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার মাধ্যমে ওইপি অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সেবা প্রদানের মান উন্নত করতে, মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা কমাতে এবং কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় হ্রাসে অবদান রাখবে।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আগে আগ্রহী অভিবাসীদের এসব সেবার জন্য 'আমি প্রবাসী' অ্যাপের মাধ্যমে টাকা দিতে হতো। নতুন প্ল্যাটফর্মে এসব সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম; বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন দেইপাক এলমার; এবং আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স তুনন, অন্যান্যদের মধ্যে।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নিয়ামত উল্লাহ ভূইঁয়া।
