মধ্যপ্রাচ্যের এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের ফরদো, নাটাঞ্জ ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত উসকে দিয়েছে এবং ইসরায়েল-ইরানের চলমান যুদ্ধকে আরও জটিল ও বিস্তৃত করে তুলেছে। এর ফলে পুরো অঞ্চল এক অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জন্য এই ঘটনার অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব হতে পারে গভীর। বিশেষত, জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি তীব্র হতে পারে, আর মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত লাখো বাংলাদেশি শ্রমিকের নিরাপত্তা ও রেমিট্যান্স প্রবাহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
রপ্তানি খাত ও সামুদ্রিক বাণিজ্য পরিবহন ব্যবস্থাতেও চাপ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং একই সঙ্গে অর্থনীতিতে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখে সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো ধরনের সংঘাত শুরু হলে তাদের দ্রুত সহায়তা দেওয়ার জন্য দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে, পাশাপাশি ওই দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্থিরতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও টেকসই ও বহুমুখী করতে হবে। বিকল্প জ্বালানি উৎস যেমন এলএনজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা বিকল্প উৎস থেকে আমদানির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও পরিকল্পিত খরচ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে জ্বালানির দামে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা না দেয়।
তৃতীয়ত, রপ্তানি ও আমদানি খাতে সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবিলায় একটি বাস্তবভিত্তিক অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যাতে বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়। এই কৌশলের আওতায় রপ্তানির জন্য নতুন বাজার খোঁজা, বিকল্প পরিবহন রুট চিহ্নিত করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।