বৈশ্বিক ক্রমতালিকায় ছন্দপতন, লয়েডস লিস্টে ৯ ধাপ পেছালো চট্টগ্রাম বন্দর

কন্টেইনার পরিবহনের হিসেবে বিশ্বের ব্যস্ততম ১০০টি বন্দরের তালিকায় ২০২০ সালে ৯ ধাপ পিছিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। ১ বছরের ব্যবধানে এই তালিকায় ৫৮তম স্থান থেকে ৬৭তম স্থানে পিছিয়ে গেল দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর।
লন্ডনভিত্তিক শিপিং বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টে প্রতিবছরের ন্যায় সোমবার ( ২৩ আগস্ট) রাতে ২০২০ সালের ১০টি বন্দরের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায় ২০১৯ সালের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দর ৫৮তম স্থান থেকে পিছিয়ে ৬৭তম স্থানে পৌঁছেছে।
সমুদ্রপথে মোট বাণিজ্যের ৯২ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মোট কন্টেইনার পরিবহনের ৯৮ ভাগ হয় দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে।
২০১৫ সালের পর লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রমাগত উন্নতি হতে থাকলেও ২০২০ সালে এসে ছন্দপতন হলো। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে কমে যায় কন্টেইনার পরিবহন। সেই ধাক্কা লাগে চট্টগ্রাম বন্দরেও।
লয়েডস লিস্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে ৬৩ কোটি ২০ লাখ কন্টেইনার পরিবহন হয়েছে। যা গত ২০১৯ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কম। চট্টগ্রাম বন্দরে একই সময়ে কন্টেইনার পরিবহন কমেছে ৮ শতাংশ। যার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৯ ধাপ কমে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক টিবিএসকে বলেন, লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান পিছিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ করোনা ভাইরাসের প্রভাব। ২০২০ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংকটের কারণে দেশের সব বন্দরের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও সীমিত হয়েছিল। লয়েডস লিস্টে পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা কিংবা সক্ষমতার কোন বিষয় নেই।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস (টুয়েন্টি ফিট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। ওই বছরই ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে প্রথমবারের মতো 'থ্রি মিলিয়নিয়ার' পোর্ট ক্লাবে যুক্ত হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের নাম। বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে এসে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং কমে যায়। ২০২০ সালে হ্যান্ডেলিং হয়েছিলো ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস কন্টেইনার।
লয়েডস লিস্টে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিলো ৮৮। এরপর ২০১১ সালে ৮৯তম, ২০১২ সালে ৯০তম, ২০১৩ সালে ৮৬তম, ২০১৪ সালে ৮৭তম, ২০১৫ সালে ৭৬তম ,২০১৬ সালে ৭১তম, ২০১৭ সালে ৭০তম, ২০১৮ সালে ৬৪তম, ২০১৯ সালে ৫৮তম এবং ২০২০ সালে ৬৭তম অবস্থান লাভ করে চট্টগ্রাম বন্দর।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লয়েডস লিস্ট শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের হিসাবের উপর ভিত্তি করে করা হয়। সেখানে বন্দরের সেবার মান বিবেচ্য নয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট যে পরিমাণ পণ্য পরিবহন হয় তার ২৭ ভাগ হয় কন্টেইনারের মাধ্যমে। বাকি ৭৩ শতাংশ পরিবহন হয় খোলা জাহাজ ( বাল্ক ক্যারিয়ার) ট্যাংকারে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে লয়েড লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান নিয়ে। ভবিষ্যতে এই সংকট কেটে যাবে। লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান আরো উন্নত হবে"।
বাংলাদেশে শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সরওয়ার টিবিএসকে বলেন, "করোনার প্রভাবে ২০২০ সালের মার্চ, এপ্রিল এবং মে মাসে দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। বাংলাদেশে আমদানি পণ্যের বেশিরভাগ আসে চীন থেকে। ওই সময় চীন থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কন্টেইনার পরিবহনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বছরের শেষ দিকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও ২০১৯ সালের তুলনায় কন্টেইনার পরিবহনে বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যায়। যার প্রভাব পড়েছে লয়েডস লিস্টে বন্দরের অবস্থানে"।
তিনি আরো বলেন, "লয়েডস লিস্টে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা তেমন শংকিত নই। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আগামী বছর এই অবস্থান আরো বাড়বে বলে আমাদের প্রত্যাশা"।
২৩ আগস্ট প্রকাশিত লয়েডস লিস্টের তালিকায় শীর্ষে আছে চীনের সাংহাই বন্দর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর।