বগুড়ার ভাসুবিহারে মিলল হাজার বছরের প্রত্নসম্পদ

বগুড়ার ভাসুবিহারে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে অন্তত এক হাজার বছরের পুরোনো ইটের অবকাঠামোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রত্নসম্পদ। বৌদ্ধ ধর্মীয় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হতো এমন অনেক কিছুই এর আগেও খননে পান প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ) ড. নাহিদ সুলতানার নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল গত ৪ ফেব্রুয়ারি খনন শুরু করলে মাটির সামান্য নিচেই পাওয়া যায় পাল আমলে তৈরি ইটের দেয়াল, মাটির মূর্তি, নকশা করা ইট, মৃৎপাত্রের অসংখ্য টুকরাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নিদর্শন।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবদুল খালেক জানান, এ উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এ সাইটটিতে প্রথম খনন করা হয়। খননে দলটি দুইটি বিহার, একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ও অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক উম্মোচন করে। এ ছাড়া মাঝারি আকারের আরও কিছু প্রত্নসম্পদের পাশাপাশি বেশ কিছু ব্রোঞ্জের মূর্তিও পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে খননে আরও পাওয়া গেছে মাটির সিল ও সিলিংসহ নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসে কর্মরত গবেষণা সহকারী সঞ্জয় কুমার রায় বলেন, এবারের খননে তার ট্রেঞ্চে বুদ্ধ মুর্তিসহ আরও অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলোর বৈশিষ্ট্য অন্যান্য বিহারে পাওয়া নিদর্শনগুলোর মতোই।

খনন দলের অন্যতম সদস্য সহকারী পরিচালক মুজিবর রহমান বলেন, এবারের খননে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে পাল আমলে তৈরি ইটের দেওয়াল, পোড়া মাটির উড়ন্ত গন্ধব, পোড়া মাটির ফলক, নকশা করা ইট, মাটির তৈরি ধ্যানী বুদ্ধর মূর্তি আর মৃৎপাত্রের অসংখ্য টুকরার সঙ্গে নানা ধরনের নির্দশন।
তিনি আরও বলেন, আমার আশা করছি খননের শেষ পর্যায়ে আরও নির্দশন পাওয়া যাবে যা ভাসুবিহারে ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, চীনের পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল ভ্রমণের এক পর্যায়ে ভাসুবিহারে আসেন। তিনি তখন সেখানে ৭০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু দেখতে পান। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিক্ষুদের কাছে তিনি তখন শুনেছেন, এখানে গৌতম বুদ্ধ এসেছিলেন। পরে সম্রাট আশোক এখানে একটি সুউচ্চ আবলেকতশ্বর মন্দির নির্মাণ করেন। পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ তার লেখায় এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন বলে জানান প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

মাটির নিচে চাপা পড়া এখানকার অবকাঠামোগুলোর অধিকাংশ পাল আমলের হলেও প্রত্যেকটি নিদর্শন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা জানান, ধারাবাহিকভাবে খনন করা সম্ভব হলে এখানে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে। নতুন নতুন নিদর্শন আর তথ্যের সন্ধানে ভাসুবিহারে এবার খনন চলবে মার্চ পর্যন্ত।