তানভীরের দুর্দান্ত পাঁচ উইকেট, মেন্ডিস-লিয়ানাগে ঝড় সামলে ১৬ রানে জয় বাংলাদেশের

বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই দুর্দান্ত পাঁচ উইকেট শিকার এবং কুশল মেন্ডিসের তাণ্ডব ও জানিথ লিয়ানাগের ব্যাটিং মহাকাব্য পেরিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টাইগাররা এই জয় পায়।
প্রথম ম্যাচে ৭৭ রানে হারলেও এই জয়ে সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ফিরে এসেছে বাংলাদেশ।
উইকেটের কঠিন আচরণে ব্যাটিংটা সহজ ছিল না। ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তৌহিদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ ৪৫.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৮ রান তোলে। পরে তানভীর ইসলাম প্রমাণ করেন, এই রানই যথেষ্ট, যদিও শ্রীলঙ্কার ইনিংসে যথেষ্ট প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় টাইগারদের।
কুশল মেন্ডিস মাত্র ২০ বলে নিজের ৩৪তম অর্ধশতক পূর্ণ করে ম্যাচ একচেটিয়া নিয়ে যাচ্ছিলেন। তানভীর তাকে ফিরিয়ে এনে ম্যাচে বাংলাদেশকে প্রাণ ফেরান, এরপর তাঁর ঘূর্ণির জালে জড়িয়ে পড়ে লঙ্কান মিডল অর্ডার।
তানভীর ১০ ওভারে ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেন। তবু লড়াই থেমে থাকেনি। জানিথ লিয়ানাগে ও দুশমন্থ চামিরা নবম উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যান। তবে শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজুর রহমান লিয়ানাগেকে ফিরিয়ে টাইগারদের স্বস্তি এনে দেন। লিয়ানাগে করেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৮ রান, ৮৫ বলে ৭ চার ও ২ ছয়ের মারে।
ইমন নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ৬৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন, যার মধ্যে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছয়। হৃদয় পরে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান, করেন ৫১ রান। তবে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে যান, যার জন্য তিনি রেগে যান তানজিম হাসান সাকিবের ওপর—তানজিম আগে দৌড়ের সঙ্কেত দিলেও পরে থেমে যেতে বলেন।
এরপর তানজিম নিজের ভুল পুষিয়ে দেন ২১ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে, যাতে ছিল ২টি চার ও ২টি ছয়।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ভালো সূচনা পায় ইমনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে, যদিও তানজিদ হাসান তামিম (প্রথম ম্যাচে ৬২ রান করা) দ্রুত ফেরেন। আসিথা ফার্নান্দো ৪ উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের পক্ষে সেরা বোলার ছিলেন।
ইমনের অর্ধশতক আসে ৪৮ বলে। তবে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার গুগলি ও লেগ ব্রেকে তিনি পরে কষ্ট পান এবং শেষ পর্যন্ত বোল্ড হয়ে ফেরেন। ফার্নান্দো এরপর মধ্য ও নিচের সারি গুঁড়িয়ে দেন।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে তানভীর ইসলাম ছিলেন দুর্দান্ত। শুরুতেই তানজিম প্যাথুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে দেন। মেন্ডিস অবশ্য বাংলাদেশ বোলারদের ওপর চড়াও হন, বিশেষ করে মুস্তাফিজকে এক ওভারে চারটি চার মারেন।
তানভীর এসে প্রথমে নিশান মাদুশকার উইকেট নিয়ে ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন, পরে মেন্ডিসকেও ফাঁদে ফেলেন। কুশল করেন ৩১ বলে ৫৬, ৯টি চার ও ১ ছয়ে।
শামীম হোসেন পাটোয়ারীও ক্যাপ্টেন আসালঙ্কাকে (৬) আউট করে চমক দেখান। কামিন্দু মেন্ডিস তানভীরের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন। মাঝে মিরাজ হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে দেন। এরপর আবারও তানভীর ফিরে এসে থিকশানাকে আউট করে পূর্ণ করেন নিজের প্রথম পাঁচ উইকেট।
লিয়ানাগে ও চামিরার শেষ জুটি জয়টা ছিনিয়ে নিতে চাইলেও মুস্তাফিজ লিয়ানাগেকে নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে ফেরান। এরপর তানজিম চামিরাকে আউট করে লঙ্কানদের ইনিংস গুটিয়ে দেন ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে।
সিরিজের তৃতীয় ও নির্ধারণী ম্যাচটি মঙ্গলবার পাল্লেকেলেতে অনুষ্ঠিত হবে।