সাব-কন্ট্রাক্টে পোশাক উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর ওপর কঠোর হচ্ছে এনবিআর

সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনকারী কারখানার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ ধরণের কারখানায় পণ্য উৎপাদন করতে হলে তাদের এনবিআরের আওতাধীন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে বন্ড লাইসেন্স নিতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে পণ্য উৎপাদন করবে, ওই প্রতিষ্ঠানকেও লাইসেন্স নিতে হবে।
এছাড়া পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এনবিআরের আওতাধীন এক ভ্যাট কমিশনারেটের এলাকা থেকে অন্য কমিশনারেটের এলাকায় যেতে হলে অনুমোদন নিতে হবে। এ ধরণের বেশকিছু শর্তের মধ্যে আসতে হবে সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের পণ্য উৎপাদনকারীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ধরণের একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে এনবিআর। শিগগিরই এ বিষয়ে আদেশ জারি হতে পারে।
এনবিআরের শুল্ক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নন-বন্ড প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিমুখী পণ্য তৈরি করার ফলে তাদের ব্যবহৃত কাঁচামাল ও এক্সেসরিজের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। ফলে এতে অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। এই ধরণের অপব্যবহার রোধ করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে"।
তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, "এর মাধ্যমে ব্যবসাকে আরো কঠিন করা হবে। এতে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বাড়ার সুযোগ হবে"।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে সাব-কন্ট্রাক্টিং বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত। বিদেশি বায়ারের কাছ থেকে অর্ডার নেয়ার পর, তার ওই পরিমাণ কাজের সক্ষমতা না থাকলে, কিংবা বায়ারের পণ্য দ্রুত ডেলিভারি দেওয়ার প্রয়োজন হলে অন্য প্রতিষ্ঠানে তিনি ওই অর্ডারের পুরো কিংবা অংশবিশেষ কাজ করিয়ে নিতে পারেন, যা সাব-কন্ট্রাক্ট নামে পরিচিত। সাব-কন্ট্রাক্টের কারখানা সাধারণ কাটিং ও মেকিংয়ের কাজ করে।
পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা যারা সরাসরি অর্ডার নেয়, এবং বিদেশ থেকে কাঁচামাল বা এক্সেসরিজ আমদানি করতে হয়, তাদের বন্ড লাইসেন্স থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে যারা স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল ও সরঞ্জাম ক্রয় করেন, তাদের বেশিরভাগই বন্ড লাইসেন্স নেন না।
স্থানীয় উৎস থেকে যারা ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল ক্রয় করেন, তাদের বন্ড লাইসেন্স ছাড়া এই সুবিধা না দিতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় এনবিআর। ইস্যুটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যাপক আপত্তির মুখে পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই নতুন করে সাব-কন্ট্রাক্টিংয়ের কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কঠোর অবস্থানের উদ্যোগ নিল এনবিআর।
ব্যাক টু ব্যাক এলসি হলো, বিদেশি ক্রেতার কাছ থেকে রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া এলসির বিপরীতে স্থানীয় উৎস থেকে বাকিতে কাঁচামাল ক্রয়ের সুযোগ। পোশাক রপ্তানিকারকরা সাধারণ ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে বাকিতে ক্রয় করতে পারেন।
পোশাক শিল্প মালিকদের দুটি সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে রপ্তানির জন্য পোশাক তৈরি করে, এমন কারখানার সংখ্যা প্রায় এক হাজার, যেখানে সাড়ে ৬ লাখ শ্রমিক কাজ করে।
বর্তমানে রপ্তানির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে, এমন কারখানার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বর্তমানে রপ্তানির জন্য নিয়মিত সাব-কন্ট্রাক্ট করে, এমন প্রায় ৬০০ কারখানার বন্ড লাইসেন্স নেই। এসব কারখানায় দুই থেকে আড়াই লাখ শ্রমিক কাজ করে"।
তিনি বলেন, "এনবিআর এ উদ্যোগ নিলে নিঃসন্দেহে দেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্ড লাইসেন্স করার মত সক্ষমতা নেই সাব-কন্ট্রাকটিংয়ের ঐ ফ্যাক্টরিসমূহের, কারণ একটি ফ্যাক্টরি নতুন প্রতিষ্ঠিত হলে সরাসরি রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পূর্বে ৬ মাস থেকে এক বছর সাব-কন্ট্রাক্ট করে ফ্যাক্টরি সেট আপ করে"।
"আবার কার্যাদেশের স্বল্পতার কারণেও মাঝে মাঝেই সাব-কন্ট্রাক্ট করতে হয়। কখনও কখনও সময়মত শিপমেন্ট করার জন্যও অতিরিক্ত কার্যাদেশের চাপ সামলাতে সাব-কন্ট্রাক্ট করাতে হয়। এতে দেশের রাজস্বের কখনও কোন ক্ষতি হয়নি"।
তিনি বলেন, "বন্ড লাইসেন্স নেওয়ার সময় অনেক টাকা 'খরচ' করতে হয়। আবার বছর বছর অডিটের নামে অনেক টাকা দিতে হয় কারখানা মালিকদের। এজন্য ছোট কারখানাগুলো বন্ড লাইসেন্স নিতে চায় না"।
"সরকার যেখানে রপ্তানিকে সহজ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে এনবিআর একের পর এক ব্যবসাকে কঠিন করতে চায়," বলেন তিনি।