বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ও উদ্যোক্তা জর্জ ফোরম্যান মারা গেছেন

বক্সিং হল অব ফেমার এবং উদ্যোক্তা জর্জ ফোরম্যান শুক্রবার (২১ মার্চ) ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টের মাধ্যমে তার পরিবার এই খবর নিশ্চিত করেছে।
পোস্টটিতে বলা হয়, 'গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা ঘোষণা করছি যে আমাদের প্রিয় জর্জ এডওয়ার্ড ফোরম্যান সিনিয়র তার প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।'
পরিবারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফোরম্যান ছিলেন একজন হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন বক্সার, 'একজন বিশ্বস্ত ধর্মযাজক, নিবেদিত স্বামী, স্নেহশীল পিতা, এবং গর্বিত দাদা ও প্রপিতামহ। তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী, একজন অলিম্পিয়ান এবং দুইবারের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন।'
১৯৬৮ সালের মেক্সিকো সিটি অলিম্পিকে মাত্র ১৯ বছর বয়সে হেভিওয়েট বক্সিংয়ে তিনি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। ১৯৭৪ সালে মোহাম্মদ আলির কাছে 'রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল' নামে বিখ্যাত বক্সিং প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো শিরোপা হারিয়েছিলেন 'বিগ জর্জ' নামে খ্যাত এই বক্সার।
ঠিক তার ২০ বছর পর ১৯৯৪ সালে মাইকেল মুরারকে হারিয়ে তিনি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হেভিওয়েট শিরোপা জিতেন। তার এই ফিরে আসা এবং তার 'ফ্যাট-উইকিং' বৈদ্যুতিক গ্রিল বিক্রির মাধ্যমে তিনি একজন উদ্যোক্তা এবং আইকন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

জর্জ ফরম্যানের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে। তার পরিবার গরিব ছিল এবং তিনি শৈশবে অনেক কষ্টের মধ্যে বেড়ে উঠেন। তিনি কিশোর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় ডাকাতি করতেন। তবে 'জব কর্পস' কর্মসূচির মাধ্যমে তাকে বক্সিংয়ের জন্য প্রেরণা দেওয়া হয়।
১৯৬৮ সালে তিনি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতার পর পেশাদার বক্সিংয়ে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একের পর এক ম্যাচে বিজয়ী হন। টানা ৩৭টি ম্যাচ জেতার পর তিনি ১৯৭৩ সালে জামাইকার কিংস্টনে তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন জো ফ্রেজিয়ারের বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং দ্বিতীয় রাউন্ডে টেকনিক্যাল নকআউটের মাধ্যমে তাকে হারিয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতেন।
জো ফ্রেজিয়ারের কাছে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর তিনি মোহাম্মদ আলির বিরুদ্ধে জায়ারের কিংশাসায় (বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো) এক ঐতিহাসিক ম্যাচে হেরে যান এবং শিরোপা হারান।
আলি সাত বছর আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ফোরম্যানের বিরুদ্ধে ম্যাচে আলিকে দুর্বল প্রতিপক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছিল। তবে সাত রাউন্ড পর্যন্ত আলি রিং-এর দড়ির সাথে হেলান দিয়ে নিজেকে ফোরম্যানের ভয়ানক আঘাত থেকে রক্ষা করেন, তাকে ক্লান্ত করে তোলেন এবং অষ্টম রাউন্ডে ফোরম্যানকে নকআউট করে শিরোপা জিতেন।
ফরম্যান ২০০৭ সালে রয়টার্সকে বলেছিলেন, 'আমি ছিলাম এক শক্তিশালী হেভিওয়েট বক্সার। আমি ছিলাম ওয়ান পাঞ্চিং মেশিন। আর সেটি ছিল প্রথমবার যখন আমি সবকিছু দিলাম, কিন্তু কিছুই কাজ করল না।'

এই পরাজয় ফোরম্যানকে বিধ্বস্ত করে দেয়। তিনি এক বছর বিশ্রাম নেন এবং পরে রিংয়ে ফিরে আসেন। এরপর দ্বিতীয় পেশাদার পরাজয়ের পর ১৯৭৭ সালে তিনি অবসর নেন। পরে ধর্মযাজক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে ৩৮ বছর বয়সে তিনি বক্সিংয়ে ফিরে আসেন এবং একটি সফল ক্যারিয়ার গড়েন।
তিনি ১৯৯৭ সালে তার শেষ বক্সিং ম্যাচে অংশ নেন। তার পেশাদার রেকর্ড ছিল ৭৬ জয়ের বিপরীতে মাত্র ৫ পরাজয়।
ফরম্যান একাধিকবার বিয়ে করেছিলেন। তার পাঁচ ছেলে, পাঁচ মেয়ে এবং দুজন দত্তক মেয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে তিনি একটি বৈদ্যুতিক গ্রিলের বিজ্ঞাপন চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন।
১৯৯০-এর দশক এবং অবসর নেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন পণ্যের প্রচারণার সাথে যুক্ত ছিলেন, বিশেষত স্যালটন ইনক. কোম্পানির বৈদ্যুতিক গ্রিলের প্রচারণার জন্য পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি । ১৯৯৯ সালে কোম্পানিটি ফোরম্যান এবং তার সহযোগীদের ১৩৭.৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল গ্রিল এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর তার নাম ব্যবহার করার জন্য।
ফরম্যান তার আত্মজীবনী 'বাই জর্জ'-এ লিখেছিলেন, 'আমি যা করি তা হলো, প্রতিটি পণ্যের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করি। এটিই বিক্রি করতে সাহায্য করে, ঠিক যেমন উপদেশ দেওয়ার সময়।'