‘এটা খুবই বেদনাদায়ক’: গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে মুখ খুললেন ম্যান সিটি'র গার্দিওলা

গাজায় শিশুদের মৃত্যু, হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপ, আর প্রতিদিনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে 'গভীরভাবে মর্মাহত' ম্যানচেস্টার সিটি ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা।
ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার এই মানবিক সংকটের প্রতি শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ, যার মধ্যে আছেন ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলাও।
সোমবার ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের পর দেওয়া এক আবেগঘন বক্তৃতায় গার্দিওলা বলেন, 'গাজায় যা দেখছি, তা খুবই বেদনাদায়ক। দেখলেই আমার পুরো শরীর ব্যথায় কেঁপে ওঠে।'
তিনি বলেন, 'গাজা কোনও রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, আদর্শের লড়াইও নয়, এটি শুধু মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার বিষয়।'
গার্দিওলা বলেন, 'চার-পাঁচ বছরের শিশুরা বোমা হামলায় মারা যাচ্ছে, হাসপাতালে মারা যাচ্ছে। এখন আর আসলে কোনও হাসপাতালই নেই। আমরা হয়তো ভাবি, এটা আমাদের বিষয় নয়। কিন্তু সাবধান—পরবর্তী শিশুটি হতে পারে আমার বা আপনারই।'
গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রতিদিন সকালে নিজের তিন সন্তান—মারিয়া, মারিয়ুস ও ভ্যালেন্তিনার মুখ দেখলেই গাজার শিশুদের কথা মনে পড়ে যায় গার্দিওলার। আর তখনই একধরনের ভয় তাকে গ্রাস করে বসে।
তিনি বলেন,'আমরা অনেক সময় নীরব থাকাকে নিরাপদ ভাবি। কিন্তু অন্যায়ের সামনে চুপ থাকা মানেই তা মেনে নেওয়া।'
বক্তব্যে তিনি একটি ছোট্ট গল্পের উল্লেখ করেন, যা তাকে এখনো সাহস জোগায়। বলেন, 'হয়তো এসব দৃশ্য আমাদের থেকে অনেক দূরের মনে হয়। তখন আমরা ভাবি—আমরা কীই-বা করতে পারি? ঠিক তখনই আমি সেই পাখিটার কথা ভাবি, যে নিজের ঠোঁটে পানির ফোঁটা এনে জঙ্গলের আগুন নেভাতে চেষ্টা করেছিল। হয়তো তা যথেষ্ট ছিল না, কিন্তু চেষ্টাটা তো ছিল।'
গার্দিওলার এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই বলছেন, একজন জনপ্রিয় ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি যে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন, তা অনেককে না বলা কথাগুলো বলার সাহস দিতে পারে।
উলেখ্য, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৭ হাজার ৪০০ শিশু নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬০০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বহু শিশু এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে—নিখোঁজ কিংবা মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২৩ লাখ জনসংখ্যার গাজা উপত্যকায় প্রায় অর্ধেকই শিশু। তারা বড় হয়েছে ইসরায়েলি অবরোধে, একাধিক যুদ্ধের ধকল নিয়ে—শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সংকটে।
গার্দিওলা বলেন, শুধু গাজা নয়, সুদান ও ইউক্রেন থেকেও আসা ছবিগুলো তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।