দেশে এসে হামজা বললেন, ‘ইনশা আল্লাহ আমরা উইন খরমু’

এতোদিন যা ছিল আশা-প্রত্যাশা, এখন সেটা বাস্তব। হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়েছেন আগেই, অপেক্ষা কেবল লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চড়ানোর। এই অপেক্ষাও বেশিদিন করতে হচ্ছে না, আগামী ২৫ মার্চ বাংলাদেশ দলে অভিষেক হবে তার। ম্যাচটি খেলতে বাংলাদেশে এসেছেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার। দেশে পৌঁছেই জানিয়েছেন আশার কথা, তার বিশ্বাস এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারতের বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডে জন্ম হামজার, বেড়ে ওঠাও সেখানে। ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলা ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার পরে সুযোগ পান ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। খেলেছেন লেস্টার সিটিতে, এ বছর ধারে নাম লেখান শেফিল্ড ইউনাইটেডে। এবার তার জীবনে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন অধ্যায়, যেখানটার শুরুতে তিনি দেখলেন ফুটবল ভক্তদের চরম উন্মাদনা, নিজের নামে স্লোগান।
সোমবার বেলা ১২টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান হামজা। কিছুক্ষণ পর কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি, ভিআইপি গেটের সামনে কথা বলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। দীর্ঘ ১১ বছর পর বাংলাদেশে এলেন তিনি, সর্বশেষ এসেছিলেন ২০১৪ সালে। এতোদিন পর বাংলাদেশে আসার অনুভূতি জানাতে গিয়ে হামজা বলেন, 'দারুণ লাগছে, অনেক দিন পর এলাম। এখানে এসে ভালো লাগছে।'
হামজাকে বরণ করে নিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) প্রস্তুতি ছিল। তারকাকে স্বাগত জানাতে ফুটবলভক্তরাও হাজির হন সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এ ছাড়া ছিল সংবাদমাধ্যমের শত শত ক্যামেরা, মোবাইল। হামজা ভিআইপি গেটে আসতেই হট্টগোল অবস্থা। প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, কিন্তু শোরগোলের মধ্যে বুঝতে পারেননি হামজা। সিলেটের ভাষায় বলতে থাকেন, 'আমি বুঝছি না, বুঝছি না।'
একই প্রশ্ন বুঝিয়ে বলার পর আশার কথা শোনান হামজা, জানান কোচের সঙ্গে আলাপের কথা। সিলেটের স্থানীয় ভাষায় তিনি বলেন, 'ইনশা আল্লাহ আমরা উইন খরমু। আমরার বিগ চান্স আছে। আমি কোচ হাভিয়েরের সাথে মাতসি। ইনশাআল্লাহ আমরা উইন খরিয়া প্রগ্রেস খরতাম ফারমু।'
ইংরেজি ও সিলেটের ভাষায় মিশিয়ে বলা হামজার কথার বিশুদ্ধ বাংলা দাঁড়ায়, 'ইনশা আল্লাহ আমরা জিতব, আমাদের বড় সুযোগ আছে। আমি কোচ হাভিয়েরের (হাভিয়ের কাবরেরা) সাথে কথা বলেছি। ইনশাআল্লাহ আমরা ম্যাচ জিতে সামনে এগিয়ে যাব।' সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার স্নানঘাটে পৈতৃক বাড়িতে যান হামজা। এই সফরে স্ত্রী ও সন্তানকেও নিয়ে এসেছেন তিনি।
হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার ইচ্ছার কথা জানানোর পর প্রক্রিয়া শুরু করে বাফুফে। বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য তাকে প্রথমে এই দেশের নাগরিক হতে হতো। গত বছরের জুন মাসে বাংলাদেশি পাসপোর্টের আবেদন করেন ২৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার। এক মাসের মধ্যেই পাসপোর্ট পৌঁছে যায় লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনে।
লেস্টার সিটির প্রাক মৌসুমের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকায় হামজার পক্ষে পাসপোর্ট গ্রহণ করেন তার মা রাফিয়া চৌধুরী। হামজাকে খেলানোর জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) অনাপত্তিপত্র পায় বাফুফে। ডিসেম্বরে আসে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সবুজ সঙ্কেতও।