‘মৃত্যুদণ্ড’ কি ধর্ষণ কমাতে পারে?

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে সারা দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৪১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৩০টি এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১১ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২২ জনকে, ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন, ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে, ধর্ষণচেষ্টার শিকার ১৬২ জন নারী। কেবল ২৬২টি ধর্ষণের ঘটনা এবং ৯৫টি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়। একই সংস্থা আরও জানাচ্ছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৪০১ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৪ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০৯ জন। এর মধ্যে একজনকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ১৯টি, যৌন হয়রানি ২৬টি, শারীরিক নির্যাতনের ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে উল্লেখিত সময়ে। ২০২০ সালের অন্য একটি জরিপ বলছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাত্র ৩ শতাংশ ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৩ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন। গত মার্চ মাসে মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা, পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর দেশব্যাপী সকলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ করে। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন আইনটি আবার সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, 'তদন্তের সময় ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ দিন আর ধর্ষণের মামলার বিচার ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে। ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ সনদ প্রয়োজন হয়। অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে সংশোধনী আনা হবে। উপযুক্ত ক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন, শুধু চিকিৎসা সনদের ভিত্তিতে এ মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভব, তাহলে তিনি সে রকম ব্যবস্থা নিতে পারবেন।' এর আগে ২০২০ সালে সিলেট ও নোয়াখালীতে দলবদ্ধ ধর্ষণের দুটি ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই সময় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষণের মামলার আসামি শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।
এবার দেখে নেয়া যাক আলোচিত কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা। সকল ঘটনায় দেশব্যাপী বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সকল স্তরের জনগণ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান ও আন্দোলন করেন।
২০১৬ সালের মারর্চে সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তনুর বাবা কোতয়ালী থানায় মামলা করেন। এ পর্যন্ত মরদেহের দুই দফায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত আট বছরে পাঁচবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। পুলিশ, সিআইডির পর এখন এর তদন্ত করছে পিবিআই। পুলিশ ধারণা করেছিল, হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং সিআইডির তদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। পিবিআই এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি এবং ঘটনার ৮ বছর পেরিয়ে গেছে। একই বছর অক্টোবরে খেলতে গিয়ে প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৫ বছরের শিশু। এরপর বিভিন্ন প্রজনন অঙ্গ, মাথা, গলা, হাত ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। ঘটনার পরপরই মামলা, আসামী গ্রেফতার, অপরাধ প্রমাণিত হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এর ৮ বছর ৪ মাস পর আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে সকলের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এদিকে মেয়েটির মূত্রথলি স্থায়ীভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর সারাক্ষণ প্রস্রাব ঝরে এবং সে কারণে সে স্কুলে যেতে পারে না।
নৌকায় ভোট না দেয়ার কারণে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মামলায় অভিযুক্ত ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী এখন আপিল করার কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ মামলার রায় প্রক্রিয়াধীন, কার্যকর হয়নি।
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত রাফিকে ২০১৯ সালের মার্চ এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা অপিস কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে মামলা করলে তার অনুসারীরা তা উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। অধ্যক্ষকে ঘটনার দিন রাতেই গ্রেফতার করা হয়। এর ১০ দিন পর তার অনুসারীরা নুসরাতকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। পরবর্তীতে নুসরাতের ভাই হত্যা মামলা করার পর ৬১ দিনের মাথায় ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা করেন আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে এটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবী।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এক গৃহবধূকে যৌন নির্যাতনের পর তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় কয়েকজন যুবক। এক বছরের মাথায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আসামিদের আইনজীবীরা জানান, রায়ের পর আপিল করেছেন তারা। একই বছর একই মাসে সিলেটের এমসি কলেজের সামনে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও আলোচিত হয়। এই ঘটনায় ছাত্রলীগের ৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগ গঠন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা মনিটরিং কমিটি। পরে তার স্বামী রিট করলে হাইকোর্ট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেয়। কিন্তু মামলা হস্তান্তর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখনও গেজেট জারি হয়নি।
২০২১ সালের এপ্রিলে রাজধানীর একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাতেই মুনিয়ার বড়বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে একমাত্র আসামি করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের মার্চে আনভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। উল্লেখ্য, মৃত্যুর আগে মুনিয়াকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে মাগুরায়, এ বছরের ৫ মার্চ। বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে বোনের স্বামীর সহায়তায় বোনের শ্বশুর ৮ বছরের মেয়েটিকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে এবং মেয়েটি চিৎকার করতে গেলে গলা চেপে ধরে। মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে আসার ৮ দিন পর শিশুটি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনার তিন দিন পর শিশুটির মা চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরবর্তীতে চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়। দেশব্যাপী এই ঘটনায় নতুন করে আবার আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং অন্তর্বর্তী সরকার তড়িঘড়ি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কয়েকটি সংশোধন করার উদ্যোগ নেয় যা নিয়ে ইতিমধ্যে নারী অধিকার কর্মীগণ ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা বলেন, তদন্ত ও বিচারের সময় না কমিয়ে বরং কীভাবে ধর্ষণ বন্ধ এবং দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, সেদিকে জোর দেয়া উচিত । এদিকে আপিল বিভোগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, আইন যত কঠিন হয় তত সেটির অপব্যবহার ও ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। (সূত্র: প্রথম আলো, ২১ মার্চ)
এবার নজর দেয়া যাক, কঠোর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কি ধর্ষণের ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে কি না? বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা রয়েছে । ২০২১ সালে পাকিস্তান সরকার ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করে, তবে কঠোর শাস্তি অপরাধ কমানোর ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে । একই বছর পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ৪-৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট হয়, তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পাবে। অন্যদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘটনা রিপোর্ট হয় না। এছাড়া পারিবারিক/সামাজিক ও অন্যান্য কারণে অনেকে রিপোর্ট করে না বা রিপোর্ট করার ব্যবস্থাও নেই। এদিকে ২০১২ সালে ভারতে নির্ভয়া কেসের (ধর্ষণের পর নির্মম অত্যাচারের পর মৃত্যু) পর সেদেশের জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এরপর ভারত সরকার ২০১৮ সালে আইন পরিবর্তন করে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে, বিশেষত শিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে। ভারতের জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ৩২ হাাজার ৩৭ ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল, ২০২০ সালে এটি ছিল ২৮ হাজার ৪৩৩টি এবং ২০২২ সালে এটি ৩১ হাজার ৫১৬। বাংলাদেশেও ধর্ষণের ঘটনা একই রকমভাবে ঘটে চলছে অথবা বাড়ছে, কিন্তু কমছে না।
লেখার শুরুতে আলোচিত কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেছি, যেখানে বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত চলেছে, একটি ছাড়া কোনো রায় এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। রায় কার্যকর হওয়া একটি (দিনাজপুরের) ঘটনায় আসামি জামিনে মুক্ত, দুটি ঘটনার (তনু এবং মুনিয়া) কোনো কূলকিনারা হবে কি না সন্দেহ রয়েছে এবং অন্যগুলোর রায় আপিলে ঝুলছে। আলোচিত ঘটনাগুলোর রায় কার্যকর হতেই এই দশা যেখানে, সেখানে প্রতিদিনকার ধর্ষণের ঘটনা কতটুকু রিপোর্ট হয়, কতটুকু বিচার হয়, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়! বাংলাদেশে একেকটি ধর্ষণের মামলা নিষ্পত্তি হতে গড়ে ৩-৫ বছর সময় লাগে। কখনও কখনও এই নিষ্পত্তি হতে ১৩-১৫ বছরও লেগে যায়। এ কারণে বারবার বলা হয় যে, ধর্ষণের সর্ব্চ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড মূলত ধর্ষণের ঘটনা কমিয়ে আনতে পারে না। মূলত বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, ভিক্টিম ও তার পরিবারের নিরাপত্তা, সাক্ষী জোগাড়, সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা ইত্যাদি কারণে ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিচারহীন হয়ে থাকে। এদিকে বাংলাদেশের আদালতে প্রচুর মামলার জটের মধ্যে ধর্ষণের মামলাগুলো পড়ে থাকা, বিচারকের সংকট, ফরেনসিক ল্যাবের অভাব, তদন্তে ধীর গতি, তদন্ত কর্মকর্তাদের আসামি থেকে টাকা খেয়ে রিপোর্ট লেখা ইত্যাদি বিচারের রায়কে প্রভাবিত অথবা বিলম্বিত করে। এসব কারণে বেশিরভাগ ভিক্টিমের পরিবার মামলা চালিয়ে যেতে চায় না।
ধর্ষণের ঘটনা কমিয়ে আনতে ভিক্টিমের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অনুকূল পরিবেশ বলতে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা সাথে সাথে থানায় অভিযোগ আকারে নেয়া, আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভিক্টিমকে দোষারোপ না করা, পরিবেশ ও সমাজ থেকে ভিক্টিমের পক্ষে সমর্থন জোগানো, দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করা ইত্যাদি। ভিক্টিম, তার পরিবার এবং সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পুলিশ কর্তৃক নিরপেক্ষভাবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান এবং সর্বোপরি দ্রুততম সময়ে বিচারকার্য সম্পন্ন করা। আমাদের এখানে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের বেশিরভাগ ঘটনায় মানুষ রিপোর্টই করে না, কারণ তার জন্য উপরিল্লিখিত পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়নি। এছাড়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের কেসগুলোর জন্য প্রতিটি জেলায় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, আলাদা আদালত ও বিচারক নিয়োগ করা, যারা শুধু এই কেইসগুলো নিষ্পত্তি করবেন। একাধারে কয়েকটি কেইসের যদি পর পর রায় প্রদান ও কার্যকর করা যায়, তাহলে সমাজে এই মেসেজ দেয়া সম্ভবপর হবে যে, ধর্ষণের শান্তি নিশ্চিত হচ্ছে, অপরাধ করে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে একসময় এসিড নিক্ষেপ ভয়াবহভাবে বেড়ে গিয়েছিল, যা আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়া জেলা পর্যায়ে ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও তাদের সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ প্রদান (প্রয়োজনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট গঠন যারা শুধুমাত্র এই কেসগুলো ডিল করবে), নারীকে হেয় করে বা অধস্তন করে যেসব নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন তৈরি হয় তার বিপরীতে এসব মাধ্যমে নারীর কর্তা সত্তাকে উপস্থাপন করা যেখানে নারীর একটি আলাদা সত্তা এবং তার পরিচয় আছে সমাজে—এই মেসেজটি সকলে পায়। পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরভাবে কমাতে সহায়ক হয়েছে কি না, তা নির্ধারণের জন্য আরও গভীরতর গবেষণা প্রয়োজন। তবে আপাতদৃষ্টিতে ৩টি দেশের কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি একমাত্র সমাধান নয়। দ্রুততম সময়ে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমাজে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি, জেন্ডার সমতা ধারণার বিস্তার, রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
- ফেরদৌস আরা রুমী: অধিকার কর্মী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য